হয়তো নীলাঞ্জনা আর তার সাথে দেখা করতে আসবে না। ছেলেটা মনে মনে অনেক কষ্ট পায় কিন্তু সে কাউকে কিছু বলে না। এভাবেই সময় কাটতে থাকে। দুজনের প্রতি দুজনের টানো বাড়তে থাকে। আমির সব সময় একা একা বসে থাকতো কারো সঙ্গে বেশি কথা বলতো না। তার মা তাকে জিজ্ঞাসা করলে সে কিছু বলতো না। মা যদি শুনে কষ্ট পায় সেজন্য। এদিকে রাজকুমারী নীলাঞ্জনা ও মনে মনে কষ্ট পেতে থাকে। এতদিন পর তার প্রিয় মানুষের সাথে আবার দেখা হয়েছে কিন্তু তাদের বন্ধুত্ব আর টিকবে না। সব সময় ভাবতো কিন্তু সে চাইলেও কিছু করতে পারত না। রাজকুমারী ভাবতো আমি তাকে ভালোবাসি তাই আমি তার কথা এত ভাবি কিন্তু সে তো আমায় ভালোবাসে না। তাই হয়তো সে আমার কথা ভুলেই গেছে। আমি শুধু শুধু তার কথা ভাবছি। ওইদিকে আমির আর থাকতে না পেরে সে সিদ্ধান্ত নেয় যে রাজকুমারীর সাথে যেভাবেই হোক তার দেখা করতে হবে। তাকে তার মনের কথা বলতে হবে। সে পরিকল্পনা করে নেয় কিভাবে রাজকুমারীর সাথে দেখা করবে।
একদিন গভীর রাতে যখন সবাই নিজেদের ঘুমে ব্যস্ত সেই রাতে আমির নীলাঞ্জনার সাথে দেখা করতে যায়। সে অনেক কষ্টে দেয়াল টপকে রাজপ্রাসাদে প্রবেশ করে। চারিদিকে অনেক প্রহরী কেউ ঘুমোচ্ছে আবার কেউ পাহারা দিচ্ছে। রাজকুমারী তো থাকতো রাজপ্রাসাদের অন্দরমহলে সেখানে যার তার পক্ষে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। রাজকুমারীর ঘরের সামনেও পাহারাদার ছিল। তারপরেও সে অনেক কষ্ট করে প্রহরীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক কষ্টে রাজকুমারীর ঘরের জানালা দিয়ে তার ঘরে প্রবেশ করে। আমির যখন ঘরে প্রবেশ করে হঠাৎ করেই রাজকুমারীর ঘুম ভেঙে যায়। অন্ধকারে সে বুঝতে পারেনা তার ঘরে কে এসেছে তাই সে চিৎকার দিতে যায় আর ঠিক সেই মুহূর্তে আমির দৌড়ে গিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। যেন রাজকুমারীর কিছু বলতে না পারে। আমির বলে নিরঞ্জনা--------
আমির বলে নীলাঞ্জনা আমি এসেছি। তোমার বন্ধু আমির। তুমি ভয় পেয়ো না। আর একটু আস্তে কথা বলো নয়তো প্রহরীরা জেগে যাবে। আর এত রাতে আমায় তোমার ঘরে দেখলে আমার গর্দান নিয়ে নেবে তোমার বাবা। রাজকুমারী তখন আর কোন কথা বলে না। এরপর দুজন দুজনের সাথে অনেক কথা বলে। আমির ভেবেছিল সে নীলাঞ্জনা কে সব কথা বলে দিবে। কিন্তু বলতে পারিনি এদিকে রাজকুমারী ভাবছিল আমির কি আমায় পছন্দ করে নয়তো এতো রিস্ক নিয়ে আমার সঙ্গে দেখা করতে কেন আসবে?
তবে কি আমির আমাকে পছন্দ করে এটা সে বলতে এসেছে এসব ভাবতে ভাবতে তাদের অনেক সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু কেউ কাউকে তাদের মনের কথা বলে উঠতে পারেনি। এরই মধ্যে রাজপ্রাসাদের ভেতরে সারা পড়ে যায় কেউ ভেতরে প্রবেশ করেছে। সবাই অনেক চেচামেচি করছে কেউ একজন ভেতরে এসেছে বলে। পায়ের ছাপ দেখে দেখে প্রহরীরা খোঁজ করছিল। প্রহরীরা ভাবছিল মনে হয় চোর ঢুকেছে। অনেকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে। তারপর পায়ের চিহ্ন ধরে তারা রাজকুমারীর ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিল কারণ রাজকুমারীর ঘরে চোর এটা একটু অবিশ্বাস্য ব্যাপার ছিল। তারা নিজেরা কোন পদক্ষেপ না নিয়ে রাজামশাই কে খবর দেয়। রাজামশাই জানতে পেরে রাজকুমারীর ঘরের সামনে আসে প্রহরীদের জিজ্ঞাসা করে এই লোকটির পায়ের ছাপ রাজকুমারীর ঘরের ভেতরে কিভাবে গেল। তোমরা তো বাহিরেই ছিলে তাহলে কি তোমরা ঘুমচ্ছিলে। রাজামশাই অনেক রাগারাগি করে তারপরে তার মেয়েকে ডাকতে থাকে।
নীলাঞ্জনা, নীলাঞ্জনা, মা নিলাঞ্জনা তুমি কি ঘুমাচ্ছ? একটু ওঠো তোমার সঙ্গে একটু কথা বলবো। রাজা তার মেয়েকে অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করে তারপর নীলাঞ্জনা তার ঘরের দরজা খুলে। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে ঘুমোচ্ছিল। রাজ মশাই তাকে সব কিছু খুলে বলে কিন্তু রাজকুমারী বলে তার ঘরে কেউ আসেনি আর যদি এসেও থাকে তাহলে আবার চলেও গেছে।কারণ সে তো ঘুমোচ্ছিল সে কাউকে দেখেনি। রাজামশাই তার ঘরের ভেতরে দেখতে চাই কিন্তু রাজকুমারী তাতে বাধা দেয়। বলে বাবা প্রয়োজন নেই আমার ঘরে কেউ নেই তোমরা আমার ঘরে না খুঁজে বাহিরে কোথাও খোঁজো। লোকটি হয়তো আমার রুমের সামনে এসেছিল কিন্তু হয়তো সে ঢুকতে পারেনি তাই অন্য কোথাও চলে গেছে। মেয়ের কথায় রাজা মশাই তাকে আর কিছু বলে না। প্রহরীরে বলে তোমরা বাহিরে দেখো আর কোন কিছু চুরি গেছে কিনা সেটা দেখো। বলে রাজকুমারী কে বলে আচ্ছা ঠিক আছে তুমি তাহলে ঘুমাও। আর যদি কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই দাসীদের ডাকবে। নীলাঞ্জনা বলে ঠিক আছে বাবা তুমি চিন্তা করোনা। তারপরে রাজা মশাই আবার নিজের কক্ষে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। প্রহরীরা যে যার জায়গা মতো চলে যায়। এরপর রাজকুমারী তার ঘর থেকে আমিরকে বের করে আর তাকে একটা কালো চাদর গায়ে জড়িয়ে দেয়। আর বলে তুমি এখান থেকে পালিয়ে যাও রাজকুমারী তার ঘরের জানালা দিয়ে তাকে অন্দরমহল থেকে বের করে দেয়। আমির রাজকুমারীর ঘর থেকে বের হয় ঠিকই কিন্তু প্রহরীদের চোখ ফাকি দিয়ে বের হতে পারে না। প্রহরীরা তাকে ধরে ফেলে। তাকে চোর ভেবে প্রহরীরা অনেক মারধর করে।
মার খেতে খেতে একটা সময় আমির নিস্তেজ হয়ে যায়। তখন প্রহরীরা তাকে প্রাসাদের বাইরে গিয়ে ফেলে আসে। ভোরের আলো ফুটলে আমিরের জ্ঞান ফিরে আসে। তখন সে আবার তার বাড়ি ফিরে যায়। গিয়ে দেখে তার মা তাকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় সারারাত ঘুমাইনি। ছেলের এমন অবস্থা দেখে মা কান্নাকাটি শুরু করে। আমির অনেক বোঝাই তার মাকে। আর নীলাঞ্জনার কথাও বলে। কিন্তু আমিরের মা তাকে কখনো তাদের আসল পরিচয় এর ব্যাপারে কিছু বলে না। শুধু বলে বাবা তুমি অনেক গরিব ঘরের ছেলে আর সেই রাজকুমারী তোমাদের ভালবাসা কি কেউ কখনো মেনে নেবে। এদিকে রাজকুমারী এসব কিছুই জানতো না।