অধ্যায় ১: অজানা পথে যাত্রা
অয়ন চক্রবর্তী, একজন প্রতিভাবান তরুণ লেখক, যার লেখার ভেতর লুকিয়ে থাকে গভীর জীবনবোধ। কিন্তু ইদানীং তার মনে অদ্ভুত শূন্যতা কাজ করছে। নতুন কিছু লেখার চেষ্টায়, সে দিন-রাত ঘরের ভেতর নিজেকে বন্দি রেখেছে। তার ঘরের এক কোণে বিশাল বইয়ের তাক আর সামনে লেখা টেবিলে অগুনতি খাতাপত্র।
এক সন্ধ্যায়, যখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে, অয়ন তার পুরনো খাতা উল্টাতে উল্টাতে হঠাৎ থেমে যায়। সে দেখতে পায় একটি অদ্ভুত নোট, যা সে আগে কখনো লেখেনি: "মৃত্যুর পরে কি আছে?"
অয়ন নিজের হাতের লেখা দেখে অবাক হয়। তার মনে পড়ে না, এই লাইনটি সে কখন লিখেছিল। এই প্রশ্ন তার মাথায় ছায়ার মতো ঘুরতে থাকে।
সেদিন রাতে অয়ন ঘুমোতে যায়, কিন্তু ঘুমের মধ্যে তাকে আক্রমণ করে এক অদ্ভুত স্বপ্ন। সে নিজেকে দেখতে পায় এক অচেনা, কুয়াশাচ্ছন্ন জায়গায়। সেখানে কোনো মানুষ নেই, কেবল বয়ে চলেছে ভারী বাতাস। দূরে কোথাও এক অদ্ভুত ঘণ্টার শব্দ।
সেখানে দাঁড়িয়ে অয়ন অনুভব করে, কেউ যেন তাকে ডাকছে। কিন্তু কোথাও কোনো মুখ দেখা যায় না। হঠাৎ সে অনুভব করে, পেছন থেকে কেউ তার কাঁধে হাত রাখে। সেই স্পর্শটা অদ্ভুত ঠান্ডা।
ঘুম ভেঙে যায় তার। বুক ধুকপুক করছে। ঘড়ি তখন রাত তিনটা। অয়ন জানে, কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
পরের দিন সকালবেলা, অয়ন তার এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করে। বন্ধুটি তাকে জিজ্ঞেস করে, "কিরে, তোর মুখ শুকনো কেন?"
অয়ন উত্তর দেয় না। তবে তার মনে একটা অদ্ভুত চিন্তা কাজ করে।
গল্পের এই অংশ থেকে শুরু হয় এক অনন্য যাত্রা, যেখানে অয়ন বুঝতে পারে, তার জীবন এক গভীর রহস্যে জড়িত।
অধ্যায় ২: এক অদ্ভুত আমন্ত্রণ
পরের দিন সকালবেলা। শহরের আকাশ পরিষ্কার, কিন্তু অয়ন চক্রবর্তীর মনে যেন ঝড় বয়ে চলেছে। আগের রাতের সেই স্বপ্ন তার মাথা থেকে যাচ্ছেই না। এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসে, সে দূরের আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে—“এই স্বপ্নটা কি কেবল মনের খেলা, নাকি এর পেছনে কোনো গভীর অর্থ লুকিয়ে আছে?”
ঠিক তখনই দরজার বেল বেজে ওঠে। চায়ের কাপ টেবিলে রেখে সে দরজা খুলতে যায়। এক অচেনা কুরিয়ার ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে, হাতে একটা প্যাকেট।
“আপনার নামে চিঠি এসেছে, স্যার,” ছেলেটি বলে।
অয়ন অবাক হয়ে ভাবে, কে তাকে চিঠি পাঠাবে? সে তো কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখে না। চিঠির খামটি খুলে দেখতেই তার চোখ বিস্ময়ে বড় হয়ে যায়। ভেতরে একটা ছোট কার্ড, তাতে সোনালী অক্ষরে লেখা:
"তোমার যাত্রা শুরু করতে প্রস্তুত হও। আগামীকাল রাত তিনটায় পুরনো রেল স্টেশনে দেখা করো।"
কোনো প্রেরকের নাম নেই। কার্ডটা একেবারে ঝকঝকে, যেন অনেক যত্নে তৈরি।
“পুরনো রেল স্টেশন?” অয়ন বিড়বিড় করে বলে। সেই জায়গাটি বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। গল্প-গুজবে শোনা যায়, সেখান থেকে বহু মানুষ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। কেউ বলে, জায়গাটা অভিশপ্ত।
অয়ন তার মাথা ঝাঁকিয়ে নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করে। "এটা নিশ্চয়ই কোনো মজার পরিকল্পনা," সে নিজেকে বলে। কিন্তু তার কৌতূহল দমাতে পারে না।
পরের দিন সারাদিন অয়ন অস্থির থাকে। কিছুতেই সে স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। বারবার তার মনে প্রশ্ন জাগে—"কোনো বিপদে পড়তে চলেছি কি? কিন্তু যদি না যাই, তাহলে কি কোনো বড় সুযোগ মিস করব?"
রাত এগারোটা। অয়ন সিদ্ধান্ত নেয়, সে যাবে। হাতে একটা টর্চ লাইট, আর পকেটে একটা ছুরি নিয়ে, সে বেরিয়ে পড়ে। শহরের রাস্তা তখন একেবারে ফাঁকা।
রেল স্টেশনের কাছাকাছি পৌঁছাতেই তার গায়ে কাঁপুনি ধরে যায়। জায়গাটা পুরোপুরি অন্ধকারে ঢাকা, কেবল দূরে কোথাও একটা রাস্তার বাতি টিমটিম করছে।
স্টেশনের মূল ফটকে পৌঁছে সে দেখতে পায়, দরজাটা একটু ফাঁক হয়ে আছে। অদ্ভুতভাবে, দরজার উপর লেখা নামটা মুছে গিয়েছে। ভেতরে পা দিতে তার সাহস হয় না, কিন্তু সে যেন এক অদৃশ্য টানের দ্বারা ভেতরে ঢুকে পড়ে।
ঠিক তখনই, স্টেশনের ভেতর থেকে এক বৃদ্ধের গলা শোনা যায়। “তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, তরুণ লেখক। সাহস আছে তো?”
অয়ন চমকে ওঠে। এই অচেনা গলা যেন তার মনের গভীর ভয়গুলোকে ছুঁয়ে যায়। “কে আপনি?” সে প্রশ্ন করে।
বৃদ্ধটি এগিয়ে আসে। তার চোখে যেন এক অদ্ভুত আলো। হাতে একটা ছোট টিকিট তুলে ধরে বলে, “তোমার জন্যই তৈরি। এটা নাও।"
অয়ন টিকিটটা হাতে নেয়। সাদা কাগজে কালো অক্ষরে লেখা:
"পরলোকের যাত্রা।"
টিকিটের স্পর্শ তার হাত ঠান্ডা করে দেয়। আর তার সামনে একটা ট্রেন থামে—পুরনো, জংধরা, আর সম্পূর্ণ নিঃশব্দ।
“তোমার যাত্রা এখান থেকে শুরু। ট্রেনে উঠতে হবে,” বৃদ্ধ বলে।
অয়ন নিজেকে আটকানোর চেষ্টা করে, কিন্তু তার পা যেন নিজে থেকেই ট্রেনের দিকে এগিয়ে যায়। তার মনে প্রশ্ন—এই যাত্রার শেষ কোথায়?
অধ্যায় ৩: পুরনো রেল স্টেশনের গোপন রহস্য
অয়ন ট্রেনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। ট্রেনের দরজা খোলা, কিন্তু ভেতরে কোনো আলো নেই। হালকা ঠান্ডা বাতাস এসে তার মুখে লাগে। তার বুক ধুকপুক করতে থাকে। মনে হয় যেন ট্রেনটি তাকে টানছে, আর তার শরীর অজান্তেই এক অদৃশ্য শক্তির অধীনে চলে যাচ্ছে।
অবশেষে সে ট্রেনের ভেতরে পা রাখে। ভেতরের পরিবেশ তার কল্পনার চেয়েও অদ্ভুত। আশপাশটা যেন অতীতে হারিয়ে যাওয়া কোনো সময়ের খণ্ডচিত্র। পুরনো কাঠের সিটগুলোতে ধুলো জমে আছে, আর জানালার কাচগুলো অর্ধেক ভাঙা। সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো, ট্রেনের প্রতিটি সিটে এক একজোড়া নাম লেখা।
হঠাৎ ট্রেনের দরজা নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে যায়। অয়ন চমকে ওঠে। চারদিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারে, সে একা নয়। ট্রেনের শেষ দিকে কিছু মানুষ বসে আছে। সবাই চুপচাপ, নিঃশব্দে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের মুখে কোনো ভাবনা নেই, চোখে কোনো জীবনের চিহ্ন নেই।
অয়ন ধীরে ধীরে তাদের দিকে এগিয়ে যায়। এক বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করে, “আপনারা এখানে কীভাবে এলেন?”
বৃদ্ধা কোনো উত্তর দেয় না। তার চোখের পাতা পর্যন্ত নড়ে না। অয়ন দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করতে গিয়ে হঠাৎ লক্ষ্য করে, বৃদ্ধার শরীর একটু ঝাপসা, যেন সে পুরোপুরি বাস্তব নয়।
অয়ন তাড়াতাড়ি নিজের সিটে বসে পড়ে। তার শরীর ভারী লাগছে। ট্রেন তখন হঠাৎ কেঁপে ওঠে, এবং ধীরে ধীরে চলতে শুরু করে। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে অয়ন দেখে, বাইরের দৃশ্যটা ক্রমশ বদলে যাচ্ছে।
এই দৃশ্য যেন বাস্তবের নয়। চারপাশে কুয়াশা, মাঝে মাঝে বিশাল ছায়ামূর্তি চলাফেরা করছে। তারা মানুষ নয়, কিছু অদ্ভুত প্রাণী, যা অয়ন আগে কখনও দেখেনি। তাদের চোখ থেকে এক ধরনের লাল আলো বের হচ্ছে।
ট্রেনের গতি বাড়তে থাকে, আর অয়নের মনের মধ্যে এক অদ্ভুত অনুভূতি কাজ করে। সে যেন নিজের জীবনের সব স্মৃতি ভুলে যেতে শুরু করেছে।
হঠাৎ ট্রেন থেমে যায়। দরজা খুলে এক তীব্র আলো তার চোখে পড়ে। ট্রেনের বাইরে একটা বিশাল প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মটা যেন মানুষের চোখের সামনে ধরা দেওয়া কোনো পরীস্থানের মতো। পাথরের মেঝে, বড় বড় স্তম্ভ, আর সবকিছু যেন সোনার মতো ঝলমল করছে।
এক কণ্ঠ ভেসে আসে, “এখানেই তোমার প্রথম পরীক্ষা শুরু হবে।”
অয়ন প্ল্যাটফর্মে পা রাখতেই সে টের পায়, তার শরীরের ওজন কমে গিয়েছে। যেন সে ভাসছে। আশপাশে তাকিয়ে সে দেখে, প্ল্যাটফর্মের চারপাশে অদ্ভুত প্রাণীরা দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে কেউ খুব বড়, কেউ ছোট। তাদের চোখে আগ্রহ, যেন তারা অয়নের প্রতিটি পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করছে।
এক অদ্ভুত শক্তিশালী কণ্ঠ বলে ওঠে, “তুমি কি নিজের জীবন, মৃত্যু আর পুনর্জন্মের সত্য জানতে প্রস্তুত?”
অয়ন ভয় আর উত্তেজনার মধ্যে জিজ্ঞেস করে, “আপনারা কে?”
কণ্ঠটা কোনো উত্তর দেয় না। কিন্তু অয়ন অনুভব করে, তার সামনে অনেক বড় কিছু অপেক্ষা করছে।
অধ্যায় ৪: পরলোকের দরজা
অয়ন ধীরে ধীরে প্ল্যাটফর্মের মাঝখানে এগিয়ে যায়। চারপাশের সেই অদ্ভুত প্রাণীগুলো নড়াচড়া করছে না, কিন্তু তাদের চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেন তার অন্তর পর্যন্ত বিদ্ধ করছে। প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রে পৌঁছাতেই অয়ন দেখতে পায় একটি বিশাল দরজা।
দরজাটি তৈরি হয়েছে কালো পাথরের, আর তার গায়ে খোদাই করা অদ্ভুত চিহ্ন ও ছবি। সেই চিহ্নগুলো যেন চলমান—এক মুহূর্তে তারা জীবন্ত বলে মনে হয়, আবার পরক্ষণে স্থির।
এক গম্ভীর কণ্ঠ শোনা যায়, “এই দরজার ওপারে যা আছে, তা শুধু তাদের জন্য যারা সাহসী। প্রস্তুত হও। এখান থেকেই তোমার প্রকৃত পরীক্ষা শুরু হবে।”
অয়ন দরজার দিকে তাকিয়ে নিজের মধ্যে দ্বিধা অনুভব করে। একদিকে তার মনে হচ্ছে ফিরে যাওয়া উচিত, অন্যদিকে মনে হচ্ছে দরজার ওপারে যে সত্য অপেক্ষা করছে, তা জানার জন্যই তার এই যাত্রা।
“কিন্তু যদি আমি না যেতে চাই?” অয়ন জিজ্ঞেস করে।
কণ্ঠটি উত্তর দেয়, “তোমার জীবন এবং তোমার মৃত্যু—দুটোই এই মুহূর্তে ঝুলে আছে। ফিরে যাওয়ার কোনো পথ নেই। যদি সত্য জানতে চাও, তাহলে এগিয়ে যাও। আর যদি ভয় পাও, এখানেই থেমে যাও।”
অয়ন গভীর শ্বাস নেয়। তার পা নিজে থেকেই দরজার দিকে এগিয়ে যায়। দরজার সামনে পৌঁছে সে হাত বাড়ায়, আর দরজার ঠান্ডা পাথরের স্পর্শ তার মনে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগায়।
দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে অয়ন দেখতে পায় এক অদ্ভুত আলো। আলোটা এতটাই তীব্র যে তার চোখ খুলে রাখা কঠিন। ধীরে ধীরে আলোটা ম্লান হয়ে যায়, আর তার সামনে প্রকাশ পায় এক অদ্ভুত জগৎ।
সেই জগৎ একেবারে অন্যরকম। মাটি সাদা বালির মতো, আর আকাশ একদম সোনালী। বাতাসে কোনো শব্দ নেই, কেবল একটা নীরবতা, যা ভীতিকর হলেও শান্তিকর।
“তুমি এখন পরলোকের দোরগোড়ায়,” সেই কণ্ঠটি আবার বলে। “এখানে সময় নেই, স্থান নেই। কেবলমাত্র সত্য আছে। এখানে যা দেখবে, তা তোমার আত্মার গভীর সত্যকে প্রতিফলিত করবে।”
অয়ন চারপাশে তাকায়। দূরে সে দেখতে পায় একটা নদী, যার জলে কেমন যেন রুপোলি আলো ঝিলমিল করছে। নদীর তীরে এক বৃদ্ধ বসে আছেন। তিনি অয়নকে দেখে হাত ইশারা করেন।
অয়ন তার দিকে এগিয়ে যায়। বৃদ্ধের মুখে এক রহস্যময় হাসি। “তুমি এখানে এসেছ জানতে, কিন্তু তোমার মনে কি সত্য জানার সাহস আছে?”
“সত্য? কিসের সত্য?” অয়ন জিজ্ঞেস করে।
বৃদ্ধ একটা পাথরের দিকে ইঙ্গিত করেন। পাথরটায় খোদাই করা এক তরুণ পুরুষের মুখ। মুখটা দেখে অয়ন স্তম্ভিত হয়ে যায়। সেটা তার নিজের মুখ।
“তুমি কি বুঝতে পারছ? এই জগৎ তোমার নিজের সৃষ্টি। এখানে যা ঘটবে, তা তোমার মন আর আত্মার প্রতিফলন। তুমি যদি সাহসী হও, তাহলে এই সত্যকে গ্রহণ করো। কিন্তু যদি ভয় পাও, তুমি হারিয়ে যাবে,” বৃদ্ধ বলেন।
হঠাৎ সেই দরজার কণ্ঠ আবার শোনা যায়, “সম্ভাবনার পথ শুরু হলো। নিজেকে প্রস্তুত করো, কারণ এবার সত্য আর মায়ার লড়াই শুরু হবে।”
অয়ন অনুভব করে, তার চারপাশের সবকিছু ঘুরতে শুরু করেছে। মাটি, আকাশ, আলো—সব মিলেমিশে যাচ্ছে। তার সামনে নতুন পথ খুলছে।
অধ্যায় ৫: মায়া বনাম সত্য
চারপাশের আলো ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যায়। অয়ন নিজেকে এক অদ্ভুত স্থানে আবিষ্কার করে—যেখানে মাটি কালো, আকাশ গাঢ় লাল। বাতাস ভারী, যেন প্রতিটি নিঃশ্বাসে তার ফুসফুসে বিষ ঢুকছে। চারপাশে গভীর নীরবতা, যা এক অজানা ভয়ের জন্ম দেয়।
“এটা কোথায়?” অয়ন নিজের মনেই বলে ওঠে।
“এটাই মায়ার পৃথিবী,” সেই কণ্ঠটা আবার শোনা যায়। “এখানে তুমি নিজেকে দেখবে, কিন্তু যেটা দেখবে তা সবসময় সত্য হবে না। তুমি যদি বিভ্রান্ত হও, তাহলে হারিয়ে যাবে। তবে যদি সত্য ধরতে পারো, তাহলে মুক্তি পাবে।”
হঠাৎ করেই সামনে থেকে এক ধোঁয়ার মেঘ উঠে আসে। ধোঁয়ার মধ্যে একটা মূর্তি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়।
মূর্তিটা অয়নকেই প্রতিফলিত করে, কিন্তু তার চোখে এক অদ্ভুত ক্রোধ। মূর্তিটা হেসে বলে, “তুমি আমাকে চেনো? আমি তোমার মনের সেই দিক, যা তোমার চাওয়া-পাওয়া, লোভ আর অসৎ ইচ্ছায় তৈরি হয়েছে। তুমি কি কখনো ভেবেছ, তোমার নিজের ভেতরে এতটা অন্ধকার আছে?”
অয়ন তার চোখ সরিয়ে নিতে চায়, কিন্তু পারে না। মূর্তিটা আবার বলে, “তুমি আমাকে অস্বীকার করতে পারবে না। আমি তুমিই। তুমি আমাকে তৈরি করেছ।”
মূর্তির কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে অয়ন অনুভব করে, তার শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে। যেন মূর্তির প্রতিটা কথা তার হৃদয়ে বোঝার মতো চেপে বসছে।
“তুমি মিথ্যে। তুমি আমার অংশ হতে পারো না,” অয়ন জোরে বলে।
মূর্তিটা হেসে ওঠে। “তাহলে প্রমাণ করো। যদি তুমি সত্যকে গ্রহণ করতে পারো, তাহলে আমাকে জয় করো। কিন্তু মনে রেখো, আমি যতটা দুর্বল মনে হচ্ছি, ততটা নই।”
এরপর মূর্তিটা ধোঁয়ার মতো ভেঙে যায়। তার জায়গায় এক বিশাল দরজা আবির্ভূত হয়। দরজাটা সাদা আলোয় ভরা, কিন্তু তার থেকে বেরিয়ে আসা তাপ অনুভব করা যায়।
“এটা কী?” অয়ন জিজ্ঞেস করে।
কণ্ঠটা আবার বলে, “এটাই সত্যের দরজা। এই দরজা পার হলে তুমি মায়া থেকে মুক্তি পাবে, কিন্তু তার আগে তোমাকে তোমার সমস্ত ভয়, লোভ আর মিথ্যার মুখোমুখি হতে হবে। তুমি কি প্রস্তুত?”
অয়ন একটু সময় নিয়ে নিজের মনকে শক্ত করে। “আমি প্রস্তুত। আমি জানি আমার ভয় আছে, কিন্তু আমি সত্যকে গ্রহণ করতে চাই।”
দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে যায়। ভেতরে এক বিশাল প্রান্তর দেখা যায়। সেই প্রান্তরে এক পাশে শান্তি, আরেক পাশে অশান্তির প্রতীক দেখা যায়।
প্রথমেই অয়ন সামনে এক বিশাল পুকুর দেখতে পায়। পুকুরের জল স্বচ্ছ, কিন্তু জলের নিচে এক ভয়ঙ্কর মুখ স্পষ্ট। সেই মুখটা তারই, কিন্তু চোখে হিংস্রতা।
“এই পুকুরে যদি তুমি নিজেকে দেখতে চাও, তবে তোমাকে নিজের সমস্ত দুর্বলতা মেনে নিতে হবে,” সেই কণ্ঠটা বলে।
অয়ন ভয় পায়, কিন্তু সে জানে, এই পরীক্ষায় তাকে পাশ করতেই হবে। ধীরে ধীরে সে পুকুরের দিকে এগিয়ে যায়। পুকুরের সামনে বসে সে নিজের মুখ স্পষ্টভাবে দেখে।
জলের প্রতিচ্ছবির অয়ন বলে, “তুমি আমার ভেতরের ভয়, লোভ আর ক্রোধ। আমি জানি তুমি আছো। কিন্তু আমি তোমাকে আর অস্বীকার করব না। আমি তোমাকে নিয়েই আমার সত্যের দিকে এগোবো।”
প্রতিচ্ছবির মুখ হেসে ওঠে। “তুমি সত্য মেনে নিচ্ছ। তুমি সঠিক পথে আছো।”
পুকুরের জল হঠাৎই শান্ত হয়ে যায়, আর তার সামনে আরেকটা পথ খুলে যায়।
অধ্যায় ৬: সত্যের খোঁজে দ্বিতীয় পরীক্ষা
পুকুরের সামনে নতুন যে পথ খুলেছে, তা সরু ও কাঁটায় ভরা। অয়ন ধীরে ধীরে সেই পথে পা বাড়ায়। প্রতিটি পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে তার পায়ের নিচে কাঁটার খোঁচা লাগে, আর রক্তের ফোঁটা ফোঁটা দাগ রেখে যায়। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তার ব্যথা হলেও সে থেমে যায় না।
পথে যেতে যেতে সে এক গোলাপি আলোয় ভরা একটি জায়গায় পৌঁছায়। সেই জায়গার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একজন নারী। তার পরনে সাদা পোশাক, চোখে গভীর দৃষ্টি। নারীর মুখে এক অপার্থিব শোভা, যেন তাকে দেখলেই শান্তি মেলে।
অয়ন নারীর দিকে তাকিয়ে বলে, “আপনি কে?”
নারী মৃদু হেসে বলে, “আমি তোমার মনের গভীর সত্যের প্রতিচ্ছবি। আমি সেই অংশ, যাকে তুমি কখনো সম্পূর্ণ বুঝতে চাওনি। আমি তোমার ভালোবাসা, ক্ষমা, আর ত্যাগ।”
অয়ন একটু থমকে দাঁড়ায়। “তাহলে আপনি আমার জন্য এখানে কেন?”
নারী বলে, “তুমি সত্য জানতে চেয়েছ, কিন্তু সত্য শুধু মায়াকে জয় করলেই পাওয়া যায় না। সত্য তখনই সামনে আসে, যখন তুমি নিজের ভালোবাসা আর ত্যাগকে উপলব্ধি করতে পারো। তুমি কি মনে করতে পারো, তুমি কখনো এমন কিছু করেছ যা শুধুমাত্র অন্যের জন্য ছিল?”
অয়ন কিছুক্ষণ চুপ থাকে। তার স্মৃতিতে একটা ছবি ভেসে ওঠে। ছোটবেলায় সে একবার তার ছোট বোনের জন্য নিজের খেলনাটা ছেড়ে দিয়েছিল, যাতে তার বোন কাঁদতে না হয়।
নারী আবার বলে, “এটাই তোমার ভালো দিক। কিন্তু তোমার মনের গভীরে লুকিয়ে থাকা আরেকটা প্রশ্ন আছে। তুমি কি কখনো এমন কিছু করেছ, যা কাউকে কষ্ট দিয়েছে, আর তুমি তা শোধরানোর চেষ্টা করোনি?”
অয়ন সেই প্রশ্ন শুনে অস্বস্তি অনুভব করে। তার মনে পড়ে, একবার তার এক বন্ধুকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছিল, আর কখনো ক্ষমা চায়নি। সেই স্মৃতি তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়।
“তুমি কি সত্যিই মায়া আর সত্যের মাঝে পার্থক্য করতে প্রস্তুত?” নারী তাকে প্রশ্ন করে।
অয়ন নারীর দিকে তাকিয়ে বলে, “আমি জানি, আমি ভুল করেছি। কিন্তু আমি শোধরাতে চাই। আমি আমার ভালোবাসা আর ত্যাগের শক্তি দিয়ে এই ভুলগুলোকে ঠিক করতে চাই।”
নারী হেসে বলে, “তাহলে তুমি দ্বিতীয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ। এবার তুমি সেই দরজার কাছে যাবে, যা তোমাকে তোমার চূড়ান্ত সত্যের দিকে নিয়ে যাবে।”
নারীর হাতের ইশারায় সামনে আরেকটা দরজা খুলে যায়। দরজাটা উজ্জ্বল সোনালী আলোয় ভরা, যা দেখতে খুবই সুন্দর।
অয়ন দরজার দিকে এগিয়ে যায়। তার মন এখনো কিছুটা ভারী, কিন্তু তার মধ্যে নতুন এক শক্তি কাজ করছে। সে জানে, এই দরজার ওপারে তার চূড়ান্ত পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।
অধ্যায় ৭: চূড়ান্ত পরীক্ষা—নির্ণয়ের দিন
অয়ন দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। সোনালী আলো তার চোখে আছড়ে পড়ে, কিন্তু সে কোনও ভয় অনুভব করে না। বরং, মনে হয় যেন তার ভিতরে এক অদৃশ্য শক্তি তাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এই আলো, এই পৃথিবী—সবই যেন তাকে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
“এটাই তোমার চূড়ান্ত পরীক্ষা,” সেই পরিচিত কণ্ঠ আবার শোনা যায়, কিন্তু এবার শব্দটা যেন কিছুটা গম্ভীর, কিছুটা দৃঢ়। “এখানে যা ঘটবে, তা তোমার আত্মার শেষ পরীক্ষা। তুমি নিজের ভয়, ভুল এবং মায়ার শেষ স্তর পার করেছ। এবার তোমাকে চূড়ান্ত সত্য জানাতে হবে।”
অয়ন দরজার দিকে এক পা বাড়ায়। দরজাটা নিজে থেকেই খুলে যায়, এবং তার সামনে একটি বিশাল হলঘর তৈরি হয়, যেখানে অদ্ভুত, অন্ধকার এক পরিবেশ বিরাজমান। হলঘরের মাঝখানে একটি বিশাল মঞ্চ রয়েছে, আর তার উপর দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি। সেই ব্যক্তির মুখ obscured—অথবা অস্পষ্ট, যেন কোনো রহস্য রয়েছে।
অয়ন তাড়াতাড়ি এগিয়ে যায়, কিন্তু মঞ্চের কাছাকাছি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরে এক অদ্ভুত অনুভূতি শুরু হয়। যেন সমস্ত বিশ্ব এক জায়গায় এসে তাকে ঘিরে ফেলছে। তার হৃদস্পন্দন তীব্র হয়ে ওঠে, আর চোখের সামনে অন্ধকার দ্রুত ঘনীভূত হতে থাকে।
“তুমি কি সত্য জানার জন্য প্রস্তুত?” সেই ব্যক্তি কণ্ঠে বলে, যার মুখ অদৃশ্য, কিন্তু কণ্ঠটা অয়নকে অচেনা মনে হয় না।
অয়ন নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে বলে, “হ্যাঁ, আমি প্রস্তুত। আমি জানি, আমাকে এই যাত্রার শেষ পর্যন্ত যেতে হবে।”
ব্যক্তি আবার কথা বলে, “তাহলে তোমাকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সবকিছু দেখাতে হবে। তুমি যে ভুলগুলি করেছ, তুমি যে ভয় পেয়েছ, তুমি যে মায়ায় মগ্ন ছিলে, সেইসব গ্রহণ করতে হবে। নিজের সমস্ত অন্ধকারের মুখোমুখি হতে হবে। তুমি যদি তা করতে পারো, তবে তুমি সত্যের দিকে পৌঁছবে। কিন্তু যদি তুমি ভয় পাও, তুমি এই পথ থেকে ফিরে যেতে হবে।”
অয়ন মনে করে, তার অতীতের সমস্ত ভুল, তার অক্ষমতা, তার সীমাবদ্ধতা—এগুলো সবই এই মুহূর্তে তার সামনে হাজির। কিন্তু সে জানে, এই সমস্ত কিছু মেনে নিতে না পারলে সে কখনো সত্যকে ধরতে পারবে না।
তখন সে গভীরভাবে নিজের ভেতরে তাকায়। সে তার ভুলগুলো স্বীকার করে। সে জানে, সে জীবনে কতবার অন্যদের বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। সে তার নিজস্ব অহংকারকে মেনে নেয়, নিজের দোষের কথা স্বীকার করে। তার ভেতরে যে সমস্ত দ্বন্দ্ব ছিল, সে তার সবটুকু ত্যাগ করে দেয়।
“এখন তুমি সত্যের দিকে এগিয়ে চলো,” সেই অদৃশ্য ব্যক্তির কণ্ঠে বলে। “তুমি নিজের অন্ধকারকে শিকার করেছ, আর এখন তুমি শুদ্ধ। তুমি প্রস্তুত।”
হঠাৎ, হলঘরের অন্ধকার ভেঙে যায়। একটি উজ্জ্বল সাদা আলো তার চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। তার চোখে এক নতুন দৃষ্টি খোলে। সে দেখে, তার চারপাশে একটি বিশাল আকাশ রয়েছে, যার মাঝে বহু নক্ষত্র ক্ষীণভাবে জ্বলছে।
আর তখনই অয়ন অনুভব করে, তার চোখের সামনে থাকা সেই অন্ধকার, সেই ভয়, সেগুলো আর তাকে ঘিরে নেই। তার ভেতরে শান্তি আসে, এবং সে জানে, সে সত্যের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
সে এক ধাপ এগিয়ে যায়, এবং এক বিশাল দরজা তার সামনে খুলে যায়। দরজার ওপারে একটি শান্ত, সুন্দর পৃথিবী তার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে।
“তুমি এখন জানো। তুমি জানো, পৃথিবী যা কিছুই হতে পারে, তার সব কিছুই মায়া। এখন তুমি বুঝতে পারো, মায়া ও সত্যের মধ্যে যে পার্থক্য, তা তোমার ভেতরেই ছিল। তুমি এখন নিজের আত্মাকে জানো, আর এই পৃথিবীও তোমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে।”
অয়ন একটি গভীর শ্বাস নেয়। তার চোখে, মনে, এবং আত্মায় এক নতুন দৃষ্টি প্রকাশ পায়। সে জানে, তার যাত্রার এই শেষের শুরু, এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
“এখন তুমি মুক্ত,” সেই ব্যক্তির কণ্ঠ শেষবারের মতো শোনা যায়, এবং অয়ন তার ভেতর এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করে।
এটাই ছিল তার চূড়ান্ত পরীক্ষা—এবং সে সফল।
অধ্যায় ৮: চূড়ান্ত মুক্তি
অয়ন সেই দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসে, এবং তার চারপাশে এক নতুন পৃথিবী আবির্ভূত হয়। এটি একটি শান্ত, সুন্দর জায়গা, যেখানে সবুজ গাছপালা, ঝর্ণার জলধারা, এবং মিষ্টি সুবাসী বাতাস রয়েছে। আকাশ উজ্জ্বল, নীল, আর সূর্য হাসছে যেন অয়নকে অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।
সে আশ্চর্য হয়ে পরিবেশটাকে লক্ষ্য করে। এ যেন এক নতুন দুনিয়া, যেখানে সমস্ত অন্ধকার, ভয়, আর মায়া হারিয়ে গেছে। এখানে এক অদ্ভুত শান্তি বিরাজ করছে, যা তাকে পুরোপুরি নতুন অভিজ্ঞতা দিচ্ছে।
“আমি কোথায় আছি?” সে নিজের মনে বলে।
একপর্যায়ে, তার সামনে সেই নারী আবার আবির্ভূত হয়, যার সঙ্গে সে তার যাত্রার মাঝে দেখা করেছিল।
“তুমি এখন মুক্ত,” নারী বলে। “এখানে তুমি সত্যের মধ্যে আছ। কোনো মায়া, কোনো ভয় নেই। তুমি সেই শান্তির মধ্যে আছ, যা তোমার আত্মাকে পূর্ণতা দেবে।”
অয়ন নারীর দিকে তাকায়, এবং তার মুখে এক কৃতজ্ঞতা ভেসে ওঠে। “তাহলে আমি কি সত্যিই মুক্তি পেয়ে গেছি?”
“হ্যাঁ,” নারী বলেন, “এখন তুমি মুক্ত। তুমি আর মায়ার দাসী হতে হবে না। তুমি শুধু সত্যকে গ্রহণ করেছ, আর এই গ্রহণই তোমার মুক্তির চাবিকাঠি।”
অয়ন তার চোখে বিস্ময় দেখতে পায়, এবং এক নতুন আত্মবিশ্বাস তাকে ঘিরে নেয়। সে জানে, সে এখন এক নতুন মানুষ হয়ে উঠেছে। আর এই নতুন পৃথিবী, এই শান্তির অভ্যন্তর, তার আত্মাকে পূর্ণ করেছে।
“এটা কীভাবে সম্ভব হলো?” অয়ন জানতে চায়। “এতকাল ধরে আমি ভুল পথে চলছিলাম, এত কিছু হারিয়েছি। আমি কেন মুক্তি পেলাম?”
নারী মৃদু হেসে বলে, “তোমার ভুলগুলো, তোমার কষ্টের দিনগুলো, সব ছিল তোমার প্রাকৃতিক যাত্রার অংশ। তুমিই ঠিক সময়ে তোমার নিজের অন্ধকারকে গ্রহণ করেছ, আর তাই তুমি সত্যের কাছে পৌঁছতে পেরেছ। এখন তুমি জানো যে, মায়া হলো শুধুমাত্র এক প্রান্তে আর সত্য হলো অন্য প্রান্তে। আর মাঝখানে রয়েছে তোমার নিজের আত্মার পরীক্ষা।”
অয়ন একটু সময় নিয়ে সবকিছু উপলব্ধি করে। সে জানে, এই অভিজ্ঞতা তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।
“এখন আমি কী করতে পারি?” সে নারীর কাছে জানতে চায়।
“এখন তুমি যা খুশি করতে পারো,” নারী বলে। “তুমি এখন নিজের কাছে নতুন সম্ভাবনা দেখবে। তুমি এই শান্তির সঙ্গে যাত্রা করতে পারো, অথবা তোমার পৃথিবীর দিকে ফিরতে পারো। যে পথেই তুমি যেও, তুমি এখন এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এসেছ।”
অয়ন খানিকক্ষণ চুপ করে ভাবে, এবং তারপর বলে, “আমি আমার পৃথিবীর দিকে ফিরতে চাই। আমি জানি, সেখানে অনেক কিছু মিস করেছি। কিন্তু আমি এখন সত্য জানি, আর আমি সেই সত্যের আলোয় ফিরতে চাই।”
নারী আশীর্বাদমূলক দৃষ্টিতে তাকে দেখেন, এবং বলেন, “তাহলে এই পথটি হবে তোমার মুক্তির পথ। তুমি যা বেছে নিয়েছ, তাতে সত্যিকারের শান্তি আর ভালোবাসা বয়ে আসবে।”
অয়ন নারীর দিকে শেষবার চেয়ে নেয়, এবং তারপর সে সেই দরজার দিকে ফিরে যায় যা তাকে পৃথিবীর দিকে নিয়ে যাবে। দরজার ওপারে তার পুরোনো পৃথিবী অপেক্ষা করছে, কিন্তু এবার তার চোখে এক নতুন দৃষ্টি, তার মনে এক নতুন শক্তি।
তার যাত্রা শেষ, কিন্তু তার নতুন অধ্যায়ের শুরু হয়েছে। সে জানে, এখন তার যাত্রা শুরু হয়েছে নতুনভাবে, যেখানে সত্য আর ভালোবাসা তার পথনির্দেশক।
এটা ছিল অয়ন-এর এক নতুন জীবন, এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি—আর সে এখন জানে, সত্য হলো এক অদৃশ্য, অবিনশ্বর শক্তি যা তাকে পরিপূর্ণতা দিয়েছে।