Posts

গল্প

ইচ্ছেবতী

January 3, 2025

Puja Bormon

Original Author পূজা বর্মন

10
View

পর্ব ৫ 

 

প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে উপন্যাসের বই চায় মেয়েটার এটা ভেবে অনুনয় বেশ অবাকই হচ্ছে । কিন্তু, এটা ভেবে পাচ্ছে না প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে বই যদি কিনে দেইও তবে এতো উপন্যাস কোথায় পাবে। 

অনুনয়কে ভাবতে দেখে ক্ষণপ্রভা জিগ্যেস করলো

  • - কি হলো কি ভাবছেন?
  • - না মানে একটা বিষয় ভাবছিলাম।
  • ক্ষণপ্রভা চোখ ছোট ছোট করে অনুনয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো
  • - কি ভাবছিলেন?  আপনি রাজি নন?
  • - না সেরকম কিছু না। বলছিলাম যে তুমি অনেক উপন্যাস পড়তে পছন্দ করো?
  • - হ্যাঁ, করি।
  • - একটা কথা বলবো?
  • - হুম, বলোন।
  • - বলছিলাম কি তুমি একটা জিনিস চিন্তা করো যে আমরা তো আর এক বছর বা দু বছর একসাথে থাকবো না সারাজীবন থাকবো। এক্ষেত্রে আমি যদি তোমাকে প্রত্যেক সপ্তাহে একটা করে উপন্যাসের বই কিনে দেই তাহলে একবছরে বইয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় আনুমানিক ৫০টি। আবার ধরো আমরা যদি একসাথে পঞ্চাশ বছর থাকি তাহলে মোট বই হবে ২৫০০টি। ভাবতে পারছো?  এতো উপন্যাস হয়তো এখনো রচনাই হয়নি। দেখ, আমার কিনে দিতে কোনো সমস্যা নেই। আমি শুধু তোমাকে লজিক দেখাচ্ছি।
  •  
  • ক্ষণপ্রভা ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেলো তারপর কি যেনও একটা ভেবে বলতে শুরু করলো
  • - হ্যাঁ, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমি তো এভাবে চিন্তাই করিনি। আচ্ছা যান আপনি প্রত্যেক সপ্তাহে না আমাকে মাসে দুইটা বই কিনে দিবেন অর্থাৎ পনেরো দিন অন্তত একটা করে কিনে দিবেন। আর হে শুধু উপন্যাস না আমাকে গল্পের বইও এনে দিবেন।

- ঠিক আছে , তারপর বলো আরও কোনো ইচ্ছে আছে তোমার। 

  • - হ্যাঁ, আছে তো। আমার পরের ইচ্ছে আপনি আমাকে কখনো আপনাকে তুমি ডাকার জন্য জোর করতে পারবেন না।
  • - মানে?
  • - মানে হচ্ছে আমি আপনাকে তুমি ডাকতে পারবো না। আপনি যদি চান আমি আপনাকে আপনি ডাকতে পারি আবার তুইও ডাকতে পারি। এ দুটোর মধ্যে আপনি যেটা চায়বেন সেটাই ডাকবো। কিন্তু, তুমি ডাকতে পারবো না।
  • - মানে তুমি আমাকে তুই বলেও ডাকতে পারবে তোমার কোনো সমস্যা নেই তবুও তুমি ডাকবে না।
  • ক্ষণপ্রভা মুখে হাসি টেনে মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ বললো।
  • - ঠিক আছে, তোমাকে তুই বলতে হবে না তুমি আমাকে আপনি বলেই ডেকো।
  •  
  • - আমার শেষ ইচ্ছে আর এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
  • - হ্যাঁ, বলো।
  • - আমি ঠকে যাওয়াকে ভিষণভাবে ভয় পায়। আপনি হয়তো ভাবছেন। আমি কি তাহলে পূর্বে ঠকেছি। না এরকম নয়।  আসলে কেউ দেখে শিখে আর কেউ ঠেকে শিখে। আমি দেখেই শিখেছি। আমি অনেকের ঠকে যাওয়ার গল্প জানি। যাদের মধ্যে এতো ভালোবাসা ছিলো তবুও ঠকতে হলো। আমি চাই না আপনি আমাকে অনেক ভালোবাসোন। আমাকে শুধু একটু সম্মান করলেই হবে আর না ঠকালেই হবে। ঠকে যাওয়ার সংঙ্গাটা সবাই যেভাবে দেয় আমার কাছে সেরকম নয় একটু ভিন্ন। আমার কাছে ঠকে যাওয়া মানে ছেড়ে যাওয়া নয়। দেখেন, ভালোবাসা সবার জীবনে একবার আসে না, বারবার আসে, কেউ যাকে পায় তাকে আকরে ধরে বাঁচতে চায় আবার কেউ পুনরায় আসা ভালোবাসাকে ছুতে চায়। আমার পরেও আপনার জীবনে আরও অনেকেই আসতে পারে, এটা খুবই স্বাভাবিক। আসলে, আপনার যদি কোনোদিন মনে হয়, সেটা জীবনের যেকোনো সময় হোক। হতে পারে সেটা বৃদ্ধ বয়সে, আমি আপনার জন্য  উপযুক্ত ছিলাম না তবে নির্দ্বীদায় আপনি আমাকে বলবেন। আমি সেই উপযুক্ত মানুষটির জন্য আপনার পাশের জায়গাটা ছেড়ে দিবো। আমি কখনো কোনো প্রশ্ন করবো না। কখনো বলবো না এরকম কেন করলেন। কিন্তু, এই বিষয়টি যদি আমাকে বাহির থেকে জানতে হয়, আমি সেটা মেনে নিতে পারবো না। আমার কাছে ঠকে যাওয়া মানে এটাই। ভগবান আমাকে সব ক্ষমতা দিয়েছেন শুধু এই ঠকে যাওয়া মানতে পারবো না।
  • অনুনয় এতোক্ষণ মুগ্ধ হয়ে ক্ষণপ্রভার কথা শুনছিলো, ক্ষণপ্রভা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলছিলো আর অনুনয় শুনছিলো। অনুনয় আনমনেই বলে বসলো এ যে এক  ' ইচ্ছেবতী '
  • - কি হলো কিছু যে বলছেন না।
  • - খুব ভালো কথা বলো তো তুমি।
  • - আমি আপনাকে সেটা বলতে বলিনি। বলেছি যে আপনার কি কিছু বলার নেই।
  • - আমার, আমার যা বলার আমি মাকে বলবো।
  • - মাকে বলবেন মানে?
  • - মাকে মানে আমার মাকে। তারপর বলো তোমার কি আরও কোনো ইচ্ছে আছে আইমিন শর্ত।
  • ক্ষণপ্রভা মুখটাকে বাচ্চাদের মতো করে বললো
  • - হ্যাঁ, আরেকটা আছে।
  • - আরেকটা আছে, তুমি এইমাত্র না বললে এটাই তোমার শেষ ইচ্ছে।
  • ক্ষণপ্রভা ডানহাতের অনামিকা আঙ্গুলটা উপরে তুলে পেছনের দিকে দেখিয়ে বললো
  • - ঐটা তো এমনি এই বলেছি আমার আরও দুইটা ইচ্ছে আছে।
  • - আরও দুইটা?
  • ক্ষণপ্রভা ভয়ে ভয়ে বলতে শুরু করলো
  • - হ্যাঁ, আপনাকে আমায় সময় দিতে হবে। মানে আমি তো কখনো ছেলেদের সাথে মিশিনি এমনকি আমি স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি কোথাও আমার কোনো ছেলে বন্ধু ছিলো না। আমার তেমন কোনো মেয়ে বন্ধুও নেই। আপনার সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাকে সময় দিতে হবে। আমি জানি না কিভাবে মানিয়ে নিবো, আদোও পারবো কিনা। তাই বলছি আমি সহজে আপনার সাথে মানিয়ে নিতে পারবো না। আপনি বুঝতে পারছেন আমি কি বলছি।
  • - হুম, বুঝতে পেরেছি। আর কোনো ইচ্ছে?
  • - হ্যাঁ, প্রত্যেক মাসে আপনি আমাকে কাচের চুড়ি কিনে দিবেন আর আর কানের ঝুমকো। আর অনেক আইসক্রীম চাই। ব্যস আর  কিছু না।
  • - তারমানে ইচ্ছেবতীর ইচ্ছের ইতি ঘটেছে।
  • - এখনকার মতো এখানেই শেষ।
  • - তবে এবার নিচে যাওয়া যাক। সবাই আমাদের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে।
  • - হুম, চলুন।
  • - চলো..........
  •  

Comments

    Please login to post comment. Login