Posts

গল্প

গোপন চিঠির রহস্য

December 28, 2024

Subit Baran Mallick

6
View
গোপন চিঠির রহস্য।

প্রথম অধ্যায়: অজানা বার্তা

কলকাতার শ্যামবাজার অঞ্চলে অবস্থিত একটি শতবর্ষী বাড়ি। চারপাশে পুরনো দেয়াল আর ধুলোমাখা জানালার কারুকাজ। বিকেলের সূর্যের আলো যখন বারান্দার রেলিং ছুঁয়ে যাচ্ছিল, তখন সুদীপ্ত ব্যানার্জি তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে বসে ছিল।

লাইব্রেরিটি তার স্বর্গ ছিল—পুরনো বই, নোটবুক, এবং দুষ্প্রাপ্য দলিলের সংগ্রহ। তার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল ব্রিটিশ আমলের একটি অজানা ইতিহাসের উপর। ঠিক সেই সময় দরজার নিচ দিয়ে একটি চিঠি গড়িয়ে এল।

চিঠিটি পুরনো কাগজে মোড়ানো এবং লাল মোমের সিল দিয়ে বন্ধ করা। সুদীপ্ত অবাক হয়ে চিঠিটি তুলে নিল। উপরে তার নাম সুন্দর হস্তাক্ষরে লেখা: "সুদীপ্ত ব্যানার্জি, ইতিহাসবিদ"

চিঠি খুলতেই তার চোখে পড়ল এক রহস্যময় বার্তা: "যদি সত্য জানতে চাও, তবে কাল রাত বারোটায় গঙ্গার ঘাটে আসো। কাউকে কিছু জানিও না।"

সুদীপ্ত হতবাক হয়ে গেল। কে তাকে এই বার্তা পাঠাল? আর এই ‘সত্য’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

চিঠিটি হাতে নিয়ে জানালার বাইরে তাকাল সে। সন্ধ্যার ছায়া নেমেছে। রাস্তা জনমানবশূন্য। তার মন ক্রমশ গভীর রহস্যে ডুবে গেল।


 

দ্বিতীয় অধ্যায়: অতীতের ছায়া

সুদীপ্তের বাবা, হরিদাস ব্যানার্জি, ছিলেন ব্রিটিশ আমলের এক গুপ্তচর। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে কাজ করতেন এবং ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্যকে রক্ষা করেছিলেন। তবে তাঁর মৃত্যুর পর সেই সব কাজ আর সামনে আসেনি।

তার স্মৃতি মন্থন করতে করতে সুদীপ্ত পুরনো একটি বাক্সের কথা মনে করল। বাবার রেখে যাওয়া সেই বাক্স কখনো খোলা হয়নি। বাবার নির্দেশ ছিল, “যখন সময় আসবে, তখনই এটি খোলা উচিত।”

রাতের অন্ধকারে ঘরের কোণে রাখা বাক্সটি খুলতেই দেখা গেল একটি নোটবুক, কয়েকটি দলিল, এবং একটি মানচিত্র। নোটবুকে লেখা ছিল: "নীল রত্ন, ভারতের হারানো ইতিহাসের প্রতীক। এর অভিশাপকে জয় করতে পারলে তবেই সত্য উন্মোচিত হবে।"

এমন রহস্যময় দলিল দেখে তার মনে শিহরণ জাগল। চিঠির সঙ্গে কি এর কোনো সম্পর্ক আছে?


 

তৃতীয় অধ্যায়: অজানা ভ্রমণ

চিঠির নির্দেশ অনুযায়ী, রাত বারোটায় সুদীপ্ত গঙ্গার ঘাটে পৌঁছাল। পুরো জায়গাটি কুয়াশাচ্ছন্ন। নদীর ঢেউ আর শীতল বাতাস পরিবেশকে ভয়ার্ত করে তুলছিল।

সে সাবধানে চারপাশ দেখল। কেউ কি তাকে অনুসরণ করছে? পকেটে ছোট একটি চাকু রেখেছে আত্মরক্ষার জন্য। হঠাৎ পেছন থেকে একটি কণ্ঠস্বর ভেসে এল: "তুমি কি সত্য জানতে প্রস্তুত?"

সুদীপ্ত দ্রুত ঘুরে দাঁড়াল। এক মধ্যবয়সী মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। কালো চাদরে মুখ ঢাকা। তার চোখে ছিল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি। মহিলা বলল, "তোমার বাবার অসমাপ্ত কাজ শেষ করার সময় এসেছে।"


 

চতুর্থ অধ্যায়: রহস্যময় রত্ন

মহিলা একটি পুরনো বাক্স তুলে ধরল। বাক্স খুলতেই দেখা গেল একটি বিশাল নীল রত্ন। সেটি থেকে অদ্ভুত নীলাভ আলো ছড়িয়ে পড়ছিল। "এটি শুধু একটি রত্ন নয়। এটি ভারতের হারানো ঐতিহ্যের প্রতীক।"

মহিলা আরও বলল, "তোমার বাবা এটি ব্রিটিশদের কাছ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। কিন্তু তিনি এটিকে যথাস্থানে ফিরিয়ে দিতে পারেননি। এই রত্নের জন্য তিনি অনেক শত্রু তৈরি করেছিলেন। আজ সেই শত্রুরা আবার এটি পেতে চায়।"

রত্নটির প্রতি সুদীপ্তের মুগ্ধতা যত বাড়ছিল, ততই তার ভয় বাড়ছিল। এই রত্ন কি তার জীবনকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে?


 

পঞ্চম অধ্যায়: শত্রুর উপস্থিতি

রত্নটি পাওয়ার পর থেকেই সুদীপ্ত বুঝতে পারল, তার পিছু নেওয়া শুরু হয়েছে। তার ঘরে অদ্ভুত ছায়া দেখা যাচ্ছিল। রাতের অন্ধকারে বারবার অজানা কণ্ঠস্বর শুনতে পাচ্ছিল।

একদিন একটি চিঠি পেল সে, যেখানে লেখা ছিল: "রত্ন আমাদের দাও, নাহলে তোমার জীবন শেষ।"

এবার সে বুঝতে পারল, এটি কেবল একটি রহস্য নয়; এটি একটি জীবন-মৃত্যুর খেলা।


 

ষষ্ঠ অধ্যায়: অভিশাপের ইতিহাস

রত্নটির ইতিহাস অনুসন্ধান করতে গিয়ে সুদীপ্ত জানতে পারল, এটি মুঘল আমলে নির্মিত একটি পবিত্র রত্ন। তবে একসময় এটি ব্রিটিশদের হাতে পড়ে যায়। রত্নটির অভিশাপ ছিল, "যে এটি দখল করতে চাবে, তার মৃত্যু অনিবার্য।"

রত্নটির ক্ষমতা সম্পর্কে জানতে পেরে তার মনে দ্বিধা দেখা দিল। সে কি নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এটি রক্ষা করবে, নাকি এটি শত্রুদের হাতে ছেড়ে দেবে?


 

সপ্তম অধ্যায়: শত্রুর আক্রমণ

এক রাতে শত্রুরা তার ঘরে ঢুকে পড়ে। তারা রত্ন চুরি করার চেষ্টা করে। তবে সুদীপ্ত তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে সেই রহস্যময় মহিলা এসে শত্রুদের বাধা দেয়।

মহিলা বলল, "তোমাকে যা করতে হবে, তা হচ্ছে রত্নটিকে তার আসল জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়া।"


 

অষ্টম অধ্যায়: ঐতিহ্যের পথে

মানচিত্র দেখে সুদীপ্ত জানতে পারল, রত্নটি এক প্রাচীন মন্দিরে ফিরিয়ে দিতে হবে। সেই মন্দিরটি ভারতের গভীর জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত।

শত্রুদের চোখ এড়িয়ে সে মন্দিরে পৌঁছাল। মন্দিরে প্রবেশ করতেই রহস্যময় আলোর মধ্যে একটি প্রাচীন শিলালিপি দেখতে পেল। সেখানে লেখা ছিল: "সত্যের প্রতি বিশ্বাসই একমাত্র মুক্তি।"


 

উপসংহার

রত্নটিকে মন্দিরের প্রকৃত স্থানে রেখে দিয়ে সে ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করল। শত্রুরা রত্নটি আর কখনো খুঁজে পাবে না।

তার বাবার অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে, সুদীপ্ত বুঝতে পারল, সত্য এবং ঐতিহ্যের প্রতি বিশ্বাস সবসময় জীবনের চেয়ে বড়। "রহস্য যত গভীরই হোক, সত্যের আলো তাকে জয় করবেই।"


 

(এই গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। এটি রহস্য, ঐতিহ্য এবং আত্মত্যাগের এক অনন্য কাহিনি।)


 

গল্পটি ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন।

Comments

    Please login to post comment. Login