Posts

গল্প

কুয়াশার গভীরে এক অজানা পথ

December 26, 2024

Abdullah Al Siam

24
View
কুয়াশার গভীরে এক অজানা পথ

প্রথম অধ্যায়: কুয়াশার আড়ালে

সিয়াম জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিল। মাইক্রোবাসটা পাহাড়ি পথ ধরে উপরে উঠছিল। ভোরের আলো এখনো ফোটেনি। চারদিকে শুধু কুয়াশা আর কুয়াশা। পাশের সিটে সাগর ঘুমাচ্ছিল, আর পিছনের সিটে শওকত হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল।

"কতক্ষণ লাগবে পৌঁছাতে?" সিয়াম ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করল।

"আর ঘণ্টাখানেক," ড্রাইভার জবাব দিল। তারপর যোগ করল, "তবে আজকে কুয়াশা বেশি। সাবধানে থাকবেন। অনেকে হারিয়ে যায় এই পাহাড়ে।"

সিয়াম হাসল। "আমার কাছে ম্যাপ আছে। জিপিএস আছে। হারিয়ে যাওয়ার কোন চান্স নেই।"

ড্রাইভার আর কিছু বলল না। শুধু মাথা নাড়ল।

সিয়াম আবার জানালার দিকে তাকাল। কুয়াশার মধ্যে দিয়ে গাছগুলো ভূতের মতো দেখাচ্ছিল। মনে পড়ল দাদির কথা। দাদি বলতেন, কুয়াশা নাকি ভূতদের চাদর। যখন কুয়াশা নামে, তখন ভূতেরা বেরিয়ে আসে।

"কি ভাবছিস?" শওকত হেডফোন খুলে জিজ্ঞেস করল।

"কিছু না," সিয়াম জবাব দিল। "জাস্ট দাদির কথা মনে পড়ছিল।"

"তোর দাদি না বলত পাহাড়ে ভূত থাকে?"

"হ্যাঁ। কিন্তু ওসব গল্প। আমরা তো আর বাচ্চা না।"

শওকত কিছু বলতে যাচ্ছিল। হঠাৎ মাইক্রোবাস থেমে গেল।

"কি হলো?" সাগর ঘুম থেকে উঠে জিজ্ঞেস করল।

"এখান থেকে হাঁটতে হবে," ড্রাইভার বলল। "গাড়ি আর উপরে যাবে না।"

তিন বন্ধু নেমে পড়ল। ব্যাকপ্যাক কাঁধে নিল। সামনে পাহাড়ি পথ উপরে উঠে গেছে। কুয়াশার মধ্যে পথটা হারিয়ে যাচ্ছে।

"নিশ্চিত তো?" সাগর জিজ্ঞেস করল। "কুয়াশা খুব বেশি মনে হচ্ছে।"

"আরে ভয় পাস না," সিয়াম বলল। "আমি আছি না? চল।"

তারা হাঁটা শুরু করল। পিছনে মাইক্রোবাস স্টার্ট নিয়ে চলে গেল। আর সামনে... সামনে শুধু কুয়াশার সাদা পর্দা।

কেউ জানত না, সেই কুয়াশার মধ্যে কি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।

দ্বিতীয় অধ্যায়: প্রথম দেখা

পাহাড়ি পথে হাঁটতে হাঁটতে প্রথম ঘণ্টাটা বেশ ভালোই কাটল। কুয়াশা এখনো ঘন, কিন্তু সিয়ামের নেতৃত্বে তারা নিশ্চিন্তে এগিয়ে চলছিল। সাগর মাঝে মাঝে ছবি তুলছিল, আর শওকত প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর পানি খাচ্ছিল।

"এই পথটা দিয়ে যাব," সিয়াম ম্যাপের দিকে তাকিয়ে বলল। "এখান থেকে ডানদিকে ঘুরলে একটা ঝরনা পাওয়া যাবে।"

"তুই কি নিশ্চিত?" শওকত জিজ্ঞেস করল। "কুয়াশার মধ্যে সব পথই তো একই রকম লাগছে।"

সিয়াম মোবাইলে জিপিএস চেক করল। সিগন্যাল দুর্বল, কিন্তু এখনো আছে। "হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত।"

তারা আরও কিছুক্ষণ হাঁটল। হঠাৎ সাগর থমকে দাঁড়াল।

"কি হলো?" সিয়াম জিজ্ঞেস করল।

"ওখানে... ওখানে কি কেউ দাঁড়িয়ে আছে?" সাগর আঙ্গুল দিয়ে দেখাল।

কুয়াশার মধ্যে, প্রায় পঞ্চাশ গজ দূরে, একটা সাদা আকৃতি। একজন মহিলা যেন সাদা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে। তার মুখ দেখা যাচ্ছে না।

"হ্যালো!" শওকত চেঁচিয়ে ডাকল। "আপনি কি হারিয়ে গেছেন?"

কোন উত্তর এলো না। মহিলাটি নড়ল না। শুধু দাঁড়িয়ে রইল, যেন ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

সিয়ামের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। দাদির গল্পগুলো মনে পড়ে গেল। "চল, অন্য পথ দিয়ে যাই।"

"কেন?" সাগর জিজ্ঞেস করল। "হয়তো উনি সাহায্য চাইছেন।"

"না," সিয়াম দৃঢ়তার সাথে বলল। "আমার মনে হয় না উনি সাহায্য চান।"

তারা অন্য পথে হাঁটা শুরু করল। কিন্তু প্রতি পা-এ মনে হচ্ছিল কেউ যেন পিছন থেকে তাদের দেখছে। সিয়াম পিছন ফিরে তাকাল। মহিলাটি এখনো দাঁড়িয়ে আছে, কিন্তু এবার যেন আরও কাছে।

"দ্রুত হাঁট," সিয়াম বলল।

তারা পা চালাল। কুয়াশা আরও ঘন হচ্ছিল। সূর্য মাথার উপরে উঠে এসেছে, কিন্তু তার আলো কুয়াশা ভেদ করতে পারছে না।

হঠাৎ একটা ঠাণ্ডা হাওয়া বয়ে গেল। সাগরের হাত থেকে ক্যামেরা পড়ে গেল।

"আমার ক্যামেরা!" সে চেঁচিয়ে উঠল।

সিয়াম আর শওকত দাঁড়াল। সাগর ক্যামেরা কুড়াতে গেল। কিন্তু যখন উঠে দাঁড়াল, তখন তার মুখ সাদা হয়ে গেছে।

"কি হলো?" শওকত জিজ্ঞেস করল।

"ও... ও এখন আমাদের পিছনে," সাগর কাঁপা গলায় বলল।

তিনজনেই ধীরে ধীরে পিছন ফিরল। মহিলাটি এখন মাত্র কয়েক গজ দূরে। এত কাছ থেকে তারা দেখতে পেল - তার মুখ নেই। শুধু একটা শূন্য জায়গা।

সিয়ামের বুক ধক করে উঠল। "দৌড়!"

তিন বন্ধু প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করল। পিছনে কোন পায়ের শব্দ নেই। কিন্তু তারা জানে, সেই মহিলা তাদের অনুসরণ করছে। একজন শিকারি যেমন করে তার শিকারকে অনুসরণ করে।


তৃতীয় অধ্যায়: মেজের মধ্যে


তিনজন ছুটে চলেছে। পায়ে পাথর, মাটির ঢেলা ঠোকর খেয়ে থমকে থমকে পড়ছে, তবু থামে না। পিছনে শূন্য মুখের সেই মহিলা—দেখছে কি না, শোনার সাহস নেই কারও। পথের শেষ কোথায় কেউ জানে না। শুধু জানে, থেমে গেলে সব শেষ।
একসময় একটা বড় গাছের নিচে থেমে দাঁড়াল তারা। শ্বাস ফেলে হাপরের মতো। চারদিকে শুধু কুয়াশার দমবন্ধ করা সাদা পর্দা।
"সবাই ঠিক আছ তো?" সিয়াম ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।
সাগর মাথা নাড়ল, কিন্তু মুখে কোনও রঙ নেই। শওকতের হাত কাঁপছে। পানির বোতল বের করে এক চুমুক খেল। "ওটা... ওটা কি ছিল?"
সিয়াম কোন উত্তর দিল না। তার নিজের বুকের ভেতর যেন এক অদৃশ্য হাত চাপ দিচ্ছে। গা ছমছমে ভাবটা কাটাতে মোবাইলটা বের করে দেখল। কিন্তু সিগন্যাল নেই। জিপিএসও অচল।
"আমরা কি কোথাও আটকে গেছি?" সাগর নিচু গলায় বলল।
"আমার মনে হয়," শওকত বলল। "এই গাছটা আমরা আগে দেখেছি।"
সিয়াম চারপাশে তাকাল। গাছের শিকড়, মাটি, কুয়াশা—সবই যেন একে অপরের মতো। কিছুই আলাদা নয়।
"আমরা ঘুরপাক খাচ্ছি," সিয়াম বলল। "এই জায়গাটা... মেজের মতো।"
"মেজ?" শওকত বিস্ময়ে তাকাল।
"দাদির গল্পে শুনেছি," সিয়াম বলল। "ভূতেরা নাকি এমন জায়গা বানায়, যেখানে মানুষ একই জায়গায় ঘুরপাক খায়। যতক্ষণ না তারা পথ ভুলে যায়, শক্তি হারিয়ে ফেলে।"
"আমরা তাহলে এখন কি করব?" সাগর জিজ্ঞেস করল।
দূরে কোথাও একটা শব্দ হলো। পাতার মচমচে আওয়াজ। তিনজনেই থেমে গেল। শব্দটা ক্রমশ কাছে আসছে।
"ও... আবার আসছে!" শওকত চিৎকার করে উঠল।
"চুপ কর!" সিয়াম গলা চেপে ধরল। "চুপ করে থাক। আলো নিভিয়ে দাও।"
তারা দ্রুত টর্চ বন্ধ করে গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। কুয়াশার ভেতর দিয়ে একটা ছায়া নড়ে উঠল। ছায়াটা তাদের চারপাশে ঘুরছে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন ঘন্টার মতো লম্বা।
একসময় ছায়াটা থেমে গেল। তার শূন্য মুখ এখন গাছের পাশেই। এত কাছে যে তাদের শ্বাসপ্রশ্বাস শুনতে পাবে মনে হয়।
কিন্তু হঠাৎ—কুয়াশার ভেতর একটা পাখির ডাক ভেসে এলো। ছায়াটা ঘাড় ঘুরিয়ে সেই দিকে তাকাল। তারপর ধীরে ধীরে কুয়াশার ভেতরে মিশে গেল।
তিন বন্ধু একসাথে শ্বাস ছাড়ল।
"এখন কি করব?" শওকত ফিসফিস করে বলল।
"আমাদের নামতে হবে।" সিয়ামের চোখ জ্বলজ্বল করছে। "পথ খুঁজতে হবে। এখানে আর থাকা যাবে না।"
তারা আবার হাঁটা শুরু করল। কিন্তু এইবার সিয়ামের মনে একটা ভাবনা চেপে বসেছে—কুয়াশার এই রহস্যময়তা শেষ পর্যন্ত তাদের ছাড়বে তো?


চতুর্থ অধ্যায়: পথের খোঁজে


তিনজন আবার হাঁটতে শুরু করল। চারদিকে কুয়াশার ভেতর দিয়ে পথ খোঁজার চেষ্টা যেন একটা দুঃস্বপ্নের মতো। বাতাস থমথমে, পায়ের নিচের মাটি নরম হয়ে ভিজে যাচ্ছে। কেউ কথা বলছে না, তবু নিস্তব্ধতার মাঝে শ্বাসের শব্দ যেন বড্ড স্পষ্ট।
"আমাদের দিকটা ঠিক আছে তো?" সাগর ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল।
সিয়াম হাঁটতে হাঁটতে পকেট থেকে একটা ছোট কম্পাস বের করল। "উত্তরের দিকে যাচ্ছি। এটা ভুল হতে পারে না।"
শওকত থমকে দাঁড়াল। "কিন্তু এই কুয়াশায় কিছুই তো পরিষ্কার না। তুমি কিভাবে জানো?"
সিয়াম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। "জানার উপায় নেই। কিন্তু থেমে থাকলে বিপদ।"
সাগর মুখ শক্ত করে বলল, "এগোতে হবে। আমরা থেমে গেলে ওটা আবার আসবে।"
এবার শওকত আর কিছু বলল না।
হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ মাটির গন্ধটা বদলে গেল। পচা গাছপালা আর ভিজে মাটির তীব্র গন্ধ নাকে লাগল। সামনে মাটিতে কিছু শিকড়ের মতো লতানো গাছপালা। জায়গাটা আরো অস্বস্তিকর।
"সাবধানে পা ফেলো," সিয়াম বলল। "এখানে কিছু অদ্ভুত মনে হচ্ছে।"
সাগর নিচু হয়ে কিছু শিকড় ছুঁয়ে দেখল। সেগুলো যেন তার হাতের দিকে সরে আসতে চাইছে! সে দ্রুত হাত সরিয়ে চিৎকার করতে গিয়েও গলা চেপে ধরল।
"এই জায়গা ঠিক না," শওকত প্রায় কাঁপা গলায় বলল। "আমরা অন্য রাস্তা নিই।"
কিন্তু অন্য রাস্তা কোথায়? চারপাশের কুয়াশা যেন আরও ঘন হয়ে তাদের গিলে ফেলতে চাইছে। তারা সবাই মাটির দিকে তাকাল। মাটিতে নিজেদের ছায়া দেখার চেষ্টা করল। কিন্তু কুয়াশার ভেতর ছায়াও যেন হারিয়ে গেছে।
"একটা শব্দ শুনতে পাচ্ছ?" সাগর ফিসফিস করে বলল।
তিনজনই থেমে দাঁড়াল। হ্যাঁ, কোথাও থেকে একটা শব্দ আসছে। মৃদু, টেনে টেনে একটা সুরের মতো। কারা যেন গুনগুন করছে।
"ওটা কি মানুষ?" শওকত বলল।
"মানুষ নয়," সিয়াম বলল। তার কণ্ঠে অদ্ভুত কঠিনতা। "ওটা আমাদের ভুল পথে টেনে নিয়ে যেতে চায়।"
তারা শব্দটাকে উপেক্ষা করে অন্যদিকে হাঁটতে শুরু করল। কিন্তু শব্দটা যেন তাদের পিছু নিচ্ছে। যত দূরেই যায়, শব্দটা ঠিক ততটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
"এভাবে চলতে পারব না," শওকত দাঁড়িয়ে পড়ল। "আমাদের কিছু একটা করতে হবে।"
"কিন্তু কি করব?" সাগর অসহায়ভাবে বলল। "এই কুয়াশার বাইরে কি আছে জানি না।"
তখন সিয়াম মাটিতে একটা চিহ্ন এঁকে বসে পড়ল। "আমাদের একটা পরিকল্পনা করতে হবে। ভয়ের মধ্যে বেঁচে থাকা আর নয়। এবার আমরা এগোতে চাই।"
তারা তিনজন মাথা গুঁজে বসে কথা বলতে শুরু করল। সিয়াম বলল, "আমরা যদি নিজের চারপাশে কিছু চিহ্ন রেখে যাই, তাহলে বুঝতে পারব আমরা এক জায়গায় ঘুরছি কি না।"
সাগর পকেট থেকে একটা চক বের করল। "এটা কাজে লাগবে।"
তারা নিজেদের পায়ের কাছে কুয়াশার মধ্যে ছোট ছোট তীর চিহ্ন আঁকতে শুরু করল। প্রতিটি চিহ্ন যেন তাদের সাহসের প্রতীক।
চিহ্ন রেখে রেখে তারা আবার হাঁটা শুরু করল। এইবার শব্দটা আরো তীব্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু তারা নিজেরাই আরো সাহসী।
একসময় তারা একটা খোলা জায়গায় পৌঁছাল। কুয়াশা একটু পাতলা এখানে। মাটিতে তাদের আঁকা চিহ্নগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।
"আমরা এগিয়ে যাচ্ছি," সিয়াম বলল। তার কণ্ঠে একধরনের আশার সুর।
কিন্তু হঠাৎ করেই পেছন থেকে একটা গাঢ় ছায়া তাদের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করল। শওকত আতঙ্কে চিৎকার করল, "ওটা আবার ফিরে এসেছে!"
"চুপ কর! দৌড়াও!" সিয়াম চিৎকার করে উঠল।
তারা আবার দৌড়াতে শুরু করল। ছায়াটা তাদের পেছনে ছুটছে। কিন্তু এইবার তারা হারাবে না। এইবার তারা জানে, যে করেই হোক পথ খুঁজতে হবে।
তাদের দৌড় থামবে না। এইবার তারা শুধু বাঁচতে চায় না, জিততেও চায়।


পঞ্চম অধ্যায়: বৃত্তের বাইরে


তিনজন দৌড়ে এসে একটা বড় বটগাছের তলায় দাঁড়াল। তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল, তবু পেছনে তাকানোর সাহস কারও নেই। ছায়াটা এখনো তাদের পেছনে আসছে কি না, তা জানার জন্য কেউ সাহস করে না।
সিয়াম বলল, "কেউ কি বুঝতে পারছ, আমরা কোথায়?"
সাগর চারপাশে তাকাল। "এটা তো নতুন কিছু দেখাচ্ছে না। সব জায়গা একই রকম।"
শওকত হতাশ হয়ে বসল। "আমরা তো এখানে আটকে পড়েছি। এটা একটা ফাঁদ। আমাদের যাওয়ার কোনো রাস্তা নেই।"
সিয়াম শওকতের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল। "এত সহজে হাল ছেড়ে দিলে চলবে না। আমরা যদি চিহ্ন আঁকতে না শিখতাম, তবে হয়তো অনেক আগেই হারিয়ে যেতাম। আমাদের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।"
"তাহলে এবার কি করব?" সাগর প্রশ্ন করল।
সিয়াম মাটি থেকে একটা শুকনো ডাল তুলে নিল। "এই জায়গাটা আলাদা। গাছটা অনেক পুরোনো আর বিশাল। এর শিকড়ের মাঝে হয়তো লুকানো কিছু থাকতে পারে। খুঁজে দেখি।"
তারা তিনজন মিলে গাছের চারপাশে খুঁজতে লাগল। শিকড়গুলোর ভেতর ঢুকে যেন একধরনের শীতল বাতাস বেরিয়ে আসছে।
"এটা অদ্ভুত," সাগর বলল। "এখানে বাতাস কিভাবে আসছে?"
শওকত মাটি খুঁড়ে দেখতে শুরু করল। কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা ছোট্ট গর্ত দেখা গেল। "এখানে কিছু আছে!" সে উত্তেজিতভাবে বলল।
তারা তিনজন মিলে গর্তটা বড় করতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে একটা ছোট পাথরের দরজা দেখা গেল।
"পাথরের দরজা? এটা আবার কি?" শওকত অবাক হয়ে বলল।
সিয়াম পাথরের উপর হাত বুলিয়ে দেখল। সেখানে কিছু চিহ্ন খোদাই করা। "এগুলো খুব পুরোনো। কিন্তু আমি নিশ্চিত, এটা কোনো দরজা। হয়তো এর ভেতরে আমাদের উত্তর আছে।"
"তুমি নিশ্চিত?" সাগর প্রশ্ন করল।
"না," সিয়াম সোজাসাপ্টা বলল। "কিন্তু আমাদের কাছে আর কোনো উপায় নেই।"
তারা তিনজন মিলে দরজাটা ধাক্কা দিতে শুরু করল। কিছুক্ষণ ধাক্কাধাক্কির পর দরজাটা একটু একটু করে খুলতে লাগল। দরজার ওপাশ থেকে শীতল বাতাসের একটা তীব্র ঝাপটা এলো।
দরজার ভেতরে একটা সরু গলিপথ দেখা গেল। গলিটা একদম অন্ধকার, শুধু মাঝেমধ্যে শিকড়ের ফাঁক দিয়ে সামান্য আলো আসছে।
"ভেতরে ঢোকা উচিত কি?" শওকত দ্বিধাগ্রস্তভাবে বলল।
সিয়াম দৃঢ় কণ্ঠে বলল, "আমাদের কিছু একটা করতে হবে। এটাই হয়তো আমাদের মুক্তির পথ।"
তারা তিনজন একে একে গলিটায় ঢুকল। ভেতরে ঢুকতেই চারপাশের শব্দগুলো যেন মিইয়ে গেল। সেই গুনগুনানি, ছায়ার উপস্থিতি—সবকিছু যেন দরজার বাইরে রয়ে গেল।
গলিপথটা সরু হলেও হাঁটার উপযোগী। মাটিতে শুকনো পাতা আর শিকড়ের উপর দিয়ে তারা এগোতে লাগল। কিছু দূর যাওয়ার পর তারা একটা খোলা জায়গায় পৌঁছাল। জায়গাটা গুহার মতো, কিন্তু মাটির উপরে।
"এটা কি জায়গা?" সাগর বিস্মিত হয়ে বলল।
গুহার মাঝখানে একটা পাথরের বেদি। বেদির উপর একটা পুরোনো লণ্ঠন জ্বলছে। লণ্ঠনের আলোতে গুহার দেয়ালে আঁকা চিত্রগুলো দেখা গেল। চিত্রগুলোতে মানুষ, গাছপালা, আর বিশাল ছায়ার মতন কিছু আকৃতির ছবি আঁকা।
"এগুলো আমাদের কাহিনি বলে মনে হচ্ছে," সিয়াম বলল।
শওকত এক পা পিছিয়ে গেল। "তাহলে কি কেউ আমাদের দেখছে? আমাদের আগেই জানে?"
"হয়তো," সাগর বলল। "কিন্তু এখানে থাকলে আমরা কিছু না কিছু উত্তর পাব।"
সিয়াম বেদির কাছে গিয়ে লণ্ঠনটা হাতে নিল। হঠাৎ করেই গুহার দেয়ালে থাকা চিত্রগুলো ঝলমল করে উঠল। গুহার ভেতর থেকে একটা ফিসফিসানি শুরু হলো।
"এবার আমাদের জানার সময় হয়েছে," সিয়াম দৃঢ়ভাবে বলল। "যা কিছুই হোক, আমরা বৃত্তটা ভাঙতে পারব।"
গুহার ফিসফিসানি ক্রমেই তীব্র হতে লাগল। লণ্ঠনের আলোটা আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠল, যেন সেই অন্ধকারে তাদের পথ দেখানোর জন্য প্রস্তুত। তিনজন এবার পিছিয়ে গেল না। তারা একসঙ্গে এগিয়ে গেল, অজানা রহস্যের মুখোমুখি হতে।


ষষ্ঠ অধ্যায়: অন্ধকারের গভীরে


গুহার ফিসফিসানি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিল। শব্দগুলো যেন তাদের নাম ধরে ডাকছিল। সিয়াম, সাগর, আর শওকত গভীর শ্বাস নিয়ে নিজেদের দৃঢ় করল। লণ্ঠনের আলো ধীরে ধীরে গুহার অন্ধকারে ছড়িয়ে পড়ছিল, আর চারপাশে ছায়ার মত কিছু আকৃতির আভাস দেখা যাচ্ছিল।
"এগুলো কি আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে?" শওকত ফিসফিসিয়ে বলল।
সাগর কাঁপা গলায় উত্তর দিল, "হয়তো। অথবা হয়তো এগুলো আমাদের পথ দেখানোর জন্য অপেক্ষা করছে।"
"এগোতে হবে," সিয়াম দৃঢ়ভাবে বলল। "আমরা যদি থেমে যাই, তবে এখানেই আটকে পড়ব।"
তারা তিনজন ধীরে ধীরে সামনে এগোল। গুহার ভেতরের দেয়ালগুলোতে আরও চিত্র দেখা গেল—কিছুতে বিশাল ছায়ার আকৃতি মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে, কিছুতে মানুষরা দলবদ্ধ হয়ে ছায়াগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করছে।
"এগুলো যেন ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিচ্ছে," সাগর বলল।
সিয়াম মাথা নাড়ল। "হয়তো। আর হয়তো এগুলো আমাদের জন্য সতর্কবার্তা। আমাদের শক্ত থাকতে হবে।"
হঠাৎ করেই গুহার মেঝে কেঁপে উঠল। তারা তিনজন ভারসাম্য রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। গুহার এক কোণ থেকে একটা গভীর গর্জন ভেসে এল।
"এবার কি আসছে?" শওকত আতঙ্কিত হয়ে বলল।
"শান্ত হও!" সিয়াম ধমক দিয়ে বলল। "এটা শুধু ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে। আমরা যদি ভেঙে পড়ি, তাহলে আর সামনে এগোতে পারব না।"
তাদের সামনে একটা সরু পথ দেখা গেল, যেটা ক্রমশ নিচে নেমে গেছে। পথটা অন্ধকার আর পিচ্ছিল, কিন্তু সেটাই একমাত্র রাস্তা।
"তোমরা দুজন তৈরি?" সিয়াম জিজ্ঞেস করল।
সাগর আর শওকত মাথা নাড়ল। "আমাদের আর কোনো বিকল্প নেই," সাগর বলল।
তারা একে একে সেই সরু পথ ধরে নামতে শুরু করল। নিচে নামার সঙ্গে সঙ্গে বাতাস ঠান্ডা হয়ে আসছিল। অন্ধকার এত গাঢ় হয়ে উঠল যে লণ্ঠনের আলোও ম্লান মনে হচ্ছিল।
পথের শেষে তারা একটা বিশাল ফাঁকা জায়গায় পৌঁছাল। জায়গাটা একদম চুপচাপ, যেন পৃথিবীর শব্দ এখানে পৌঁছাতে পারে না।
মাঝখানে একটা মূর্তি দাঁড়িয়ে ছিল। মূর্তিটা বিশাল ছায়ার আকৃতির মতো, কিন্তু মানুষের অবয়বের কাছাকাছি। তার চোখে একটা অদ্ভুত আলো ঝলকাচ্ছিল।
"এটা কি?" শওকত বিস্মিত হয়ে বলল।
"এই মূর্তিটাই হয়তো সবকিছুর উৎস," সাগর বলল।
"তাহলে আমাদের এর কাছে যেতে হবে," সিয়াম দৃঢ় কণ্ঠে বলল।
তারা মূর্তির দিকে এগোতে লাগল। যতই তারা কাছে আসছিল, ততই তাদের মনে অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল। মূর্তির কাছাকাছি আসতেই চারপাশে ছায়াগুলো জীবন্ত হয়ে উঠল।
"এবার কি করব?" সাগর আতঙ্কিত কণ্ঠে বলল।
সিয়াম লণ্ঠনটা মূর্তির দিকে তুলে ধরে বলল, "লড়াই করার সময় এসেছে। এই ছায়াগুলোকে আমাদের পরাজিত করতেই হবে।"
ছায়াগুলো তাদের দিকে এগিয়ে এল। তারা তিনজন পেছাতে চেয়েছিল, কিন্তু সিয়াম চিৎকার করে বলল, "পিছু হটলে আমরা হারব! সামনে যাও!"
তারা একে অপরের হাত শক্ত করে ধরল। লণ্ঠনের আলো ক্রমশ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, আর গুহার দেয়ালগুলো কাঁপতে শুরু করল। ছায়াগুলো তাদের ঘিরে ফেললেও, তারা একে অপরকে ছেড়ে দেয়নি।
"আমরা একসঙ্গে থাকলে কিছুই আমাদের হারাতে পারবে না," সিয়াম বলল।
ছায়াগুলো হঠাৎ থেমে গেল। মূর্তির চোখের আলো নিভে গেল। চারপাশের অন্ধকার যেন অদৃশ্য হয়ে গেল।
তারা তিনজন হাঁপাতে হাঁপাতে মূর্তির সামনে দাঁড়াল। মূর্তির নিচে একটা ছোট্ট বাক্স দেখা গেল।
"এটাই হয়তো উত্তর," সাগর বলল।
সিয়াম বাক্সটা খুলল। ভেতরে একটা ছোট স্ফটিক আর একটা পুঁথি বাঁধা বই।
"এটা কি?" শওকত জিজ্ঞেস করল।
"আমরা জানব," সিয়াম বলল। "কিন্তু তার আগে আমাদের এখান থেকে বেরোতে হবে।"
তারা তিনজন একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল। এবার তাদের লক্ষ্য পরিষ্কার। রহস্যের সমাধান করতে হলে, এই স্ফটিক আর বইয়ের রহস্যও বুঝতে হবে। কিন্তু তারা জানে, সামনে আরও বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

সপ্তম অধ্যায়: স্ফটিকের সংকেত


গুহার সেই অন্ধকার গহ্বর থেকে বের হয়ে এসে, সিয়াম, সাগর, আর শওকত দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। চারপাশে পাহাড়ের নীরবতা যেন তাদের সাহসিকতার কাহিনি শুনতে চাইছে। কিন্তু তাদের হাতে এখন এমন কিছু ছিল যা তাদের পেছনে ছেড়ে আসা রহস্যের চেয়েও গভীর।
স্ফটিকটা মৃদু আলো ছড়াচ্ছিল, আর বইটা এমন এক প্রাচীন ভাষায় লেখা যা কেউই পড়তে পারছিল না।
"এই বইটা তো আমরা পড়তেই পারছি না," শওকত বিরক্ত হয়ে বলল।
সিয়াম ধীরে ধীরে স্ফটিকটা উঁচুতে তুলে ধরে বলল, "এটা শুধু একটা স্ফটিক নয়। মনে হচ্ছে, এটা বইটার সাথে কোনোভাবে যুক্ত।"
সাগর স্ফটিক আর বই দুটোই গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করল। "তোমরা লক্ষ্য করেছ? স্ফটিকের ভেতরে কিছু লাইন দেখা যাচ্ছে। মনে হয় এগুলো কোনো নকশা বা সংকেত। হয়তো এগুলো বইয়ের জন্যই কোনো চাবি।"
"কিন্তু এটা বুঝব কীভাবে?" শওকত বলল। "আমাদের তো এমন কেউ নেই যে এই ভাষা পড়তে পারে।"
সিয়াম কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলল, "গ্রামের বৃদ্ধরা হয়তো জানেন। আমাদের গ্রামে ফিরতে হবে।"
তারা তাড়াহুড়ো করে সেই গুহার কাছ থেকে নেমে গ্রামের দিকে রওনা দিল। কিন্তু যাত্রাপথে অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করল। স্ফটিকটা আচমকাই কাঁপতে শুরু করল, আর তার আলো ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হয়ে উঠল।
"এটা আবার কী হচ্ছে?" সাগর আতঙ্কিত স্বরে বলল।
"দেখতে হবে। থামলে চলবে না," সিয়াম বলল।
যখন তারা গ্রামের সীমানায় পৌঁছাল, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। গ্রামটা অদ্ভুত চুপচাপ ছিল। বাতাসে যেন একটা ভারী অনুভূতি।
"এমন মনে হচ্ছে যেন পুরো গ্রামটাই আমাদের অপেক্ষায়," শওকত বলল।
বৃদ্ধ আবদুল কাকাকে খুঁজতে তাদের বেশি সময় লাগল না। কাকা গ্রামের প্রাচীন রহস্যের ভাণ্ডার, আর তার জ্ঞানই তাদের একমাত্র ভরসা।
"কী এনেছ তোমরা?" আবদুল কাকা গভীর গলায় বললেন।
সিয়াম স্ফটিক আর বইটা তার সামনে রাখল। কাকা স্ফটিকের দিকে তাকিয়ে অদ্ভুত চোখে বললেন, "এটা সেই পুরনো কাহিনির অংশ। এত বছর পর আবার কেউ এটা খুঁজে পেল!"
"কাহিনি?" সাগর তাড়াতাড়ি জিজ্ঞেস করল।
কাকা ধীরে ধীরে বললেন, "এটা আমাদের পূর্বপুরুষদের দেয়া একটা রহস্যময় বস্তু। বলা হয়, এটা একটা গোপন শক্তির উৎস। কিন্তু সঠিক ব্যবহার করতে না পারলে, এটা ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।"
"বইটা কি এর ব্যবহার শেখানোর জন্য?" সিয়াম জানতে চাইল।
কাকা বইটা খুলে দেখলেন। "এই ভাষা অনেক প্রাচীন। এটা সরাসরি পড়া সম্ভব নয়। কিন্তু স্ফটিকটা এর চাবি। তোমাদের কোথাও যেতে হবে যেখানে এর আলো পথ দেখাবে।"
"কিন্তু কোথায়?" শওকত বলল।
"স্ফটিক নিজেই তোমাদের পথ দেখাবে। মনে রেখো, এটা যেমন শক্তি দিতে পারে, তেমনি বিপদও ডেকে আনতে পারে। সাবধান থেকো," কাকা সতর্ক করলেন।
সিয়াম স্ফটিকটা শক্ত করে ধরে বলল, "আমরা তৈরি। যা-ই হোক, আমরা সত্যটা জানতে চাই।"
স্ফটিকটা এবার আবার কাঁপতে শুরু করল, আর তার আলো গ্রামের পেছনের গভীর বনের দিকে ইঙ্গিত করল।
"ওটা কী দেখাচ্ছে?" সাগর অবাক হয়ে বলল।
"তোমাদের পথ। তোমাদের নতুন অভিযানের শুরু।" কাকা মৃদু হাসলেন।
তারা তিনজন একে অপরের দিকে তাকাল। সামনে যে চ্যালেঞ্জ আসছে, তার জন্য তারা একদমই প্রস্তুত নয়। কিন্তু স্ফটিক আর বইয়ের রহস্য ভেদ করার জন্য তাদের যেতে হবে।
"তাহলে চলো," সিয়াম বলল।
তারা তিনজন আবার পথ ধরল, এবার আরও গভীর অজানার দিকে।


উপসংহার: আলোর পথযাত্রী
 

সময় পেরিয়ে গেছে। সেই রাতে সিয়াম, সাগর, আর শওকত যখন গ্রাম থেকে অজানার পথে যাত্রা করেছিল, তখন কেউই জানত না, সেই যাত্রা তাদের জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেবে।
তারা স্ফটিকের আলো অনুসরণ করে এক রহস্যময় জায়গায় পৌঁছেছিল, যেখানে প্রকৃতি আর অতিপ্রাকৃত শক্তি মিশে গিয়ে এক অন্যরকম পরিবেশ তৈরি করেছিল। সেখানে তারা এমন সত্য উদ্ঘাটন করেছিল যা শুধুমাত্র তাদের জীবন নয়, পুরো গ্রামের ইতিহাস বদলে দিয়েছিল।
কিন্তু সেই গল্প কখনোই তারা কারো সাথে ভাগ করেনি। তারা জানত, কিছু সত্য জানার জন্য নয়, সংরক্ষণের জন্য। স্ফটিকের শক্তি তারা সেই জায়গাতেই রেখে আসে, যেখানে তা কখনোই ভুল হাতে পড়বে না।
গ্রামে ফিরে এসে তারা আবার তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যায়। সাগর তার পড়াশোনায় মন দেয়, শওকত তার বাবার ব্যবসা দেখতে শুরু করে, আর সিয়াম গ্রামের শিক্ষার প্রসারে কাজ করতে থাকে। তবে, তাদের চোখে সবসময় একটা গভীরতার ছাপ ছিল, যেন তারা এমন কিছু দেখেছে যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
বৃদ্ধ আবদুল কাকা মাঝে মাঝে তাদের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসতেন। তিনিই জানতেন, ছেলেগুলো যা করেছে, তা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
কিন্তু গোপন সেই গুহা, স্ফটিক, আর সেই বই—এসব কীসের প্রতীক ছিল?
সময় পেরিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে, গ্রামের মানুষ সেই গল্প ভুলে গেল। সিয়াম, সাগর, আর শওকতের সেই অভিযান একসময় কল্পকাহিনিতে পরিণত হল।
তবে, তারা তিনজন জানত, সত্যটা হারিয়ে যায়নি। সেটা শুধু অপেক্ষা করছে, একদিন আবার কেউ তা আবিষ্কার করবে। স্ফটিকের আলো তখনও সেই রহস্যের পথ চুপচাপ রক্ষা করে চলেছে, ঠিক সেই জায়গাতেই যেখানে সেটা রেখে দেওয়া হয়েছিল।
সত্যি, কিছু রহস্য হয়তো অমীমাংসিত থাকাই ভালো। কিন্তু সেই যাত্রা তাদের শিখিয়েছিল, প্রতিটা গল্পের শেষ মানেই শেষ নয়। কখনো কখনো, এটা নতুন শুরুর ইঙ্গিত।
শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও, সেই তিন বন্ধু আর তাদের অভিযানের গল্প গ্রামের বাতাসে ভেসে বেড়ায়, যেকোনো কৌতূহলী পথিকের কানে ফিসফিস করে বলে,
 

"তোমার মনে সাহস থাকলে, আর চোখে সত্য দেখার ইচ্ছা থাকলে, পথে নামো। কারণ সত্যিকারের আলো শুধুমাত্র সেই পথিকের জন্য, যে অজানাকে ভয় পায় না।"

Comments

    Please login to post comment. Login