Posts

গল্প

আতরের গন্ধ

December 15, 2024

Abdullah Al Siam

আতরের গন্ধ

গল্পের প্রিভিউ: আতরের গন্ধ

একটি শান্তিপূর্ণ গ্রাম। করিম উদ্দিন নামে এক নিঃসঙ্গ ব্যক্তি। তার নিরিবিলি জীবনে হঠাৎ করেই উপস্থিত হয় রহস্যময় আতরের গন্ধ এবং সাদা পোশাকের এক নারী। কে এই নারী? কেনই বা সে করিমের একাকীত্বকে কেন্দ্র করে উপস্থিত হলো? আলৌকিক ঘটনার মোড়কে জড়ানো একটি রহস্যময় জগতে করিমের যাত্রা শুরু হয়। মানবেন্দন মুকাবিলার দার্শনায়, এক অপরাসেণোপায়ী ইমানের পরিকাল্পন নিয়ে দেখা করা জাবে।

অধ্যায় ১: করিম উদ্দিন

গ্রামের এক কোণে একা বসবাস করত করিম উদ্দিন। বয়স উনত্রিশ, মধ্যবয়সী। নিজের গরিবি ঘর, মাটির মেঝে আর টিনের ছাউনিতে, একেবারে নিরিবিলি জীবন কাটাত সে। তার দিন কাটত নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত, আর মাঝে মাঝে চাঁদের আলোয় গ্রামের ধুলোমাখা রাস্তায় হাঁটাহাঁটিতে। নিজের ঘরের সামনে একটি ছোট বাগান ছিল, সেখানে জুঁই ফুলের গাছ। করিমের নিজের জীবন নিয়েই একধরনের শান্তি ছিল।

কিন্তু এই নিস্তরঙ্গ জীবনের মধ্যে একটা অভাব অনুভব করত করিম। জীবনের গভীরে এক শূন্যতা, একটা অজানা আকাঙ্ক্ষা। হয়তো একা থাকার অভ্যাস, হয়তো মানুষের থেকে দূরে থাকার ক্লান্তি। করিম জানত না।

এক সন্ধ্যায় এশার নামাজের পর, করিম যখন তার চেনা জায়গায় বসে কোরআন পড়ছিল, তখন হঠাৎ বাতাসে একটা অদ্ভুত গন্ধ এল। আতরের মিষ্টি গন্ধ, যা কখনোই সে নিজের ঘরে পায়নি। করিম ভাবল হয়তো পাশের কোনো ঘর থেকে এসেছে। কিন্তু গন্ধটা যেন ক্রমে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল।

মশালের টিমটিমে আলোয় করিম চারপাশে তাকাল। মাটির ঘর ছিল নির্জন, কোনো মানুষ ছিল না। গন্ধটা ধীরে ধীরে তীব্র হচ্ছিল, করিমের বুকের ধড়াস বেড়ে যাচ্ছিল।

“এটা কি আল্লাহর কোনো ইঙ্গিত?” করিম মনে মনে ভাবল।

অধ্যায় ২: প্রথম রাতের সাক্ষাৎ

রাতে করিম ঘুমানোর চেষ্টা করছিল। ঘরটা চুপচাপ, কেবল দূরের পুকুর থেকে ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু করিমের মনে একটা অস্থিরতা ছিল। সেই আতরের গন্ধ যেন তার চারপাশে ঘুরছিল। চোখ বন্ধ করেও সে গন্ধটা অনুভব করছিল।

কিন্তু হঠাৎ করিম টের পেল, তার কপালের উপর ঠান্ডা একটা স্পর্শ। সে আঁতকে উঠে উঠে বসে পড়ল। ঘরের মাঝখানে এক নারীর অবয়ব দাঁড়িয়ে ছিল। সাদা পোশাক পরা, যেন সে কুয়াশার ভেতর থেকে উঠে এসেছে।

“তুমি কে?” করিম কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করল।

নারীটি হাসল, কিন্তু সেই হাসি ছিল মিষ্টি এবং অদ্ভুত। “আমি নূর।”

“তুমি এখানে কেন?” করিম জানতে চাইল।

“তোমার একাকীত্ব আমাকে ডেকেছে।” নূরের কণ্ঠস্বর মধুর, কিন্তু করিমের মনে হচ্ছিল এটা বাস্তবের চেয়ে বেশি কিছু।

করিম চুপ করে ছিল। নূর ধীরে ধীরে কাছে এল, তারপর বলল, “তুমি নামাজ পড়, তেলাওয়াত কর, কিন্তু তুমি কখনো জানো না তোমার চারপাশে কী আছে।”

অধ্যায় ৩: রহস্যময় বন্ধুত্ব

পরদিন করিম চেষ্টা করল যেন রাতের ঘটনা ভুলে যেতে পারে। কিন্তু তার মনে সেই আতরের গন্ধ আর নূরের মুখ ভাসছিল।

রাত হল। করিম আবার এশার নামাজ শেষ করল, তারপর কোরআন খুলল। কিন্তু মশালের আলোতে আবার সেই গন্ধ এল। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নূর এসে দাঁড়াল। সে কিছুক্ষণ চুপচাপ করিমের পাশে বসে রইল।

“তোমার নাম করিম, তাই না?” নূর জিজ্ঞেস করল।

করিম চমকে উঠল। “হ্যাঁ। তুমি কীভাবে জানলে?”

“আমি জানি। আমি সব জানি।” নূর মৃদু হেসে উত্তর দিল। “তোমার নির্জনতা আমাকে টেনে এনেছে।”

এরপর প্রতিরাতে নূর করিমের কাছে আসতে লাগল। কখনো কিছু বলত, কখনো চুপচাপ বসে থাকত। করিম বুঝতে পারছিল না, নূর মানুষ না অন্যকিছু। তার মধ্যে একধরনের ভীতি আর কৌতূহল তৈরি হচ্ছিল।

অধ্যায় ৪: গ্রামের গুজব

গ্রামের মানুষ করিমের পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল। সে আগের চেয়ে বেশি চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল, দিনের বেলায় বাড়ি থেকে খুব কম বের হত। মানুষজন ফিসফিস করে বলাবলি করত, “করিম পাগল হয়ে গেছে নাকি? রাতে কোনো কিছুর সঙ্গে কথা বলে।”

একদিন করিমের পাশের বাড়ির রফিক চাচা এসে বললেন, “শুনছো করিম, তোর ঘরের আশপাশে নাকি কিছু অদ্ভুত জিনিস দেখা গেছে। এটা কি সত্যি?”

করিম কিছু বলল না। সে জানত, যদি কিছু বলে, মানুষ তাকে বিশ্বাস করবে না।

অধ্যায় ৫: ওলামাদের পরামর্শ

করিম অবশেষে মসজিদের ইমামের কাছে গেল। ইমাম করিমকে একটা তাবিজ দিলেন। “এটা সব অশুভ শক্তি দূর করবে।” করিম তাবিজটি নিজের ঘরের দরজায় ঝুলিয়ে রাখল।

কয়েকদিন মনে হলো নূর চলে গেছে। করিম আবার নিজের জীবনে ফিরে আসার চেষ্টা করছিল।

কিন্তু এক রাত, যখন করিম পুকুরের ধারে হাঁটছিল, তখন আতরের সেই গন্ধ আবার এল। সে পেছনে তাকাতেই নূরকে দেখতে পেল। নূরের চোখে এক ধরনের জ্বলন্ত আলো ছিল।

“তুমি ভেবেছিলে আমি চলে গেছি?” নূর চিৎকার করল।

অধ্যায় ৬: চূড়ান্ত মুখোমুখি

করিম এবার সিদ্ধান্ত নিল, সে নিজের ইমানের শক্তি দিয়ে নূরের মোকাবিলা করবে। সে নিজের ঘরে বসে আয়াতুল কুরসি পড়তে লাগল। নূর ঘরের মধ্যে ঢুকে এল। বাতাস ভারী হয়ে উঠল, মশালের আলো নিভে গেল।

নূর চিৎকার করে বলল, “তুমি আমাকে দূর করতে পারবে না!”

করিম কোরআনের তেলাওয়াত জোরে জোরে করতে লাগল। নূরের অবয়ব ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে গেল। শেষে একটা ভোঁতা শব্দ করে নূর মিলিয়ে গেল।

অধ্যায় ৭: বিষণ্ন সমাপ্তি

নূর চলে গেছে, কিন্তু করিম জানে তার স্মৃতি থেকে নূরকে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। মাঝে মাঝে সেই আতরের গন্ধ তার নাকে এসে লাগে। সে জানে না, এটা বাস্তব নাকি তার মনের ভ্রম। কিন্তু একা জীবনের এই নিস্তরঙ্গতায় সে আবার ফিরে এসেছে। হয়তো কোনোদিন, অন্য কোনো রাতে, নূর আবার ফিরে আসবে।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • nice.onek sundor lekha.
    Muhammad Emran 6 days ago