Posts

গল্প

রক্তের স্বাদ

December 31, 2024

Subit Baran Mallick

20
View
রক্তের স্বাদ!

প্রথম অধ্যায়: অন্ধকারে ঢেকে যাওয়া শহর

কলকাতার এক কোণে অবস্থিত "কালিকুঞ্জ"—এক পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ি। একসময় জমিদার হরিদাস চৌধুরী এই বাড়ির মালিক ছিলেন। কথিত আছে, হরিদাসের স্ত্রী কল্যাণী দেবী ছিলেন একজন কালো জাদুকর, যিনি মানুষের রক্ত পান করতেন। তার মৃত্যু হয়েছিল রহস্যময়ভাবে। এরপর থেকেই এই বাড়ি ভৌতিক হয়ে ওঠে। স্থানীয় মানুষেরা বলে, সন্ধ্যা নামলেই বাড়ির ভেতরে থেকে ভেসে আসে অদ্ভুত আওয়াজ, এবং চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে রক্তের গন্ধ।

অমরেশ, রাজু, সুমন, এবং অদ্রিজা চার বন্ধু মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, এই বাড়ির রহস্য সমাধান করবে। বর্ষার এক সন্ধ্যায় তারা পা রাখে কালিকুঞ্জে। স্থানীয় মানুষ তাদের সাবধান করে দিয়েছিল, কিন্তু তাদের কৌতূহল দমন করা সম্ভব হয়নি।


 

বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই মনে হয় যেন চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। দরজা খুলতেই ভেসে আসে ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা। বাড়ির ভেতরের দেয়ালগুলোতে কালচে দাগ, যেন রক্তের দাগ শুকিয়ে গেছে। মেঝেতে অদ্ভুত নকশা, যা দেখে মনে হয় কোনো পুরনো তান্ত্রিক ক্রিয়া এখানে সম্পন্ন হয়েছিল।


 

দ্বিতীয় অধ্যায়: বন্ধ দরজার পিছনে

বাড়ির ভেতরে ঢোকার পর বন্ধুরা প্রথমে সাহসী মনে হলেও দ্রুতই আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা অনুভব করে, কেউ যেন তাদের লক্ষ্য করছে। মেঝেতে হাঁটতে গিয়ে রাজুর পা হঠাৎ পিছলে যায়। তার হাতের টর্চ পড়ে যায়, এবং অন্ধকারে শোনা যায় একটি মৃদু হাসির শব্দ।


 

অন্ধকারে সুমন বলে উঠল, "কেউ কি দেখলে? মেঝের উপর একটা ছায়া নড়ছিল।" কিন্তু কেউ তার কথায় গুরুত্ব দেয় না। তারা সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে শুরু করে। প্রতিটি ধাপে পা রাখতে গিয়েও মনে হয়, যেন কেউ তাদের টানছে।


 

তৃতীয় অধ্যায়: রক্তের গন্ধ

উপরে একটি বড় ঘর। দরজা খুলতেই ভেতরে দেখা যায় এক বিশাল আয়না, যা ধুলোময়। আয়নায় হঠাৎ দেখা যায় চারজনের প্রতিচ্ছবি, কিন্তু প্রতিটি প্রতিচ্ছবির চোখ লাল। এই দেখে অমরেশ চিৎকার করে ওঠে।


 

ঘরের কোণায় একটি মোমবাতি জ্বলছিল। সেই মোমবাতির আলোতে অদ্ভুত আকারের ছায়া দেখা যায়। অদ্রিজা আতঙ্কিত কণ্ঠে বলে, "আমার মনে হচ্ছে আমাদের চারপাশে কেউ ঘুরছে।"

ঠিক তখন মোমবাতির আলো নিভে যায়। অন্ধকারে শোনা যায় এক নারীর কণ্ঠস্বর: "তোমাদের রক্ত চাই।"


 

চতুর্থ অধ্যায়: প্রথম শিকার

সুমন অনুভব করে, তার হাতের আঙুল কেটে গেছে। সে নিজের রক্ত মুছতে গিয়ে দেখে, রক্তের ফোঁটা মেঝেতে পড়তেই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। যেন কেউ তা শুষে নিচ্ছে।

তারপর দরজার সামনে এক নারীর অবয়ব দেখা যায়। সে ধীরে ধীরে ঘরের দিকে এগিয়ে আসে। তার চুল এলোমেলো, চোখ দুটি অস্বাভাবিক লাল, এবং ঠোঁটের কোণে রক্তের দাগ। তার হাসি ভয়ঙ্কর।

সে বলে, "যদি বাঁচতে চাও, আমার ক্ষুধা মেটাও।"


 

পঞ্চম অধ্যায়: পালানোর চেষ্টা

বন্ধুরা আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পালানোর চেষ্টা করে। তারা নিচে নামতে গিয়েই দেখে, বাড়ির প্রধান দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। জানালাগুলো নিজে থেকেই সিল হয়ে যায়। অদৃশ্য শক্তি তাদের চারপাশে ঘুরপাক খেতে থাকে।


 

রাজু বলে, "আমরা ফেঁসে গেছি! এখানে থেকে বের হওয়া অসম্ভব!"


 

অমরেশ বলে, "কিছু একটা করতে হবে। আমরা যদি এখানেই থাকি, তাহলে ও আমাদের খেয়ে ফেলবে।"

ঘরের এক কোণে তারা একটি পুরনো ট্রাংক পায়। ট্রাংক খুলতেই দেখা যায় একটি পুরনো ডায়েরি।


 

ষষ্ঠ অধ্যায়: অভিশপ্ত ইতিহাস

ডায়েরির পাতা উল্টিয়ে তারা জানতে পারে, জমিদার হরিদাসের স্ত্রী কল্যাণী দেবী কালো জাদুর চর্চা করতেন। তিনি নিজের রূপ অটুট রাখতে মানুষের রক্ত পান করতেন। যখন তার অপরাধ প্রকাশ পায়, তখন গ্রামবাসীরা তাকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। কিন্তু মৃত্যুর আগে তিনি অভিশাপ দেন—যে তার রক্তের স্বাদ একবার পেয়েছে, সে আর কখনো মুক্তি পাবে না।

এই অভিশাপ আজও কার্যকর। বাড়ির ভেতরে যারা যায়, তাদের রক্ত পান করে কল্যাণীর আত্মা।


 

সপ্তম অধ্যায়: চূড়ান্ত লড়াই

বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নেয়, কোনোভাবে কল্যাণীর আত্মাকে প্রতিরোধ করতে হবে। ডায়েরিতে লেখা মন্ত্র অনুসরণ করে তারা ঘরের মাঝখানে একটি চক্র তৈরি করে। কিন্তু কল্যাণী বুঝতে পারে তাদের পরিকল্পনা।

সে হঠাৎ উপস্থিত হয়, এবং মেঝে থেকে উঠে আসে রক্তের স্রোত। তার ভয়ঙ্কর মুখ আরও বেশি বিভীষিকাময় হয়ে ওঠে।


 

অষ্টম অধ্যায়: শেষ রাত

কল্যাণীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বন্ধুরা একে একে হার মানে। অমরেশ তার বন্ধুদের বাঁচাতে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চায়। কল্যাণী তার দিকে এগিয়ে আসে এবং তার গলা স্পর্শ করে বলে, "তোমার রক্তের স্বাদ আমি কখনো ভুলব না।"

পরদিন সকালে, স্থানীয় মানুষ কালিকুঞ্জের মেঝেতে রক্তের দাগ দেখে। কিন্তু বন্ধুরা কেউই জীবিত নেই। বাড়ির দেয়ালে লেখা ছিল, "আমি আবার ক্ষুধার্ত হব। অপেক্ষা করো।"


 

এই গল্পের পর কালিকুঞ্জে কেউ আর প্রবেশ করেনি। কিন্তু রাতের বেলা সেখানে আজও শোনা যায় সেই নারীর ভৌতিক হাসি।

Comments

    Please login to post comment. Login

  • আপনার গল্পগুলো সুন্দর হয়। তবে আরেকটু দীর্ঘ হলে হয়তো আরো ভালো হবে। আশা করি, এ ব্যাপারে ভেবে দেখবেন। শুভকামনা।