Posts

গল্প

নীলাঞ্জনা

December 23, 2024

Shinthiya Story House

23
View

একদা এক ছিল রাজকুমারী। বাবার বিশাল বড় অট্টালিকা রাজপ্রাসাদ। রাজার একমাত্র মেয়ে রাজকুমারী নীলাঞ্জনা। বাবা মা পুরো রাজপ্রাসাদে সবার চোখের মনি। দেখতে যেন এক মায়াবী পরী। যার মাথার ঘনকেশ ছাড়লে যেন মনে হয় এ যেন বর্ষার এক ঢল নেমেছে।

চোখটা যেন তার একরকম কাজল লতা। সে বিশাল প্রাসাদে রাজকুমারী নীলাঞ্জনা কে দেখাশোনা করার জন্য অনেকজন দাস-দাসী ছিল। তাদের মধ্যে একজন দাসী ছিল নীলাঞ্জনার খাসদাসী। সে সব সময় রাজকুমারীর সাথে থাকতো রাজকুমারীর কখন কি লাগবে সব সে নিজে এগিয়ে দিত। তার খাবার স্নান করার সামগ্রী এমনকি তার রূপচর্চা করার জন্য সেই দাসী তাকে সাহায্য করত। দাসির একটা ছোট্ট ছেলে ছিল। রাজকুমারী আর সে দাসির ছেলে প্রায় সমবয়সী। দাসী তার সন্তানকে লালন পালন করার জন্য রাজপ্রাসাদে রাজার কন্যাকে দেখাশোনা করার কাজ নিয়েছিলেন। দাসীটি অনেক গরিব ছিল। দাসী যখন রাজকুমারীর কাজ করতো তখন তার ছেলে রাজকুমারীর সঙ্গে খেলাধুলা করতো। রাজকুমারী ছিল অত্যন্ত সৎ ও ভালো মনের মানুষ তার মনে কোন অহংকার ছিল না। সে খুব সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারত। দাসির ছেলের সঙ্গে রাজকুমারী নীলাঞ্জনা ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে খেলাধুলা করতো। রাজকুমারীর পিতা মাতা ব্যাপারটা পছন্দ না করলেও রাজকুমারীর তাতে কিছু যায় আসতো না। কারণ রাজকুমারী ছিল একমাত্র কন্যা যার জন্য রাজামশাই তাকে মাথায় তুলে রাখত। রাজামশাই তার মেয়েকে কখনো রাজপ্রাসাদের বাহিরে যেতে দেয়নি তার শরীরে ময়লা লেগে যাবে সেই ভয়ে। রাজকুমারী ও সব সময় রাজপ্রাসাদের ভিতরেই থাকতো। বাহিরের জগতটা তার কাছে অচেনা ছিল। রাজকুমারী ভাবতো সে যেমন আছে সবাই হয়তো ঐরকমই থাকে। তার খেলার সাথিরাও ছিল রাজপ্রাসাদের কর্মচারীদের মেয়ে। রাজার মেয়ে হলেও তার মনে ছিল না কোন অহংকার সে সবার সঙ্গে মিশতো।  সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে ভালোবাসতো।সেই দাসির ছেলে রাজকুমারীর সঙ্গে যখন খেলাধুলা করতো তখন থেকে অর্থাৎ সেই ছোটবেলা থেকে রাজকুমারী কে ছেলেটি পছন্দ করত। তারা দুজনে একসাথে বড় হয়। কিন্তু ছেলেটি কখনো রাজকুমারী কে বলেনি তার মনের কথা। যদি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায় সেই কারণে। রাজকুমারী নিজেও ছেলেটিকে মনে মনে পছন্দ করত কিন্তু সেও তার মনের কথা কখনো প্রকাশ করেনি। রাজকুমারী তার নিজের খাবার থেকে সেই দাসীর ছেলেকে খেতে দিত। তাকে ভালো ভালো উপহার দিত। রাজকুমারী সেই ছেলেটিকে সব রকম ভাবে সাহায্য করত। ছেলেটি বাহিরে এক পাঠশালায় পড়াশোনা করতো। তার জন্য রাজকুমারী তার পাঠ্য বই সহ আরো অনেক জিনিস সেই ছেলেটিকে উপহার হিসেবে দিতো। যেন তার পড়াশোনায় কোন বাধা না পড়ে। রাজকুমারীর জন্য রাজপ্রাসাদে এসে পন্ডিত মশাই তাকে পাঠ্য দান করত। রাজকুমারী ছিল অত্যন্ত ভদ্র ও নম্র স্বভাবের মেয়ে। বাবা-মায়ের কোন কথার সে কখনো  অবাধ্য করেনি। তাই সে কখনো রাজপ্রাসাদ থেকে বাহিরে বের হয়নি। তার কোন কিছু প্রয়োজন হলে মুখ থেকে বলার সাথে সাথে রাজপ্রাসাদের সবাই যেন ব্যস্ত হয়ে যেত তার প্রয়োজনীয় জিনিস তাকে এনে দেওয়ার জন্য। রাজকুমারী আর ঐ দাসীর ছেলে এভাবেই আস্তে আস্তে একসাথে বড় হয়ে ওঠে। একজন আরেকজনের পরম বন্ধু হয়ে ওঠে। ছেলেটা একসময় বাহিরের রাজ্যে যায় তার পড়াশোনার জন্য। রাজকুমারী অনেক কষ্ট পায় কিন্তু তবুও সেই ছেলেটিকে কোন কথা বুঝতে দেয়নি। আর সেই দাসির ছেলেটিও রাজকুমারীকে কোন কিছু বুঝতে দেয়নি কারণ সে ভাবতো রাজকুমারীকে সে একাই পছন্দ করে। রাজকুমারী তো তাকে পছন্দ করেনা তাহলে সে কিভাবে তার মনের কথা বলবে। তাছাড়াও রাজকুমারী ছিল রাজপ্রাসাদের অট্টালিকায় থাকা রাজকুমারী রাজার মেয়ে। আর সে ছিল সামান্য দাসির ছেলে। রাজকুমারী কে যদি তার মনের কথা বলে তবে রাজামশাই জানতে পারলে হয়তো তার গর্দান নিয়ে নেবে। ছেলেটির চার বছর বাহিরে পড়াশোনা করে একটা ভালো কাজ পায়। তার মাকে দেখাশোনা করার জন্য সে আবার তার নিজের রাজ্যে ফিরে আসে। নিজের রাজ্যে ফেরার কিছুদিন পর রাজকুমারীর সাথে দেখা করে। রাজকুমারী কে দেখে ছেলেটি আর তার চোখ ফেরাতে পারে না। ছেলেটি যে রাজকুমারী কে দেখে গিয়েছিল এ যেন তার থেকেও অপরূপ সুন্দরী। এতদিন পর তাদের আবার দেখা হয়েছে। তারা দুজনেই অনেক খুশি। ছেলেটির মা আর এই প্রাসাদে কাজ করে না কারণ তার অনেক বয়স হয়ে গেছে। ছেলেটি এজন্য রাজপ্রাসাদে খুব একটা যাতায়াত করতে পারতো না। এজন্য সে রাজকুমারী কে বলে তুমি রাজপ্রাসাদের বাহিরে এসো আমরা বাহিরে একসঙ্গে দেখা করব গল্প করব আর অনেক মজা করব। কিন্তু রাজকুমারী এতে রাজি হয় না। সে বলে তার পিতা যদি জানতে পারে তাহলে অনেক রাগ করবে কারণ সে তার জন্মের পর থেকে এ আঠারো বছরে কখনো রাজপ্রাসাদের বাহিরে যায়নি। তার আজ প্রসাদের বাহিরে কখনো কোন প্রয়োজনে যেতেও হয়নি। কিন্তু ছেলেটি বলেছিল তুমি যদি বাহিরে না আসো তাহলে তোমার সঙ্গে আমার আর দেখা হবে না। কারণ রোজ রোজ আমাকে রাজপ্রাসাদে ঢুকতে কেউ দেবে না আর তোমার সঙ্গে দেখা করা তো আমার জন্য দুর্বিষহ কাজ। এইটা বলে ছেলেটি সেখান থেকে চলে যায়। ছেলেটির নাম ছিল আমির। ছোটবেলায় তার পিতা মারা গেছে মা তাকে একা একা মানুষ করেছে রাজপ্রাসাদে কাজ করে। এখন সে ছোটখাটো কাজ করে যার জন্য তার মাকে আর দাসের কাজ করতে হয় না। সে আর তার মা একাই একটা বাড়িতে থাকতো। তাদের বাড়িতে আগে অনেক ছোট ছিল। এক কথায় বলতে গেলে কুঁড়েঘর। কিন্তু ছেলেটি কাজ করার পর তাদের বাড়িটা অনেক সুন্দর করে ফেলেছে মোটামুটি দুইটা রুমের ঘর তুলেছে। তাদের অবস্থা এখন আগের থেকে অনেকটাই ভালো। আমির রাজপ্রাসাদ থেকে চলে আসার পর প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে যায় নীলাঞ্জনা সাথে তার দেখা হয়নি। সে মনে মনে ভাবে নীলাঞ্জনার সাথে হয়তো তার আর কখনো দেখা হবেও না। আমির ভাবে নীলাঞ্জনা তো তাকে ভালোবাসে না সে শুধু একাই নীলাঞ্জনা কে ভালোবাসে। তাই হয়তো নীলাঞ্জনা তার সঙ্গে দেখা করার জন্য আর আসবেনা।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • আসসালামু আলাইকুম। আমার জীবনের প্রথম লিখা গল্প এটা। গল্পটা অনেক বড় করার ইচ্ছে আছে যদি আপনারা সবাই আমার পাশে থাকেন। গল্পটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে অবশ্যই একটা ভোট দিবেন আর আমার পাশে থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ 🌸✌️