রাতে দীর্ঘ হাঁটা হয় না বহুদিন। ঘরের ভেতরেই ঠাণ্ডায় জমে যাই বলে বের হতে ইচ্ছা করে না আর। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ধূসর আকাশ দেখি রাতের। এমন মিহি আলো, যেন আঙুল ডুবিয়ে তুলে আনা যায় নিশ্চুপ ধূসরতা!
রাতের বন্দনা করছি বলে ভাবাই যায় আমার লেট নাইট সিনড্রোম। কিন্তু সত্যি সত্যিই কায়রোর মধ্যরাত অদ্ভুত সুন্দর। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা এই শহরের রাতকে দিয়েছে অন্যরকম সৌন্দর্য। আজ চোদ্দ কিলোর দূরত্ব হেঁটে বেড়ালাম।
ঢাকায় যখন নতুন বছর ঘিরে অমানবিক উদযাপন চলছে, কোথাও ঘটেছে অগ্নিকাণ্ড—কায়রোয় তখন সুনিয়ন্ত্রিত উৎসবের আমেজ। আবাসিক এলাকায় এটা আলাদা করে বোঝার উপায় খুবই কম। নিত্যদিনের মতোই যে যার ব্যস্ততায় সচল। গত বছর ব্যাপারটা নিয়ে খটকা থাকায় এবার বের হয়েছি জানতে—কেমন হয় কায়রোর নববর্ষ!
রাতের ঘড়ি যখন বারোর ঘর ছুঁলো, আমি তখন নীল নদের কার্নিশে। হাতে গোনা কয়েকটা পটকা ফোটানো হলো, কিছু ফানুস ওড়ানো হলো মাত্র। অথচ গোটা কায়রোর মানুষ এখানটায় এসেছে উদযাপনে। সুদীর্ঘ কার্নিশ জুড়ে তৈরি হওয়া কফিশপ আর ছোট ছোট বোটগুলোকে কেন্দ্র করে এই ভীড়। বোঝাই যাচ্ছে—পটকা আর আতশবাজি কেন্দ্রিক এই আয়োজন না। পরিবার, প্রিয়মানুষ কিংবা বন্ধুদের সাথে আড্ডাটাই এইখানে মুখ্য।
বিখ্যাত সব গান বাজছে বর্ণীল আলোয় সজ্জিত ক্রুজগুলোয়, তাল মিলিয়ে নেচে চলছে যুবা-বৃদ্ধ, সব বয়সী। ছোট ছোট ঢেউ উঠছে নীলের জলে। আলো আঁধারের কী যে অপূর্ব সেইসব নৃত্য!
ডাউন টাউনের রাস্তা তো বছরভরেই আলোকজ্জ্বল থাকে, আজ তারও দ্বিগুণ, যেন অবিরল হেসে যাচ্ছে প্রফুল্ল কোনো সুন্দরী। গীর্জার ঘন্টা ধ্বনি অনেকক্ষণ শোনা গেলো, ছান্দসিক।
শীতোত্তীর্ণ সময়ে কফিতে চুমুক দিয়ে উষ্ণ হই খানিক। এবার ফিরতে হবে। জানেন তো, রাত বাড়তে থাকলে—ক্রমশ গাঢ় হয়ে ওঠে নিশ্চুপ ক্ষতের দাগ, চেনা জ্বরের মতো ঘোরগ্রস্ততা। সেই ঘোরের ভেতর আবিষ্কার করি আমার ভুলে যাবার রোগ। চোখের পলকে কেটে যাওয়া বছরটার সমূহ দাগচিহ্ন ভুলে গেছি, ভুলেই থাকতে চাই সমাগত পঁচিশে।