""মন""শব্দটা দুটো অক্ষরের হলেও এর বিস্তার ব্যাপক। মনের কাছে ঠিক -ভুল, সত্য -মিথ্যা, পরিস্থিতি কোনটাই টিকে না। মন কেবল নিজের ভাবনায় অটল,নিজ গতিতে বহমান। বয়স বাড়লেও মনের বয়স সবসময় সেই একই থেকে যায়। এই যে এখন আমার বয়স ষাটের ঘরে ,না একদিন বেশি না একদিন কম। কিন্তু মনের বয়স সেই কমই আছে। আমার বয়স যখন ৫ তখন টিভিতে রূপকথার গল্প দেখতাম। কখনো সেখানে দেখাতো ২ ডানা বিশিষ্ট পরী কখনো বা কাঁচের জুতো পরা সিন্ডারেলা। আমার অবুঝ মনে তখন ইচ্ছে জাগত রূপকথার দেশে হারিয়ে যেতে। কখনো বা পরী হয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়াতে কিংবা কখনোবা সেই সিন্ডারেলার মতো কাচের জুতো পরে নাচতে। আমি সেই স্বপ্ন লালন করতে থাকলাম কিন্তু তারপরও রূপকথা তো আর কখনো সত্যি হয় না তাই না। তবে ব্যাকুল মনের কি আর ওসব বোঝার সময় আছে। তারপর একসময় বাবার কাছে বায়না করলাম ,আমিও পরী হতে চাই। বাবা-মা হাজার বুঝাল সেসব রূপকথা। বাস্তবে কি আর পরী হওয়া যায়। কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। পরী না হয়ে আমিও ছাড়ছি না। অবশেষে বাবা আমার মনের কাছে হার মেনে বাজার থেকে একটা বেশ ঝকমকে সাদা রঙে জামা এনে দিল সাথে আছে দুটো সাদা ইয়া বড় বড় ডানা। আমি তো মহা খুশি পরী হতে পারব এর থেকে বড় কথা আর কি হতে পারে। কিন্তু তারপর সেসব ও
ফিকে লাগতে শুরু করলো। আমার বয়স বাড়তে শুরু করল। পুতুল , খেলনা ,ড্রইং আর ভালো লাগতো না। মনে হতো কবে যে বড় হব। টিভিতে দেখতাম এক পলকেই মানুষ বড় হয়ে যায়। আমিও ভাবতাম একবার শুধু চোখটা বন্ধ করবো তারপর খুলে দেখবো আমিও ইয়া বড় হয়ে গেছি। কিন্তু চাইলে তো আর বয়সটাকে বাড়ানো যায় না সুতরাং আমার সেই ইচ্ছাটাকে সেখানেই মাটি চাপা দিতে হলো। আমি তখন বড় না হওয়ার আফসোসে সেই সুখকর সোনালী দিনগুলো অবহেলায় কাটাতে লাগলাম। যে সময় টাতে মানুষ নিজের জীবনের সব থেকে সুন্দর দিনগুলো কাটাই, জীবন নামক ডায়েরীর পাতায় সব থেকে মহামূল্যবান স্মৃতি জমা রাখার রাখে আমি সেই সময় নিজেকে ঘরবন্দী করে সে স্মৃতিগুলোকে তৈরি হওয়ার আগেই নষ্ট করে দেই। তারপর একটা সময় বড় হয়ে যাই। বাবা-মা আর আগের মত অত বকাবকি করে না কিংবা এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি ও করেনা। ইচ্ছে হলেই ঘুরতে পারি,যা ইচ্ছে করতে পারি,ইচ্ছে হলেই একটা বদলতে দশটা জামা কিনতে পারি কেউ কিছু বলে না। দিনগুলো ভালোই চলছিল কিন্তু তারপর হঠাৎ উপলব্ধি করলাম আমার জীবনটা আর আগের মতো সহজ নেয়। আগের মত চঞ্চলতা, প্রফুল্লতা আমার মধ্যে আর কাজ করে না ।
আমার জীবনটাতে এখন হয়তো বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই কিন্তু আমার জীবনটা আগের মত সেই সুন্দর সাবলীল ও নেই। ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে লাগলো জীবন।
এরপর বছর দুয়েক পরে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে পা দিয়েছিলাম শশুর ঘরে। কত স্বপ্ন কত আশা নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম এবার আমার একটি ঘর হল। নিজের ঘর। কিন্তু আফসোস সেই ঘরটা আমার ছিল না , ছিল আমার স্বামীর। আমি কেবল তাদের বাড়িতে ফাই -ফরমাস খাটা একজন নামমাত্র ঘরণী। সবার ইচ্ছেতেই সবকিছু হলেও আমার ইচ্ছে পড়ে থাকত অবহেলায় ঘরের এক কোণে। মেয়েদের আর যাই হোক ইচ্ছা থাকতে নেই। তারা অন্যের ইচ্ছের গোলাম। তারপর জীবনে পূর্ণতা নিয়ে এলো আমার সন্তানেরা। আমার দায়িত্ব তখন আরো শীর্ষে, শ্বাসটুকু নেওয়ার জো নেই। কিন্ত ''মন''বড়ই লোভী। সে চাইতো এত শত কাজের মাঝে একটা দিন অন্তত তার হোক। কিন্তু মা দের কি আর ছুটি আছে ।তাদের গ্রীষ্ম ,বর্ষা ,শীত , সুস্থ অসুস্থ বলে কোন কিছু হয় না। কিন্তু মন তার তো ইচ্ছে করত এই সব সংসারের চিন্তা একদিকে সরিয়ে রেখে একটা দিন অন্তত বৃষ্টিতে ভিজতে। গরম গরম চা ,সিঙ্গারা আর একটা উপন্যাসের বই নিয়ে হারিয়ে যেতে কল্পনার রাজ্যে। কিন্তু আমি মনকে দমিয়ে রেখে দাঁতের দাঁত চেপে কাজ করে যেতাম। এভাবে সময় বাড়লো, বয়স বাড়ল। একটা সময় দেখলাম আমার চেহারায় সে আগের মত উজ্জ্বলতা নেই, চুলগুলো ও পাক ধরতে শুরু করেছে। ধরবে নাইবা কেন? ছেলেটার বিয়ে হয়েছে , তাদের ঘর আলো করে রেখেছে তাদের একমাত্র মেয়ে ,এবার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আর আমার ছোট মেয়েটার বিয়ে হয়েছে এইতো ছয় মাস হলো,আমেরিকায় স্বামীর সাথে আছে। আমার ওনার চুলটাও পাক ধরেছে , কর্মঠ শরীরটা কেমন যেন নিতিয়ে পড়েছে আগের মতো আর জোড় নেই। বয়স বেড়েছে ,আগের মত সবকিছুতে আরো শান্তি খুঁজে পাই না। তাকে বললাম চলো না আমরা একটু ঘুরে আসি। মনটা কেমন যেন ব্যাকুল হয়ে আছে কোথাও ঘুরে এলে ঠিক হয়ে যাবে। সে বলল এখন কি আর আগের মতো বাচ্চা আছি যে মনের কথা শুনবো। আমি ঘোর প্রতিবাদ করে বললাম আমরা আর বাঁচবোই বা কয়দিন।
এতদিন তো সব সময় সমাজ, সংসার ,পরিবার ,সন্তান এর জন্য সব কিছুই বিসর্জন দিলাম এবার অন্তত একটু মনের কথাটা শুনি। অবশেষে রাজি হল। ছেলেকে বললাম অনেক হয়েছে সংসার, এবার একটা লম্বা ছুটি চাই ।তোমার বউ আছে সন্তান আছে এবার ওরা ওদের মত সংসার টা গুছিয়ে নিক।আমি একটু অবসরে যেতে চাই। ছেলে হয়তো বুঝল। তারপর টিকেট কেটে দিল। আমরা দুই বুড়া বুড়ি চললাম। একটা সময় পৌঁছে গেলাম পাহাড় সমুদ্রের যেখানে একাকার হয়েছে ।
প্রকৃতি যেখানে উঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে তার স্নিগ্ধতা। সংসারের চাপে বিয়ের পর আর মধুচন্দ্রিমায় আসা হয়নি ।আজ আমার """"এই মন ব্যাকুল যখন তখন"""সুবাদে দুজনের না হওয়া মধুচন্দ্রিমা টা হয়েই গেল বিয়ের ৩০ টা বছর পর। আর তো কটা দিন তারপরও তো সে চলেই যাব না ফেরার দেশে। জীবন তো একটাই। এই জীবনে এত আক্ষেপ নিয়ে বাঁচার কি কোন মানে হয়। মাঝে মধ্যে এই অবুঝ মনটাকে প্রাধান্য দিতে হয় অন্তত নিজে ভালো থাকার জন্য। এমন সুন্দর মুহূর্ত সৃষ্টি জন্য হলেও "এই মন ব্যাকুল যখন তখন "আসুক, বারে বারে।
#অনুগল্প
#এই_মন_ব্যাকুল_যখন_তখন
#সুমাইয়া_জান্নাত_সুইটি
ফিকে লাগতে শুরু করলো। আমার বয়স বাড়তে শুরু করল। পুতুল , খেলনা ,ড্রইং আর ভালো লাগতো না। মনে হতো কবে যে বড় হব। টিভিতে দেখতাম এক পলকেই মানুষ বড় হয়ে যায়। আমিও ভাবতাম একবার শুধু চোখটা বন্ধ করবো তারপর খুলে দেখবো আমিও ইয়া বড় হয়ে গেছি। কিন্তু চাইলে তো আর বয়সটাকে বাড়ানো যায় না সুতরাং আমার সেই ইচ্ছাটাকে সেখানেই মাটি চাপা দিতে হলো। আমি তখন বড় না হওয়ার আফসোসে সেই সুখকর সোনালী দিনগুলো অবহেলায় কাটাতে লাগলাম। যে সময় টাতে মানুষ নিজের জীবনের সব থেকে সুন্দর দিনগুলো কাটাই, জীবন নামক ডায়েরীর পাতায় সব থেকে মহামূল্যবান স্মৃতি জমা রাখার রাখে আমি সেই সময় নিজেকে ঘরবন্দী করে সে স্মৃতিগুলোকে তৈরি হওয়ার আগেই নষ্ট করে দেই। তারপর একটা সময় বড় হয়ে যাই। বাবা-মা আর আগের মত অত বকাবকি করে না কিংবা এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না বলে নিষেধাজ্ঞা জারি ও করেনা। ইচ্ছে হলেই ঘুরতে পারি,যা ইচ্ছে করতে পারি,ইচ্ছে হলেই একটা বদলতে দশটা জামা কিনতে পারি কেউ কিছু বলে না। দিনগুলো ভালোই চলছিল কিন্তু তারপর হঠাৎ উপলব্ধি করলাম আমার জীবনটা আর আগের মতো সহজ নেয়। আগের মত চঞ্চলতা, প্রফুল্লতা আমার মধ্যে আর কাজ করে না ।
আমার জীবনটাতে এখন হয়তো বাধা দেওয়ার মতো কেউ নেই কিন্তু আমার জীবনটা আগের মত সেই সুন্দর সাবলীল ও নেই। ক্রমশ জটিল হয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে লাগলো জীবন।
এরপর বছর দুয়েক পরে লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে পা দিয়েছিলাম শশুর ঘরে। কত স্বপ্ন কত আশা নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম এবার আমার একটি ঘর হল। নিজের ঘর। কিন্তু আফসোস সেই ঘরটা আমার ছিল না , ছিল আমার স্বামীর। আমি কেবল তাদের বাড়িতে ফাই -ফরমাস খাটা একজন নামমাত্র ঘরণী। সবার ইচ্ছেতেই সবকিছু হলেও আমার ইচ্ছে পড়ে থাকত অবহেলায় ঘরের এক কোণে। মেয়েদের আর যাই হোক ইচ্ছা থাকতে নেই। তারা অন্যের ইচ্ছের গোলাম। তারপর জীবনে পূর্ণতা নিয়ে এলো আমার সন্তানেরা। আমার দায়িত্ব তখন আরো শীর্ষে, শ্বাসটুকু নেওয়ার জো নেই। কিন্ত ''মন''বড়ই লোভী। সে চাইতো এত শত কাজের মাঝে একটা দিন অন্তত তার হোক। কিন্তু মা দের কি আর ছুটি আছে ।তাদের গ্রীষ্ম ,বর্ষা ,শীত , সুস্থ অসুস্থ বলে কোন কিছু হয় না। কিন্তু মন তার তো ইচ্ছে করত এই সব সংসারের চিন্তা একদিকে সরিয়ে রেখে একটা দিন অন্তত বৃষ্টিতে ভিজতে। গরম গরম চা ,সিঙ্গারা আর একটা উপন্যাসের বই নিয়ে হারিয়ে যেতে কল্পনার রাজ্যে। কিন্তু আমি মনকে দমিয়ে রেখে দাঁতের দাঁত চেপে কাজ করে যেতাম। এভাবে সময় বাড়লো, বয়স বাড়ল। একটা সময় দেখলাম আমার চেহারায় সে আগের মত উজ্জ্বলতা নেই, চুলগুলো ও পাক ধরতে শুরু করেছে। ধরবে নাইবা কেন? ছেলেটার বিয়ে হয়েছে , তাদের ঘর আলো করে রেখেছে তাদের একমাত্র মেয়ে ,এবার দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে। আর আমার ছোট মেয়েটার বিয়ে হয়েছে এইতো ছয় মাস হলো,আমেরিকায় স্বামীর সাথে আছে। আমার ওনার চুলটাও পাক ধরেছে , কর্মঠ শরীরটা কেমন যেন নিতিয়ে পড়েছে আগের মতো আর জোড় নেই। বয়স বেড়েছে ,আগের মত সবকিছুতে আরো শান্তি খুঁজে পাই না। তাকে বললাম চলো না আমরা একটু ঘুরে আসি। মনটা কেমন যেন ব্যাকুল হয়ে আছে কোথাও ঘুরে এলে ঠিক হয়ে যাবে। সে বলল এখন কি আর আগের মতো বাচ্চা আছি যে মনের কথা শুনবো। আমি ঘোর প্রতিবাদ করে বললাম আমরা আর বাঁচবোই বা কয়দিন।
এতদিন তো সব সময় সমাজ, সংসার ,পরিবার ,সন্তান এর জন্য সব কিছুই বিসর্জন দিলাম এবার অন্তত একটু মনের কথাটা শুনি। অবশেষে রাজি হল। ছেলেকে বললাম অনেক হয়েছে সংসার, এবার একটা লম্বা ছুটি চাই ।তোমার বউ আছে সন্তান আছে এবার ওরা ওদের মত সংসার টা গুছিয়ে নিক।আমি একটু অবসরে যেতে চাই। ছেলে হয়তো বুঝল। তারপর টিকেট কেটে দিল। আমরা দুই বুড়া বুড়ি চললাম। একটা সময় পৌঁছে গেলাম পাহাড় সমুদ্রের যেখানে একাকার হয়েছে ।
প্রকৃতি যেখানে উঁকি দিয়ে জানান দিচ্ছে তার স্নিগ্ধতা। সংসারের চাপে বিয়ের পর আর মধুচন্দ্রিমায় আসা হয়নি ।আজ আমার """"এই মন ব্যাকুল যখন তখন"""সুবাদে দুজনের না হওয়া মধুচন্দ্রিমা টা হয়েই গেল বিয়ের ৩০ টা বছর পর। আর তো কটা দিন তারপরও তো সে চলেই যাব না ফেরার দেশে। জীবন তো একটাই। এই জীবনে এত আক্ষেপ নিয়ে বাঁচার কি কোন মানে হয়। মাঝে মধ্যে এই অবুঝ মনটাকে প্রাধান্য দিতে হয় অন্তত নিজে ভালো থাকার জন্য। এমন সুন্দর মুহূর্ত সৃষ্টি জন্য হলেও "এই মন ব্যাকুল যখন তখন "আসুক, বারে বারে।
#অনুগল্প
#এই_মন_ব্যাকুল_যখন_তখন
#সুমাইয়া_জান্নাত_সুইটি