Posts

গল্প

অশুভ ছায়ার রহস্য

January 2, 2025

Subit Baran Mallick

36
View
অশুভ ছায়ার রহস্য।

অধ্যায় ১: নতুন আশ্রয়

সঞ্জয় মিত্র একজন বিখ্যাত রহস্য-গল্প লেখক। তার লেখা গল্পগুলো একসময় বেস্টসেলার হতো, কিন্তু সাম্প্রতিক ব্যর্থতার কারণে তার ক্যারিয়ার পড়তির দিকে। একদিন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নতুন গল্পের জন্য নিজের পরিবেশ বদলাতে হবে। তিনি কলকাতার বাইরে একটি শহরতলিতে এক পুরনো বাড়ি ভাড়া নেন।

বাড়িটি দেখতে বেশ বড় এবং দৃষ্টিনন্দন হলেও আশেপাশের মানুষজন এটি সম্পর্কে কুসংস্কারে ভরা। গ্রামের প্রবীণরা জানান, বাড়িটি অভিশপ্ত। এখানে বহু বছর আগে এক জমিদার পরিবার রহস্যজনকভাবে মারা গিয়েছিল। সঞ্জয় এমন কথায় বিশ্বাস করেন না। বরং তিনি ভেবেছিলেন, এ ধরনের পরিবেশ তার লেখার জন্য আদর্শ হবে।

বাড়ির ভেতরে ঢুকে তিনি অনুভব করেন এক অদ্ভুত শীতল বাতাস। পুরনো কাঠের মেঝের শব্দ, দেওয়ালের শ্যাওলা ধরা চিহ্ন, আর বন্ধ ঘরগুলো তাকে কৌতূহলী করে তোলে। প্রথম রাতেই একটি বন্ধ ঘরে একটি পুরনো ট্রাঙ্ক খুঁজে পান। ট্রাঙ্কের ভেতরে কয়েকটি পুরনো ফিল্ম রিল এবং একটি প্রজেক্টর ছিল।


 

অধ্যায় ২: রহস্যময় ফিল্ম

সঞ্জয় প্রথম রাতে প্রজেক্টরটি চালিয়ে একটি ফিল্ম দেখতে বসেন। ফিল্মটি একটি পরিবারের সুখী মুহূর্তের সাথে শুরু হয়, কিন্তু হঠাৎ করেই দৃশ্যগুলো অন্ধকার এবং ভয়ানক হয়ে ওঠে। একটি অদৃশ্য শক্তি সেই পরিবারের সবাইকে হত্যা করে।

তিনি বুঝতে পারেন, ফিল্মটি শুধুই কল্পনা নয়। এখানে কিছু গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে। ফিল্মের শেষ দিকে একটি অদ্ভুত চিহ্ন দেখা যায়—একটা ধোঁয়াটে ছায়ার মতো। সঞ্জয় এটিকে গল্পের প্রেক্ষাপট হিসেবে ভেবে লেখালেখি শুরু করেন।


 

অধ্যায় ৩: অদ্ভুত উপস্থিতি

দিন যতই এগিয়ে চলে, বাড়িতে অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে। একদিন রাতে, যখন তিনি লেখার জন্য বসেন, তখন জানালার বাইরে অন্ধকারে একটা ছায়ামূর্তি দেখে চমকে ওঠেন। বাড়ির ভেতর অদ্ভুত আওয়াজ শুনতে পান, যেন কেউ মেঝের উপর ভারী পায়ে হাঁটছে।

এক রাতে তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখেন, প্রজেক্টর নিজে থেকেই চালু হয়ে গেছে। ফিল্মে দেখা ছায়ামূর্তিটি এখন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তার মনে হয়, সেই ছায়াটি যেন তার দিকে তাকিয়ে আছে।


 

অধ্যায় ৪: তানিয়ার পরিবর্তন

সঞ্জয়ের মেয়ে তানিয়া গ্রামে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়। প্রথমে সে বেশ ভালো ছিল, কিন্তু ধীরে ধীরে তার আচরণ বদলাতে থাকে। একদিন সে বলে, "বাড়িতে একটা কাকু আসে। সে খুব ভালো গল্প বলে।" সঞ্জয় ভেবেছিলেন, তানিয়া হয়তো কল্পনা করছে। কিন্তু তানিয়ার আঁকা ছবিগুলো দেখে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।

তানিয়া এমন সব ছবি আঁকতে থাকে যেখানে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে এক ছায়ামূর্তি পরিবারের সবাইকে হত্যা করছে। সে ফিসফিসিয়ে বলে, "কাকু বলেছে, এসব সত্যি।"


 

অধ্যায় ৫: বাড়ির ইতিহাস

সঞ্জয় গ্রামের প্রবীণদের কাছ থেকে বাড়ির ইতিহাস খোঁজেন। তারা জানান, এই বাড়িতে একসময় জমিদার পরিবারের বাস ছিল। এক রাতে, বাড়ির প্রত্যেক সদস্য রহস্যজনকভাবে মারা যায়। তাদের মৃত্যুর কারণ আজও অজানা।

গ্রামের একজন পুরনো পাণ্ডিত বলেন, "এই বাড়ির সাথে এক অভিশপ্ত আত্মার যোগ আছে। সেই আত্মা ছোটদের মনকে প্রভাবিত করে।"


 

অধ্যায় ৬: বঘোলের চিহ্ন

সঞ্জয় তার লেখায় সত্যতার জন্য গবেষণা শুরু করেন। ইন্টারনেটে খুঁজতে গিয়ে তিনি বঘোল নামক এক প্রাচীন আত্মার কথা জানতে পারেন। এই আত্মা শিশুদের মাধ্যমে তাদের পরিবারের উপর নিজের প্রভাব বিস্তার করে। বঘোলকে যেসব পরিবার দেখে, তারা চিরকাল অভিশপ্ত হয়ে যায়।

তিনি যখন আবার ফিল্মগুলো দেখতে বসেন, তখন প্রতিটি ফিল্মে একটি অদ্ভুত মিল খুঁজে পান। প্রতিটি ফিল্মে একটি শিশু বঘোলের প্রভাবে পরিবারের সবাইকে হত্যা করছে।


 

অধ্যায় ৭: তানিয়ার অধিকার

তানিয়া এখন আর সঞ্জয়ের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করে না। সে সারাদিন একা একা থাকে, অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি করে। এক রাতে সঞ্জয় দেখে, তানিয়া জানালার পাশে বসে কারো সাথে কথা বলছে।

"তুমি কার সাথে কথা বলছো?"

তানিয়া ফিসফিসিয়ে বলে, "বঘোল কাকুর সাথে।"


 

অধ্যায় ৮: মৃত্যুর ছায়া

সঞ্জয় বুঝতে পারেন, তার পরিবার চরম বিপদের মধ্যে আছে। তিনি প্রজেক্টর এবং ফিল্ম ধ্বংস করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফিল্ম ধ্বংস করার সময় ঘরের বাতিগুলো টিমটিম করতে শুরু করে। দরজা-জানালা বন্ধ হয়ে যায়।

হঠাৎ করে বঘোলের ছায়া তার সামনে উপস্থিত হয়। সঞ্জয় আতঙ্কে জমে যান।


 

অধ্যায় ৯: চক্র ভাঙা

সঞ্জয় সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আর পালাবেন না। তিনি গ্রামের পুরোহিতের সাহায্য নেন। তারা মিলে বাড়ির চারদিকে মন্ত্র পাঠ শুরু করেন। তানিয়া এই সময়ে সম্পূর্ণ বঘোলের প্রভাবে চলে যায়।

তানিয়া তার বাবার দিকে ছুরি নিয়ে এগিয়ে আসে। সঞ্জয় কোনোভাবে তাকে আটকাতে সক্ষম হন। কিন্তু বঘোলের শক্তি এতটাই প্রবল যে, তার সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়।


 

অধ্যায় ১০: অশুভ সমাপ্তি

শেষের রাতে গ্রামবাসীরা বাড়ি থেকে সঞ্জয় এবং তার পরিবারের আর্তচিৎকার শুনতে পান। সকালে তারা বাড়িতে ঢুকে একটি নতুন ফিল্ম রিল খুঁজে পান। ফিল্মে দেখা যায়, সঞ্জয়ের পরিবারকে তানিয়া নিজ হাতে হত্যা করেছে।

ফিল্মের শেষ দৃশ্যে বঘোল এবং তানিয়া একসাথে অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।

Comments

    Please login to post comment. Login