পর্ব ২
দুতলা একটা বাড়ি। বাড়ির সদর দরজা খুললেই অবাক হতে হয় লাল গেইটিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা দুপাশে দুটা বাগান বিলাস গাছের দিকে তাকিয়ে।চোখ আটকে পড়ে গেইটটির ওপর বসে থাকা বাগান বিলাস ফুলগুলোতে, ঠিক যেন স্বয়ং প্রকৃতির দেবী বনমালী মাতার কাছ থেকে চির সৌন্দর্যের বর পেয়েছে, হালকা মিষ্টি গোলাপী রং তার, দেখলেই ইচ্ছে করে আলতো করে ছুয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। তারা তো চুপটি করে বসে থাকে গেইটির মাথার উপর, তাতে গেইটির কোনো ভ্রুক্ষেপও নেই আবার কোনো বিরক্তিও নেই। ভালোবাসার সম্পর্কগুলো যে এরকমই হয়, ভালোবাসলে যে বুকের মাঝে জায়গাটাও দিতে হয়। বাড়িতে কে কখন আসছে, কখন বের হয়ে যাচ্ছে, কি অবস্থায় আসছে আবার কি অবস্থায় বের হয়ে যাচ্ছে তা যে তাদের অজানা নয়। এ বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের সাথে তাদের সম্পর্ক যে খুবই গভীর। তবে এ সম্পর্কের গভীরতাটা যে একটু বেশি বাগান আর বিলাসের সঙ্গে। এসব ভাবতে ভাবতেই মনে পড়ে গেলো সেই স্মৃতি ঘেরা পুরনো সেই দিনগুলোর কথা। চোখ বন্ধ করলেই যে চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই দিনগুলোর দৃশ্য।
সময়টা তখন শীতকে বিদায় জানিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেওয়ার সন্ধিক্ষণ। প্রকৃতির প্রত্যেকটা সৃষ্টি যে জানাতে চেষ্টা করছে বসন্তের আগমনী বার্তা। শীতের সঙ্গে সঙ্গে যে আজ শিশিরের ভারি মন খারাপ। মন খারাপ তো হবেই, নিজের প্রিয়দর্শিনীর থেকে দুরে থাকার বেদনা তো সেই বুঝবে যে তার প্রিয়দর্শিনী থেকে দুরে যাবে। ভালোবাসা যে এমনই, মন যে দুরে যেতে চায় না তবু যে যেতে হয়। ঘাসও যে আজ মনকে মানাতে ব্যস্ত। প্রিয়কে যখন বিদায় দিতেই হবে তখন মিথ্যে বাহানা ধরে লাভ কি। আজ যে শিশির আর ঘাসকে দেখে পুরো প্রকৃতি নিঃস্তদ্ধ। তবে অপেক্ষায় থাকবে ভালোবাসার কাছে হার মানবে সকল দুরত্ব। দুজনই প্রহর গুনবে সেই মুহুর্তের।
অপরদিকে কিশলি যে তাকে নিজেকে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত আর বৃক্ষ সে যে অধীর আগ্রহে ক্ষণ গুনছে কখন দেখা পাবে তার কুমারীর। কখন মুগ্ধ করবে তার আঁখিকে। সেই বিশেষ মুহুর্ত যে আর দুরে নেই। হ্যাঁ, বসন্তের আগমন ঘটতে চলেছে। প্রকৃতি যে আজ বসন্ত বরণে ব্যস্ত। এরই মাঝে প্রনয়ণ, মহাবিদ্যালয়ের গন্ডি অতিক্রম করে বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করতে চললো। প্রনয়ণ, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে যদিও তার একটা মিষ্টি পিচ্চি বোন আছে, প্রেরণা। দেখতে যেমন রুপবতী তেমনি গুনবতী। প্রেরণা এবার ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী। তাদের গ্রাম থেকে খানিকটা দুরে মাদারীপুর সরকারি কলেজে পড়ে সে। আর প্রনয়ণ সে তো দেখতে কোনো হিন্দি সিনেমার নায়কের থেকে কম নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়াশোনা করছে। এ বছর তার পড়াশোনার শেষ বছর। আজ বিকেলেই সে মাদারীপুর গ্রামের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করবে। তার যে হঠাৎ এই গ্রামে যেতে খুব ইচ্ছে করছে। পরীক্ষাটাও শেষ করলো তাই আর থাকতে পারলো না। নিজের গ্রামকে যে সে একটু বেশিই ভালোবাসে। তার মতে গ্রামের মানুষেরা খুব সরল হয়। তাদের মধ্যে কোনো কঠিনত্য থাকে না, তারা মাটির মানুষ মাটির মতোই নমনীয়। বিকেলে সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে বাস স্টেশন এসে টিকিট নিয়ে বাসে ছড়ে বসলো,বাসও চলতে শুরু করলো………..