২০১৪ সাল। ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া বনাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারন করছে। এর মাঝে ঘটে গেছে দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। একদিকে এক অত্যন্ত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গুপ্তসঙ্ঘের খোলনলচে জেনে সিআইএ এজেন্ট কার্ল হাসান সেভার্স পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। আধা মার্কিনি - আধা বাংলাদেশি এই এজেন্ট আশ্রয় নিয়েছেন মাত্র তিনমাসের পরিচয়ে পরিচিত 'দ্য অ্যাজেন্সি' এজেন্ট সাব্বিরের কাছে, শ্রীমঙ্গলে। অন্যদিকে বাংলাদেশের ঘাড়-ত্যাড়া সৎ প্রধানমন্ত্রি গাজী সোবহানুল হকের একমাত্র মেয়ে আনিলা বাজিকর জনিসহ উধাও হয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে ঐ প্রক্সি যুদ্ধক্ষেত্রের শহর দোনেৎস্ক বিমানবন্দরে আঁটকা পড়েছেন তারা।
বিনিময়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রির মেয়ের বিনিময়ে 'অক্টোপাস' নামক সঙ্ঘ যেটা অনেক রাষ্ট্রপ্রধানের কাছে 'হায়ার পাওয়ার' নামে পরিচিত, যে অক্টোপাশের শুঁড় ছড়িয়ে আছে বিশ্বের সকল সরকার এবং বিভিন্ন সংস্থায়, কিলবিল করছে বৃহৎ সব ষড়যন্ত্র করতে অক্টোপাশের এজেন্ট নামের মানবশুড়গুলি, চায় কার্ল সেভার্সকে। কারণ সিআইএর এই এজেন্ট ইউক্রেনে কর্মরত অবস্থায় এমন কিছু জানতে পেরেছেন যা বিশ্বে অক্টোপাশ বিষয়ে হাঁটে হাড়ি ফাটানোর কিংবা হুইসলব্লো করার বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে তাকে।
বাজিকর। উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ এসপিওনাজ এজেন্টকে ব্রিটিশ ভারতে 'বাজিগর' বলা হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এদেশের সেরা এসপিওনাজ এজেন্টকে 'বাজিকর' উপাধীতে ডাকা হয়। যারা নাবিল মুহতাসিমের বাজিকর ত্রয়ী ( বাজিকর, বাজি ও বাজিমাত ) পড়েছেন, তারা জানেন। একজন বাজিকর অবসরে গেলে কিংবা তাকে অন্য একজন হারিয়ে বাজিকরের টাইটেলটা নিয়ে নেয়। বাজিকর জনিকে হারানোর পর কোমায় থাকা দ্বিতীয় সেরা বাবুকে ঠিকঠাক মতো জাগাতে ব্যর্থ হয়ে 'দ্য অ্যাজেন্সি' তৃতীয় সেরা আলী হায়দারকে দলনেতা বানিয়ে ছয়জনের এক টিম পাঠায় দোনেৎস্কে। কারণ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রি কোন বন্দিবিনিময় চুক্তিতে রাজি নন।
দ্য অ্যাজেন্সি। এমন এক গোয়েন্দা সংস্থা যাদের প্রতিটি এজেন্ট যেন এক একটি এটম বোমা। ভয়ানক, নির্মম এবং ক্ষমাহীন ট্রেনিঙে গড়ে ওঠা ছয়জনের টিম ইউক্রেনের লক্ষ্যস্থলে পৌছালে অনাকাঙ্ক্ষীত এক বিশাল ধাক্কা খায়। পূর্ণ এজেন্ট না হওয়া একজন হাই পার্ফর্মেন্স অপারেটিভ আহাদের সামনে এক বিশাল মিলিশিয়া বাহিনীর পাশাপাশি ছয়জন বিভিন্ন দক্ষতার ভাড়াটে সৈন্য পড়ে যান, চরম প্রতিপক্ষ হিসেবে। রহস্যময় কর্নেল সেবাস্তিয়ান যেখানে টিম লিডার।
টানটান উত্তেজনাময় উপন্যাস 'বাজিকর' যা ২০১৭ সালে বাতিঘর প্রকাশনী হতে বের হয়েছিলো, যেখানে নাবিল মুহতাসিমের অত্যন্ত গ্রাফিক ঘরানার লেখনি থ্রিলার পাঠকদের মনে জোড়ে সাড়া দিয়েছিলো, সেই উপন্যাসের গ্রাফিক নভেলে রূপান্তরের অত্যন্ত শ্রমসাধ্য কাজটি করেছেন কমিক্স শিল্পী এড্রিয়ান অনীক। নাবিলের লেখার স্টাইল এম্নিতেই যথাযথ "ডোন্ট টেল, শো" টাইপের, সেখানে এরকম এসপিওনাজ থ্রিলার যেখানে ইউক্রেনের ঐ যুদ্ধাক্রান্ত শহরকে ফুটিয়ে তুলার চ্যালেঞ্জ, আহাদের পার্কুর দক্ষতা চমৎকার স্কিলের সাথে কমিক্স ফরম্যাটে অঙ্কন করা, কিংবা পুরো উপন্যাসটির গ্রাফিক নভেলে অ্যাডাপ্ট করতে যে পরিমাণ যত্নের প্রয়োজন, যেরূপ ডিটেইলিং এ আঁকা দরকার এবং বাজিকর উপন্যাসের সেই রোলার কোস্টার রাইড যেখানে একবার বইটি নিয়ে বসে পড়লে উঠতে ইচ্ছা করে না, সেই একই অনুভূতি পাঠকমনে 'বাজিকর : গ্রাফিক নভেল' সৃষ্টি করতে সক্ষম, আমার মতে।
তাছাড়া 'শ্বাপদ সনে' 'সসেমিরা' গ্রাফিক নভেলগুলির সাথে পরিচিতদের জন্য এই ৪৩৪ পৃষ্ঠার গ্রাফিক নভেলে আছে কিছু চমক। খুব সঙ্গত কারণে নাবিল ও এড্রিয়ান গ্রাফিক নভেলে মূল উপন্যাসের দুয়েকটি ঘটনা পরিবর্তন করেছেন। অ্যাডাপ্টেশনে এরকম অনেক সময় করা লাগে। গ্রাফিক নভেল শেষে বুঝতে পেরেছি বাজিকর ত্রয়ী নিয়ে কাজ করবেন নাবিল মুহতাসিম ও এড্রিয়ান অনীক। বাংলাদেশে মানসম্পন্ন পূর্ণাঙ্গ গ্রাফিক নভেলের এক নবযুগ শুরু করার পথিকৃৎ হিসেবে এ দুজন ক্রেডিট পেতেই পারেন।
বই রিভিউ
নাম : বাজিকর - গ্রাফিক নভেল
প্রকাশক : গ্রাফিক বাংলা পাবলিকেশন
মূল বই 'বাজিকর'-এর লেখক নাবিল মুহতাসিম
মূল বই থেকে গ্রাফিক নভেলে রূপান্তরে এড্রিয়েন অনীক
সংলাপ : নাবিল মুহতাসিম ও এড্রিয়েন অনীক
প্রচ্ছদ : এড্রিয়েন অনীক
কনসেপ্ট আর্ট সমগ্র - এড্রিয়েন অনীক
জনরা : এসপিওনাজ থ্রিলার
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ।