গল্পঃ পদক
জালাল উদ্দিন লস্কর
বহুবছর পর তার নামে আসা চিঠির খামটি হাতে নিয়ে কিছুটা স্মৃতিকাতর,কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়লেন সদরুদ্দিন সাহেব।ডাকপিওনের হাতে অত্যন্ত বিনীতভাবে চা-পানের নাম করে কিছু টাকা গুজে দিলেন একরকম জোর করেই।কমবয়সী ডাকপিওন কিছুতেই টাকাটা নেবে না।তার কথা এটা তার দায়িত্ব,চাকুরীর অংশ।টাকা নেবে কেন!
তুমি মিয়া আমার নাতির বয়সী হবে।তোমাকে কী আমি ভালোবেসে এ সামান্য কটা টাকা দিতে পারি না?
ডাকপিওন ছেলেটি সদরুদ্দিনের এমন কথায় নরম হলো।
রেজিস্ট্রি ডাকে আসা চিঠির খামটি নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে কতো স্মৃতি মনে হতে লাগলো সদরুদ্দিনের।একসময় নিজে প্রচুর চিঠি লিখতেন। মধ্যপ্রাচ্যে যখন ছিলেন তখনতো পরিবারের সাথে,বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই চিঠি।নিজে চিঠি লিখতেন।চিঠি পেতেনও অনেক।কিন্তু হায়! দেশে মোবাইল ফোন চালু হওয়ার পর থেকেই ধীরেধীরে মানুষ চিঠি লেখাটা বলা চলে বাদ দিয়ে দেয়।সবকিছুই মোবাইলে সারে।চিঠিপত্রের প্রচলন বন্ধ হওয়ার পরও লোকজন মানিঅর্ডার করে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় টাকা পাঠাতে পোস্ট-অফিসে যেতো।এখন সেটাও একচেটিয়াভাবে দখল করেছে মোবাইল কোম্পানিগুলো।এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই সদরুদ্দিন সাহেবের মনে হলো আরে এখনো তো ভালো করে দেখা হয়নি তার নামে এই রেজিস্ট্রি করা চিঠি কে বা কারা পাঠিয়েছে,কোন জায়গা থেকেই বা পাঠিয়েছে!কিছুটা ঘোরের মধ্যেই খামের বাম দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে কিছুটা অবাকই হলেন।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন গ্লোবাল টিমের ঢাকা অফিস থেকে এসেছে এ চিঠি।অফিসের ঠিকানা রোড নং ১৩/এ- ক ধানমন্ডি,ঢাকা-১২০৯।এ অফিস তার নাম ঠিকানা কোথায় পেলো?তার সাথে এদের কিইবা দরকার।কিছুটা বিস্ময় কিছুটা দুঃশ্চিন্তা সদরুদ্দিনের মনে।
কাঁপাকাঁপা হাতে খামের মুখটা ছিঁড়লেন খুবই সাবধানে।ভেতরে থাকা জরুরী কথা লেখা কাগজটা যেন ছিঁড়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল আছে তার।ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা এ-৪ সাইজের কম্পিউটার কম্পোজ করা চিঠি।চিঠিটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললেন।রাজ্যের বিস্ময় এসে ভর করলো তার মনে! এ তিনি কী দেখছেন চিঠিতে।নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সদরুদ্দিন।
চিঠি থেকেঃ
'প্রিয় মহোদয়,
আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে সমাজসেবায় অনন্যসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন গ্লোবাল টিম আপনাকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আপনাকে এই সম্মানের জন্য মনোনীত করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।সারা দেশ থেকে আরো ১০ জন স্বনামধন্য ব্যক্তিকেও আমরা একইসঙ্গে স্বর্ণপদক প্রদান করবো। নির্দিষ্ট তারিখে আয়োজিত অনুষ্টানে দেশবরেণ্য ব্যক্তিগন আপনাদের হাতে পদক তুলে দেবেন।আপনার সাথে আমরা আবারো যোগাযোগ করবো।
তখন বিস্তারিত জানানো হবে আপনাকে।ভালো থাকবেন।আপনার জন্য শুভ কামনা।'
আপনার একান্ত বিশ্বস্ত
প্রেসিডেন্ট/সেক্রেটারী
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন গ্লোবাল টিম।
ঢাকা,বাংলাদেশ
মোবাইল ০১৭৯০....০১,০১৭৯০....০২,০১৭৯০....০৯
চিঠিটি কয়েকবার পড়লেন সদরুদ্দিন।মনে মনে কিছুটা আনন্দিতই হলেন।যাক তাহলে এবার শাফিয়াকে কিছুটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে।শাফিয়া তার স্ত্রী।শাফিয়ার এক কথা,এই বয়সে নাতি-নাতনীদের সাথে গল্পগুজব আর আল্লাবিল্লাহ করে কাটিয়ে দেন।আর তিনি কি না আছেন কার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না,কে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না,কার ছেলে কিংবা মেয়ে স্কুলে কিংবা কলেজে ভর্তি ফির টাকা যোগাড় করতে পারছে না,কার ঘরে বিকালবেলা রান্না করার বাজার নেই এসব নিয়ে।এবার শাফিয়াকে তাহলে বুঝানো যাবে,দেখলেতো তুমি যে আমার ভালো কাজগুলো ভালো মনে নিতে পার না সেসবের খবর কী করে কী করে যেন এলাকা ছাড়িয়ে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।আর তারই পুরস্কার এবার তিনি পেতে যাচ্ছেন।আহলাদী গলায় সদরুদ্দিন শাফিয়াকে ডাক দিলেন,শাফিয়া,শাফিয়া।
নাতি-নাতনীদের জন্য পুলি পিঠা বানাবেন বলে রান্নাঘরে বসে নারকেল খুঁড়ছিলেন শাফিয়া।বেশ কয়েকবার ডেকেও সাড়াশব্দ না পেয়ে সদরুদ্দিন রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে আবার ডাকলেন,শাফিয়া।
-কি হয়েছে?এতো ডাকাডাকি করছ কেন?আমি এখানে কাজ করছি দেখতে পাচ্ছ না?
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি।একটা সুখবর আছে।এই দেখো চিঠি।পোস্টাপিসের লোক দিয়ে গেছে।
-কিসের চিঠি?শরিফুলের কোনো চাকরীটাকরী হলো না কি গো।নরম গলায় জিজ্ঞেস করে শাফিয়া
সদরুদ্দিন-শাফিয়া দম্পতির ছোট ছেলে শরিফুল। এমএ পাশ করে ঘরে বসে আছে।একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে।কোথাও চাকুরী হচ্ছে না।এ নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তায় শাফিয়া বেগম।সদরুদ্দিন এ নিয়ে চিন্তিত নন।তিনি মনে করেন রিজিকের মালিক আল্লাহ।মালিকের ইচ্ছার বাইরে একটা গাছের পাতাও নড়ে না।যখন মালিকের দয়া হবে শরিফুলের চাকুরী এমনিতেই হয়ে যাবে।এই যে আজকে তার কাছে একটা চিঠি আসলো।তাকে পদক দিতে চাইলো।এসবই আল্লাহর ইচ্ছা বা হুকুম।সদরুদ্দিনের চেহারায় তৃপ্তির ছাপ।
-ঢাকা থেকে এসেছে এই চিঠি।আমাকে স্বর্ণপদক দিচ্ছে একটি মানবাধিকার সংগঠন।শাফিয়ার চোখেমুখেও কিছুটা বিস্ময়।
-তাই বুঝি?
-চিঠিতেই তাই তো লিখেছে। তুমি তো সবসময়ই আমাকে তাচ্ছিল্য করে এসেছ।ভালো কাজের যে স্বীকৃতি একবার না একবার পাওয়া যায় এ চিঠিই তার প্রমান।
-যাক ভালোই তো হলো।আমি তো আর কখনো তোমাকে ভাল কাজ করতে না করিনি।
শাফিয়ার গলায় অন্য সুর!
-তবে শরিফুলের একটা গতি হলে মনে শান্তি পেতাম।
যোগ করে শাফিয়া।
-সবই আল্লাহপাকের ইচ্ছা।সদরুদ্দিনের কন্ঠে দৃঢ়তা।
পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো তক্ষুণি। অপরিচিত একটা নম্বর।তবে কিছুটা পরিচিতও লাগছে যেন।লাস্ট ডিজিট ০১!
ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে জলদগম্ভীর গলায় সালাম দিয়ে জানতে চাইলো,সদরুদ্দিন সাহেব বলছেন?
আমি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন গ্লোবাল টিমের প্রেসিডেন্ট ফরমান আলী ঢাকা থেকে বলছি।আপনাকে অভিনন্দন।
-ও আচ্ছা আমার মোবাইল নম্বর কোথায় পেলেন?আমি তো কেবল একটু আগেই আপনাদের চিঠি পেলাম।
-আমাদের কাজই হচ্ছে সমাজের গুণী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে সম্মানিত করা।আমরা আমাদের নিজস্ব জরিপ টিমের মাধ্যমে আপনার সম্পর্কে সবিশেষ তথ্য সংগ্রহ করেই আপনাকে স্বর্ণপদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আপনি এই সম্মানের যোগ্য। আমরা আপনাকে সম্মানিত করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।
কিছুটা পুলকিত বোধ করছেন।মোবাইলের স্পিকার অন করা থাকায় শাফিয়া সবকিছুই শুনতে পেলেন।নিজের কাছে নিজেকেও আজ কেমন জানি অপরাধী অপরাধী মনে হচ্ছে শাফিয়ার।শাফিয়া তো আসলে কখনোই সদরুদ্দিনের কাজকর্মের সমর্থক ছিলেন না।মনের চোখে শাফিয়া স্বর্ণপদকটা দেখতে লাগলেন!কি পরিমান স্বর্ণ থাকতে পারে পদকটাতে সে হিসাব মিলাতে লাগলেন মনে মনে!
-সদরুদ্দিন সাহেব আমরা পুরষ্কার প্রদান অনুষ্টানের সপ্তাহ খানেক আগে আবারো আপনার সাথে যোগাযোগ করবো।তার আগে কারা কারা পদক পেয়েছেন,পদক প্রদান অনুষ্টানে কারা কারা থাকবেন সেসব উল্লেখ করে দেশের প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকায় কয়েকদিন ধরে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে।সারা দেশের লোক আপনাদের অনুষ্টানের আগেই চিনতে পারবেন।আমরা চাইছি অনুষ্টানে ২ জন মন্ত্রী উপস্থিত থেকে আপনাদের পদক পরিয়ে দেবেন।আরো বিশিষ্টজনেরা তো থাকবেনই।দুই মন্ত্রীর সাথে আমাদের কথা হয়েছে।তারা সম্মতি দিয়েছেন।তবে যেহেতু তারা রাষ্টের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন জরুরী কোনো কাজে নির্ধারিত দিনে থাকতে অপারগ হলে হয়তো অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তরনও হতে পারে।যাই হউক আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবো।ভালো থাকবেন।
এই বলে ফোন কেটে দিলেন ফরমান আলী।সদরুদ্দিন শাফিয়ার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলেন।শাফিয়াও মিষ্টি হেসে প্রতি উত্তর দিলেন।অনেকদিন পর শাফিয়ার হাসিমুখ দেখে সদরুদ্দিন ভেতরে ভেতরে প্রশান্তি পেলেন।
-আজকের দিনটা মনে হচ্ছে খুবই শুভ।প্রশান্তির পর প্রশান্তি!
সদরুদ্দিন ভাবলেন।
-তরিকুলকে জানাও সুখবরটা।তরিকুল খুশী হবে নিশ্চয়ই।তাছাড়া ঢাকায় গেলে তো তরিকুলের এখানেই উঠতে হবে।প্রয়োজনে তোমাকে অনুষ্টানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অফিস
থেকে ছুটি নেবে তরিকুল।থামলেন শাফিয়া।
-শাফিয়া তাহলে সত্যি সত্যিই খুশী হয়েছে!এমনিতে যাই করুক বাঙালি স্বামী সোহাগিনী স্ত্রীরা স্বামীর অর্জনে বাস্তবিকই খুশী হয়।শাফিয়াও ব্যতিক্রম না।
অন্তরে আরেক চোট প্রশান্তির পরশ টের পান সদরুদ্দিন।
তরিকুল ঢাকায় একটি বেসরকারী ফার্মে চাকুরী করে।সারক্ষণই ত্রস্তব্যস্ত থাকতে হয়।বিয়ে করেনি এখনো।ঢাকায় সিংগেল থাকে।বাবার ফোন পেয়ে একইসাথে অবাক এবং খুশী হয় তরিকুল।ভাবে তার বাবার মতো সহজ সরল এবং ভালোমানুষের এরকম একটা মুল্যায়ন হওয়ায় ভালোই হয়েছে।এর ফলে তাদের সামাজিক মর্যাদা অনেক বাড়বে।
-বাবা, অনুষ্টানের ২/৩ দিন আগেই তবে ঢাকায় এসে পড়বে।
আসার আগে আমাকে ফোন করে কনফার্ম করবে।আমি কমলাপুর থেকে তোমাকে রিসিভ করে নিয়ে আসবো গিয়ে।
মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে শুরু করেন সদরুদ্দিন।ঢাকা থেকে ফোন আসার অপেক্ষায়ও থাকেন।কল্পনায় পদক প্রদান অনুষ্টানের একটা চিত্র ভেসে বেড়াতে থাকে তার মনে।নির্ধারিত দিনে অনুষ্টানস্থলে পৌঁছে গেছেন তিনি।অনুষ্টান শুরুর খুব একটা দেরী নেই।পদকপ্রাপ্ত সব সম্মানিত ব্যক্তি একদিকে আসন গ্রহণ করেছেন।আমন্ত্রিত অতিথিরাও সবাই এসে গেছেন।প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে ফুল দিয়ে। দুজনই মন্ত্রী!অনুষ্টান শুরু হয়ে গেলো।একে একে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হলো।সদরুদ্দিনের ভাগ্য ভালো।তার নাম ঘোষণার সাথে-সাথেই অনুষ্টানে সবাই তুমুল করতালি দিলো।মন্ত্রী মহোদয় নিজে সদরুদ্দিনের গলায় পদক পরিয়ে দিচ্ছেন।দেশের প্রধান প্রধান পত্রপত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ফলাও করে এ অনুষ্টানের সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।পরদিন প্রিন্ট পত্রিকাগুলোতেও খবরটা ছাপা হবে।ঢাকা থেকে ফেরার সময় কয়েকটি পত্রিকার বেশকিছু কপি কিনে নিয়েছেন তিনি।পরিচিতজনদের দিতে হবে।এমনি কত কল্পনা সদরুদ্দিনের।রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না।
এর আগে একবার পাশের ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যান কি যেন একটা পদক পেয়েছিলেন।পদকপ্রাপ্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা হাজার মানুষের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানকে সম্বর্ধনা দিয়েছিল।এলাকাজুড়ে কয়েকদিন এ নিয়ে তুমুল আলোচনা ছিল সবার মুখে মুখে।সদরুদ্দিন এতোটা আশা করেন না।দরকারও নেই।তবে তিনি যে প্রাইমারী স্কুলের সহ সভাপতি সে স্কুল চাইলে তাকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে মন্দ হয় না।প্রয়োজনে ইংগিতে প্রধান শিক্ষককে তার ইচ্ছার কথা জানাবেন।দরকার হলে অনুষ্টানের খরচাপাতি নিজেই চুপিচুপি প্রধান শিক্ষকের হাতে গুঁজে দেবেন।
মোবাইলটা কিভাবে সাইলেন্ট হলো কে জানে! বেশ কয়েকবার ফোন কল এসেছে।টের পাননি।নম্বরটা অচেনা।ফরমান আলী নন তো?ফরমান আলীর মোবাইল নম্বরটা সেইভ করাই আছে সদরুদ্দিনের ফোনবুকে।কিন্তু এটি ফরমান আলীর নম্বর নয়।তাহলে কার ফোন?এর মধ্যেই আবার ফোনকল।সদরুদ্দিন ফোন রিসিভ করে সালাম দেওয়ার আগেই তাকে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন ফরমান আলী।
-আগামী ৭ তারিখ আপনাদের পদক প্রদান অনুষ্টান।সব আয়োজন সম্পুর্ণ।আর বলবেন না সর্বাঙ্গ সুন্দর একটা অনুষ্টানের আয়োজন করা যে এদেশে কত কষ্টের বুঝবেন না।যাক শেষ পর্যন্ত আমরা যাদের অতিথি হিসাবে পেতে চাইছিলাম তারা সবাই সম্মতি দিয়েছেন।আগামীকাল পেপারে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।খেয়াল করে দেখবেন।আর হ্যাঁ, একটা কথা আপনাকে বলতে হচ্ছে মানে ইয়ে...।
সদরুদ্দিন এতোক্ষণ কোনো কথাই বলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না।শুধু শুনেই যাচ্ছিলেন।শিহরণ আর উত্তেজনায় রীতিমতো কাঁপছিলেন। হিপনোটাইজড হয়ে গিয়েছিলেন যেন। এবার তিনি কথা বললেনঃ
-বলুন বলুন।একটা কথা কেন, একশোটা কথা বলুন।বলুন আমাকে কি করতে হবে।বলুন দয়া করে।তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন।
চতুর পদক ব্যবসায়ী ফরমান আলী বুঝলেন শিকার ফাঁদে পা দিয়েছে।আর ফসকে যাওয়ার চান্স নাই।
-অনুষ্টানের আয়োজন,মিলনায়তন ভাড়া আপ্যায়ন,অতিথিদের সম্মানী এসব করতে গিয়ে আমাদের অনেক ট্কা খরচ হচ্ছে।তাই আমাদের সংস্থার পরিচালনা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ডোনেশন নেওয়া হবে।আপনাদের ডোনেশন আমরা আনন্দের সাথে গ্রহণ করবো।
-কেমন ডোনেশন করতে হবে?
-খুব বেশী না।হাজার ত্রিশেক টাকা দিতে হবে।আপনি দিতে চাইলেও এর বেশী আমরা নেবো না।কারন পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের বাইরে এক টাকা নেওয়ার সুযোগও আমাদের নেই।তো যাই হউক আপনি রাজী থাকলে আজকালের মধ্যেই টাকাটা পেমেন্ট করতে হবে।আপনার অসুবিধা থাকতে পারে।সে ক্ষেত্রে আপনার সম্মতি না পেলে আমরা বিকল্প তালিকার আরেকজনকে পদকটা দিয়ে দেবো।আমাদের হাতে ৩ টা তালিকা রয়েছে।প্রথম এবং প্রধান তালিকাতে আপনার নাম রয়েছে।এই তালিকার কেউ পদক গ্রহণে সম্মত না হলে আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে তার সম্মতিসাপেক্ষে পদক প্রদান করে থাকি।হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন?
সদরুদ্দিন আশপাশে একবার দেখে নিলেন কোথাও কেউ আছে কিনা।নিশ্চিত হলেন যে,নেই কেউ নেই।তারপরও ফোনটা কানে ধরেই আরেকটু নিরিবিলি স্থানে চলে গেলেন।
-জ্বী,আমি সব শুনেছি।চিন্তা করবেন না।আগামীকাল দুপুরের দিকে আমি আপনাকে টাকাটা পাঠিয়ে দেবো।একটা বিকাশ নম্বর দেন।প্লিজ ভুলেও বিকল্প তালিকার কথা মাথায় আনবেন না।এদিকে এলাকার সবাই আমার পদকপ্রাপ্তির কথা জেনে গেছেন।স্থাণীয় দৈনিক চাঁদের আলো ও শাহী বাণী পত্রিকার দুই সাংবাদিক জানি কার কাছে শুনে সেদিন এসে আমার সাক্ষাৎকার নিয়ে গিয়ে পত্রিকায় প্রচার করে্ে।যাওয়ার সময় মিষ্টি খাওয়ার টাকা বাবত এক হাজার টাকা করে নিয়ে গেছে।এখন আমি যদি পদক না পাই আমার মানসম্মান বলতে কিছুই আর থাকবে না।
ফরমান আলী নিশ্চিত হয়ে সদরুদ্দিনকে একটা নম্বর দিয়ে আগামীকাল দুপুরের আগেই টাকাটা বিকাশ করতে বলে ফোন কেটে দিলেন।
কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে পরদিন সকাল সকাল স্থাণীয় রঘুপুর জনতা ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট থেকে ত্রিশ হাজার টাকা উত্তোলণ করে ফরমান আলীকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেন।ফরমান আলীর ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।বেশ টেনশন হচ্ছিল সদরুদরদিনের।ফোন বন্ধ থাকবে কেন ফরমান আলীর?পদক পাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন এটা যেন কাকপক্ষীও টের না পায়-সদরুদ্দিন নিজেকে নিজে প্রবোধ দিলেন।
বারোটার দিকে ফরমান আলীকে ফোনে পাওয়া গেলো।
জানা গেলো অনুষ্টান নিয়ে দৌড়াদৌড়ি,পদক বানানোর অর্ডার দেওয়া এসব কাজে ব্যস্ত থাকায় বেশ রাত করে ঘুমাতে যাওয়ায় ঘুম থেকে জাগতে দেরী হয়ে গেছে।সারাদেশ থেকে পদক প্রত্যাশীদের ফোনের জ্বালায় বিরক্ত হয়ে ফোনই বন্ধ রেখেছিলেন এতোক্ষণ!
-টাকাটা পাঠিয়ে দেন তাহলে।আর ৭ তারিখে আমাদের দেখা হচ্ছে।আমাদের অফিসের ঠিকানায় চলে আসবেন।অফিসের লোকজন অফিসের গাড়ীতে করে আপনাদের নিয়ে হোটেল পিংকি ইন্টারন্যাশনালে পৌঁছে যাবে।
-আমি এক্ষুণি টাকাটা পাঠাচ্ছি তাহলে।দোয়া করবেন।
টাকা পাঠিয়ে আবারো ফরমান আলীকে কনফার্ম করলেন সদরুদ্দিন।যে নম্বর থেকে টাকা গেছে তার লাস্ট তিন ডিজিট
১১১।ফরমান আলী টাকা পাওয়ার বিষয়ে সদরুদ্দিনকে নিশ্চিত করলেন।
৬ তারিখ সন্ধ্যায় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে পিতাকে রিসিভ করলেন তরিকুল।পরদিন অনুষ্টান।রাতটা উত্তেজনায় ঘুমাতে পারলেন না পিতা পুত্র।তরিকুল অনেক কষ্ট করে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে পিতার সাথে পদক প্রদান অনুষ্টানে যাবে বলে।
৭ তারিখ সকালে পিতাকে সাথে নিয়ে দামী একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে গেলেন তরিকুল।পিতার পদকপ্রাপ্তিটাকে সেলিব্রেট করতে চাইলেন তরিকুল।এর মাধ্যমে পিতৃ ঋণ কিছুটা শোধ করারও তাড়না তরিকুলের ভেতরে।এর মধ্যেই বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন সহ অনেককেই ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে একটু পরেই পদক প্রদান অনুষ্টানে পিতাকে নিয়ে পৌঁছে যাবে।মাকে একটু পরপরই ফোন করছে তরিকুল।তার মা-ও বেশ উৎফুল্ল।আনন্দিত।
এরপর তারা নির্ধারিত ঠিকানা ১৩/এ-ক ধানমন্ডি ঠিকানায় পৌঁছে গেলো গিয়ে দেখে সেখানে আরো শখানেক মানুষ।সবাই পদক নিতে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে।কিন্তু অফিস খুঁজে পাচ্ছেন না।ফরমান আলীর মোবাইল বন্ধ।বন্ধ কতিথ অফিসের অন্য নম্বরগুলোও।উল্লেখিত ঠিকানায় কোনো মানবাধিকার সংগঠনের অস্থিত্বের কথা স্থাণীয়রাও বলতে পারলো না।দেখতে দেখতে আরো শখানেক লোক জড়ো হলো।তারাও পদক নিতে এসেছে।দুপুর গড়িয়ে গেলো।মুখেমুখে ছড়িয়ে পড়লো এখানে যারা এসেছেন সবাই ত্রিশ হাজার করে টাকা দিয়েই এসেছেন!
একপর্যায়ে পদকপ্রাপ্তরা পদক প্রদান করতে চাওয়া কথিত সংগঠনের বিরুদ্ধে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে যাণ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ এসে মৃদু লাটিচার্জ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।এর ফাঁকেই পত্রিকা ও টেলিভিশন সাংবাদিকেরা সবকিছু জেনে যায়।
বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে স্ক্রল নিউজ যেতে থাকেঃ
রাজধানীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পদক প্রতারণার শিকার ২০০ লোকের বিক্ষোভ,যান চলাচল স্বাভাবিক করতে পুলিশের লাঠি চার্জ..।
জালাল উদ্দিন লস্কর
বহুবছর পর তার নামে আসা চিঠির খামটি হাতে নিয়ে কিছুটা স্মৃতিকাতর,কিছুটা বিমর্ষ হয়ে পড়লেন সদরুদ্দিন সাহেব।ডাকপিওনের হাতে অত্যন্ত বিনীতভাবে চা-পানের নাম করে কিছু টাকা গুজে দিলেন একরকম জোর করেই।কমবয়সী ডাকপিওন কিছুতেই টাকাটা নেবে না।তার কথা এটা তার দায়িত্ব,চাকুরীর অংশ।টাকা নেবে কেন!
তুমি মিয়া আমার নাতির বয়সী হবে।তোমাকে কী আমি ভালোবেসে এ সামান্য কটা টাকা দিতে পারি না?
ডাকপিওন ছেলেটি সদরুদ্দিনের এমন কথায় নরম হলো।
রেজিস্ট্রি ডাকে আসা চিঠির খামটি নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে কতো স্মৃতি মনে হতে লাগলো সদরুদ্দিনের।একসময় নিজে প্রচুর চিঠি লিখতেন। মধ্যপ্রাচ্যে যখন ছিলেন তখনতো পরিবারের সাথে,বন্ধুবান্ধবদের সাথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই চিঠি।নিজে চিঠি লিখতেন।চিঠি পেতেনও অনেক।কিন্তু হায়! দেশে মোবাইল ফোন চালু হওয়ার পর থেকেই ধীরেধীরে মানুষ চিঠি লেখাটা বলা চলে বাদ দিয়ে দেয়।সবকিছুই মোবাইলে সারে।চিঠিপত্রের প্রচলন বন্ধ হওয়ার পরও লোকজন মানিঅর্ডার করে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় টাকা পাঠাতে পোস্ট-অফিসে যেতো।এখন সেটাও একচেটিয়াভাবে দখল করেছে মোবাইল কোম্পানিগুলো।এইসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতেই সদরুদ্দিন সাহেবের মনে হলো আরে এখনো তো ভালো করে দেখা হয়নি তার নামে এই রেজিস্ট্রি করা চিঠি কে বা কারা পাঠিয়েছে,কোন জায়গা থেকেই বা পাঠিয়েছে!কিছুটা ঘোরের মধ্যেই খামের বাম দিকে চোখ বুলিয়ে নিয়ে কিছুটা অবাকই হলেন।আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন গ্লোবাল টিমের ঢাকা অফিস থেকে এসেছে এ চিঠি।অফিসের ঠিকানা রোড নং ১৩/এ- ক ধানমন্ডি,ঢাকা-১২০৯।এ অফিস তার নাম ঠিকানা কোথায় পেলো?তার সাথে এদের কিইবা দরকার।কিছুটা বিস্ময় কিছুটা দুঃশ্চিন্তা সদরুদ্দিনের মনে।
কাঁপাকাঁপা হাতে খামের মুখটা ছিঁড়লেন খুবই সাবধানে।ভেতরে থাকা জরুরী কথা লেখা কাগজটা যেন ছিঁড়ে না যায় সেদিকেও খেয়াল আছে তার।ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো একটা এ-৪ সাইজের কম্পিউটার কম্পোজ করা চিঠি।চিঠিটা এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললেন।রাজ্যের বিস্ময় এসে ভর করলো তার মনে! এ তিনি কী দেখছেন চিঠিতে।নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না সদরুদ্দিন।
চিঠি থেকেঃ
'প্রিয় মহোদয়,
আমরা অত্যন্ত আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে সমাজসেবায় অনন্যসাধারণ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন গ্লোবাল টিম আপনাকে স্বর্ণপদকে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।আপনাকে এই সম্মানের জন্য মনোনীত করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত।সারা দেশ থেকে আরো ১০ জন স্বনামধন্য ব্যক্তিকেও আমরা একইসঙ্গে স্বর্ণপদক প্রদান করবো। নির্দিষ্ট তারিখে আয়োজিত অনুষ্টানে দেশবরেণ্য ব্যক্তিগন আপনাদের হাতে পদক তুলে দেবেন।আপনার সাথে আমরা আবারো যোগাযোগ করবো।
তখন বিস্তারিত জানানো হবে আপনাকে।ভালো থাকবেন।আপনার জন্য শুভ কামনা।'
আপনার একান্ত বিশ্বস্ত
প্রেসিডেন্ট/সেক্রেটারী
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন গ্লোবাল টিম।
ঢাকা,বাংলাদেশ
মোবাইল ০১৭৯০....০১,০১৭৯০....০২,০১৭৯০....০৯
চিঠিটি কয়েকবার পড়লেন সদরুদ্দিন।মনে মনে কিছুটা আনন্দিতই হলেন।যাক তাহলে এবার শাফিয়াকে কিছুটা সারপ্রাইজ দেওয়া যাবে।শাফিয়া তার স্ত্রী।শাফিয়ার এক কথা,এই বয়সে নাতি-নাতনীদের সাথে গল্পগুজব আর আল্লাবিল্লাহ করে কাটিয়ে দেন।আর তিনি কি না আছেন কার মেয়ের বিয়ে হচ্ছে না,কে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না,কার ছেলে কিংবা মেয়ে স্কুলে কিংবা কলেজে ভর্তি ফির টাকা যোগাড় করতে পারছে না,কার ঘরে বিকালবেলা রান্না করার বাজার নেই এসব নিয়ে।এবার শাফিয়াকে তাহলে বুঝানো যাবে,দেখলেতো তুমি যে আমার ভালো কাজগুলো ভালো মনে নিতে পার না সেসবের খবর কী করে কী করে যেন এলাকা ছাড়িয়ে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে।আর তারই পুরস্কার এবার তিনি পেতে যাচ্ছেন।আহলাদী গলায় সদরুদ্দিন শাফিয়াকে ডাক দিলেন,শাফিয়া,শাফিয়া।
নাতি-নাতনীদের জন্য পুলি পিঠা বানাবেন বলে রান্নাঘরে বসে নারকেল খুঁড়ছিলেন শাফিয়া।বেশ কয়েকবার ডেকেও সাড়াশব্দ না পেয়ে সদরুদ্দিন রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে আবার ডাকলেন,শাফিয়া।
-কি হয়েছে?এতো ডাকাডাকি করছ কেন?আমি এখানে কাজ করছি দেখতে পাচ্ছ না?
-তা তো দেখতেই পাচ্ছি।একটা সুখবর আছে।এই দেখো চিঠি।পোস্টাপিসের লোক দিয়ে গেছে।
-কিসের চিঠি?শরিফুলের কোনো চাকরীটাকরী হলো না কি গো।নরম গলায় জিজ্ঞেস করে শাফিয়া
সদরুদ্দিন-শাফিয়া দম্পতির ছোট ছেলে শরিফুল। এমএ পাশ করে ঘরে বসে আছে।একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যাচ্ছে।কোথাও চাকুরী হচ্ছে না।এ নিয়ে বেশ দুঃশ্চিন্তায় শাফিয়া বেগম।সদরুদ্দিন এ নিয়ে চিন্তিত নন।তিনি মনে করেন রিজিকের মালিক আল্লাহ।মালিকের ইচ্ছার বাইরে একটা গাছের পাতাও নড়ে না।যখন মালিকের দয়া হবে শরিফুলের চাকুরী এমনিতেই হয়ে যাবে।এই যে আজকে তার কাছে একটা চিঠি আসলো।তাকে পদক দিতে চাইলো।এসবই আল্লাহর ইচ্ছা বা হুকুম।সদরুদ্দিনের চেহারায় তৃপ্তির ছাপ।
-ঢাকা থেকে এসেছে এই চিঠি।আমাকে স্বর্ণপদক দিচ্ছে একটি মানবাধিকার সংগঠন।শাফিয়ার চোখেমুখেও কিছুটা বিস্ময়।
-তাই বুঝি?
-চিঠিতেই তাই তো লিখেছে। তুমি তো সবসময়ই আমাকে তাচ্ছিল্য করে এসেছ।ভালো কাজের যে স্বীকৃতি একবার না একবার পাওয়া যায় এ চিঠিই তার প্রমান।
-যাক ভালোই তো হলো।আমি তো আর কখনো তোমাকে ভাল কাজ করতে না করিনি।
শাফিয়ার গলায় অন্য সুর!
-তবে শরিফুলের একটা গতি হলে মনে শান্তি পেতাম।
যোগ করে শাফিয়া।
-সবই আল্লাহপাকের ইচ্ছা।সদরুদ্দিনের কন্ঠে দৃঢ়তা।
পকেটে থাকা মোবাইলটা বেজে উঠলো তক্ষুণি। অপরিচিত একটা নম্বর।তবে কিছুটা পরিচিতও লাগছে যেন।লাস্ট ডিজিট ০১!
ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্ত থেকে জলদগম্ভীর গলায় সালাম দিয়ে জানতে চাইলো,সদরুদ্দিন সাহেব বলছেন?
আমি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বাস্তবায়ন গ্লোবাল টিমের প্রেসিডেন্ট ফরমান আলী ঢাকা থেকে বলছি।আপনাকে অভিনন্দন।
-ও আচ্ছা আমার মোবাইল নম্বর কোথায় পেলেন?আমি তো কেবল একটু আগেই আপনাদের চিঠি পেলাম।
-আমাদের কাজই হচ্ছে সমাজের গুণী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে সম্মানিত করা।আমরা আমাদের নিজস্ব জরিপ টিমের মাধ্যমে আপনার সম্পর্কে সবিশেষ তথ্য সংগ্রহ করেই আপনাকে স্বর্ণপদক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।আপনি এই সম্মানের যোগ্য। আমরা আপনাকে সম্মানিত করতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।
কিছুটা পুলকিত বোধ করছেন।মোবাইলের স্পিকার অন করা থাকায় শাফিয়া সবকিছুই শুনতে পেলেন।নিজের কাছে নিজেকেও আজ কেমন জানি অপরাধী অপরাধী মনে হচ্ছে শাফিয়ার।শাফিয়া তো আসলে কখনোই সদরুদ্দিনের কাজকর্মের সমর্থক ছিলেন না।মনের চোখে শাফিয়া স্বর্ণপদকটা দেখতে লাগলেন!কি পরিমান স্বর্ণ থাকতে পারে পদকটাতে সে হিসাব মিলাতে লাগলেন মনে মনে!
-সদরুদ্দিন সাহেব আমরা পুরষ্কার প্রদান অনুষ্টানের সপ্তাহ খানেক আগে আবারো আপনার সাথে যোগাযোগ করবো।তার আগে কারা কারা পদক পেয়েছেন,পদক প্রদান অনুষ্টানে কারা কারা থাকবেন সেসব উল্লেখ করে দেশের প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকায় কয়েকদিন ধরে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে।সারা দেশের লোক আপনাদের অনুষ্টানের আগেই চিনতে পারবেন।আমরা চাইছি অনুষ্টানে ২ জন মন্ত্রী উপস্থিত থেকে আপনাদের পদক পরিয়ে দেবেন।আরো বিশিষ্টজনেরা তো থাকবেনই।দুই মন্ত্রীর সাথে আমাদের কথা হয়েছে।তারা সম্মতি দিয়েছেন।তবে যেহেতু তারা রাষ্টের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন জরুরী কোনো কাজে নির্ধারিত দিনে থাকতে অপারগ হলে হয়তো অনুষ্ঠানের তারিখ পরিবর্তরনও হতে পারে।যাই হউক আমরা আপনার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবো।ভালো থাকবেন।
এই বলে ফোন কেটে দিলেন ফরমান আলী।সদরুদ্দিন শাফিয়ার দিকে চেয়ে মিষ্টি করে একটা হাসি দিলেন।শাফিয়াও মিষ্টি হেসে প্রতি উত্তর দিলেন।অনেকদিন পর শাফিয়ার হাসিমুখ দেখে সদরুদ্দিন ভেতরে ভেতরে প্রশান্তি পেলেন।
-আজকের দিনটা মনে হচ্ছে খুবই শুভ।প্রশান্তির পর প্রশান্তি!
সদরুদ্দিন ভাবলেন।
-তরিকুলকে জানাও সুখবরটা।তরিকুল খুশী হবে নিশ্চয়ই।তাছাড়া ঢাকায় গেলে তো তরিকুলের এখানেই উঠতে হবে।প্রয়োজনে তোমাকে অনুষ্টানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অফিস
থেকে ছুটি নেবে তরিকুল।থামলেন শাফিয়া।
-শাফিয়া তাহলে সত্যি সত্যিই খুশী হয়েছে!এমনিতে যাই করুক বাঙালি স্বামী সোহাগিনী স্ত্রীরা স্বামীর অর্জনে বাস্তবিকই খুশী হয়।শাফিয়াও ব্যতিক্রম না।
অন্তরে আরেক চোট প্রশান্তির পরশ টের পান সদরুদ্দিন।
তরিকুল ঢাকায় একটি বেসরকারী ফার্মে চাকুরী করে।সারক্ষণই ত্রস্তব্যস্ত থাকতে হয়।বিয়ে করেনি এখনো।ঢাকায় সিংগেল থাকে।বাবার ফোন পেয়ে একইসাথে অবাক এবং খুশী হয় তরিকুল।ভাবে তার বাবার মতো সহজ সরল এবং ভালোমানুষের এরকম একটা মুল্যায়ন হওয়ায় ভালোই হয়েছে।এর ফলে তাদের সামাজিক মর্যাদা অনেক বাড়বে।
-বাবা, অনুষ্টানের ২/৩ দিন আগেই তবে ঢাকায় এসে পড়বে।
আসার আগে আমাকে ফোন করে কনফার্ম করবে।আমি কমলাপুর থেকে তোমাকে রিসিভ করে নিয়ে আসবো গিয়ে।
মানসিকভাবে প্রস্তুত হতে শুরু করেন সদরুদ্দিন।ঢাকা থেকে ফোন আসার অপেক্ষায়ও থাকেন।কল্পনায় পদক প্রদান অনুষ্টানের একটা চিত্র ভেসে বেড়াতে থাকে তার মনে।নির্ধারিত দিনে অনুষ্টানস্থলে পৌঁছে গেছেন তিনি।অনুষ্টান শুরুর খুব একটা দেরী নেই।পদকপ্রাপ্ত সব সম্মানিত ব্যক্তি একদিকে আসন গ্রহণ করেছেন।আমন্ত্রিত অতিথিরাও সবাই এসে গেছেন।প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিকে বরণ করে নেওয়া হচ্ছে ফুল দিয়ে। দুজনই মন্ত্রী!অনুষ্টান শুরু হয়ে গেলো।একে একে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হলো।সদরুদ্দিনের ভাগ্য ভালো।তার নাম ঘোষণার সাথে-সাথেই অনুষ্টানে সবাই তুমুল করতালি দিলো।মন্ত্রী মহোদয় নিজে সদরুদ্দিনের গলায় পদক পরিয়ে দিচ্ছেন।দেশের প্রধান প্রধান পত্রপত্রিকার অনলাইন সংস্করণে ফলাও করে এ অনুষ্টানের সংবাদ প্রচারিত হয়েছে।পরদিন প্রিন্ট পত্রিকাগুলোতেও খবরটা ছাপা হবে।ঢাকা থেকে ফেরার সময় কয়েকটি পত্রিকার বেশকিছু কপি কিনে নিয়েছেন তিনি।পরিচিতজনদের দিতে হবে।এমনি কত কল্পনা সদরুদ্দিনের।রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না।
এর আগে একবার পাশের ইউনিয়নের এক চেয়ারম্যান কি যেন একটা পদক পেয়েছিলেন।পদকপ্রাপ্তিকে স্মরণীয় করে রাখতে চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা হাজার মানুষের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যানকে সম্বর্ধনা দিয়েছিল।এলাকাজুড়ে কয়েকদিন এ নিয়ে তুমুল আলোচনা ছিল সবার মুখে মুখে।সদরুদ্দিন এতোটা আশা করেন না।দরকারও নেই।তবে তিনি যে প্রাইমারী স্কুলের সহ সভাপতি সে স্কুল চাইলে তাকে নিয়ে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করলে মন্দ হয় না।প্রয়োজনে ইংগিতে প্রধান শিক্ষককে তার ইচ্ছার কথা জানাবেন।দরকার হলে অনুষ্টানের খরচাপাতি নিজেই চুপিচুপি প্রধান শিক্ষকের হাতে গুঁজে দেবেন।
মোবাইলটা কিভাবে সাইলেন্ট হলো কে জানে! বেশ কয়েকবার ফোন কল এসেছে।টের পাননি।নম্বরটা অচেনা।ফরমান আলী নন তো?ফরমান আলীর মোবাইল নম্বরটা সেইভ করাই আছে সদরুদ্দিনের ফোনবুকে।কিন্তু এটি ফরমান আলীর নম্বর নয়।তাহলে কার ফোন?এর মধ্যেই আবার ফোনকল।সদরুদ্দিন ফোন রিসিভ করে সালাম দেওয়ার আগেই তাকে সালাম দিয়ে নিজের পরিচয় দিলেন ফরমান আলী।
-আগামী ৭ তারিখ আপনাদের পদক প্রদান অনুষ্টান।সব আয়োজন সম্পুর্ণ।আর বলবেন না সর্বাঙ্গ সুন্দর একটা অনুষ্টানের আয়োজন করা যে এদেশে কত কষ্টের বুঝবেন না।যাক শেষ পর্যন্ত আমরা যাদের অতিথি হিসাবে পেতে চাইছিলাম তারা সবাই সম্মতি দিয়েছেন।আগামীকাল পেপারে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে।খেয়াল করে দেখবেন।আর হ্যাঁ, একটা কথা আপনাকে বলতে হচ্ছে মানে ইয়ে...।
সদরুদ্দিন এতোক্ষণ কোনো কথাই বলার সুযোগ পাচ্ছিলেন না।শুধু শুনেই যাচ্ছিলেন।শিহরণ আর উত্তেজনায় রীতিমতো কাঁপছিলেন। হিপনোটাইজড হয়ে গিয়েছিলেন যেন। এবার তিনি কথা বললেনঃ
-বলুন বলুন।একটা কথা কেন, একশোটা কথা বলুন।বলুন আমাকে কি করতে হবে।বলুন দয়া করে।তাড়াতাড়ি বলে ফেলুন।
চতুর পদক ব্যবসায়ী ফরমান আলী বুঝলেন শিকার ফাঁদে পা দিয়েছে।আর ফসকে যাওয়ার চান্স নাই।
-অনুষ্টানের আয়োজন,মিলনায়তন ভাড়া আপ্যায়ন,অতিথিদের সম্মানী এসব করতে গিয়ে আমাদের অনেক ট্কা খরচ হচ্ছে।তাই আমাদের সংস্থার পরিচালনা পরিষদ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছ থেকে ডোনেশন নেওয়া হবে।আপনাদের ডোনেশন আমরা আনন্দের সাথে গ্রহণ করবো।
-কেমন ডোনেশন করতে হবে?
-খুব বেশী না।হাজার ত্রিশেক টাকা দিতে হবে।আপনি দিতে চাইলেও এর বেশী আমরা নেবো না।কারন পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের বাইরে এক টাকা নেওয়ার সুযোগও আমাদের নেই।তো যাই হউক আপনি রাজী থাকলে আজকালের মধ্যেই টাকাটা পেমেন্ট করতে হবে।আপনার অসুবিধা থাকতে পারে।সে ক্ষেত্রে আপনার সম্মতি না পেলে আমরা বিকল্প তালিকার আরেকজনকে পদকটা দিয়ে দেবো।আমাদের হাতে ৩ টা তালিকা রয়েছে।প্রথম এবং প্রধান তালিকাতে আপনার নাম রয়েছে।এই তালিকার কেউ পদক গ্রহণে সম্মত না হলে আমরা দ্বিতীয় বা তৃতীয় তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে তার সম্মতিসাপেক্ষে পদক প্রদান করে থাকি।হ্যালো শুনতে পাচ্ছেন?
সদরুদ্দিন আশপাশে একবার দেখে নিলেন কোথাও কেউ আছে কিনা।নিশ্চিত হলেন যে,নেই কেউ নেই।তারপরও ফোনটা কানে ধরেই আরেকটু নিরিবিলি স্থানে চলে গেলেন।
-জ্বী,আমি সব শুনেছি।চিন্তা করবেন না।আগামীকাল দুপুরের দিকে আমি আপনাকে টাকাটা পাঠিয়ে দেবো।একটা বিকাশ নম্বর দেন।প্লিজ ভুলেও বিকল্প তালিকার কথা মাথায় আনবেন না।এদিকে এলাকার সবাই আমার পদকপ্রাপ্তির কথা জেনে গেছেন।স্থাণীয় দৈনিক চাঁদের আলো ও শাহী বাণী পত্রিকার দুই সাংবাদিক জানি কার কাছে শুনে সেদিন এসে আমার সাক্ষাৎকার নিয়ে গিয়ে পত্রিকায় প্রচার করে্ে।যাওয়ার সময় মিষ্টি খাওয়ার টাকা বাবত এক হাজার টাকা করে নিয়ে গেছে।এখন আমি যদি পদক না পাই আমার মানসম্মান বলতে কিছুই আর থাকবে না।
ফরমান আলী নিশ্চিত হয়ে সদরুদ্দিনকে একটা নম্বর দিয়ে আগামীকাল দুপুরের আগেই টাকাটা বিকাশ করতে বলে ফোন কেটে দিলেন।
কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে পরদিন সকাল সকাল স্থাণীয় রঘুপুর জনতা ব্যাংকে গিয়ে একাউন্ট থেকে ত্রিশ হাজার টাকা উত্তোলণ করে ফরমান আলীকে বেশ কয়েকবার ফোন দিলেন।ফরমান আলীর ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল।বেশ টেনশন হচ্ছিল সদরুদরদিনের।ফোন বন্ধ থাকবে কেন ফরমান আলীর?পদক পাওয়ার জন্য টাকা দিয়েছেন এটা যেন কাকপক্ষীও টের না পায়-সদরুদ্দিন নিজেকে নিজে প্রবোধ দিলেন।
বারোটার দিকে ফরমান আলীকে ফোনে পাওয়া গেলো।
জানা গেলো অনুষ্টান নিয়ে দৌড়াদৌড়ি,পদক বানানোর অর্ডার দেওয়া এসব কাজে ব্যস্ত থাকায় বেশ রাত করে ঘুমাতে যাওয়ায় ঘুম থেকে জাগতে দেরী হয়ে গেছে।সারাদেশ থেকে পদক প্রত্যাশীদের ফোনের জ্বালায় বিরক্ত হয়ে ফোনই বন্ধ রেখেছিলেন এতোক্ষণ!
-টাকাটা পাঠিয়ে দেন তাহলে।আর ৭ তারিখে আমাদের দেখা হচ্ছে।আমাদের অফিসের ঠিকানায় চলে আসবেন।অফিসের লোকজন অফিসের গাড়ীতে করে আপনাদের নিয়ে হোটেল পিংকি ইন্টারন্যাশনালে পৌঁছে যাবে।
-আমি এক্ষুণি টাকাটা পাঠাচ্ছি তাহলে।দোয়া করবেন।
টাকা পাঠিয়ে আবারো ফরমান আলীকে কনফার্ম করলেন সদরুদ্দিন।যে নম্বর থেকে টাকা গেছে তার লাস্ট তিন ডিজিট
১১১।ফরমান আলী টাকা পাওয়ার বিষয়ে সদরুদ্দিনকে নিশ্চিত করলেন।
৬ তারিখ সন্ধ্যায় কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে পিতাকে রিসিভ করলেন তরিকুল।পরদিন অনুষ্টান।রাতটা উত্তেজনায় ঘুমাতে পারলেন না পিতা পুত্র।তরিকুল অনেক কষ্ট করে অফিস থেকে ছুটি নিয়েছে পিতার সাথে পদক প্রদান অনুষ্টানে যাবে বলে।
৭ তারিখ সকালে পিতাকে সাথে নিয়ে দামী একটি রেস্টুরেন্টে নাস্তা করতে গেলেন তরিকুল।পিতার পদকপ্রাপ্তিটাকে সেলিব্রেট করতে চাইলেন তরিকুল।এর মাধ্যমে পিতৃ ঋণ কিছুটা শোধ করারও তাড়না তরিকুলের ভেতরে।এর মধ্যেই বন্ধুবান্ধব আত্মীয় স্বজন সহ অনেককেই ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে একটু পরেই পদক প্রদান অনুষ্টানে পিতাকে নিয়ে পৌঁছে যাবে।মাকে একটু পরপরই ফোন করছে তরিকুল।তার মা-ও বেশ উৎফুল্ল।আনন্দিত।
এরপর তারা নির্ধারিত ঠিকানা ১৩/এ-ক ধানমন্ডি ঠিকানায় পৌঁছে গেলো গিয়ে দেখে সেখানে আরো শখানেক মানুষ।সবাই পদক নিতে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে।কিন্তু অফিস খুঁজে পাচ্ছেন না।ফরমান আলীর মোবাইল বন্ধ।বন্ধ কতিথ অফিসের অন্য নম্বরগুলোও।উল্লেখিত ঠিকানায় কোনো মানবাধিকার সংগঠনের অস্থিত্বের কথা স্থাণীয়রাও বলতে পারলো না।দেখতে দেখতে আরো শখানেক লোক জড়ো হলো।তারাও পদক নিতে এসেছে।দুপুর গড়িয়ে গেলো।মুখেমুখে ছড়িয়ে পড়লো এখানে যারা এসেছেন সবাই ত্রিশ হাজার করে টাকা দিয়েই এসেছেন!
একপর্যায়ে পদকপ্রাপ্তরা পদক প্রদান করতে চাওয়া কথিত সংগঠনের বিরুদ্ধে রাস্তা বন্ধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে যাণ চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে পুলিশ এসে মৃদু লাটিচার্জ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।এর ফাঁকেই পত্রিকা ও টেলিভিশন সাংবাদিকেরা সবকিছু জেনে যায়।
বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে স্ক্রল নিউজ যেতে থাকেঃ
রাজধানীতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত পদক প্রতারণার শিকার ২০০ লোকের বিক্ষোভ,যান চলাচল স্বাভাবিক করতে পুলিশের লাঠি চার্জ..।