পোস্টস

গল্প

মেয়েটিকে আমি চিনতাম

১৭ মে ২০২৪

ফাহ্‌মিদা বারী

মূল লেখক ফাহ্‌মিদা বারী

মোহাম্মদপুর বাবর রোডের ৩১০ নং এপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার করা হলো লাশটিকে। একটি মেয়ের লাশ। সাড়ে পাঁচ ফুট উচ্চতার ঝকঝকে চেহারার এক গৌরবর্ণা তরুণী। চোখেমুখে অকাতর বৈভবের ছাপ স্পষ্ট। সেই বৈভবকে ছাপিয়েও কোথায় যেন একটা সকাতর মিনতি ইতিউতি উঁকিঝুকি মারে। সেটা অবশ্য মনের ভুলও হতে পারে। এত বৈভবে আর মিনতি কোথা থেকে আসে? লাশটাকে নিয়ে পুলিশী হাঙ্গামা কম হলো না। দিনরাত যাকে খুশি তাকে যেখান থেকে খুশি ধরে নিয়ে গিয়ে দুনিয়ার নয় ছয় করলো কিছুদিন। কারণ পুলিশের ধারণা, খুনি এই এপার্টমেন্টেই বাস করে। কায়দা করে ঘাপ্টি মেরে পড়ে আছে। ভালোমত উল্টানি দিলেই হুড়মুড় করে বের হয়ে আসবে।

আমি নিজেও সেই এপার্টমেন্টেই থাকি। শুধু সেই এপার্টমেন্টেই নয়, একেবারে সেই ফ্লোরেই। কাজেই এই অভাগাকে নিয়েও ঝাঁকাঝাঁকি কম হলো না। কাতর মুখে একাধিকবার জানিয়েছি, এই সুন্দরীকে জীবনে প্রথমবারের মতো দেখলাম। দুর্ভাগ্য...সেটাও লাশ হওয়ার পরে!

 

গত বছরের জানুয়ারিতেই বউ ছেলেপুলে আর মাকে নিয়ে উঠেছি এপার্টমেন্টটিতে। আর এখন এই বছরের অগাস্ট চলছে। চৌদ্দ তলা এই এপার্টমেন্টের প্রতি ফ্লোরে পাঁচটা করে ইউনিট। একই ফ্লোরের সকলের সাথেই চেনাজানাটা হয়ে ওঠেনি এখনো। পরিচিত হওয়ার জন্য আমার মা আর বউ অবশ্য জোর চেষ্টা চালিয়েছে একসময়। কখনো অল্প একটুখানি তরকারী কিংবা ভর্তা ভাজি হাতে করে কলিং বেল টিপে দাঁড়িয়ে থেকেছে। ওপাশ থেকে দরজা খুলে দেওয়া বিরক্ত ব্যস্ত মুখে হৃদ্যতার পরিবর্তে অপ্রস্তুত, কুন্ঠিত ছায়া ফুটে উঠেছে। সেটা দেখে আর দেওয়া নেওয়া দ্বিপাক্ষিক হয়ে ওঠার সুযোগ পায়নি। রণে ভঙ্গ দিয়েছে দু’জনেই। বউ কাঁদো কাঁদো মুখে বলেছে,

‘কোথায় এসে পড়লাম রে বাবা! আগেই তো কত ভালো ছিলাম! কে বলেছিল সাধ করে বড়লোক হতে?’

মা’র মুখে তো শুরু থেকেই অমাবস্যার ছায়া। যেদিন ফ্ল্যাটের চাবি হাতে পেলাম, সেদিনই মুখ কালো করে বলেছে,

‘ও রে বাবলা...কী দরকার আর এই জীবনে ওসব ফ্ল্যাট ম্যাটে গিয়ে থাকার? জীবনে আর ক’টা দিন বাকি আছে? এই আলো ছায়া ঘেরা বাসাটাতেই বাকি জীবনটা কাটায়ে দিই না রে বাবা! তোরা গেলে যা...আমি ঐ ছেড়িটারে নিয়ে একা একাই থাকতে পারবো এখানে!’

ছেড়ি মানে আমাদের বাসায় কাজ করা তের চৌদ্দ বছরের একটি মেয়ে। গ্রহের ফেরে এমন ঘোর অবাস্তব প্রস্তাবে আমি রাজি হলেও আমার বউ জীবনেও রাজি হতো না। অনেক উল্টাপাল্টা নিয়মের মতো একটা ভয়ানক উল্টা নিয়ম চালু আছে আমাদের বাসায়। বউ শাশুড়িতে গলায় গলায় খাতির। দুজনে একসাথে বসে তরকারি কুটে। একজন হালুয়া বানালে আরেকজন ডালের ফোঁড়ন দেয়। শাশুড়ি সোয়েটার বুনতে বসলে বউ উলের বল বানিয়ে দেয়। এভাবেই চলছে শুরু থেকে। কাজেই মাকে পুরনো বাসায় ফেলে রেখে আসার প্রস্তাব প্রস্তাবই থেকে যায়।

 

নিন্দুকের ভাষ্যমতে, আমরা হলাম নব্য বড়লোক। বড়লোকদের চালচলন, বেশভূষা এখনো সেভাবে রপ্ত করে উঠতে পারিনি। বড়লোকেরা যেভাবে নিজেদের ঘরের দরজা বন্ধ করে আশেপাশের সবকিছু থেকে চোখ আর কান বাঁচিয়ে রাখে, আমরা এখনো সেভাবে ওসব করতে শিখিনি। মধ্যবিত্তদের মতো মুক্ত উঠোনে আচার আর উদোম বারান্দাতে কাপড় শুকোতে দেওয়ার মতো জিনিসগুলোই এখনো বেশি মানিয়ে যায় আমাদের সাথে। বড়লোকি বাতাসে এখনো আমাদের ইনফ্লুয়েঞ্জা বাঁধে। ওমন নিন্দুকের মুখে ছাই! সবকিছুই হওয়া গেল, ওটুকুন বাতাসে আর কীসের অসুখ বাঁধবে?

কাজেই বড়লোকি হালচাল রপ্ত করার জন্যই পুরনো আটপৌরে মধ্যবিত্ত ভাড়া বাসাটাকে বদলে ফেলে এই এপার্টমেন্টে এসে উঠেছি। বড়লোক যখন হয়েই গেছি, ওসব তো দিনে দিনে শিখে পড়ে নিতেই হবে। ছেলেমেয়ে দুটোকে বাংলা মিডিয়াম থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ইংরেজি মিডিয়ামে এনে ভর্তি করেছি। মনে আশা, আশেপাশে দেখেশুনে দুইদিনেই মুখে ইংরেজির খই ফুটে যাবে। নিজেরা আপডেটেড হয়ে বাবা-মাকেও আস্তে ধীরে টেনে তুলবে। কিন্তু সেই আশায় গুড়েবালি! খই ফোটা তো দূরের কথা, উনুন গরম হওয়ার আগেই ঘাটের নৌকা ঘাটে এসে ভিড়েছে। টিনএজ ছেলেমেয়ে। বেশি চাপাচাপি করা নিষেধ। রেগেমেগে হয়ত লেখাপড়াই বন্ধ করে দিবে! বউকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পেয়েছি,

‘ওহ্‌ বাদ দাও তো! আমাদের মায়ের ভাষাটা খারাপ নাকি? ঐ ভাষাতেই পড়তে দাও না! অযথা টানাটানি করতে যেও না।’ 

বউয়ের আদেশ শিরোধার্য। আমিও আর টানাহ্যাঁচড়া করতে গেলাম না। ফলস্বরূপ বড়লোক তকমাটাই কেবল গায়ের সাথে সেঁটে থাকলো। কাজের কাজ বিশেষ কিছু হলো না। বড়লোকদের সাথে উঠে বসে জাতে ওঠা আর হলো না আমাদের। 

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার বুদ্ধিটা আমার এক ব্যবসায়ী বন্ধুই দিয়েছিল। রোজ ন’টা পাঁচটা অফিস সেরে বাসায় ফেরার পথেই দেখা হয়ে যেত হঠাৎ সঠাৎ। হাতটাকে ওপরে ঝুলিয়ে বাসের এক কোনায় মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকতাম প্রতিদিন। শান্তি শান্তি মুখে বসে থাকা মানুষগুলোকে দেখতে দেখতে যেতাম। স্মার্ট ফোনে চোখ কান মুখ গুঁজে রাখা টিনএজারগুলোকে দেখতাম। কারো মুখে জমে থাকতো আষাঢ়ের মেঘ। একটুখানি ছোঁয়া দিলেই বুঝি ঝরঝর করে বৃষ্টি নামবে। কিছু মুখে খেলা করতো রোদ ঝলমলে দিন। সেই ঝলমলে রোদে গা এলিয়ে বসে থাকতে বড় ভালো লাগতো। মাঝে মাঝে সেই চলন্ত বাসেই মানুষজনের মাথার ওপর দিয়ে খোলা আকাশ দেখার চেষ্টা করতাম। রোজকার অক্লান্ত পরিশ্রমে ভালো করে আকাশটাকেই দেখা হতো না কতদিন! 

 

একদিন এমনি এক বিষণ্ন দিনে কাঁধের কাছে জোর ঝাঁকুনি টের পেলাম।

‘আরে দোস্ত বাবুল! কী রে কেমন আছিস? এ কী হাল তোর! আমি তো চিনতেই পারিনি এতক্ষণ!’

পাশে তাকিয়ে দেখি কলেজের লাস্ট বেঞ্চে বসা সহপাঠী সৌরভ। স্যুট টাই পরিহিত মাঝবয়সী ভদ্রলোকে পরিণত হয়েছে। একদা আমার খাতা থেকে টুকলিফাই করার অপরাধে পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বেচারাকে। অবশ্য বেচারা আমি ভাবতাম। সে কখনো নিজেকে বেচারা মনে করেনি। বহিষ্কার হয়েও মুখের অম্লান হাসি ধরে রেখে বলেছিল,

‘আরে দূর! এত পড়ালেখা করে কী হবে? আমি তো শর্টকাট মেরে পগার পার হয়ে যাব একদিন... দেখিস!’

সেই দেখার সুযোগ আজ এতদিন পরে মিললো! শর্টকাট মেরেছে কী না কে জানে! কিন্তু ভালোভাবেই যে পগার পার হয়ে গেছে তা তো চোখেমুখেই পরিস্ফূট। বাসের ঝাঁকুনিকে কায়দামত আয়ত্তে নিয়ে এসে সৌরভ পিঠ কাঁধ সোজা করে আমার সামনে দাঁড়ালো। হাতের রোলেক্সটাকে বার কয়েক ঝাঁকি মেরে মডেলটাকে ভালোভাবে দেখিয়ে দিল। আমি ক্যাবলাকান্তের মতো তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম। একজন এত সাধ করে দেখায়...আমি কেন দেখবো না? তবে এতদিন পরে বন্ধুকে দেখে সত্যিই খুশি হয়েছি। মুখে অকৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে তুলে বললাম,

‘আরে সৌরভ! তুই! কতদিন পর!’

‘তারপর? কী করছিস এখন?’

‘আমি আর কী করবো? মাছি মারা কেরানিই হয়েছি শেষমেষ। তোর তো দুনিয়ার হালচালই উল্টে গেছে দেখছি!’

সৌরভ অবজ্ঞার হাসি হাসলো। ভাবখানা এই, ‘এ আর এমন কী? বলেছিলামই তো!’ 

পুরো পথ সৌরভের এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যবসার গল্প শুনলাম। আজ তার দুটো গাড়িই কিভাবে ঘটনাচক্রে বউ আর ছেলেদের হাতে চলে গিয়েছে আর তাকে কেন মরতে এই বাস ভ্রমন করতে হচ্ছে...সেই গল্পও আদ্যোপান্ত শোনা হলো। সৌরভ বাস থেকে নামার আগে হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিল। ইঞ্চি ইঞ্চি মাপা হাসি দিয়ে বললো,

‘আসিস...কথা বলবো। এসব কেরানীগিরি এবার বাদ দে!’

সেই শুরু। যাবো কী যাবো না ভাবতে ভাবতেই একদিন গিয়ে হাজির হলাম, গ্রীনরোডে ওর সুরম্য অফিসে। অফিস ছোটই, তবে ভেতরের পোজপাজ সীমাহীন। কিছুক্ষণের মধ্যেই সৌরভ আমাকে কয়েক দফা ইউরোপ আমেরিকা ঘুরিয়ে নিয়ে এলো।

‘আরে! ভাবা যায়? সেই মেরিটোরিয়াস ছেলে তুই! আজ এভাবে ফকিরের মতো ফ্যা ফ্যা করে বাসে ঘুরে বেড়াচ্ছিস! আরে...তোর মতো ছেলেরা থাকবে ইউরোপের টুরে। কখনো যাবি ব্যবসার কাজে... কখনো বউ বাচ্চা নিয়ে বেড়াতে। আমি তো ভাবতেই পারি না...’

জানি না কীসের কৃতজ্ঞতায় সৌরভ আমাকে ওর ব্যবসার অংশীদার বানিয়ে ছাড়লো। সেই কলেজ জীবনের একটু আধটু টুকলি করতে দেওয়ার সুযোগের বিনিময়ে এতদূর বদান্যতা! কেন যেন বিশ্বাস করতে মন চায় না। আমি পারবো কী পারবো না এই দোলাচলে দুলতে দুলতে ওর সাথে একই তরিতে সওয়ার হলাম। শুরুতে একটু আধটু ধাক্কা খেলেও আস্তে আস্তে সামলে নিলাম। সৌরভই টেনে তুললো বলা চলে। ধীরে ধীরে দৃশ্যপট পাল্টাতে লাগলো। হকার্স মার্কেটের সস্তায় কেনা শার্টের বদলে ‘ক্যাটস আই’ ‘রিচ ম্যান’ এর দামী শার্ট গায়ে চড়লো। কুঁচকানো জামা কাপড়ে আমারও চুলকানি ধরে গেল। জুতার চকচকে আর্শিতে ইদানিং নিজের ভূত ভবিষ্যত দেখতে পাই। চশমার ফ্রেম পাল্টালাম। চোখের দৃষ্টি বেমালুম বদলে গেল। সেই সঙ্গে দৃষ্টিভঙ্গি। চাকরিটাকে রদ্দি বস্তুর মতোই ডাস্টবিনে ফেলে দিলাম। বউ মজা করতে ছাড়লো না।

‘দেখ, পুরনো বউকেও পাল্টে ফেলো না আবার!’

বৃদ্ধা মা ছেলের সদ্য পাওয়া সাফল্যে খুশি হলো। তবু মা সুলভ দুশ্চিন্তারও ছায়া ঘনালো।

‘দেখিস বাবা! কাঁচা পয়সা... যেভাবে আসে সেভাবে চলেও যায়। নীতিটাকে ধরে রাখিস।’

নীতি ধরেই তো বাঁচলাম এতগুলো দিন। কী কাঁচকলা হয়েছেটা তাতে? এবারে একটু নিঃশ্বাস ছেড়ে তো বাঁচি! একবার যখন মইয়ের নাগাল পেয়েছি, জাতে উঠে তবেই ছাড়বো! কাজেই বড়লোকি কায়দা কানুন রপ্ত করতে চাওয়া থেমে রইলো না। আমার বউ, মা আর ছেলেপুলেরা হার মেনেছে। এইবার আমার পালা। পারতে তো আমাকে হবেই! এবারেও অন্ধকারে দিশা দেখানো বন্ধুবরই পথ দেখালো।

‘কী রে...সারাদিনই কি অফিসে পড়ে থাকিস নাকি? সন্ধ্যায় একটু ক্লাবের পথটাও তো মাড়াতে পারিস! কত সুন্দরী তোকে দেখবে বলে হা পিত্যেশ করে মরছে!’

 

সৌরভের কথায় বুকের ঢিপঢিপানি বাড়ে। আবার একটু একটু ইচ্ছেও করে। বেশিদিন ইচ্ছেটাকে আটকে রাখতে পারলাম না। একদিন সে উড়াল দিল। ক্লাবে যেতে শুরু করলাম। স্ট্যাটাস বাড়তে লাগলো দুমদাম করে। সৌরভের গলায় আমোদের তুফান ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে পড়ে।

‘আরে বন্ধু...গোলাপী পানি খেতেও স্ট্যাটাস লাগে! সবাই তো খায় সাদা পানি। ওটা তো যে কেউই খেতে পারে। যোগ্যতা থাকলেই না গোলাপী পানির স্বাদ পাওয়া যায়!’

গোলাপী রঙের নাচন ধরে যায় চোখের সামনে। সেই রঙে সবকিছু মেঘ হয়ে হাওয়ায় ভাসতে থাকে...ফুরফুরে ভারহীন স্ফটিকের মতো। আমার তখন একটাই চিন্তা। বড়লোক শব্দের সামনে থেকে ‘নব্য’ শব্দটাকে ঘুঁচিয়ে ফেলতে হবে। নিজের জাতটা সবাইকে চেনাতে হবে। স্ট্যাটাস বাড়াতে হবে। স্ট্যাটাস বাড়িয়ে চলার তুমুল উচ্ছ্বাসে সংসারে আর বিশেষ মন দিতে পারি না। মা আর বউয়ের অশান্তি বেড়েই চলেছে ক্রমাগত। সেই সাথে কান্নাকাটি। একই কথার জাবর কেটে চলেছে দিনরাত।

‘একেবারে ভাল্লাগে না এখানে। কেউ কথা বলে না... বাসায় আসে না। সবাই শুধু যার যার ঘরে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। চল না... আগের বাসাটাতেই চলে যাই! কী সুন্দর খোলা বারান্দা...বাচ্চাদের খেলার জায়গা! প্রতিবেশীদের মধ্যে কত ভাবসাব! কেন মরতে এলাম এখানে?’

আমি কিছু শুনি। কিছু কানের ওপাশ দিয়ে সুড়ুৎ করে ফেলে দিই। নারীজাতির সব কথাতেই কান দিতে নেই। তারা হচ্ছে জগতের সবচেয়ে অসুখী জাতি। অভাবে থাকলে বলে, ‘দাও দাও’। অভাব ফুরোলে বলে, ‘আগেই ভালো ছিল’! কী আজব সমস্যা রে বাবা! এদের সুখী করতে চাওয়ার চেষ্টা করতে চাওয়াটাও বোকামী। সমস্যা চলুক সমস্যার মতো। ও রাস্তা না মাড়ালে ক্ষতি কী?

 

এসব ঝুটঝামেলার মাঝে এখন আবার এই খুনের ঘটনা নতুন উষ্ণতা জুড়ে দিল আমাদের জীবনে।

মেয়েটার বাসা আমাদের দু’বাসা পরেই। আমার বউ আর মায়ের কাছে ওর গল্প প্রায়ই শুনতাম। তারা মাঝে একবার ও’বাসার রাস্তাও মাড়িয়ে এসেছে। মেয়েটা নাকি একা থাকতো। তেত্রিশ-চৌত্রিশের আশেপাশে বয়স। দেখতে তুখোড় সুন্দরী। আমার বউ এমনভাবে তার চেহারার বর্ণনা দিত যে, আমার প্রায় সবটুকুই দেখা হয়ে যেত। কল্পনায় কিছু জুড়ে দেওয়ার আর জায়গা থাকতো না।

‘কী সুন্দর দেখতে গো! কী বলবো তোমাকে! মাথার চুলগুলো দেখে মনে হয় সিল্কের সুতা। কুচকুচে কালো রঙ সেই সুতার। সামনে ফ্যাশন করে চুল কাটা। এই এত্তটুকুন কপাল। সেই কপালে আবার কেটে রাখা চুলগুলো এসে লেপ্টে পড়ে থাকে। চোখগুলোন বেশি বড়ও না, আবার ছোটও না! একেবারে মাপমতন। আর কী সুন্দর টানাটানা! চোখে কাজল দেয় না। কিন্তু তাতেই যা সুন্দর লাগে! দিলে না জানি কেমন লাগতো। ঠোঁট দুইটা দেখলে মনে হয়, জন্ম থেকেই গোলাপী। লিপস্টিক লাগায়। আবার খালি ঠোঁটও দেখেছি। সেটা দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগে। 

আমাদের মতো শাড়ি ব্লাউজ পরে না। সালোয়ার কামিজও একদিনও পরতে দেখিনি। টাইট টাইট গেঞ্জি গায়ে দেয়। সামনে এক্কেরে ফুলে থাকে। আমারই তাকাতে লজ্জা লাগে! একটা ওড়না টরনা গায়ে দিলে কী হয় রে বাবা! ব্যাটা ছেলেদের মতো প্যান্ট জুতা পরে। প্যান্টে আবার বেল্টও বাঁধে। গটগট করে হাঁটে। ছেলে বুড়ো যেভাবে তাকায়! কেউ তাকায় চোখের দিকে, কেউ ঠোঁটের দিকে...কেউ আবার সোজা বুক বরাবর! সামনে দিয়ে হেঁটে গেলে না তাকিয়ে থাকে কার বাপের সাধ্যি? যে দুর্দান্ত জিনিস রে বাবা!’

 

বউকে থামাতে পারি না। আবার শুনতেও পারি না। তার বর্ণনা তো আর থামতে চায় না। মনে মনে বলি,

‘আমাকেও একটু আধটু কল্পনা করে নিতে দাও!’ মুখে বলি,

‘এত কিছু দেখলে কবে? বাসায় গিয়েছিলে নাকি?’

‘প্রথমদিকে তো প্রায়ই গিয়েছি। মা’ও গিয়েছিল আমার সাথে। তারপরে মা একদিন বললো...ও বাসায় আর যাবো না বউ।’ 

‘কেন? কথা বলেনি তোমাদের সাথে?’

‘বলেছে। এই মেয়েটাই সবচেয়ে বেশি কথা বলেছে আমাদের সাথে। কিন্তু মা তবু যেতে নিষেধ করলো। নিজেও আর গেল না।’

আমি আর বেশিকিছু জিজ্ঞেস করিনি। কী জানি! বয়ষ্ক মানুষের মনে কখন কী খেয়াল আসে! কেন যে নিষেধ করেছে কে বলতে পারে? কিন্তু অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আসল ঘটনা জেনে গেলাম। মেয়েটার বাবা-মা বেঁচে আছে। বিয়েও হয়েছিল একবার। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে স্বামীর সাথে। তারপর থেকে একাই থাকে মেয়েটা। বাবা-মা’র সাথেও থাকে না। এপার্টমেন্ট জুড়ে গুঞ্জন ছিল, মেয়েটার নাকি চালচলন ভালো না। প্রায় দিনই একে ওকে বাসায় নিয়ে আসে। সারারাত একসাথে থাকে। সকাল বেলা ছেলেটাকে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। মুখরোচক গল্পগুলো মুখে মুখে ঘোরে...চটচটে চালতার চাটনির মতো। মুখে দিয়ে মজারসে টকাস টকাস শব্দ করে চাটে সবাই। দারোয়ানদের কাছে কিছু জানতে চাইলে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করে। সত্য অসত্য মেশানো সেই গল্পগুলো শুনে দেশটাকে সত্যি সত্যিই ইউরোপ আমেরিকা বলে মনে হয়। 

 

এই স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে এপার্টমেন্টে ঝড়ও বয়ে গেছে বহুদিন। নীতিবান কিছু বুজুর্গ সমালোচনার তুফান উঠিয়েছেন।

‘ছেলেমেয়ে নিয়ে আমরা বাস করি এখানে। ভদ্র এলাকায় এই নোংরামি চলবে না। এসব করতে চাইলে অন্য জায়গা তো আছেই! সেখানে গিয়ে যা খুশি করুক গে। আমরা দেখতে শুনতে যাবো না। আমাদের ছেলেমেয়েদের একটা ভবিষ্যত আছে না? এই এপার্টমেন্টের ম্যানেজার কই? সে তো এভাবে আমাদের সর্বনাশ করতে পারে না। হয় ঐ মেয়ে থাকবে, নয়ত আমরা। আজকেই একটা এসপার ওসপার হয়ে যাবে!’

সেই এসপার ওসপার আজ অবধিও হয়ে ওঠেনি। যখনই একপক্ষ সোচ্চার হয়ে ‘কিছু একটা’ করার জন্য মুখিয়ে ওঠে, তখনই কোথা থেকে যেন অজানা অচেনা আরেক পক্ষ আগুনে পানি ঢেলে দেয়। এই অজানা অচেনা অপর পক্ষ যে কে বা কারা তা কখনো কেউ জানতেও পারে না। শুধু তাদের সজাগ চোখকান আর দ্রুতবেগে ঘটানো কর্মকাণ্ডের সুদক্ষতা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যায়। অবশ্য এখন তো ওসব ল্যাঠা চুকেই গেল। বেঁচে থেকে যারই পাকা ধানে মই দিক না কেন, লাশ হয়ে আর কিচ্ছুটি করার উপায় থাকলো না।

 

আমার তীক্ষ্ণ ক্ষুরধার বুদ্ধির মা সব কিভাবে কিভাবে যেন টের পেয়ে গিয়েছিল। বোকাসোকা বউকে বুঝাতেই শুধু খানিক বেগ পেতে হয়েছিল। সব বোঝার পরে বউয়ের মাথায় হাত।

‘ও মা... বলেন কী! এই ছেমড়ি এখানে বসে বসে এসব করছে? মাগী...বেশ্যা...স্বামীখেদানী...নিজের স্বামীরে খেদাইছে। তাও রসের হাঁড়ি ভরেনি। অন্যের স্বামী খেদানের হাউশ হইছে!’

রেগে গেলে আমার বউয়ের মুখ দিয়ে বেশ মধু ঝরতে থাকে। 

আমার মা আর বউয়ের প্রতিবেশিদের সাথে মিল মহব্বত তৈরির প্রচেষ্টাতে তখন ভালোমতই ভাটির টান পড়ে গেছে। কেউ আর এদিক সেদিক উঁকি মারে না। দুজনেই ততদিনে বুঝে গেছে, যা করার নিজেরা নিজেরাই করতে হবে। মরে পড়ে থাকার সময় হলে নিজেকেই আগেভাগে ব্যবস্থা করে রাখতে হবে। আর যদি সৌভাগ্যক্রমে নিজের বলে কেউ থেকে থাকে, তাহলে হয়ত এই যাত্রায় বেঁচে গেলেও যাওয়া যেতে পারে। তাই দুজনেই এখন খাওয়া দাওয়া শেষে ভাতঘুম সেরে নেয়। আর দুপুরের পর থেকে শুরু করে লাগাতার টিভি সিরিয়াল। অবাস্তব বউ শাশুড়ির দন্দযুদ্ধ গলা জড়াজড়ি করে উপভোগ করে বাস্তবের বউ শাশুড়ি। 

 

পুলিশি জেরায় জেরবার হয়ে ইদানীং আমিও বাসাটা ছেড়ে দিব কী না ভাবছি। বড়লোকি হালচাল তো আর আয়ত্তে এলো না, এখন তবে ঘরের ছেলে ঘরে ফিরি। নইলে এই জেরার ফাঁদে কী বলতে গিয়ে কী বলে দিব কে জানে!

পুলিশকে তো আর বলতে পারিনি, সেদিন কীসের এক দুরুহ বিপদ এসে কড়া নেড়েছিল আমার বাসায়। নিয়তিরই এক অজানা ইশারায় মা-বউ আর ছেলেপুলেরা গিয়েছিল বাইরের হাওয়া খেতে। আমারও যাওয়ার কথা ছিল। শুধু বিধাতার ভয়ানক এক ষড়যন্ত্রে সেদিনই শরীরটা কেমন ম্যাজ ম্যাজ করে উঠলো। কাজে ফাঁকি দেওয়ার অচেনা আবেগ কেমন যেন আচ্ছন্ন করে ফেললো আমার সমস্ত ইন্দ্রিয়। 

সেই একলা বাসায় আচমকা অসময়ে কলিংবেলের শব্দে সচকিত হয়ে উঠলাম আমি। দরজা খুলেই দেখি, ঘোর বিপদ। সারা শরীরে দুর্দমনীয় আবেদন ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক অচেনা রূপসী। শরীর আর মনের ভাঁজে ভাঁজে কে যেন আড়ে আড়ে বলে গেল ‘...এই সেই! এই সেই... যাকে নিয়ে এত কথা! এত হৈ হৈ! দেখ দেখ...আয়েশ করে দেখ! মুখ লুকিয়ে থাকার সময় নয় এটা। তুই না জাতে উঠতে চাস? জাত বড়লোকদের তো খেলতে হয় এসব খেলনা দিয়ে!’ 

মেয়েটি কিন্তু বেশ সপ্রতিভ। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টিকে থোড়াই কেয়ার করে বললো,

‘এই বাটিটা আমার বাসায় পড়ে ছিল। দেখুন তো আপনাদের বাটি কী না! আপনাদেরই হবে। সম্ভবত আপনার স্ত্রী এসেছিলেন একদিন... কিছু একটা খাবার নিয়ে। আমি দুঃখিত...এতদিন দেওয়া হয়নি।’  

 

বাটিটা আমার হাতে গছিয়ে দিয়ে আমার উত্তরের বিন্দুমাত্র অপেক্ষা না করেই মেয়েটা উলটোপথে হাঁটা দিল। কোমর বাঁকিয়ে...হৃদয়ে কম্পন তুলে দিয়ে। যাওয়ার আগে ছোট্ট একটি জিনিস দিয়ে যেতে অবশ্য ভুল করলো না। একটুখানি ভ্রুয়ের নাচন...অল্প একটু দুর্লভ ইশারা...দুর্গম নিষিদ্ধ পথে দুঃসাহসী সার্ফিংয়ের আহবান। মনের কোথায় যেন মানডালা বেজে উঠলো। ডুম ডুম... ডুম ডুম...

পুরুষ আমি। ধ্যানমগ্ন ছিলাম কতদিন! মেনকা’র এমন সুতীব্র আহবান! সেই আহবানকে অস্বীকার করি...এই স্পর্ধা আমার কবে থেকে হলো? অতঃপর...শুরু হলো আমার অজানা দুর্গম পথে যাত্রা। চোখ বাঁচিয়ে... হৃদয় কাঁপিয়ে। বন্ধু সৌরভ তো কতদিনই ইশারা ইঙ্গিত করেছে। বুঝেও বুঝতে চাইনি এতদিন। 

‘বন্ধু...বয়স কতই বা আর হলো! এখনো এক ঘাটেই নোঙ্গর ভিড়িয়ে বসে রইলি? ঘাটে ঘাটে কত তরী...কত কেনাবেচা!’

আহা! জীবন কতই না মধুর! কে বলে শান্তি নেই... তৃপ্তি নেই! সুখ নেই! জীবন তো সব ডালা সাজিয়ে বসেই আছে! উপভোগের সময় আর মনটাকে শুধু হাতের কাছে পাওয়া চাই। 

আমিও আসল কাজে মন দিলাম। এখন আর আকাশ খুঁজতে চেয়ে সময় নষ্ট করি না। মেঘের পসরা থরে থরে সাজিয়েও একঘেয়ে আকাশ আর মন রাঙ্গাতে পারে কই? এখন খুঁজি শরীরের পসরা। সেই পসরা সাজিয়ে বসে থাকা নারীকে বড় রহস্যময়ী লাগে। লুকিয়ে রাখা ধনরত্ন খুঁজে চলি... পথ হারাতে ব্যকুল অবোধ আগন্তুকের চোখ নিয়ে। সেই নারী আমাকে পুরুষ বানায়। তার কাছে অকাতরে বিলিয়ে দিই পুরুষের সতীত্ব। ও জিনিস কি শুধু নারীরই আছে? স্ত্রীর চোখে চোখ মেলে তাকাতে গেলেই একটু আধটু উশখুশানি টের পেতাম। আস্তে আস্তে সেটিও সয়ে এলো। কে জানে, জাতে অনেকখানিই উঠে গেছি কী না! বড়লোকি বুঝি রপ্ত করেই ফেললাম।

 

ভালোই কাটছিল দিনগুলো। বন্ধু সৌরভই একদিন বাগড়া দিয়ে বসলো।

‘বন্ধু... ভালো জিনিস একা একা খেতে নেই। বন্ধু বান্ধবকেও ভাগ দিতে হয়! আর তাছাড়া... উপায়টা বাতলে দিল কে? তুই তো এক ঘাটে বসেই হাপাচ্ছিলি এতকাল!’

আমার ইচ্ছে ছিল না। তবু একদিন সুন্দরীর অনুমতির তোয়াক্কা না করেই পাঠিয়ে দিলাম। মনে আশা ছিল, আমার পাঠানো কাউকে সে না করতে পারবে না। ভুলে গিয়েছিলাম, সুন্দরী মাত্রই রহস্যময়ী। নিজেকে দুর্লভ রূপে যে পুরুষের কাছে পসরা সাজায়, তাকে সুলভ মনে করে কিনতে চাওয়াই সবচেয়ে বড় ঔদ্ধত্য। রহস্যময়ী এই ঔদ্ধত্য সহ্য করলো না। ছুঁড়ে ফেলে দিল অপাংক্তেয় আবর্জনার মতো।

ওদের মাঝে কী কথাবার্তা হয়েছে... জানতে পারিনি। শুধু ফিরে এসে সৌরভ বলেছিল,

‘খুব তেজ মাগীর! করে তো বেশ্যাবৃত্তি...আবার তেজ দেখায়! বলে কী না...তার মর্জি ছাড়া কেউ তাকে ছুঁতে পারবে না! ইইহহহ! ঢোড়া সাপের বিষও যা...থুতুও তা! দিয়েছি বিষদাঁত ভেঙ্গে!’

আমি কূলকিনারা খুঁজে পাইনি সেই কথার। কেমন যেন ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে থেকেছি শুধু। সেদিন থেকেই শুরু হলো শোরগোল...পুলিশের উপদ্রব। 

 

ফিরে এসে সৌরভ আরেকটি কথাও বলেছিল। কলেজে নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়া সেই তোয়াক্কা হীন কিশোরকে একঝলক দেখেছিলাম সেদিন আবার। সেই কিশোরের মতোই বেপরোয়া গলায় সৌরভ বলেছিল,

‘ঐ ফ্ল্যাটের খোঁজ কিন্তু তুইই আমাকে দিছিস। কথাটা মনে আছে তো? ওহ্‌ আচ্ছা...তোর বউকে জানিয়েছিস তো কথাটা? চিন্তা করিস না। জানাতে ভুলে গেলে আমিই না হয় জানায়ে দিব!’

আমি ভুলিনি। ভোলা কঠিন। বড়লোকি লেবাস খুলে ফেলা যাবে...কিন্তু এই বয়সে বউ গেলে আর পাওয়া যাবে না। তাই অজানা পথের এ্যাডভেঞ্চারের আশাকে মাঝপথে ছেড়ে দিয়ে পুরনো পথেই ঘুরাঘুরি করি এখন। আগের মতোই আকাশ দেখতে দেখতে অফিসে যাই।মেঘের পরতেই খুঁজে ফিরি জীবনের মাধুর্য। মানুষের ঘামে ভেজা গন্ধটাতেও ইদানিং পুরনো অভ্যস্ততা ফিরে আসতে শুরু করেছে। রোদ ঝলমলে মুখগুলোকে আবার ভালোবাসতে শুরু করলাম আগের মতন। আষাঢ়ের মেঘে ঢাকা মুখে আলতো করে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে সহমর্মিতার উষ্ণতা। 

পুলিশের হাঙ্গামাটা চুকে গেলেই একটা মধ্যবিত্ত ভাড়াবাড়ি খুঁজে নিব ভাবছি। এই ফ্ল্যাটটাকে ভাড়া দিয়ে দিব। মাসে মাসে যে টাকা পাবো, তা দিয়ে শুকনো বড়লোকি ইচ্ছে হলো ফলাবো...নয়ত কুইনাইন মনে করে টুক করে গিলে ফেলবো। 

শুধু ছোট্ট একটা আক্ষেপ ঘুরে বেড়ায় মনের কানাগলিতে। বহু চোখ রাঙ্গানিতেও সে পথ ছেড়ে দিতে রাজি হয় না। পুলিশের শত জেরাতেও আজো বলতে পারিনি আমি,

‘হ্যাঁ...মেয়েটিকে আমি চিনতাম...’