গল্পের শুরু হয় দুজন ছেলে মেয়েকে নিয়ে। তারা ছিল অরণ্য আর ঐশী। তারা দুজন একই কলেজে পড়তো। যেদিন কলেজের প্রথম দিন সেদিন ঐশীর সাথে ধাক্কা খায় অরণ্য। ধাক্কা খেয়ে দুজনের হাত থেকে বই পড়ে যায়। অরণ্য ঐশীকে দেখে এক পলকে চেয়ে থাকে। ঐশী খেয়াল করে দেখে অরণ্য তার দিকে এক পলকে চেয়ে আছে। তখন ঐশী একটু শব্দ করে তার বইগুলো গোছাতে থাকে এতে অরন্যর হুঁশ ফিরে আসে। সেই সময় যে যার মত বই নিয়ে চলে যায়। কারো সাথে তখন কোন কথা হয় না। অরণ্য পড়তো বিজ্ঞান বিভাগে আর ঐশী পড়তো মানবিক বিভাগে।
যখনই সময় পেতো অরণ্য ঐশী কে চুপি চুপি দেখতো। এভাবেই কেটে যায় কিছুদিন। ঐশী ও মাঝে মাঝে খেয়াল করতো অরণ্য তার দিকে কেমন করে যেন চেয়ে থাকে। ঐশী ও মনে মনে অরণ্যকে পছন্দ করতে শুরু করে। আর এইদিকে অরণ্যত ঐশীর প্রতি ফিদা। সে ঐশী কে কিভাবে তার ভালোবাসার ফিলিংস প্রকাশ করবে সেটা নিয়ে ভাবতে থাকে। সেদিন ছিল 14 ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালবাসা দিবস।
অরণ্য একটা গোলাপ ফুল নিয়ে ঐশীর সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে তাকে প্রপোজ করে তুমি কি আমায় ভালোবাসো? ঐশী মনে মনে অরন্যকে পছন্দ করত তাই সে তার প্রপোজ একসেপ্ট করে। এরপর ওদের মধ্য থেকে একটা বিশেষ রসায়ন তৈরি হয়। দুজন দুজনকে চোখে হারায় একদিন এমন হয়েছিল ঐশী কলেজে আসেনি এই দিকে অরণ্য ঐশী কে না দেখতে পেয়ে ভীষণ ছটফট করতেছিল কারণ ঐশীর সাথে সেদিন তার দেখা হয়নি তখন অরণ্য ঐশীর বান্ধবী নয়নাকে বলল তুমি কি আমায় ঐশীর বাসার এড্রেস দিতে পারবে।
নয়না ছিল ঐশীর বেস্ট ফ্রেন্ড সে অরণ্য এবং ঐশীর ভালোবাসা সম্পর্কে জানতো ।তখনই সে ঐশীর বাসার এড্রেস দিয়ে দিল। কলেজ শেষ করে অরণ্য ঐশীর বাসার দিকে যেতে লাগল। ঐশীর বাসার সামনে যেতে অরণ্য খেয়াল করল ঐশী তাদের বাসার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। তখন অরণ্য ঐশীকে ইশারায় ডাকতে লাগলো ঐশি খেয়াল করল অরণ্য তাকে ইশারায় ডাকছে তখন ঐশী নিচে নেমে আসল। অরণ্যকে বলল তুমি আমার বাসার এড্রেস কোথায় পেলে? অরণ্য বলল তোমার বান্ধবী নয়নার কাছ থেকে নিয়েছি।
তবে তুমি আমায় বল তুমি কলেজে আর যাওনি কেন ঐশী বলল আজ আমার যেন কেমন মাথা যন্ত্রণা ও জর্জব অনুভব করছিল সেজন্যই আমি যায়নি তখন অরণ্য বলল তাহলে তুমি তো আমার একটা ফোন দিতে পারতে ঐশী বলল তুমি আমায় নিয়ে টেনশন করবে তাই বলিনি। এভাবেই ওদের দুজনার মাঝে বেশ খানিকক্ষণ কথা হয় তারপর ঐশীকে বিদায় দিয়ে অরণ্য তার বাসার দিকে চলে যায়।
এভাবেই দেখতে দেখতে তাদের কলেজের ফাইনাল এক্সাম চলে আসে। দুজন দুজনার পড়াশোনা নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এত ব্যস্ততার মাঝেও তারা প্রতিদিন কিছু সময় হলেও ফোনে কথা বলতো। এবার চলে আসে তাদের রেজাল্টের দিন দুজনেই এ প্লাস নিয়ে পাশ করে। ঐশীর পরিবার চাইতো ঐশী লেখাপড়া করে একজন ভালো শিক্ষিকা হবে। আর এদিকে অরণ্যের পরিবার অরণ্যকে লন্ডনে লেখাপড়ার জন্য পাঠাতে চাই। এভাবে কয়েকটা দিন কেটে যায়। হঠাৎ ঐশী দেখে অরণ্য আর ফোন রিসিভ করছে না মানে হলো অরন্যর ফোনে আর ফোন যায় না।
সে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ে। এইদিকে অরণ্য বিদেশে পড়ালেখা করতে যেতে না চাইলে তার বাবা-মা জিজ্ঞাসা করে তুমি কেন পড়ালেখা করতে লন্ডনে যেতে চাও না? তখন অরণ্য ঐশিকে ভালোবাসে একথা বলে দেয় এতে অরন্যর বাবা-মা ভীষণ রেগে যায় এবং তার ছেলেকে বলে তুমি যদি লন্ডনে পড়ালেখা করতে না যাও তাহলে আমাদের মরা মুখ দেখবে। এই বলে অরন্যর কাছ থেকে ফোন নিয়ে ভেঙে ফেলে। বাধ্য হয়ে অরণ্যকে লেখাপড়ার জন্য লন্ডনে যেতে হয়। এভাবে তাদের যোগাযোগ চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।
ঐশী অস্থির হয়ে পড়ে তার কাছে বেঁচে থাকাটা যেন কষ্টকর হতে থাকে। ওই দিকে অরণ্য ঐশীর জন্য ভীষণ কষ্ট পায় তবে তার করার কিছুই ছিল না। এভাবে কেটে যায় কিছুদিন। তাদের মধ্যে আর যোগাযোগ হয় না।
ঐশী একবার বলেছিল, "প্রথম প্রেম কোনোদিন ভুলে যাওয়া যায় না। কারণ সেটা আমাদের জীবনের প্রথম শিক্ষাও, প্রথম সাহসিকতাও।"
আজ অনেক বছর পরও, অরণ্য যখন ঐশীর কথা ভাবে আর তখন সে মনে মনে বলে, "প্রথম ভালোবাসা হয়তো শেষ হয়ে যায়, কিন্তু সেই অনুভূতি চিরকাল বেঁচে থাকে।"
এভাবেই শেষ হয়ে যায় প্রথম ভালবাসা। খুবই কম মানুষই তাদের প্রথম ভালোবাসার মানুষের সাথে এক হতে পারে এবং জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই তাদের প্রথম ভালবাসা মানুষের সাথে এক হতে পারে না। এভাবেই শেষ হয়ে যায় দুইটি জীবনের মধ্যকার ভালোবাসা কিন্তু সে অনুভূতিগুলো চিরকাল বেঁচে থাকে।