পোস্টস

ফিকশন

নিকোটিন।

১৫ মে ২০২৪

Shoaib ahmed

মূল লেখক শোয়াইব আহমেদ।

এপরিবারে এখন ঝামেলা হওয়াটা নিত্য। ক্যাচক্যাচ ম্যাচম্যাচ লেগেই থাকে। ছোট ছোট বিষয় নিয়ে বিরাট ঝামেলা। বড় বড় বিষয় নিয়ে আবার নীরবতা। যেন তা অগ্রাহ্য বিষয়।

সব ছেঁটে ফেলে বের হলাম নিকোটিনের খোঁজে। এলাকায় আবার আমার খোলস অনাবিল। মুখে হাঁসি, স্বভাবে স্থিরতা, চলায় বিনয় সবই আছে। যা পঙ্কিল সমাজের নাপাক চোখে আমাকে শুচিত বানায়। কানে ইয়ারফোন গুঁজে হাঁটা দিলাম এলাকার পাশের স্টেশনে।

স্টেশনের মূল থেকে লাইন ধরে কিছুদূর হাঁটলেই শুনশান নীরবতা। নিকোটিন গ্রহণের আদর্শ জায়গা। স্টেশন হতে নিকোটিন কিনে সে স্থানের দিকে লাইন ধরে আগালাম। ঠিক সে সময় পিছন থেকে হুইসেল আসলো। স্টেশনের প্রাণ, বায়ুর আবরণ ভেদ করে এগিয়ে আসছে স্বগর্জনে। কপালে তার ব্যক্তিগত চন্দ্র। হলুদ আলো সোনালি করে দিলো আচ্ছন্ন হয়ে আসা স্টেশন।

এক ছেলেকে দেখলাম। গড়নে অনেকটা আমার মত। উচ্চতা ও স্বাস্থ হুবহু আমার। চেহারা অস্পষ্ট। হটাৎ দেখলে যে কেউ আমাদের গুলিয়ে ফেলবে। পার্থক্য হল, তার হাঁটা চলায় আভিজাত্য। জামা কাপড়ে পরিচ্ছন্নতা। চুলগুলো তার কানের লতি অব্দি ও পরিপাটি। দু’হাতে অলঙ্কারহীন সাদা ধাতুর একাধিক আংটি। কেমন যেন অন্ধকার তাকে কেন্দ্র করে আকর্ষিত হচ্ছে। তাকে দেখে মনে হল, কিশোর বয়স থেকে আমি যা হওয়ার স্বপ্ন দেখি, যেভাবে চলার আশা করি সে তার মূর্তমান অবয়ব। সে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে লাইনে উঠে দাঁড়াল।

মনে হচ্ছে তার কানে হুইসেল পড়ছে না বা পড়লেও তার মস্তিষ্ক সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ করছে না। আমার দিকে মুখ করে বরাবর দাঁড়াল ট্রেনের। পেছন থেকে হলুদ আলো এসে পড়ল তার গায়ে। চেহারা অস্পষ্ট তবে কোথায় যেন আমার সাথে মিল আছে। ট্রেনের নিকটবর্তী হওয়া আকৃতি দিচ্ছিল তার পাথরে পড়া ভারহীন ছায়ার। দু’হাত মেলে এবার সে কাকে যেন আহ্বান করল। আরেহ! ছেলেটি আত্নহত্যা করছে। লোকে তার দিকে কোনো মনোযোগ দিচ্ছে না কেনো? কে জানে। লক্ষ করলাম ট্রেন তার থেকে আর মাত্র ত্রিশ পঁয়ত্রিশ হাত দূরে। ছেলেটি চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিল এরপর ধীরে ধীরে চোখ খুলে করুন দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করল। এখন তার চেহারা স্পষ্ট হল, আরেহ… এতো আমি-ই। মানে আমার মতই দেখতে। হুবহু। ছেলেটি আমার চোখে চোখ রাখল। মুহূর্ত বাদে কেমন যেন অনুমতিস্বরূপ মাথা নাড়ল। তখন আমার কী যেন হল। নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে সদ্য কেনা নিকোটিন ফেলে দৌড় দিলাম তার দিকে। যেভাবেই হোক তাঁকে বাঁচাতে হবে।

সমস্ত জোর দিয়ে ধাক্কা দিলাম তার শরীর। দেহ ভেদ করে বেরিয়ে গেল আমার কাঁধ। সাথে সাথে মিলিয়ে গেল সে দেবদূত। আরেহ…আআ!!! কী হল…ওওও? এখানে তো কোনো শরীর-ই নেই। কোথায় গেলো? এমন সময় আমায় জোরে আঘাত হানল ট্রেন ও প্ল্যাটফর্মে থামল। ছিটকে পড়লাম নয়, দশ হাত দূরে।

এবার লোক জড়ো হল। একজন রোগা পাতলা এসে হাতানো শুরু করল আমার পকেট। নব যুবক কয়েকজন ফোন তাক করল আমার দিকে অস্ত্রের ভঙ্গিতে। হলুদ চুল বিশিষ্ট একজনের ফোনের স্ক্রিনে দেখলাম তাঁকে আর আমাকে দেখা যাচ্ছে। সে কাঁদার ভঙ্গিমায় কী কী যেন বলছে কাকে। এক মুরব্বি দৌড়ে এসে গলায় হাত দিয়ে নিরীক্ষা করে বলল, এ…এম্বুলেন্স ডাকো কেউ। তাড়াতাড়ি। কোন এক মধ্য বয়সীকে নিজের ফোন হাতে নিতে দেখলাম কর্তব্য পালন ভঙ্গিতে। মুরব্বি গালে আঘাত করে ডাকতে লাগল, বাবা। বাবা। চোখ খুলো। একমুহূর্তে নিজের সব কৃতকর্ম ভেঁসে উঠল স্মৃতিতে। শরীরের সব শক্তি একত্র করে তার হাত ধরে বললাম, থাক আংকেল! আমি ক্লান্ত। আমার দীর্ঘ বিশ্রাম প্রয়োজন। লক্ষ্য করলাম ঠোঁট শুকিয়ে আসছে। নাকে আয়রনের ঘ্রাণ। লোকজনের হইহুল্লেরও ক্ষীণ শব্দে গানের আওয়াজ আসলো কানে। ‘আমার দেহখান নিও না শ্মশান, এমনিতেও পুড়ে গেছি…।’

আমার…আমার নিকোটিনের চাহিদা….