Posts

প্রবন্ধ

লেখার ব্লক কাটিয়ে উঠা

December 3, 2024

Razib Paul

লেখালেখি একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া, কিন্তু প্রতিটি লেখকের জীবনে এমন সময় আসে যখন কলম বা কীবোর্ডের সামনে বসে মনে হয়, শব্দগুলো হারিয়ে গেছে। এই অনুভূতিটাই লেখার ব্লক নামে পরিচিত। লেখার ব্লক একটি সাময়িক বাধা হলেও এটি হতাশাজনক হতে পারে। তবে সঠিক পদ্ধতিতে এটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। এই প্রবন্ধে আমরা লেখার ব্লক কাটিয়ে উঠতে সাহায্যকারী কৌশলগুলো বিশদভাবে আলোচনা করব।

১. রুটিন তৈরি করুন (Set a Routine)

লেখালেখির জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করা অত্যন্ত কার্যকর। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় লেখার অভ্যাস গড়ে তুললে মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে সৃজনশীল চিন্তার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। সকালে, বিকালে বা রাতে—যে সময় আপনি সবচেয়ে উত্পাদনশীল, সেই সময়ে লিখুন। নিয়মিত লিখলে মস্তিষ্ক অজান্তেই লেখার প্রবাহে সাড়া দিতে শিখবে।

২. ফ্রিওরাইটিং (Freewriting)

ফ্রিওরাইটিং হলো লেখার একটি মুক্ত পদ্ধতি। এতে আপনি কোনো নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে না ভেবে যা খুশি লিখতে পারেন। এটি লেখার প্রতি ভয় বা মানসিক চাপ দূর করে। ফ্রিওরাইটিং করতে হলে একটি নির্ধারিত সময় নিন (যেমন ১০ মিনিট) এবং যা মনে আসছে, তাই লিখুন। বিষয়বস্তু বা ব্যাকরণ নিয়ে চিন্তা করবেন না। এই অনুশীলন আপনার চিন্তার জট খুলে দিতে সাহায্য করবে।

৩. পরিবেশ পরিবর্তন করুন (Change Your Environment)

প্রতিদিন একই জায়গায় বসে লেখার চেষ্টা করলে লেখার ব্লক হতে পারে। নতুন পরিবেশ সৃজনশীলতাকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। বাইরে হাঁটতে যান, একটি পার্কে বসে লিখুন, অথবা প্রিয় ক্যাফেতে গিয়ে এক কাপ কফির সঙ্গে লেখার অভ্যাস গড়ুন। পরিবেশের পরিবর্তন মানসিক চাপে স্বস্তি এনে দেয় এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।

৪. কাজটিকে ভাগ করুন (Break It Down)

লেখালেখির সময় যদি কাজটি বড় মনে হয়, তবে সেটিকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করুন। একটি অনুচ্ছেদ বা একটি চরিত্র নিয়ে কাজ শুরু করুন। কাজটি ছোট ছোট ধাপে এগিয়ে নিয়ে গেলে লেখালেখি কম চাপের মনে হবে এবং লেখার প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।

৫. নতুন অনুপ্রেরণা খুঁজুন (Explore New Inspiration)

লেখালেখির জন্য নতুন অনুপ্রেরণা প্রয়োজন হলে চারপাশের জগতকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। একটি বই পড়ুন, একটি সিনেমা দেখুন, অথবা নতুন সঙ্গীত শুনুন। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা, যাত্রা, বা সাধারণ দিনযাপনের ছোট ছোট ঘটনাও নতুন আইডিয়া দিতে পারে।

৬. বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করুন (Set Realistic Goals)

লেখার ক্ষেত্রে অনেক সময় উচ্চাশা লেখালেখির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিদিন একটি পৃষ্ঠা বা নির্দিষ্ট সংখ্যক শব্দ লেখার লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। লক্ষ্য ছোট হলে তা পূরণ করা সহজ হয় এবং ধীরে ধীরে সেই ছোট অর্জনগুলো বৃহৎ সাফল্যে পরিণত হয়।

৭. রাইটিং প্রম্পট ব্যবহার করুন (Use Writing Prompts)

লেখার ব্লক কাটিয়ে উঠতে রাইটিং প্রম্পট ব্যবহার করুন। একটি ছোট প্রশ্ন বা বাক্য থেকে গল্প বা প্রবন্ধ শুরু করুন। উদাহরণস্বরূপ, "যদি আমি কাল সময় ভ্রমণ করতে পারতাম..." অথবা "যে দিনটি আমার জীবন বদলে দিয়েছিল..." এই ধরনের প্রম্পট নতুন চিন্তার সূত্র তৈরি করতে পারে।

৮. আলোচনা করুন (Talk It Out)

কিছু চিন্তা বা আইডিয়া মনের মধ্যে আটকে থাকলে তা নিয়ে অন্য কারও সঙ্গে আলোচনা করুন। বন্ধুর সঙ্গে গল্প করুন বা নিজের ভেতর যে চিন্তাগুলো কাজ করছে সেগুলো জোরে জোরে বলুন। অনেক সময় কথোপকথন বা নিজের কণ্ঠ শুনে জট খুলে যায় এবং চিন্তার ধারাবাহিকতা ফিরে আসে।

৯. বিভ্রান্তি দূর করুন (Eliminate Distractions)

লেখার সময় যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখুন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ফোন কল, অথবা অন্য কাজগুলোর কারণে মনোযোগ হারালে লেখার ব্লক দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। একটি নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি করুন যেখানে কেবল আপনার এবং আপনার লেখার সম্পর্ক থাকবে।

১০. পুরানো লেখা পর্যালোচনা করুন (Revisit Old Work)

পুরানো লেখাগুলো ঘাঁটুন। অসমাপ্ত গল্প বা প্রবন্ধে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে কাজ শুরু করতে পারেন। অতীতের কাজগুলো দেখে নতুন অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়, আর সেই সঙ্গে আপনার লেখার উন্নতিটাও লক্ষ্য করা যায়।

১১. সৃজনশীল খেলা করুন (Engage in Creative Play)

লেখাকে মজা হিসেবে নিন। মাইন্ড ম্যাপিং, স্কেচিং, অথবা ছড়া কাটুন। কখনো কখনো মস্তিষ্ককে বিনোদন দেওয়ার মাধ্যমেও নতুন চিন্তা আসে। সৃজনশীল খেলাধুলা লেখার উপর চাপ কমায় এবং আনন্দময় করে তোলে।

১২. বিরতি নিন (Take a Break)

একটানা লেখার চেষ্টা করলে ক্লান্তি এবং মানসিক অবসাদ তৈরি হতে পারে। কিছুক্ষণের জন্য বিরতি নিন। হাঁটাহাঁটি, যোগব্যায়াম, বা প্রিয় কোনো কাজ করুন যা আপনার মনকে প্রশান্তি দেয়। বিরতির পরে লেখা শুরু করলে তা আরও তাজা ও স্বতঃস্ফূর্ত মনে হবে।

১৩. লেখালেখির সম্প্রদায়ে যোগ দিন (Join Writing Communities)

লেখালেখি একাকী একটি কাজ মনে হলেও, লেখালেখির সম্প্রদায়ে যোগ দিলে আপনি সমমনা মানুষের সঙ্গে নিজের চিন্তা শেয়ার করতে পারেন। ATReads-এর মতো প্ল্যাটফর্মে রাইটিং চ্যালেঞ্জে অংশগ্রহণ করুন। সেখানে অন্য লেখকদের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করার মাধ্যমে অনুপ্রেরণা এবং পরামর্শ পাওয়া যায়।

১৪. রূপরেখা পুনর্লিখন করুন (Rewrite Your Outline)

লেখার পরিকল্পনা আটকে গেলে রূপরেখা পুনরায় তৈরি করুন। গল্পের প্লট, চরিত্রের অগ্রগতি, অথবা প্রবন্ধের কাঠামো নতুনভাবে সাজান। রূপরেখার পরিবর্তনে অনেক সময় নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয় এবং লেখার জট খুলে যায়।

১৫. নিজেকে ভালোবাসুন (Practice Self-Compassion)

লেখার ব্লক কাটিয়ে উঠতে ধৈর্য ধরুন এবং নিজের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন। লেখার ব্লক কোনো ব্যর্থতার চিহ্ন নয়, বরং এটি একটি সাময়িক পরিস্থিতি। নিজের প্রতি অতিরিক্ত কঠোর হলে সৃজনশীলতা আরও কমে যেতে পারে। বরং, নিজের চেষ্টা ও আগ্রহের প্রশংসা করুন।

উপসংহার

লেখালেখি একটি সৃজনশীল এবং মানসিক প্রক্রিয়া, তাই লেখার ব্লক একটি স্বাভাবিক সমস্যা। এটি কাটিয়ে ওঠার জন্য সৃজনশীল কৌশল প্রয়োগ, রুটিন তৈরি, এবং নিজের প্রতি ধৈর্যশীল হওয়া অত্যন্ত জরুরি। এই কৌশলগুলো প্রয়োগ করে লেখার প্রবাহ ফিরে পাওয়ার পাশাপাশি আপনি নিজেকে একজন দক্ষ এবং আত্মবিশ্বাসী লেখকে রূপান্তরিত করতে পারবেন।

ATReads-এর মতো প্ল্যাটফর্মে লেখা প্রকাশ করার মাধ্যমে আপনি আপনার সৃজনশীলতাকে বড় পরিসরে উপস্থাপন করতে পারবেন। তাহলে আজই লেখার ব্লক কাটিয়ে উঠুন এবং নতুন লেখার জগতে নিজেকে উপস্থাপন করুন!

Comments

    Please login to post comment. Login