Posts

গল্প

কুয়াশায় মোড়ানো এক রাতের রহস্য

December 14, 2024

Abdullah Al Siam

{ কুয়াশায় মোড়ানো এক রাতের রহস্য }

কুয়াশায় মোড়ানো এক রাতের রহস্য

কুড়িগ্রামের নিস্তব্ধ এক শীতের রাত। ডিসেম্বরের কুয়াশা চারপাশকে অদৃশ্য করে দিয়েছে। শহরের ছোট রাস্তাগুলো যেন সাদা ধোঁয়ার ভেতর ডুবে গেছে। বাতিগুলো জ্বলছে বটে, কিন্তু সেই আলো কুয়াশার আবরণ ভেদ করতে পারছে না।

সিয়াম, একটি সাধারণ কলেজ পড়ুয়া ছেলে, একা বাড়ি ফিরছিল। তার মা-বাবা দাদার বাড়িতে গেছেন, বাড়িতে সে একাই। সময় তখন রাত ৩টা। রাস্তায় মানুষের চিহ্নমাত্র নেই। অদ্ভুত এক শীতল নীরবতা ভর করেছে পরিবেশে।

সে দ্রুত পা বাড়িয়ে এগোতে লাগল। কুয়াশার কারণে আশেপাশের কিছুই স্পষ্ট নয়। হঠাৎ পেছন থেকে ভেসে এলো একটা পায়ের শব্দ। ভারী, স্থির, যেন ঠিক তার পেছনে। সে থেমে গেল। ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাল।

কিছুই নেই। ফাঁকা রাস্তা। বাতাসে শুধু কুয়াশার স্রোত।

“হয়তো কল্পনা,” নিজেকে আশ্বস্ত করল সিয়াম। কিন্তু তার মনে অস্বস্তি কাজ করছিল। সে আবার হাঁটতে শুরু করল।

কিছুক্ষণ পর, আবার সেই শব্দ। এবার আরও স্পষ্ট। তার নিজের পায়ের শব্দ ছাড়াও অন্য কারও পায়ের আওয়াজ যেন তাকে অনুসরণ করছে। এবার সে থেমে চারপাশে নজর বুলাল। কুয়াশা এত ঘন যে কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না।

সে কান পেতে শুনল। চারদিক নীরব।

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে, নিজেকে সাহস দিল। “বোকা হইও না,” সে ফিসফিস করে বলল। তারপর আবার পা বাড়াল।

কিন্তু এবার সে আরও সাবধান। রাস্তার প্রতিটি দিকে নজর রাখছে। আর ঠিক তখনই, সেই শব্দ আবার শোনা গেল।

তাকিয়ে দেখল—একজন মেয়ে।

তার বয়স বিশের কোঠায় হবে। তার শরীর কালো বোরখায় ঢাকা। শুধু চোখ দুটো দেখা যাচ্ছিল। সেই চোখের দিকে তাকালে মনে হয়, কুয়াশার মধ্যে থেকেও সেগুলো যেন আলো ছড়াচ্ছে।

মেয়েটি ধীর পায়ে এগিয়ে এলো। সিয়ামের সামনে এসে থেমে গেল।

“কে আপনি?” সাহস জোগাড় করে প্রশ্ন করল সিয়াম।

মেয়েটি কোনো উত্তর দিল না। তার চোখদুটো গভীর আর রহস্যময়।

“এত রাতে একা হাঁটছেন কেন? কোথায় যাচ্ছেন?” আবার জিজ্ঞেস করল সিয়াম।

মেয়েটি কোনো কথা না বলে শুধু হাত দিয়ে ইশারা করল সামনে। যেদিকে সিয়াম যাচ্ছিল।

সিয়াম ভাবল, এত রাতে একা মেয়েটিকে এই রাস্তায় ছেড়ে যাওয়া ঠিক হবে না। সে বলল, “আমরা একসাথে যেতে পারি। আমি সেদিকেই যাচ্ছি।”

মেয়েটি মাথা নত করে সম্মতি জানাল। তারা পাশাপাশি হাঁটতে লাগল।

রাস্তাটা কেমন যেন আরও নিস্তব্ধ হয়ে উঠল। বাতাসে কেমন এক অদ্ভুত শীতলতা। মেয়েটি একেবারেই কথা বলছিল না। সিয়াম কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু তার নীরবতা যেন কথা বলার সাহস কেড়ে নিচ্ছিল।

এক পর্যায়ে, তারা একটি মোড়ে এসে থামল। মেয়েটি প্রথমবারের মতো কথা বলল।

“এত রাতে রাস্তায় থাকা নিরাপদ নয়,” তার কণ্ঠ গভীর, কিন্তু অদ্ভুত শীতল।

“মানুষের চেয়ে বিপজ্জনক কিছু নেই,” সিয়াম হেসে বলল।

মেয়েটি তাকে গভীর দৃষ্টিতে দেখল। তার ঠোঁটে এক রহস্যময় হাসি ফুটল। “তুমি ঠিক বলেছ,” সে বলল। “কিন্তু মানুষই একমাত্র বিপদ নয়।”

সিয়াম কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করল। “আপনি কি মজা করছেন?”

মেয়েটি তার দিকে তাকিয়ে বলল, “আল্লাহ মানুষকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছেন। কিন্তু আমাকে তিনি অন্য কিছু দিয়ে বানিয়েছেন।”

কথাগুলো শুনে সিয়াম অবাক হয়ে তাকাল। “আপনি কী বলতে চাইছেন?”

মেয়েটি মৃদু হাসল। “তোমার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগল। হয়তো আবার দেখা হবে।”

এই বলে মেয়েটি ধীরে ধীরে কুয়াশার মধ্যে মিশে গেল।

সিয়াম কিছুক্ষণ স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। তার মনের ভেতর হাজারো প্রশ্ন ঘুরছিল। মেয়েটির কথা, তার চোখ, তার অদ্ভুত হাসি—সবকিছু তাকে ভাবিয়ে তুলল।

বাড়ি ফিরে সে ঘটনাগুলো মনে করার চেষ্টা করল। মেয়েটি বলেছিল, “আমাকে অন্য কিছু দিয়ে বানিয়েছেন।” কথাটার অর্থ ভেবে তার সারা শরীর শীতল হয়ে গেল।

মেয়েটি কি আসলেই মানুষ ছিল? নাকি কুয়াশার আড়ালে কোনো অজানা রহস্যের ছায়া?

সেই রাতের কুয়াশা তার মনে অমীমাংসিত প্রশ্ন রেখে গেল। মানুষ কি সত্যিই একমাত্র বিপদ, নাকি রাতের গভীরতায় আরও কিছু লুকিয়ে থাকে?

Comments

    Please login to post comment. Login

  • এই গল্পটি আমি অনেক পরিশ্রম করে লিখেছি। যদি ভালো লাগে, **লাইক** ও **শেয়ার** করুন। কোনো পরামর্শ থাকলে **কমেন্টে জানান**, আমি উন্নতির জন্য প্রস্তুত। ধন্যবাদ! 🌟
    Abdullah Al Siam 1 week ago