প্যারিস শহরের এক নিঃশব্দ কোণে, রিউ মর্গ নামের একটি ছোট রাস্তার একটি পুরনো বাড়িতে এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। এক রাতে প্রতিবেশীরা একটি বাড়ি থেকে তীব্র আর্তনাদ শুনতে পান। পুলিশ এসে বাড়ির দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে যা দেখে, তা তাদের স্তম্ভিত করে তোলে।
ঘরের ভেতরে একজন বৃদ্ধা মহিলার মৃতদেহ পাওয়া যায়, যিনি বাড়ির মালিক। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আরেকজন, তার মেয়ের লাশ, বাড়ির চিমনির মধ্যে ঠেসে রাখা অবস্থায় পাওয়া যায়। মেয়েটির শরীরও ভীষণ ক্ষতবিক্ষত। ঘরে থাকা আসবাবপত্র লন্ডভন্ড হয়ে আছে, এবং কোথাও কোন মূল্যবান জিনিসপত্র নেই।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবাই বিভ্রান্ত, কারণ ঘরের দরজা-জানালা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। অপরাধীদের প্রবেশ এবং প্রস্থান কিভাবে হলো, সেটি রহস্য হয়ে রইল।
ডুপাঁর আবির্ভাব
গল্পের নায়ক, অগাস্ট ডুপাঁ, একজন প্রখর বুদ্ধিমত্তার ব্যক্তি। তিনি তাঁর বন্ধু, যিনি এই গল্পের কথক, তার সঙ্গে এই মামলাটি তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেন। ডুপাঁ পুলিশি তদন্তে ভুল ও গাফিলতি চিহ্নিত করতে থাকেন।
ডুপাঁ প্রথমেই খেয়াল করেন, প্রত্যক্ষদর্শীরা বিভিন্ন ভাষায় চিৎকার শোনার কথা বলেছেন। তবে তাদের কেউই সেই ভাষা চিহ্নিত করতে পারেনি। এই অদ্ভুত ব্যাপারটি তাকে অন্যভাবে চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করে।
রহস্যের সমাধান
ডুপাঁ তার অনুসন্ধানে জানতে পারেন যে হত্যাকাণ্ডের সময় ঘরে থাকা একটি চুলের গোছা কোনো মানুষের নয়। এটি একটি ওরাংওটাং বানরের চুল। তিনি ধারণা করেন, বানরটি এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী।
তাঁর পরবর্তী অনুসন্ধানে দেখা যায়, এক নাবিক তার পালিত ওরাংওটাংকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ডুপাঁ সেই নাবিককে খুঁজে বের করেন এবং তার কাছ থেকে জানতে পারেন, ওরাংওটাংটি দুর্ঘটনাক্রমে পালিয়ে যায় এবং রিউ মর্গের বাড়িতে ঢুকে পড়ে। বানরটি মহিলাদের উপর হামলা চালায় এবং তাদের হত্যা করে। পরে ভয়ে সে চিমনির মধ্যে লুকিয়ে পড়ে।
উপসংহার
ডুপাঁর অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা এবং যৌক্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে মামলাটি সমাধান হয়। পুলিশ এই তথ্য নিশ্চিত হলে নাবিককে ক্ষমা করা হয় এবং হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধী, ওরাংওটাং, তার মালিকের কাছে ফেরত দেওয়া হয়।