Posts

গল্প

প্রেতগ্রাম: রহস্যের অভিশপ্ত কাহিনি

December 21, 2024

Subit Baran Mallick

প্রেতগ্রাম: রহস্যের অভিশপ্ত কাহিনি

অধ্যায় ১: অন্ধকারের শুরু  

সিলেটের এক প্রত্যন্ত গ্রাম, যার নাম মৃত্যুঠাকুরপাড়া। প্রাচীন এই গ্রামটি ঘিরে রয়েছে গভীর জঙ্গল আর ছোট নদী। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করে, সেখানে রাত নামলেই ভৌতিক উপদ্রব শুরু হয়। “ঠাকুরবাড়ি” নামে পরিচিত গ্রামের এক পরিত্যক্ত বাড়িকে সবাই অভিশপ্ত বলে জানে। শোনা যায়, এই বাড়ির বংশের শেষ উত্তরাধিকারিণী ফাতেমা সুলতানাকে এক অভিশাপের কারণে হত্যা করা হয়েছিল। সেই থেকে বাড়িটিতে নাকি ফাতেমার প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায়।  


 

গ্রামের লোকেরা কখনোই রাতের বেলা বাড়িটির ধারে-কাছেও যায় না। যারা ভুল করেও কাছাকাছি গেছে, তারা আর জীবিত ফেরেনি। তবে ইদানীং আরও ভয়ংকর ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে। গ্রামের মানুষ একের পর এক নিখোঁজ হচ্ছে। 


 

গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এই আতঙ্কগ্রস্ত গ্রামে পা রাখলেন বিখ্যাত গোয়েন্দা রুকাইয়া সুলতানা, একজন নির্ভীক এবং বিচক্ষণ পুলিশ অফিসার। তার সঙ্গে আছেন সহকারী হাবিবুল্লাহ এবং স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা আজমত আলী।  


 

তাদের কাজ হলো নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং গ্রামের এই রহস্যময় ঘটনার সমাধান করা।  


 

অধ্যায় ২: ঠাকুরবাড়ির অভিশাপ  

রুকাইয়া সুলতানা গ্রামের মুরুব্বিদের কাছ থেকে ঠাকুরবাড়ির গল্প শুনলেন। ফাতেমা সুলতানার মৃত্যুর পর থেকে নাকি এই বাড়িতে কান্নার আওয়াজ, অদ্ভুত ছায়ামূর্তি, এবং ঘন কালো ছায়ার মতো কিছু দেখা যায়।  


 

গ্রামের একজন বৃদ্ধ, আব্দুল করিম, রুকাইয়াকে বলেন,  

“মা, আমরা এখানে বহু বছর ধরে থাকি। কিন্তু রাত নামলে কেউ ঠাকুরবাড়ির আশপাশে যায় না। আমি দেখেছি... নিজের চোখে দেখেছি... সেই কালো ছায়া। আমি ওখান দিয়ে গেলে আমার হাত পা অবশ হয়ে গেছিল। তারপর কয়েকদিন জ্বরে ভুগছিলাম।”  


 

রুকাইয়া এসব কথায় বিচলিত না হয়ে গ্রামে নিখোঁজ হওয়া মানুষের পরিবারদের সঙ্গে কথা বললেন। সবাই একই ধরনের কথা বলল—তাদের প্রিয়জনেরা রাতের বেলা ঠাকুরবাড়ির দিকে গিয়ে আর ফিরে আসেনি।  


 

অধ্যায় ৩: প্রথম রাতে প্রহর 

রুকাইয়া, হাবিবুল্লাহ, এবং আজমত আলী একটি প্ল্যান তৈরি করলেন। তারা রাতে ঠাকুরবাড়িতে গিয়ে তদন্ত করবেন। তবে গ্রামের লোকজন তাদের সাবধান করল।  


 

“আপনারা ওই বাড়িতে যাবেন না, খোদার কসম! জীবন নষ্ট হয়ে যাবে।”  


 

তারা গ্রামবাসীদের ভয় দূর করতে বললেন এবং রাত নামার পর ঠাকুরবাড়ির দিকে রওনা দিলেন।  


 

ঠাকুরবাড়ির সামনে পৌঁছানো মাত্রই এক অদ্ভুত পরিবেশ তাদের ঘিরে ফেলল। চারপাশ যেন নিস্তব্ধ, বাতাসে কেমন একটা গন্ধ। বাড়ির বড় ফটক ভাঙা, ভেতরে জঙ্গল গজিয়েছে। টর্চের আলো ফেলে দেখে তারা পুরনো দেওয়ালে অদ্ভুত সব দাগ, যেগুলো রক্তের মতো লেগে আছে।  


 

অধ্যায় ৪: অদ্ভুত কান্না  

রাত গভীর হতে থাকে। হঠাৎ করেই তারা শুনতে পান মৃদু কান্নার শব্দ। রুকাইয়া সবাইকে শান্ত থাকতে বললেন। তারা আস্তে করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলেন।  


 

একটি ঘরে তারা দেখতে পেলেন ছেঁড়া কাপড়, একটি পুরনো আয়না, আর মেঝেতে লাল রঙের দাগ। আয়নার দিকে তাকাতেই হাবিবুল্লাহ চিৎকার করে উঠল, “ম্যাডাম! আয়নায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে!”  


 

রুকাইয়া টর্চের আলো ফেললেন। আয়নাটি পুরনো এবং ফাটল ধরে গেছে। তবে কিছুই স্পষ্ট বোঝা গেল না।  


 

অধ্যায় ৫: রহস্যের গোপন কক্ষ  

তারা বাড়ির বিভিন্ন অংশ খুঁজতে থাকে। হঠাৎ একটি গোপন দরজা দেখতে পান। দরজাটি খোলা হলে দেখা যায়, ভেতরে একটি সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে। সিঁড়ি ধরে নেমে তারা দেখতে পেল একটি গুপ্ত কক্ষ।  


 

কক্ষটির ভেতরে রয়েছে অনেক পুরনো বই, জমিদার পরিবারের দলিল, এবং একটি বড় ধাতব সিন্দুক। সিন্দুক খুলতেই তারা আবিষ্কার করল অনেক স্বর্ণালঙ্কার এবং একটি চিঠি। চিঠিতে লেখা ছিল:  


 

"আমাকে বিশ্বাসঘাতকতা করে মেরে ফেলা হয়েছে। আমার আত্মা শান্তি পাবে না।"  


 

এই চিঠি পড়ে রুকাইয়ার মনে সন্দেহ হয়। তিনি ভাবেন, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছে।  


 

অধ্যায় ৬: চূড়ান্ত ধোঁকা  

তারা যখন কক্ষটি খুঁজে দেখছিলেন, তখন হঠাৎ একদল মুখোশধারী লোক তাদের ঘিরে ধরে। লোকগুলো স্থানীয় দাগি অপরাধী, যারা গুপ্তধন আত্মসাৎ করার জন্য ভয়ের গল্প ছড়িয়ে দিয়েছে।  


 

কিন্তু রুকাইয়ার উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের কারণে তারা পালাতে পারে না। রুকাইয়া এবং তার দল সমস্ত অপরাধীদের ধরে ফেলে।  


 

শেষ অধ্যায়: কুসংস্কার থেকে মুক্তি  

গ্রামের মানুষ জানতে পারে যে অভিশাপ বলে কিছুই নেই। সবকিছুই ছিল মানুষের লোভের ফল। ঠাকুরবাড়ি অভিশপ্ত নয়, বরং এর ইতিহাস ছিল ধ্বংসের কাহিনি।  


 

রুকাইয়া গ্রামের মানুষকে সচেতন করেন এবং বলেন,  

“ভয় আসলে মানুষের মনেই থাকে। কুসংস্কার দিয়ে সমাজ কখনো উন্নতি করতে পারে না।”  

Comments

    Please login to post comment. Login