Posts

গল্প

নিষিদ্ধ গ্রাম: এক ভৌতিক কাহিনি

December 28, 2024

Subit Baran Mallick

6
View
নিষিদ্ধ গ্রাম - এক ভৌতিক কাহিনি

অধ্যায় ১: অন্ধকারের আহ্বান

গভীর অরণ্যের মাঝে অবস্থিত “নিষিদ্ধ গ্রাম” বহু বছর ধরে পরিত্যক্ত। শহরের মানুষজন জানত, এই গ্রামে গেলে কেউ ফিরে আসে না। সুনীল, এক তরুণ সাংবাদিক, গ্রামের রহস্য নিয়ে নিবন্ধ লিখতে চায়। বন্ধুরা তাকে বারবার সতর্ক করেছিল। রীনা বলেছিল, “এখানে যাওয়া মানে মৃত্যুকে ডাক দেওয়া।” কিন্তু কৌতূহল তাকে গ্রামে যাওয়ার পথে টেনে নিয়ে গেল।

গরম সন্ধ্যায় রওনা দিয়ে সে বনের পথ ধরল। সরু রাস্তা, ভাঙা পাথরের টুকরো, আর চারপাশে নীরবতা যেন তাকে সতর্ক করছিল। কিছুক্ষণ পর সে একটি পাথরের স্তম্ভ দেখতে পেল। তাতে লেখা ছিল: "ফিরে যাও।" সুনীল সতর্কতাকে উপেক্ষা করে গ্রামে ঢুকল। চারপাশের গাছপালা অস্বাভাবিকভাবে নীরব। হাওয়া বইছিল না, তবু গায়ে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছিল। তার মনে হচ্ছিল, কেউ তাকে দেখছে।


 

অধ্যায় ২: অদ্ভুত গ্রাম ও রহস্যময় পুকুর

গ্রামে ঢুকে সুনীল দেখতে পেল পরিত্যক্ত বাড়ি, ধ্বংসস্তূপ আর মাটিতে ছড়ানো ভাঙাচোরা জিনিসপত্র। কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল গ্রামের মাঝখানে থাকা একটি বড় পুকুর। পুকুরের জল অদ্ভুতভাবে নড়ছিল, যদিও বাতাস চলছিল না।

পুকুরের ধারে একটি পাথরের থালা পড়ে ছিল। তাতে লাল রঙে অদ্ভুত চিহ্ন আঁকা। হঠাৎ, পেছন থেকে একটি গাঢ় কণ্ঠস্বর ভেসে এল, “তুমি এখানে কেন এসেছো?” সুনীল দ্রুত পেছনে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না।

পুকুরের দিকে তাকাতেই মনে হলো, পানির মধ্যে কারও ছায়া নড়ছে। সে কাছে গিয়ে দেখতে চাইল। আচমকা, পুকুর থেকে জল ছিটকে তার দিকে আসতে লাগল। সে পেছনে সরে এল, কিন্তু এক অদ্ভুত ঠান্ডা অনুভূতি তার শরীরে বয়ে গেল।


 

অধ্যায় ৩: ভাঙা বাড়ি ও ছায়ার উপস্থিতি

সুনীল একটি ভাঙা বাড়িতে ঢুকল। ঘরটি ভয়ঙ্কর নোংরা, মাকড়সার জালে ঢাকা। দেওয়ালে অদ্ভুত চিত্র আঁকা ছিল। প্রতিটি ছবিতে মানুষের মুখ বিকৃত, চোখ থেকে রক্ত ঝরছে।

এক কোণে একটি পুরনো আয়না রাখা ছিল। সুনীল নিজের প্রতিচ্ছবি দেখতে গেল। কিন্তু সে যা দেখল, তাতে তার গা শিউরে উঠল। প্রতিচ্ছবিটি তার দিকে তাকিয়ে হাসছিল, অথচ সে হাসেনি।

আচমকা আয়নার মধ্যে একটি কালো ছায়া ফুটে উঠল। সেটা আস্তে আস্তে বড় হতে লাগল। সুনীল পেছনে সরে এল। তখনই আয়নার কাঁচ নিজে থেকেই ভেঙে গেল। ভাঙা কাঁচের প্রতিটি টুকরোয় তার প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট ছিল, কিন্তু প্রতিটিই ভিন্ন।


 

অধ্যায় ৪: মন্দিরের রহস্য

গ্রামের এক কোণে একটি প্রাচীন মন্দির ছিল। মন্দিরটি ছিল অন্ধকারে ঢাকা। ভেতরে ঢুকে সুনীল দেখতে পেল কেন্দ্রে একটি মূর্তি। মূর্তিটির মুখ ছিল ভয়ঙ্কর—একটি বিকৃত হাসি। মূর্তির পায়ের কাছে একটি পুরনো বই পড়ে ছিল।

সুনীল বইটি তুলে নিল। বইয়ের পাতা খুলতেই কালো ধোঁয়া বেরোতে লাগল। সেই ধোঁয়ার মধ্যে একটি মুখ স্পষ্ট হয়ে উঠল। মুখটি বলল, “তুমি এখানে এসেছ কেন? তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি। এখন তুমি আর ফিরতে পারবে না।”

সুনীল বইটি ফেলে দিয়ে বাইরে দৌড়াতে লাগল। কিন্তু মন্দিরের দরজার পথ বন্ধ হয়ে গেল। চারপাশে যেন অদৃশ্য কণ্ঠস্বর তাকে ঘিরে ধরেছিল। মন্দিরের দেওয়ালে আঁকা চিত্রগুলোও নড়তে শুরু করল।


 

অধ্যায় ৫: মৃত্যু ও অভিশাপ

মন্দির থেকে বেরিয়ে সুনীল বনের পথে দৌড়াতে লাগল। পেছনে অদ্ভুত ছায়াগুলো তার দিকে আসছিল। সে যত দৌড়াচ্ছিল, পথ তত দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছিল। হঠাৎ, তার পথ আটকে গেল।

“তুমি আর ফিরতে পারবে না,” ছায়াগুলো একসঙ্গে বলে উঠল। পরদিন সকালে গ্রামের কাছে একটি পোড়া দেহ পাওয়া গেল। তার পাশে পড়ে ছিল সেই লাল চিহ্ন আঁকা থালা।

নিষিদ্ধ গ্রামের অভিশাপ থেকে কেউ রেহাই পায় না। যারা এই অভিশাপ ভাঙতে চায়, তারা চিরকালের জন্য অন্ধকারে হারিয়ে যায়।

Comments

    Please login to post comment. Login