Posts

গল্প

ইচ্ছেবতী

January 2, 2025

Puja Bormon

Original Author পূজা বর্মন

17
View

                      পর্ব ৪                      

হটাৎ করে একটা মেয়েকে বিয়ে করে ফেলবো। কিন্তু, কিছু তো করারও নেই। কি করবো?  মা, যেভাবে বেকে বসেছে, এবার আর আমার রেহাই নেই। 

পার্বতী দেবী বললেন, বলছিলাম কি দাদা ক্ষণপ্রভা আর অনুনয়কে যদি একটু আলাদা কথা বলার ব্যবস্থা করে দিতেন। আজকালকার ছেলেমেয়ে নিজেদেরকে বুঝতে চায়, জানতে চায়।হ্যাঁ, অবশ্যই মা প্রভা তুমি অনুনয়কে নিয়ে ছাদে যাও। কথা বলে আসো। ক্ষণপ্রভা উত্তর দিলো ঠিক আছে বাবা যাচ্ছি। পার্বতী দেবী অনুনয়কে উদ্দেশ্য করে বললেন বাবা অনুনয় যা ক্ষণপ্রভার সাথে। তারপর ক্ষণপ্রভা সামনে আর অনুনয় পিছন পিছন ছাদে গেলো। এবারও অনুনয় একবারও তাকায়নি ক্ষণপ্রভার দিকে। নামটাও জানে না। ক্ষণপ্রভা ছাদের এক কোনায় ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে আর অনুনয় বেশ দুরত্ব রেখে দাঁড়িয়েছে। অনুনয় এবার ক্ষণপ্রভার দিকে তাকালো। ক্ষণপ্রভার দৃষ্টি একদম আকাশের দিকে স্থির চুপটি করে তাকিয়ে আছে। মৃদু বাতাস বইছে। কোমর ছেড়ে ছড়িয়ে পড়া এক গুচ্ছ কালো কেশ আর কানের দিকে বেশ কিছুটা চুল ছোট করে কাটা। মৃদু বাতাসে চুল গুলো কখনো তার চোখকে আলতো করে ছুয়ে দিচ্ছে, কখনো বা তার কপালে এসে ঢেউ তুলছে আবার কখনো তার গলাকে আকরে ধরে বসে আছে। কানে পড়া ছোট এক জোড়া ঝুমকা। হাতে পড়েছে মরুন রংয়ের একগুচ্ছ কাছের চুড়ি। তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে মেরুন রঙের একটা সিল্ক শাড়ী। শাড়ীটার মাঝে মাঝে কিছুকিছু সাদা টগর ফুল চুপটি করে বসে আছে । শাড়ীটার কোনো পাড় ছিলো না একদম মুক্ত।  অপরুপ সে সৌন্দর্য। হটাৎই ক্ষণপ্রভা আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অনুনয়ের দিকে তাকালো আর বললো আপনি যে কিছু বলছেন না। ক্ষণপ্রভার কথা শুনে অনুনয়ের  হুস হলো আনমনে মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকালো আর ভাবতে লাগলো এসব কি করছি মেয়েটা মিষ্টি কিন্তু মেয়েটা সম্পর্কে তো ভালো করে কিছু জানি না। মেয়েরা সুন্দর হবে এটাই স্বাভাবিক হয়তো আমি কখনো এভাবে কাউকে পর্যবেক্ষণ করিনি তাই বুঝতে পারিনি। নিরবতাকে দুরে ঠেলে দিয়ে অনুনয় ক্ষণপ্রভার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, তোমার নামটা যেন কি? ক্ষণপ্রভা এটা শুনে তো অবাক আর মনে মনে বলতে লাগলো ভগবান এসব কি এতোক্ষণ পর লোকটা জিজ্ঞেস করছে আমার নাম কি তুমি চিন্তা করতে পারছো। আবার আমাকে তুমি বলে ডাকছে।ইচ্ছে তো করছে লোকটাকে একদম ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেই।  এসব কিছু ভাবতে ভাবতে সে উত্তর দিলো ক্ষণপ্রভা আমার নাম।  ক্ষণপ্রভা, আমি অনুনয় অনুনয় সেন। তো তুমি কোন ক্লাসে পড়ছো। জি, অনার্স সেকেন্ড ইয়ার। অনার্স সেকেন্ড ইয়ার, কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়ছো। বাংলা নিয়ে। বাংলা, গুড। ক্ষণপ্রভা আমতাআমতা করে বললো,  বলছিলাম যে আমার কিছু বলার আছে।হ্যাঁ, বলো। এরকম করছো কেন?  তুমি কি কমফোর্ট না? জি, মানে সেরকম কিছু না। আমি খুব একটা ছেলেদের সাথে কথা বলি না আর এভাবেও কখনো  কথা বলিনি হয়তো তাই। সমস্যা নেই তুমি নিরধিদায় বলো। কি বলবে?  আসলে মানে ঐ। আসলে মানে ঐ কি বলবে বলো। তুমি যা ইচ্ছে বলতে পারো। এখনই তো সময় বলার, বলো। জি, হ্যাঁ আসলে আমি এভাবে বিয়ে করতে পারবো না। কিভাবে? না মানে আমার কিছু শর্ত আছে। অনুনয় ভিষন অবাক হলো শর্তের কথা শুনে, এই মেয়ে সেপারেশনে চায়বে না তো। এসব কারনেই আমি বিয়ে করতে চাইছিলাম না। এবার অনুনয় ক্ষণপ্রভার দিকে একটু এগিয়ে গেলো, ক্ষণপ্রভার চোখে চোখ রেখে জিজ্ঞেস করলো,  কি শর্ত। আপনি কিছু মনে করবেন না দয়াকরে। আপনি প্রথমে আমার কথা শুনুন তারপর যদি আপনার সবকিছু ঠিক মনে তাহলে হ্যাঁ বলবেন না হয় না।আমি জানি না আপনি কিভাবে নিভেন কিন্তু তবুও আমি সব আগেই পরিষ্কার করতে চাই। আমি আপনার সম্পর্কে কিছুই জানি না। তবে আমার বিশ্বাস যে ছেলে আমার এই শর্তগুলো মেনে নেবে সে ছেলে কখনো খারাপ হতেই পারে না। ঠিক আছে, তুমি তোমার শর্তগুলো বলো। হ্যাঁ বলছি আমার প্রথম  শর্ত, জানেন আমার খুব ইচ্ছে আমি এই রাতের শহর দেখবো। আমাকে কখনো রাতে বাসা থেকে বের হতে দেয় না। মধ্য রাত, সারা রাস্তা ফাকা, বিশাল সে রাস্তা, রাস্তার দুপাশে মস্ত মস্ত সব দালান, দালানের মাঝে মাঝে কিছু সবুজ গাছ, ল্যাম্পপোস্টের আলোই পুরোটা রাস্তা আলোকিত, বিশাল আকাশ, আকাশে একদম বৃত্তের মতো একটা চাঁদ, চাঁদের চারপাশে অসংখ্য তারারা মুচকি মুচকি হাসছে, মৃদু বাতাস বয়ছে। সেই মুহুর্তের সাক্ষী হচ্ছি আমি। আমি একা সেই রাস্তাটার মাঝখান দিয়ে খালিপায়ে  হাঁটছি। এই রাস্তা, দালান,চাঁদ, তারা, গাছ সবাই আমাকেই দেখবে। এটা একা সম্ভব না কারণ আমাকে কখনোই রাতে বাসা থেকে বের হতে দিবে না আর আমিও এতো রাতে কখনোই একা বের হতে পারবো না, আমি ভিষণই ভয় পাই। আমি অনেক ভেবে দেখলাম আমার এই ইচ্ছেটা একমাত্র তখনই পূরন সম্ভব মানে বিয়ের পরে বরের সাথে। তখন তো একা থাকালেও ভয় লাগবে না আবার আমি সুরক্ষিতও থাকবো। তাই আমি ঠিক করেছিলাম আমি যাকেই বিয়ে করি তাকে আগেই বলে রাখবো যদি ইচ্ছে হয় আমাকে বিয়ে করবে না হয় চলে যাবে। অনুনয়ের তো এটা শুনে ভীষনই হাসি পাচ্ছে। কিন্তু হাসা যাবে না,  অনুনয় মনে মনে ভাবছে এটা কারো ইচ্ছে হতে পারে। এগুলো তো কখনো চিন্তাই করতে পারিনি এমেয়ে এগুলো বলে কি। তবে ইচ্ছেটাকে হেলাফেলা করা যায় না এতো মজাদার ইচ্ছে। এর মধ্যে ক্ষণপ্রভা আবার বলতে শুরু করলো, শুনুন আমাকে কিন্তু একদিন নিয়ে গেলে হবে মাঝেসাঝেই নিয়ে যেতে হবে, যখনই আমার ইচ্ছে হবে। ভেবে নিন । হুম, ঠিক আছে, অনুনয় একটু আমতাআমতা করে  চোখগুলো ছোট করে বললো তোতোমার কি আরো কোনো ইচ্ছে আছে নাকি এখানেই শেষ। আরে কি বলেন শেষ মানে আমি সবে মাত্র একটা বললাম আমার আরও অনেক ইচ্ছে আছে। তো বলো। আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে, আপনাকে আমায় প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে উপন্যাসের বই কিনে দিতে হবে, আমার বই মানে বইই চাই, আপনি বলবেন যে ফোন থেকে পড়ে নাও সেটা হবে না, আমাকে বইই কিনে দিতে হবে। আর সেটা আপনাকেই মনে রাখতে হবে.............. 

Comments

    Please login to post comment. Login