Posts

গল্প

অমৃতভবন: অভিশপ্ত উত্তরাধিকার

January 1, 2025

Subit Baran Mallick

20
View
অমৃতভবন: অভিশপ্ত উত্তরাধিকার।

পর্ব ১: রহস্যময় আমন্ত্রণ

পশ্চিমবঙ্গের ছোট্ট এক গ্রাম কুণ্ডুপাড়া। গ্রামের ঠিক শেষ প্রান্তে ছিল এক পুরোনো জমিদারবাড়ি—অমৃতভবন। একসময় এটি ছিল গ্রামের ঐতিহ্যের প্রতীক। কিন্তু বছর কয়েক আগে বাড়ির মালিক অনাথবন্ধু চক্রবর্তী আত্মহত্যা করার পর থেকেই বাড়িটি পরিত্যক্ত। গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করত, বাড়িটি অভিশপ্ত।

অনিমেষ চক্রবর্তী, অনাথবন্ধুর নাতি, কলকাতায় বড় হয়েছেন। শহরের ব্যস্ত জীবনে বাবা-মাকে হারানোর পর অনিমেষের জীবনে একমাত্র অবলম্বন তার স্ত্রী মৈত্রী এবং মেয়ে রূপা। একদিন হঠাৎ অনিমেষের কাছে কুণ্ডুপাড়া থেকে একটি চিঠি আসে। চিঠি পাঠিয়েছেন গ্রামের একজন প্রবীণ ব্যক্তি, যিনি জানিয়েছেন, অনিমেষকে তার পূর্বপুরুষদের বাড়ি দখলে নিতে হবে।

“এটাই আমাদের পূর্বপুরুষদের শেষ স্মৃতি,” মৈত্রী চিঠি পড়ে বলল। অনিমেষ কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও শেষপর্যন্ত বাড়ি দেখার জন্য রাজি হয়।

অমৃতভবনে প্রবেশ

পরের সপ্তাহে তারা তিনজন কুণ্ডুপাড়ায় পৌঁছায়। গ্রামের লোকেরা তাদের দেখে ভয়মিশ্রিত কৌতূহল দেখায়। একজন বৃদ্ধা তাদের সতর্ক করে বলল, “আপনারা ওখানে যাবেন না। ওই বাড়িতে যারা যায়, তারা আর ফিরে আসে না।”

অমৃতভবনে প্রবেশ করার পর বাড়ির পরিবেশ দেখে মৈত্রী এবং রূপার গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। বড়সড় বাড়িটি জঙ্গলে ঢাকা, ভেতরের দেওয়ালে ফাটল এবং অজানা চিহ্ন।

“বাড়িটা ঠিক করতে অনেক খরচ হবে,” মৈত্রী বলে। অনিমেষ আশ্বাস দেয়, “আমরা একে ঠিক করব। এটাই আমাদের নতুন শুরু।”

কিন্তু অমৃতভবন যেন তাদের জন্য কিছু ভয়ঙ্কর প্রস্তুত করে রেখেছে।


 

পর্ব ২: পাণ্ডুলিপির রহস্য

অজানা মন্ত্র

বাড়ি পরিষ্কার করার সময় অনিমেষ একটি পুরোনো কাঠের বাক্স খুঁজে পায়। বাক্সের ভেতরে একটি মোটা পাণ্ডুলিপি। পাণ্ডুলিপির পাতা জুড়ে লেখা আছে অদ্ভুত চিহ্ন এবং মন্ত্র।

“এটা কী হতে পারে?” মৈত্রী জানতে চায়। “পুরোনো কিছু লেখা। হয়তো ঠাকুরদার সময়কার। আমি পরে দেখব,” অনিমেষ উত্তর দেয়।

কিন্তু পাণ্ডুলিপির উপস্থিতি বাড়ির পরিবেশ আরও অস্বাভাবিক করে তোলে।

রূপার অস্বাভাবিকতা

রূপা রাতে ঘুমের মধ্যে চিৎকার করে উঠে বলে, “আমাদের বাড়িতে অন্য কেউ আছে। তারা আমাদের দেখতে চায়।”

মৈত্রী ভয় পেয়ে যায়। “তুমি কি কিছু দেখেছ?” রূপা মাথা নাড়ে। “তারা খুব বড়, কালো, আর তাদের চোখ নেই।”

এই ঘটনার পর বাড়ির আলো নিভে যাওয়া, ছায়ার মধ্যে অদ্ভুত শব্দ শোনা এগুলো বাড়তে থাকে।

ভয়ঙ্কর স্বপ্ন

অনিমেষ এক রাতে একটি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দেখে। সে দেখে, বাড়ির এক কোণায় কিছু লোক পাণ্ডুলিপির সামনে বসে মন্ত্র পড়ছে। মন্ত্র শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘর ভরে যায় কালো ধোঁয়ায়।

ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর সে পাণ্ডুলিপির দিকে তাকায়। মনে হয়, পাণ্ডুলিপিটি তাকে ডেকে নিয়ে যাচ্ছে।


 

পর্ব ৩: অতীতের অভিশাপ

অভিশপ্ত ইতিহাস

গ্রামের প্রবীণ লোকেদের কাছ থেকে অনিমেষ জানতে পারে অমৃতভবনের ভয়ঙ্কর অতীত। একসময় অনাথবন্ধু চক্রবর্তী অমৃতভবনে এক নিষিদ্ধ তান্ত্রিক সাধনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি এমন এক শক্তি আনব যা আমাদের পরিবারকে অমর করে দেবে।”

কিন্তু সেই সাধনা ভুল পথে চলে যায়। গ্রামের মানুষরা বিশ্বাস করে, সেই শক্তি অমৃতভবনকে অভিশপ্ত করে গেছে।

রূপার মধ্যে পরিবর্তন

রূপার মধ্যে ধীরে ধীরে অদ্ভুত পরিবর্তন দেখা যায়। সে একদিন আয়নার সামনে বসে বলে, “তারা বলছে, পাণ্ডুলিপি শেষ না করলে সবাই মরে যাবে।”

মৈত্রী আতঙ্কিত হয়ে অনিমেষকে পাণ্ডুলিপি বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলার কথা বলে। কিন্তু অনিমেষ জেদ ধরে, “এটা আমাদের পূর্বপুরুষদের উত্তরাধিকার। আমরা এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারি না।”

দৈত্যের ছায়া

রাতে বাড়ির চারপাশে ছায়ামূর্তি দেখা যায়। মনে হয়, তারা পাণ্ডুলিপি নিয়ে কিছু করতে চায়।


 

পর্ব ৪: সর্বনাশের রাত

দৈত্যের মুক্তি

এক রাতে অনিমেষ পাণ্ডুলিপি খুলে মন্ত্র পড়তে শুরু করে। মৈত্রী এবং রূপা তাকে থামানোর চেষ্টা করলেও সে থামে না।

মন্ত্র শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘরের ভেতর থেকে কালো ধোঁয়া বের হয়। সেই ধোঁয়ার ভেতর থেকে বিশাল এক দৈত্য আকার নেয়।

দৈত্যটি বলে, “তোমরা আমাকে মুক্ত করেছ। এখন তোমরা আমার খাদ্য হবে।”

লড়াই ও আত্মত্যাগ

অনিমেষ বুঝতে পারে, দৈত্যকে থামানোর একমাত্র উপায় তার নিজের আত্মত্যাগ। সে পাণ্ডুলিপি হাতে নিয়ে শেষ মন্ত্রটি পড়ে।

মন্ত্র শেষ হতেই দৈত্যটি মিলিয়ে যায়। কিন্তু অনিমেষও হারিয়ে যায়।


 

পর্ব ৫: অভিশপ্ত ভবিষ্যৎ

নতুন পাণ্ডুলিপি

কিছুদিন পর মৈত্রী একটি নতুন পাণ্ডুলিপি খুঁজে পায়। তার ওপরে লেখা, "অভিশাপ শেষ হয়নি।"

রূপা ক্রমশ আরও অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে। সে একদিন বলে, “বাবা বলেছেন, আমি তার কাজ শেষ করব।”

শেষ দৃশ্য

অমৃতভবন ধ্বংস হয়ে গেলেও পাণ্ডুলিপি থেকে যায়। কয়েক বছর পর, নতুন লোকেরা যখন সেই জমি খনন করতে যায়, তারা মাটির নিচে পাণ্ডুলিপিটি খুঁজে পায়।

তার প্রথম পাতায় লেখা: "অমৃতভবন ঘুমাচ্ছে, কিন্তু তার অভিশাপ চিরস্থায়ী।"


 

শেষ মন্তব্য

গল্পটি শেষ হলেও এর রহস্য এবং ভয়ের ধারা নতুন করে শুরু হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। অমৃতভবনের অভিশাপ চক্রাকারে চলতে থাকে, যার থেকে কেউ পালাতে পারে না।

Comments

    Please login to post comment. Login