Posts

সমালোচনা

কবি সীমান্ত হেলালের মাটির মদিরা; বিষণ্ণসুন্দরের কথা

May 16, 2024

সানাউল্লাহ সাগর

Original Author Sanaullah Sagor

সমকালীন তরুণদের কবিতা কিছু হচ্ছে না এটা অনেকদিন থেকেই শুনছি। যদিও যিনি বা যারা বলছেন তাদের জাপটে ধরলে ঠিক করে সময়ের কোনো তরুণ কবির নাম পর্যন্ত বলতে পারেন না। কিন্তু ডিসিশান দেয়ার সময় পুরো ডিসিশানটাই দিয়ে দেন। সেরকম একটা ডিসিশান শুনেছিলাম কিছুদিন আগে এক পাঠক আড্ডায়। আড্ডার সাধারণ অংশগ্রহনকারী হিসেবে যথারীতি সবার পিছনে বসে ছিলাম। এক আলোচক এভাবেই বললেন, ‘ এখন তরুণরা যা লিখছে তা অনেক কঠিন । কিছুই বোঝা যায় না। সহজ করেও যে কবিতা লেখা যায়। মানুষের কাছে পৌঁছা যায় সেটা শিখানোর জন্য আমি কয়েকটি কবিতার বই লিখেছি।’
আমি একজন নাবালক পাঠক হিসেবে শুনেছি। ভেবেছি যাক শেখার তো কোনো শেষ নেই। শিখতে থাকি। সহজ-কঠিন নিয়ে আরেকদিন কথা বলা যাবে। তবে কথা হচ্ছে এমন করে যারা ভাবেন বা ডিসিশান দিয়ে দেন তাদের সাথে তরুণ কবি সীমান্ত হেলালের কবিতার বই ‘ মাটির মদিরা’র পরিচয় করিয়ে দিতে চাই। আসুন আমরা ‘মাটির মদিরায়’ ডুবে যাই....


‘বলো সাধু...
তবে কেন বহুরূপ পাথরের পসরা সাজিয়ে বসে আছো?’


এমনই প্রশ্ন কবি সীমান্ত হেলালের ‘মাটির মদিরা’ কবিতার বইয়ের ‘জাদু’ কবিতায়। কবি যেন জীবনের জাদুতে চমকে ওঠেন। নিজের অবয়ব দেখেও তার সন্দেহ তৈরি হয়। তখন নিজের অজান্তেই প্রশ্ন ছুড়ে দেন। কিন্তু এই প্রশ্ন কার উদ্দেশ্যে ! হয়তো কবিই জানেন। অথবা জানেন না।


সীমান্ত হেলালের ‘মাটির মদিরা’ কবিতার বইয়ে এমন সব কবিতার ঘ্রাণ পাওয়া যায় যেখান থেকে নিজেকে সংযত করা কষ্টকর। বারবার মনে হয় সেই বিষণ্ন সুন্দরের কথা। যেখানে বিনা বাক্য ব্যয়ে ঝাঁপ দেয়া যায়। বিনা প্রশ্নে একটা জীবন উৎসর্গ করা যায়। দুঃখ বিন্যাসে কবি বলেন-
‘ঝালকাঠীর লবনখানার নস্টালজিক পরদে যতটা না খেয়েছে শ্রমিকের ঘাম--তার চেয়েও পরিশ্রান্ত আমার হৃদয়।’
[লবণদুঃখ]


এ যেন নিজেকেই আয়নায় দেখা। এবং নিজেকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করানো। তিনি সেটি করেন সাহসের সাথে। যেখানে আয়না ও ব্যক্তি কোনো ভাগ শেষের অপেক্ষা করে না। জীবনের উহ্য ঐশ্বর্যে নিবেদিত হয়। গোপেনে। খুব গোপনে।
আবার যখন তিনি ‘ঘুম’ কবিতায় বলেন-
‘অনেক ঘুমের কালো জমেছে এ শরীরে...’


তখন আমার সামনেও একটি আয়না তৈরি হয়। সে আয়নায় নিজের অন্ধকারগুচ্ছ দেখে নেয়ার চেষ্টা করি। এবং পেয়েও যাই। যখন তার ‘হিমালয় দর্শন’ কবিতায় ঢুকি।
‘ একবার তুমি বলেছিলে--হিমালয় দেখবে
আমি বললাম,
অত দূরে নিভনদেশে যাওয়া সম্ভব নয়।
তুমি বললে--
বুকে মাথা রাখতে দাও--তবেই আমার হিমালয় দেকা হয়ে যাবে।’
এই কবিতার সাথে আমিও যেন নিজস্ব হিমালয় ঘুরে আসি। স্পর্শ করে নিই আত্মঅহম।
আবার যখন তিনি বলেন,
‘মরণ ডাকে ঢাকায়;
পিষ্ট হ’তে-চাকায়।
[ ঢাকা ]
তখন নাগরিক দৌড়ে নিজেদের আটকে ফেলা এই নগরীর গণ্ডি টের পাই। এবং মাথায় বুদ্বুদ্ তোলে প্যাকেট হয়ে থাকা ইচ্ছেরা।
এতো কিছুর পরও কবিতার চোখের স্বপ্ন আমার মধ্যে উস্‌কে দেয় বিভ্রাটে জড়ানো নিজস্বতাকে। তার লাইনের সাথে সাথে আমিও নতুন করে আবার স্বপ্নের চারা রোপন করি তাজা অক্সিজেনের লোভে।


যেন তার মতোই ছুটছি; কিংবা উড়ার ইচ্ছে ছাড়াচ্ছি--
‘জল ছোঁব না
আগুন ছোঁব
জমাটবাঁধা লবণ ভেঙে
আগুন কচলে জল ঝড়াবো...’
[স্পৃহাবৃত্তান্ত ]


কবি সীমান্ত হেলাল কবিতা যাপনে থাকুন। ভালো থাকুন।
...........
বইয়ের নাম: মাটির মদিরা
লেখক: সীমান্ত হেলাল
ধরন: কবিতার বই
প্রচ্ছদ: আল নোমান
প্রকাশনী: বেহুলাবাংলা
প্রকাশকাল: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯


Comments

    Please login to post comment. Login