পোস্টস

গল্প

আজব আয়না

১৭ মে ২০২৪

জালাল উদ্দিন লস্কর

মূল লেখক জালাল উদ্দিন লস্কর



গল্প / আজব আয়না

জালাল উদ্দিন লস্কর 

কিছুদিন ধরে অদ্ভুত এক অসুখ করেছে সামিউল আলম সাহেবের।অনেক চেষ্টা করেও রাতে কিছুতেই দুচোখ এক করতে পারেন না।প্রথম প্রথম বিষয়টিকে পাত্তা দিতে না চাইলেও ক্রমাগত অনিদ্রায় তার শরীর শুকাতে শুরু করেছে।চোখ কোটরাগত হয়ে গেছে।বিষয়টি সামিউল সাহেবের স্ত্রী শম্পা বেগমেরও দৃষ্টি এড়ায় নি।স্বামীর কাছে জানতে চান কেন দিন দিন তার শরীরের এমন অবস্থা হচ্ছে।সামিউল সাহেব কোনোকিছু না বলে অন্য প্রসঙ্গে চলে যান।শম্পা বেগমের অস্থিরতা বাড়ে।বছর তিনেক আগে সরকারী চাকুরী থেকে অবসরে এসেছেন সামিউল সাহেব।চাকুরী জীবনে স্ত্রী সন্তান ও সংসারের ভালোর জন্য এমন কাজ নেই যা সামিউল সাহেব করেন নি।সহায় সম্পদ করেছেন যথেষ্ট।অবসর জীবনেও অবসর বসে থাকার মানুষ নন সামিউল সাহেব।তাই ছোট শ্যালককে সাথে নিয়ে একটা ব্যবসায় নেমেছেন।পাথর সরবরাহের ব্যবসা।বিভিন্ন পার্টি থেকে সরবরাহের অর্ডার পাওয়ার পর ভোলাগঞ্জ থেকে পাথর আনিয়ে দেন সামিউল সাহেব।ব্যবসায় সুনাম অর্জন করেছেন বেশ দ্রুত।সবাই তাকে বিশ্বাস করে।সম্মান করে।ভালোই আয় হয় এখান থেকে।স্ত্রীকে খুশী রাখতেই ছোট শ্যালককে নিয়েছেন ব্যবসায়।লেখাপড়া শেষ করে কোনো চাকরীবাকরীর সুবিধা করতে পারে নি সামিউল সাহেবের ছোট শ্যালক খলিলুর রহমান।দুলাভাইর ব্যবসা থেকে যা আয় হয় এবং খলিল যা ভাগে পায় এভাবে কয়েক বছর চালিয়ে যেতে পারলে বাকি জীবন আর চাকুরীর চিন্তা করতে হবে না খলিলকে।শম্পা বেগমও বেজায় খুশী।যাক বেকার ভাইটার একটা হিল্লা হলো তবে।

বারবার শম্পা বেগম সামিউল সাহেবের কাছে জানতে চান কি হয়েছে তার।কেন শরীর এভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে।চোখের কোণে কালি পড়েছে।আর কেনই বা চোখ কোটরে বসে যাচ্ছে দিন দিন।সামিউল সাহেবের ডায়াবেটিস নেই।শুধু ডায়াবেটিস কেন বলতে গেলে তেমন কোনো অসুখ বিসুখই নেই।তবে কেন এমন হচ্ছে,চিন্তা বেড়ে চলে শম্পার।শম্পার প্রতি আর আগের মতো শরীরি টানও অনুভব করেন না সামিউল সাহেব।এক বিছানায় শোয়া হয়।অথচ একটা সময় শম্পা বেগমকে ঠিকমতো ঘুমোতেও দিতেন না সামিউল সাহেব।জোঁকের মতো লেগে থাকতেন!
শম্পা বেগম মুহুর্তেই ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে যান।সামিউল সাহেব ঘুমাতে পারেন না কিছুতেই।এর একটা বিহিত করা দরকার-শম্পা বেগম ভাবেন।একদিন জোর করেই নিয়ে যান মুন ডায়াগনস্টিকের ডাঃ করিম আহমেদের কাছে।সব শুনে সামিউল সাহেবকে ডাঃ করিম আহমেদের কাছে মনে হয় ইনসোমনিয়ার রোগী।প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ লিখে দিয়ে এক মাস পরে আবার দেখা করতে বলে দেন।সামিউল সাহেবকে নিয়ে বাড়ী ফিরে আসেন শম্পা বেগম।সেই রাতে ওষুধের ক্রিয়ায় বেঘোরে ঘুমান সামিউল সাহেব।পরের দিন থেকে আবার আগের মতোই বিনিদ্র রাত কাটতে থাকে তার।পাশের গ্রামের মহসিন কবিরাজের সাথে গোপনে দেখা করেন শম্পা বেগম।এসব কবিরাজ-টবিরাজে বিশ্বাস নেই সামিউল সাহেবের-শম্পা বেগম তা ভালোই জানেন।মহসিন কবিরাজ বিছানার চার কোণে রাখার জন্য চারটি তাবিজ দেন শম্পা বেগমকে।এতেও ফল হয় না!

ছেলেমেয়েদের এসব বুঝতে দেন না শম্পা বেগম।রাতের বেলা ক্রমাগত ঘুম না হওয়ায় দিনে একটু নিদ্রামতো ভাব আসলে তখন ব্যবসা প্রতিষ্টানেই কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিতে চেষ্টা করেন সামিউল সাহেব।কিন্তু এখানেও সেই একই ঝামেলা।চোখে একটু সময়ের জন্যে ঘুম আসলেই তার সামনে একটা অদ্ভুত আকৃতির আয়না ভেসে উঠে।আর সেই আয়নায় তার অতীত জীবনের একেকটা ঘটনা জীবন্ত ছবির মতো ভেসে উঠে।ভালো ঘটনাগুলো যখন আয়নাতে ভেসে উঠে তখন বেশ ভালোই লাগে।তবে আয়নাতে ভেসে উঠা কোনোকোনো ঘটনা তো রীতিমতোই ভীতিকর।
চাকুরী থেকে অবসরে আসার বয়স হওয়ার অনেক আগেই সামিউল সাহেব স্বেচ্ছায় চাকুরীটা ছেড়ে দেন।শেষ দিকে এসে ডিপার্টমেন্টের লোকজনের কাছে তার কোন ইজ্জত সম্ভ্রম ছিল না।সহকর্মী হাকিম আহমদের স্ত্রীর সাথে তার জমজমাট পরকীয়ার কাহিনী কমবেশী সবারই জানা ছিল।এ নিয়ে রসালো আলোচনার কমতি ছিল না অফিসেও।একদিন হাতেনাতে ধরা পড়ার পর কি অপদস্তই না হয়েছিলেন সামিউল সাহেব।যেভাবেই হউক ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছিলেন তখন।রাতারাতি তাকে অন্যত্র বদলী করে দেওয়া হয়।শম্পা বেগমের কানেও যায় ঘটনার খবর।ভীষণ মর্মাহত হন স্বামীর এমন অধঃপতনে।কিন্তু ওই শম্পা বেগমই কোনোদিন জানতে চান নি তার স্বামী সামিউল সাহেব মাসিক বেতনের তুলনায় এতোটাকা কি করে আয় করেন!দেদারছে খরচাপাতি করেও বছর বছর এতো স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি কেমন করে করছেন এসব ভুলেও জানতে চাইতেন না।স্বামীর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে হাতেনাতে ধরা পড়ার ঘটনায় একেবারেই ভেঙ্গে পড়েন শম্পা বেগম। এর কিছুদিন পরই স্বেচ্ছায় চাকুরী ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়ীতে চলে আসেন।ব্যাংকে জমানো টাকার পরিমান দেখে সামিউল সাহেব নিজেই আঁতকে উঠেছিলেন।এতো টাকা দিয়ে কি করবেন তিনি!

গ্রামের বাড়ীতে আসার পর ধর্মকর্মে মন দেন সামিউল সাহেব।জীবনে নামায রোযা না করলেও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়া শুরু করেন।বড় কোরবানী দেন।দরিদ্রদের মাঝে মাংস বিলিয়ে দেন উদার হাতে।মাঝে মাঝে  কয়েকদিনের জন্য দ্বীনের মেহনতেও যেতে শুরু করেন।চলাফেরা পোষাক- -আসাকে পরিবর্তন আসে সামিউল সাহেবের।গ্রামের লোকজনের সাথে মন খুলে  মিশতে শুরু করেন।পাড়া প্রতিবেশীর বিপদে আপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।গ্রামের মানুষও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে।স্ত্রী শম্পা বেগমও স্বামীর এমন পরিবর্তনে যারপর নাই খুশী হন।স্ত্রীর এই খুশীর মাত্রা আরও বেড়ে যায় যেদিন সামিউল সাহেব স্থাণীয় বাজারে নতুন ব্যবসা শুরুর কথা তাকে জানান।এবং জানান যে শম্পার ছোট ভাই খলিলকে তিনি কোনোরূপ পুঁজি ছাড়াই সাথে রাখছেন সমান ভাগীদারের মর্যাদায়।যাক এতোদিনে তাহলে সামিউল সাহেব মানুষ হলেন।

সামিউল-শম্পা দম্পতির এক ছেলে এক মেয়ে।দুজনই বেসরকারী মেডিকেল কলেজে ডাক্তারী পড়ে।প্রচুর টাকা খরচ করে ভর্তি করতে হয়েছে।এর আগে পরিচিত এক লোকের মাধ্যমে ঢাকার একজনের কাছ থেকে অনেক টাকা দিয়ে মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্ন কিনে এনেছিলেন সরকারী মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ার আশায়।কাজে আসে নি।পরে বুঝেছিলেন ঢাকার ওই লোক চোরের উপর বাটপারি করে তার কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বিশ্বাসের সুযোগে।টাকার জন্য মন খারাপ করেন নি সামিউল সাহেব।মন খারাপ হয়েছিল পরিচিত  লোক হয়ে বিশ্বাস ভঙ্গ করায়।সামিউল সাহেব নিজেও কী এ জীবনে কম মানুষের বিশ্বাস ভেঙ্গেছেন--অজান্তেই নিজের মনে এ প্রশ্নটি জাগে সামিউল সাহেবের!

সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে।কেবল সামিউল সাহেবের শরীর স্বাস্থ্য দিনকে দিন ভেঙ্গে পড়ছে শুধু নিয়মিত ঘুম না হওয়ার কারনে।ঘুমাতে গেলেই এক আজব আয়না এসে হাজির হয় সামিউল সাহেবের চোখের সামনে।আর সেই আয়নাতে ভেসে উঠে নানান অতীত দৃশ্য।

সেদিন শম্পা বেগম সিদ্ধান্ত নিলেন,রাতে ঘুমাবেন না।ঘুমের ভাণ করে স্বামীর পাশে শুয়ে থাকবেন।দেখবেন কোনোকিছু বুঝতে কিংবা ধরতে পারেন কি না।সামিউল সাহেবের জন্য শম্পা বেগমের মনে এক অদ্ভুতরকমের মায়া তৈরী হয়।

রাতে ঘুমাতে গেছেন সামিউল সাহেব।পাশে শম্পা বেগম।টুকটাক কথাবার্তার পর সামিউল সাহেব পাশ ফিরলেন।শম্পা বেগম আর কথা বাড়ালেন না।পরিকল্পনামতো চুপচাপ রইলেন।
ঘন্টাখানেক পর শম্পা বেগমের কানে কেমন অদ্ভুত কথাবার্তা ভেসে আসতে লাগলো।ভয়ে শরীরের লোম কাঁটা দিয়ে উঠলো শম্পা বেগমের।ভয় পেলে চলবে না।সাহস করতে হবে।ভালোমতো শুনতে হবে।টানটান উত্তেজনায় শম্পা বেগম শুনতে লাগলেনঃ
- সামিউল সাহেব,আপনি মরেও শান্তি পাবেন না।আপনাকে বিশ্বাস করে আমি এতগুলো টাকা দিয়েছিলাম আমার ছেলেকে চাকরী পাইয়ে দেবেন বলে।আপনি কথা রাখলেন না।টাকাটাও ফেরত দিলেন না।পরে জেনেছি এভাবে আরও অনেক মানুষের কাছ থেকেই আপনি টাকা নিয়েছেন।অনেকেই পথে বসেছে আপনাকে বিশ্বাস করে।

-একটা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন আপনি।আপনার রিপোর্টের উপর আমার জীবন মরণ নির্ভরশীল ছিল।আপনি আমার কাছে লোক পাঠালেন।আপনার চাহিদা মতো টাকা দিলাম।পরে আপনি প্রতিপক্ষের কাছ থেকে আরও বেশী টাকা নিয়ে তার পক্ষে রিপোর্ট দিলেন।আমার বিরুদ্ধে রায় হলো।আমি দীর্ঘদিন কারাগারে কাটালাম।আমার স্ত্রী সন্তানের পথে বসার যোগাড় হলো।আপনি মরেও শান্তি পাবেন না সামিউল সাহেব।
-সামিউল সাহেব,আপনি কেমন মানুষ!আমাকে বিভিন্ন কাজে পাঠিয়ে সেই সুযোগে আমার স্ত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। শারীরিক ত্রুটির কারনে সন্তান জন্মদানে আমি অক্ষম ছিলাম।আমার স্ত্রী সেটা জানতেন না।আপনার সাথে অনৈতিক সম্পর্কের জেরে আমি আজ দুই সন্তানের পিতা!আমি কেমন করে এসব মন থেকে মেনে নেবো সামিউল সাহেব।

শম্পা বেগম বুঝতে পারলেন প্রতিরাতেই সামিউল সাহেব এমন অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে যান।ভয় আতংক আর মানসিক গ্লানির কারনে তিনি ঘুমাতে পারেন না।কিন্তু এখনতো আর এসব সংশোধনের কিংবা শোধরানোরও উপায় নেই-নিজের মনে ভাবেন শম্পা বেগম।সবকিছু তো স্ত্রী সন্তানের কথা চিন্তা করেই করেছেন,শম্পা বেগম নিজেকে প্রবোধ দেন।

পরদিন নাস্তার টেবিলে বসে শম্পা বেগম সামিউল সাহেবের উদ্দেশ্যে বলেনঃ
-হ্যাঁ গো শুনছো।কাল রাতে আমি একটা ভালো স্বপ্ন দেখেছি।
-আগ্রহ নিয়ে সামিউল সাহেব জানতে চান, কি দেখেছো?বল না কেন?
-দেখেছি আমরা দুজন মিলে এক সাথে আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করছি।শয়তানকে পাথর মারছি।
চল এবার আমরা হজ্বটা করে আসি।জীবনে জেনে না জেনে অনেক পাপ আমরা করেছি।আল্লাহ যদি একটা উসিলায় আমাদের মাফ করে দেন।তোমার শরীরের যা অবস্থা হচ্ছে দিনদিন!
-স্ত্রীর মুখে এমন কথা শুনে সামিউল সাহেব খুবই খুশী হলেন।সাথে সাথে সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলেন।এবারই তারা হজ্বে যাবেন।এবং বন্ধু-বান্ধবদের সাথে পরামর্শ করে কোনো হজ্ব এজেন্সিতে টাকা জমা দিবেন।

কিছুদিনের মধ্যেই শুভাকাঙ্খিদের মাধ্যমে 'খোদার রাহে' নামের একটা হজ্ব এজেন্সির সন্ধান পেয়ে সেখানে যোগাযোগ করলেন।উন্নত মানের হোটেলে থাকা খাওয়াসহ সবমিলিয়ে জনপ্রতি খরচ পড়বে চার লাখ টাকা।টাকা কোনো সমস্যা না--মনে মনে সামিউল সাহেব ভাবলেন।সৌম্যকান্তি চেহারার দরবেশ টাইপের হজ্ব এজেন্সির মালিকের মিষ্টি ব্যবহারে মুগ্ধ হলেন সামিউল সাহেব।পরের সপ্তাহেই টাকা এবং পাসপোর্ট সহ যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে আসবেন বলে জানালেন।কথামতো ঠিকই স্ত্রীকে সাথে নিয়ে আসলেন এজেন্সীতে।প্রয়োজনীয় আনুষ্টানিকতা সম্পন্ন করে টাকা জমা দিয়ে দিলেন।

সে বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক প্রাণঘাতি রোগের ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হলো।চীনের উহান প্রদেশে প্রথম এই রোগ সনাক্ত হয়।করোনা ভাইরাস।ব্যাপকভাবে মানুষ মরতে লাগলো এই রোগে।ক্রমে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে লাগলো।করোনার ঢেউ লাগলো সৌদিতেও।সেদেশের সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদেশে লকডাউন জারী করলো।উমরা হজ্বও সীমিত করে দিলো।দিন যতোই যেতে লাগলো পরিস্থিতি ততোই খারাপ হতে শুরু করায় শেষমেষ সৌদি সরকার খুব সীমিত পরিসরে হজ্ব অনুষ্টানের অনুমতি দিল।প্রতিবছর যেখানে পঁচিশ থেকে ত্রিশ লক্ষ মুসলমান বিভিন্ন দেশ থেকে হজ্ব করতে সৌদি গমন করেন এবার সে সংখ্যা দশ হাজারে নামিয়ে আনা হলো।হজ্ব গমণেচ্ছুদের মাথায় হাত পড়লো।কিছুই করার নেই।নিরাপত্তাজনিত কারনে রাষ্ট্রীয় নিয়মনীতি তো মেনে চলতেই হবে।
এদিকে যারা সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজ্বে যেতে টাকা জমা দিয়েছিলেন সরকার ব্যাংক মারফত তাদের টাকা ফেরত দিতে শুরু করলো।সামিউল সাহেবের পরিচিত অনেকেই ব্যাংক থেকে হজ্বের জন্য জমা করা টাকা ফেরত পেয়েছেনও।কিন্তু সামিউল সাহেব যে এজেন্সিতে টাকা জমা দিয়েছিলেন সেই 'খোদার রাহে' হজ্ব এজেন্সীর সবগুলো ফোন নম্বরই বন্ধ আছে।এজেন্সি মালিকের দেওয়া ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরটাও খোলা পাওয়া যাচ্ছে না।

সামিউল সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন খোদার রাহে হজ্ব এজেন্সিতে যাবেন।খোঁজখবর নেবেন।গেলেনও একদিন।গিয়ে দেখেন হজ্ব এজেন্সির অফিস বন্ধ।সেখানে বড় করে স্থান পরিবর্তনের নোটিশ ঝুলছে।কিন্তু স্থানের নাম উল্লেখ করা নেই নোটিশে ।শীঘ্রই পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ ভাইবোনদের বিস্তারিত অবহিত করা হবে!

সামিউল সাহেবের মনে খটকা লাগলো।প্রায় প্রতি বছরই কিছু হজ্ব এজেন্সির প্রতারনা ও লাইসেন্স বাতিলের সংবাদ পত্রপত্রিকাতে আসে।
খোদার রাহে হজ্ব এজেন্সীও কি তবে সেই রকমের কোনো এজেন্সী? অথচ স্ত্রী শম্পা বেগমকে নিয়ে যেদিন এসেছিলেন কি মোলায়েম ব্যবহারটাই না করেছিলেন এজেন্সি মালিক।থ্রি স্টার হোটেল থেকে খাবার এনে খাইয়েছিলেন। শম্পা বেগম তো একেবারে গলেই গিয়েছিলেন।
সামিউল সাহেব বুঝতে পারলেন, তিনি ধরা খেয়েছেন।

জীবনে অনেক মানুষ ঠকানো সামিউল সাহেব খোদার রাহে হজ্ব এজেন্সির এই ঠগবাজী কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।