সাতসকালে ঘুম থেকে উঠেই টুথব্রাশ হাতে নিয়ে পায়রা গৃহের সামনে এসে দাড়ালাম, আলমগীর-শাবানা-রাজ্জাকের খোঁজ খবর নিতে। অনেকক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে যা দেখলাম এবং বুঝলাম। তা মনুষ্য জীবনের যেকোন ট্রাজেডীময় বিরহ গাথা গল্পকেও হার মানাতে বাধ্য।
Relation buildup-এর ব্যাপারে হার্ট-কুইন নায়িকা শাবানা "ধীরে চল" নীতি এপ্লাই করায় ব্লাক স্টোন আলমগীর এবং ড্যাসিং হিরো রাজ্জাকের শুধু যে হৃদয়ই ভেঙ্গেছে, তাই নয়। দু'জনের মধ্যকার সম্পর্ক আজ বাংলা সিনেমা "দোস্ত দুশমন" এ রূপ নিয়েছে। অথচ ড্রিম-কুইন শাবানা বাস্তব দৃশ্যপটে আসার পূর্বেও, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল, হিন্দি সিনেমার সেই বিখ্যাত গান "এ দোস্তি! হাম নেহি ভুলেংগে, হাম নেহি তোড়েংগে" এর মত।
এদিকে ঘটনাক্রমে গ্লামার গার্ল শাবানা ও ড্যাসিং হিরো রাজ্জাক একত্রে ডেটিং রুমে যেটুকু সময় অতিবাহিত করেছিল। সেই "অপ্রীতিকর পরিস্থিতি" শাবানার সব গ্লামার এবার Character, দুটোকেই ম্লান করে দিয়েছে। আজ যেন সে সতী হরা অসহায় নারী। আর ড্যাসিং হিরো রাজ্জাক এতদিন নিজেকে লাভার বয় ভাবলেও, শাবানার কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে নিজের confidence এবং আলমগীরের মত জিগির দোস্ত, দুটোই হারিয়েছে। সে যেন একাকিত্বের বিষন্নতায় ভুগতে থাকে।
অন্যদিকে, শাবানা-রাজ্জাক dating scandal ঘটে যাবার পর, নরম হৃদয়ের ব্লাক স্টোন আলমগীর যেন শোকে পাথর হয়ে থাকে। যদিও সে এটা প্রত্যক্ষ করেছে যে, স্মার্ট বয় রাজ্জাকের জন্য শাবানার হৃদয়ে no vacancy. কিন্তু dating room-এ একান্ত অভিসারে, তারা দু'জন যে কামনার ডুব সাগরে সাঁতার কাটেনি; সেটারই বা নিশ্চয়তা কি???
ফেসবুক সেলিব্রেটির মতন শাবানা হয়তো পাংকু বয় রাজ্জাককে সত্যিই মনে জায়গা দেয়নি। কিন্তু এটাও তো সত্য রাজ্জাকের মত স্মার্ট এন্ড ড্যাসিং হিরোদের সাথে, শাবানার মত এ যুগের হাল ফ্যাশনেবল মেয়েরা ক্ষণসময়ের Dating করার ব্যাপারে মুখিয়ে থাকে। কিন্তু, বিয়ে করার বেলায় ঠিকই ইনোসেন্ট কিংবা মানি মেকার ছেলে খোঁজে। তসব ভেবে, আলমগীর fully confused শাবানাকে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখবে কিনা! সেই সিদ্ধান্তে।
আলমগীর-শাবানার এই বর্তমান এবং সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ জীবন "রামায়ণ" tragedy-কে কিঞ্চিৎ ছুয়ে যায়।
মহাকাব্য "রামায়ণ"এর কাহিনী থেকে জানা যায়, শ্রী রাম এবং সীতা ছিলেন দীর্ঘ ১২ বছর Childless couple. ঘটনাক্রমে দুষ্টু রাবণ সীতাকে কিডনাপ করে, লঙ্কায় নিয়ে যায়। সে প্রায় বছর খানেক সীতাকে নিজের কাছে রেখেছিল। শ্রী রাম Long adventurous journey করে লঙ্কায় গিয়ে রাবণকে 'ঢিস-ক্যাউ' করেন এবং সীতাকে উদ্ধার করে আনেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই শ্রী রাম জানতে পারে, সীতা প্রেগন্যান্ট। সীতা একত্রে দুই সন্তান জন্ম দিল।
"সীতার প্রেগন্যান্ট ইস্যু ও সন্তান জন্মদান" ব্রেকিং নিউজ আকারে ছড়িয়ে পড়ে দেশে বিদেশে। এই ঘটনা তখনকার সোস্যাল নেটওয়ার্ক হাটে-বাজারে.com-এ ঝড় তোলে এবং নানান মুখরোচক গল্পের জন্ম দেয়। রক্ষণশীল, সুশীল, কবি- সাহিত্যিকদের আড্ডা-আসরে এমনকি ক্যাবিনেট মিনিস্টারদের মিটিংয়েও "সীতা ইস্যু" নিয়ে নিচুস্বরে গুজুর গুজুর ফুসুর ফুসুর চলতে থাকে। ফলে সোসাইটিতে শ্রী রামের 'ইমেজ' হুমকির মুখে পড়ে।
কিন্তু সীতার পক্ষ নিয়ে শ্রীরাম জোর গলায় একথা একবারও বলতে পারেনি যে, "ওই ব্যাটা! আর একটা কথা বলবি তো, তোর মুখ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো। আমার বউকে নিয়ে তোদের এত মাথাব্যথা কেন?"
যাইহোক, ব্লাক স্টোন আলমগীরও যে ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে না। সেটার নিশ্চয়তা আছে কি? "রামের মত যদি তারও একই পরিণত হয়। তাহলে কি জবাব দেবে?" এমন ভাবনা চেপে বসে আলমগীরের মাথায়।
শ্রী রামের ইমেজ সংকট কাটাতে এবং নিজেকে prove করতে, সেই সময়কার মুখরোচক স্টোরি মেকার'দের সামনে সীতা অগ্নিপরীক্ষা দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। সীতা প্রমাণ করেছিল, "সে অসতী নয়।"
কিন্তু, একালের ডিজিটাল যুগের higher intelligent নায়িকা শাবানা, সেকেলে সীতার মত সতীত্ব প্রমানের জন্য "অগ্নিপরীক্ষা" কিংবা "টু ফিঙ্গার টেস্ট"-এ অংশগ্রহণ করবে; এতটা বোকা না। বরং শাবানা তার হার্টফুল আবেগ দিয়ে খুবই স্টাইলিশ ভংগিতে আলমগীরকে বুঝানোর চেষ্টা করে, "বিশ্বাস কর আলু(আদুরে সম্বোধন)। it's an accident. তাছাড়া dating room-এ রাজ এর সাথে থুক্কু... কি যেন, ওর নাম! ও হ্যাঁ! মনে পড়েছে। ঐ বাজে ছেলে রেজ্জাকের সাথে আমার ওরকম কিচ্ছু হয়নি। Please, believe me."
শাবানার মুখ থেকে "আলু" ডাক শুনে, রাগে ...... জ্বলে আলমগীরের। (বিঃদ্রঃ কবুতরের পিত্ত নেই শুনেছি। তাই, শুন্যস্থানে অন্যকিছু ভেবে নিন)। শুধু তাই নয়, "ওরকম কিচ্ছু হয়নি" এবং "বাজে ছেলে রেজ্জাক(যদিও মুখ ফসকে প্রথমে বলেছে রাজ)" কথাগুলো আলমগীরকে আরো বেশী ভাবিয়ে তোলে। what does she mean by "ওরকম কিচ্ছু"? আর ওরকম কিচ্ছু হয়নি। তবে নিশ্চয়ই সেরকম কিচ্ছু হয়েছে, যেটা শাবানা লুকাতে চাইছে। তার মানে, আলবাত! ডাল মে কুচ কালা।
তাছাড়া রাজ্জাকের মত পাংকু বয়দের যেহেতু নাইট ক্লাবে যাওয়ার habit থাকে। তাই এরা যেকোন প্রকার সুযোগকে হাতছাড়া করে না। প্রথমে ফুসলিয়ে ফাসলিয়ে, মেয়েদের মনের মধ্যে "ছুকছুকানি ঢেউ" তোলার চেষ্টা করে। এতে কাজ না হলে last try হিসেবে "মিশা সওদাগর কিংবা রাবণ" থেরাপি এপ্লাই করে।
ব্লাক স্টোন আলমগীরের এমন কঠিন মনোভাব বুঝতে পেরেই হয়তো, ভেরী এক্সাইটেড গার্ল শাবানা চুপসে আছে। সে বুঝতে পারছে, আলমগীরকে বুঝানো তার পক্ষে এত সহজ না।
আসলে "নারীর সতীত্বের ব্যাপারে কোন পুরুষের মনে যদি একবার সন্দেহ ঢুকে যায় যে, "এইডা মনে হয় Intake না।" তখন সেই নারী যত বড়ই গ্লামার গার্ল হোক না কেন। তার সাথে পুরুষেরা বন্ধুত্ব করতে চাইবে, প্রেম করতে চাইবে, আদর করতে চাইবে, সুখ দিতে চাইবে। কিন্তু সংসার করতে চাইবে না।"
মান্ধাতা যুগ থেকে আজকের ডিজিটাল যুগ পর্যন্ত চলতে থাকা "পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এই সহজ হিসাব" নিমিষেই বুঝে ফেলে শাবানা। Feeling alone মুডে থাকা শাবানার হৃদয়ে বেজে ওঠে "নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা" সিনেমার হতভাগিনী আনোয়ারা থুক্কু... আলেয়ার বিরহী আর্তনাদ-
"পথ হারা পাখি.....!
কেঁদে ফিরে, একা......।"
আলমগীর-শাবানা-রাজ্জাক এই তিনের সম্পর্কের টানাপোড়েনে, আমি পড়াশোনা, খাওয়াদাওয়া কোনকিছুতেই একদম মন দিতে পারলাম না। আরো গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলাম। জল কতদূর গড়ায়, সেটা দেখার আশায়।