Posts

গল্প

রুম নাম্বার "৩০৭"

December 8, 2024

রায়হান সিদ্দিকী

  "The DangeroUs ROOM In The HOSTEL "

হামদর্দ পাবলিক কলেজের হোস্টেলের মধ্যে "হামদর্দ ভবন" হচ্ছে সবচেয়ে সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন হোস্টেল।

প্রথমে একটু হামদর্দ ভবন সম্পর্কে বলা যাক, এটি ঢাকার মধ্যেসস্থ ব্যাস্ততম এলাকায় অবস্থিত। যা ঢাকা মহানগরীর কলাবাগান থানার কারওয়ান বাজার সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত । হোস্টেলের তো অবস্থান জানালাম এবার হোস্টেলের ভেতরের পরিবেশ সম্পর্কে জানাই, ভবনটি ছিল ৫তলা বিশিষ্ট ১ম ও ২য় তলা ছিল হামদর্দের-ই আরো একটি প্রতিষ্ঠান। আর হোস্টেল শুরু হয় ৩য় তলা থেকে। আমি এই তৃতীয় তলার সবচেয়ে সুন্দর রুমে থাকতাম যা হচ্ছে ৩০৭ নাম্বার কক্ষ। সবচেয়ে বিপজ্জনক বলা হলেও সবচেয়ে সুন্দর রুম ছিল এটি এই হোটেলের। এই রুমে সবার প্রথমে আমি উঠি,এর পর উঠে সাকিব,রিফাত। এরপর উঠে নোয়াখাইলা কাক্কু আল আমিন। আমি ওঠার পর রুমে আমার জিনিস রাখার পর সাকিব,রিফাত ওঠে। পরিচয় হয় তাদের সাথে। তারপর আমার বই ও অন্যান্য জিনিসপত্র কেনার জন্য চলে যাই বাইরে। তারপর আসার পর দেখি যাদের সাথে পরিচয় হয় তাদের মধ্যে একজন আছে আর একজন নাই। দেখি আরো নতুন দুজন আসছে রুমে। একজন আলিফ (নীলার জামাই) from পঞ্চগড়। আর একজন তো আগেই বললাম কাক্কু । ঐ পরিচিত সাকিব, রিফাতয়ের মধ্যে থেকে যায় সাকিব (জনি সিং)থাকে, চলে যায় রিফাত (সিফাতের জামাই) অন্য রুমে। আরো পরিচয় সেই দিন আলিফের আব্বু -আম্মুর সাথে।তারপর বিকেলের পর সবার পরিবারের সকলে আমাদের রেখে চলে যায়তে থাকে। আমরা নিজেরাই তখন নিজেদের মধ্যে পরিচিত হতে থাকি। প্রথম দিন পরিচয় হয়ে একটু গল্প করে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি কেননা পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠতে হবে সকালে আবার কলেজ যাইতে হবে। সকালে ঘুম থেকে ওঠে প্রথমে সকলেই ফ্রেস হয়ে ফজরের নামায পরে নিই। তারপর নাস্তা করি সেই ঐতিহাসিক কলেজ হোস্টেলের পাউরুটি (২/৩পিস),ডিম with স্পেশাল কাঁচা কলা ( সাগর কলা) তা দিয়ে সকালে  আমারা নাস্তা শেষ করি।এরপর নিচে এসে সাকিবের ফোন দিয়ে বাসায় কথা বলি সকলে। জীবনের নতুন একটা অধ্যায় শুরু করি তাই সবাই পরিবারের সাথে কথা বলি। তারপর সবাই রেডি হতে শুরু করি লাইফে ১ম বার ফরমাল ড্রেস পরে কলেজ যাওয়া (শার্ট,প্যান্ট এং,সু সাথে ট্রায় (দরি) আইডি কার্ড নিয়ে চলে যায় কলেজে সকলে একসাথে। প্রথম দিন কলেজে ওরিয়েন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়, শেষ করে আবার চলে আসি হোস্টেলে। তারপর আস্তে আরো অনেক জনের সাথে পরিচয় হয় মিনার ( ডাঃ মিনার) তানভির ( Dj তারভীর) নাজিবুল্লাহ (বরিশাইলা) । প্রথম দিকে ক্লাস করি ভালোই যাচ্ছিল দিনগুলি। তারপর আরো পরিচয় হয় আরেক রিফাত,শাওন, আবির, মেহেদী এদের সাথে। আরো বেশি আড্ডা দেওয়া শুরু হয় । রাত টা শুরু হওয়ার পর আমাদের রুমে বসে আড্ডার আসর ।সেই শুরু সন্ধ্যায় শেষ তার ফজরে। আর এইখান থেকে শুরু বেশি রাত জাগা ঘুম কম, যা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান।

হ্যাঁ,সবার নাম ব্যাকেটে দেওয়া আছে এই নাম দেওয়া কাহিনী বলবো কোনো টেনশন নাই। সবার নাম আছে তাহলে প্রশ্ন আমার কি নাম ওরা দিয়েছে। তাহলে শোনেন আমার নাম ওরা দেয়েছিল (ওরা বলতে Dj  তানভির)  "তান্ত্রিক" । হ্যাঁ এই তান্ত্রিক দিয়েছিল আমার নাম । হা হা হা

এই নামের পিছনে রয়েছে কাহিনী, শোনেন আপনাদের বলি , আমার হতের লেখা অনেক ছোট ছোট। আর কি যেমন করে কবিরাজ, তান্ত্রিকরা লেখে তাবিজ দেয় তেমন । তাই আমার নাম দেয়েছিল তান্ত্রিক। আর অন্ধকারে বসে অল্প আলোতে পড়ার জন্য আরো বেশি নামটি  জনপ্রিয়তা অর্জন করে সবার কাছে। সুতরাং আমি হয়ে ওঠি "তান্ত্রিক" হোস্টেলের । হা হা হা

আসেন একে একে এদের কয়েক জনের নামের রহস্য উন্মোচন করি।


 

প্রথমে নাম দেওয়া হয় আমার রুম-মেট কাক্কু কে। এর নাম টা দেন সবার প্রিয় সিফাতের জামাই বা সিদ্দিক ভাই। নামটা হঠাৎ করেই দেয় তার ভাব ভঙ্গি দেখে।

আর তারপর ওর নাম হয়ে ওঠে সবার কাছে কাক্কু।


 

এরপর নাম দেওয়া হয় কলেজ টপার শয়তানি বুদ্ধিতে ভরপুর সবার এক্সামের আগে সমস্যা সমাধানের গুরু সেই জনি সিং। ওর এই নাম দেওয়া পিছনে অনেক বড় মজাদার কাহিনী আছে। তার একটাই কথা ছিল সে যত খারাপ কাজই করুক না কেন, নামাজ ছাড়বে না। যেমন ধরেন ফোনে পর্ন দেখা তারপর ওয়াশ রুমে যেয়ে হস্ত*মৈথুন  করে গোসল করে ফজরের নামায পরা। আর সেই ছেলের চুল ওঠে যাচ্ছিল অনেক তাই সে "নাড়া"  হয়ে যায় তাও অনেক কয়বার নাড়া হয় । এজন্য তার এই নাম দেয় বরিশাইলা "জনি সিং" কেননা সেই জনির মাথায় চুল নেই আর এর মাথায়ো চুল নেই। তাই নামটা সার্থক এর খেতাব অর্জন করে।


 

তারপর পর পর নাম দেওয়া হয় সিফাতের জামাই সিদ্দিক ভাইয়ের। এই সিদ্দিক ভাই কিন্তু সেই যেই আমার রুম-মেট হতে চেয়েও রুম পরিবর্তন হয়ে যায়। 

সিফাতের জামাই নাম দিই আমিই বলতে গেলে, কেননা তার লাভ স্টোরি থেকে জানতে পারি ওর জিএফের নাম সিফাত। আর ঐ খান থেকে এই নাম দিই তাও নামটা সার্থক তেমন না কেননা এই নাম ধরে সবসময় তাকে ডাকা যায় না বা পোপুলার হয়ে ওঠে না। কিন্তু তার সিদ্দিক ভাই নামে সে ব্যাপক ফ্রেমাস হয়ে ওঠে। সে দেখতে অনেকটা সিদ্দিক ভাইয়ের মতো ছিল যার জন্য এমন নাম দেওয়া হয় ওর । এই সিদ্দিক ভাই কে আপনারা চিনতে পারেন । এক সময় ভাইরাল হয়েছিল," আমার ভুল হয়েছে,ক্ষমা করে দেন"। হয়ত তারে আপনারা চিনবেন।


 

Dj তারভীর এর নামের কাহিনী শুনাই, পোলায় ছিল ফাফর বাজ,,যা বলত অবশ্য সত্যি কথাই বলত। আর ওর প্রধান কাহিনী হলো কলেজ স্যার ম্যাডামকে নিয়ে কথা,,কি কথা একটু বোঝার চেষ্টা করলে বুঝতে পারবেন হয়ত।। হি হি হি হি 

               " বুঝলে বুঝ পাতা না হলে শুকনো পাতা " 


 

আর সবার নাম এলাকা ভিত্তিক বা জিএফ উপর রেখে রাখা হতো।


 

আরো কয়েক জনের সাথে পরিচয় করে দি চলেন। এগুলো মাত্রা অতিরিক্ত ডেঞ্জারাস। কেননা হোস্টেলের যেখানে ওদের সাথে হোস্টেল সুপার এর সাথে দেখা হয় না কেন ওদের সাথে যারা থাকবে তারাও মারা খাই। 

    চলেন নামগুলো শুনাই শিমুল,রাফি, আবির আরো কয়েক পিস ছিল যা মাস্টার পিস আমাদের হোস্টেলের। হ্যাঁ আসলে এরা যে খারাপ এমন না শুধু একটু স্মোক করে তাই যত কাহিনী। কেননা হোস্টেলে সিগারেট খাওয়া নিষেধ। এর জন্য ওদের  স্থান হয় রেমান্ড রুমে। যার রুম নাম্বার ৫০১ হোস্টেল সুপারের পাশে রুম।


 

চলেন এখন আস্তে আস্তে প্রধান কাহিনী তে একটু করে প্রবেশ করি। প্রথম দিকে কলেজ ভালো চলছিল। তারপর কলেজের পড়াশোনা যেমন তেমন অন্য দিকে মাত্রা অতিরিক্ত চাপ দেওয়া শুরু হলো। এরজন্য প্রতিনিয়ত কলেজ চেঞ্জ করতে চেয়েছিলাম আমারা ,,আর হোস্টেলের পরিবেশ দিন কে দিন আরো খারাপ হচ্ছিল । এমন নিচের গার্ড মামারা পর্যন্ত খারাপ ব্যবহার শুরু করে ছিল । একদিন সাক্ষর নিয়ে গার্ড মামার সাথে আমাদের আচ্ছা ঝামেলা হয় । আমাদের বের হওয়ার জন্য সাক্ষর করে বের হতে হয় তো সাকিব আগে গেছে হাতে টাইম বেশি নাই তাই ওরে বলছি সব সাক্ষর করে দে আমরা তাহলে তাড়াতাড়ি যাইতে পারব বলে। এই খান থেকে কাহিনী শুরু। এর পর হোস্টেল সুপার দের ব্যবহার কেমন যেন হচ্ছিল। কারণ থাকার পরে আউটপাশ চাইলে দেয় না ।এমন করে করে আমাদের উপর হোস্টেল সুপার,গার্ড কলেজের উপর রাগ ও খারাপ লাগা বাড়তে থাকে। 


 

এবার তাহলে চলেন ৩০৭এর কাহিনী শুনাই ,এই রুমে বিনা অনুমতিতে আসতে পারে রুমের সবাই অনেক ফ্রেন্ডলি। তাই আড্ডা + পড়াশোনা চলত সঠিকভাবে। আমাদের হোস্টেলে ফোন ব্যবহার নিষিদ্ধ তাই লুকিয়ে ফোন ব্যবহার করতে হত । রাত ৩ টার পর আর হোস্টেল সুপার আসত না চেক করতে । এমন সময় ই আমাদের ফোন ব্যবহার করার জন্য পারফেক্ট টাইম। আর হ্যাঁ আমাদের রুমে দরজা লক করা অপশন ছিল।যা অন্য কোনো রুমে ছিল না। বলতে পারেন এর জন্য একটু বেশি স্পেশাল রুম। তো রাতের বেলা লিওন আপু্র ফোনে চলে ওমেগালে ক্লাস সাথে কারো কারো জিএফ এর সাথে কথা বলা ।আর চলে মাঝে মাঝে প*র্ন দেখে ছেলে পেলের কি যেন করা ওয়াশরুমে । এইভাবে রাতে ভালোই চলছিল।

          হঠাৎ করে শাওনের ফোন ধরা খায় ।তাও আবার সে তার জিএফ সাথে কথা বলার সময় ৩০৭ নং রুমে। অনেক চেষ্টা করেও ফোন দিবে না বলে সিদ্ধান্ত নেই হোস্টেল সুপার। তাই রাগ আরো বাড়ে সবার সাথে আগের কাহিনী তো আছেই। কেউ অসুস্থ হলেও ছুটি দিতে চাচ্ছিল না । এমনকি পরিবারের কেউ আসলে উপরে এসে দেখা পর্যন্ত করত দিত না। নিচে কথা বলে চলে আসত হতো। কিন্তু হামদর্দের কোনো প্রতিষ্ঠান কাজ করত এমন কেউ আসলে পুরো নিয়ম ওদের জন্য পরিবর্তন হয়ে যেত । এমন করে দেখতে দেখতে সবার মধ্যে রাগ আরো জমা হতে থাকে। 


 

এমন চলতে চলতে হঠাৎ করে প্রধান হোস্টেল সুপার ছুটিতে যায় রাতের বেলা হোস্টেলে অনেক খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হয় এমন পরিস্থিতিতে সাকিব রিফাত মিলে রাতের ৩টায় প্রিন্সিপাল কে ফোন দেয় রাতের ৩ টায়। এর জন্য পরের দিন ওদের ডেকে ১/২ ঘন্টা ধরে প্রিন্সিপালের রুমে মানসিক চাপ দেওয়া হয়। এর জন্য আরো রাগ বাড়ে ।।


 

আর হ্যাঁ এই ৩০৭ নং রুমের আমরাই কিন্তু হোস্টেলের সবাই রে কন্ট্রোল করতাম। সুতরাং কিছু ঘটাতে চাইলে আমাদের দ্বারা সম্ভব ছিল হোস্টেলে। আর আমাদের এই ফ্রেন্ডের মধ্যে একতা এবং সাথে থাকার মিল ছিল । তাই আমার ফ্রেন্ড উপর হওয়া টর্চার করার বিরুদ্ধে দাড়ায় আমরা কেনা ওরা কোনো দোষ না করে সব কিছু সুন্দর ভাবে ঠিক করতে চেয়েছিল । কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তা ভুল বোঝে। এর পিছনে হোস্টেলে সুপার ছিল । 


 

এমন হওয়ার কারনে ঠিক রি হোস্টেলের মধ্যে রাতে চকলেট বোমা ফাটাবো। যা ভাবা তাই ই করা। সন্ধ্যায় কোচিং শেষ করে চলে গেলাম সবাই "চকলেট বোমা" কিনতে । কিনলাম অনেক কষ্ট করে । দামের চাইতে অনেক বেশি টাকা দিয়ে। তো এবার ফুটানোর প্লান করতে বসলাম। মেইন মাস্টার মাইন্ড আমরা আমাদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে বলে প্রতি ফোরে একজন ঠিক করলাম । ঠিক করলাম যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়বে তার পর ফাটাবো। প্রতি ফোরে ঐ ভাবে সব ঠিক করলাম ১ম তলা থেকে শুরু করে ৫তলা পর্যন্ত। রাত তিন টায় ফাটাবো ঠিক হলো । যে যে ফাটাবে তাদের কাছে গোপনে পৌঁছে দিলাম বোম আমি। আর টাইমিং আগেই বলা ছিল । সবাই সিঁড়ি দরজা কাছ থেকে ফেলে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। আর পর পর ই ফুটার আগ মুহূর্তে সবাই যেন রুমে যেয়ে ঘুমানোর ভান ধরে। কেননা এই কাজ সম্পর্কে খালি আমরা কয়েকজন ই জানতাম শুধু।রাতে ঘড়িতে তিনটা  বাজার কিছু আগে সবাই শুতে চলে আসলাম। আর যাদের দায়িত্ব দেওয়া ছিল তারা পজিশন নিয়ে ছিল। তিন টা তিন মিনিট হতেই পুরো হোস্টেল এক সাথে চকলেট বোমার শব্দে কেঁপে উঠল। সকল সুন্ডেন্ট আতংকিত হয়ে গেল সবাই ছোটোছুটি শুরু করল। যা সামলানো রিতিমতো কষ্টকর হয়ে উঠল সুপার ও গার্ডদের পক্ষে।  

       পরে কখনো এই কাজের পিছে কে কে ছিল তা বের করতে পারেনি, কেউ ধরা খাইনি। 

কিন্তু সুপার ও গার্ডদের অবস্থা অনেকটা খারাপ হয়েছিল। এর মাধ্যমে নিজেদের একটু সান্ত্বনা দেওয়া চেষ্টা করি আমরা। কেননা তারা বিনা কারনে অনেক হয়রানি হয়েছিল । 


 

পরে আরো অনেক কাহিনী আছে যার জন্য ৩০৭ কে ডেঞ্জারাস রুম বলা হয়েছে। তা ইনশাআল্লাহ পরের পাঠে আপনাদের শুনাবো। 


 

Comments

    Please login to post comment. Login