পোস্টস

উপন্যাস

অধ্যায় ২

১৭ মে ২০২৪

সুহৃদ সরকার

মূল লেখক জেমস প‍্যাটারসন

অনুবাদক সুহৃদ সরকার

“তুমি ছেলেটার আচরণ আন্দাজ করতে পারো?” মিল্ট বলল।
“টার্টলনেক পরা মেয়েটা,” আমি বললাম।
গোরান একটা সিঁড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছিল। তার পাশেই একটা মেয়ে টার্টলনেক সোয়েটার পরে হাঁটছিল। আমি মনের চোখে দেখতে পেলাম গোরান মেয়েটার পাশে গিয়ে একটা সমস্যা তৈরি করছে। আমি দেখতে পাচ্ছি সেটা।
“বুকে হাত” আমি মিল্টকে বললাম। “দ্যাখো।”
“মেয়েটা? ওর সাথে তো একটা ছেলে আছে।” মেয়েটার বাম পাশের ছেলেটাকে বোঝাল মিল্ট। “দ্যাখো। ফ্ল্যানেল শার্ট পরা ছেলেটার হাত ধরে আছে মেয়েটা।”
“দেখতে থাকো।”
লোকজনকে দেখা আমার শখ। তারা কিছু করতে যাওয়ার আগেই আমি সেটা দেখে ফেলি। গোরান মেয়েটার পাশে গেল, তারপর হাত বাড়িয়ে দ্রুত মেয়েটার গাল টিপে দিল। তারপর হাঁটতে থাকল। কেউই কিছু লক্ষ্য করল না। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত এলাকা মাড়িয়ে গেলেও মেয়েটা বুঝতে পারল না কে এটা করল, বুঝতে না পেরে সেও হাঁটতে থাকল আরো অনেকের মাঝে।
“বেশ তো,” মিল্ট বলল। “তার বুকে হাত দেয় নাই তো।”
“না, বুকে না।”
আমি মাথা নাড়লাম, এরপর কী ঘটছে তার জন্য তাকালাম। মেয়েটার হাত ধরে থাকা ফ্ল্যানেল শার্ট পরা ছেলেটাই কেবল সেই ঘটনাটা দেখেছে, সেটা দেখার পরই তার মনে হয়েছে একটা কিছু করা দরকার তার। সে মেয়েটার হাত ছেড়ে দিয়ে গোরানকে ধরার জন্য দ্রুত সামনে এগুলো।
কিন্তু ছেলেটা তার প্রথম বাক্য শেষ করার আগেই গোরান ছেলেটার বুকে হাত দিল, তারপর তার মুখের উপর জোরে কিছু একটা বলল। বুকে হাত। ঠিক কী বলল আমি বলতে পারব না, তবে সারকথা এরকম: আমি তোকে শেষ করে দিতে পারি, কেউ কিচ্ছু করতে পারবেনা। আর এসময়েই প্রথমবারের মতো গোরানের বডিগার্ড দুটো তার কাছাকাছি এল। আমি মনে মনে তাদের নাম দিলাম ভোম্বল আর হোম্বল। ভোম্বল আর হোম্বল ছেলেটার গা ঘেঁষে দাঁড়াল।

ছেলেটা বিপদ আঁচ করতে পারল। তার চোখেমুখে ভীতি স্পষ্ট হয়ে উঠল। আর তখন গোরানের চোখেমুখে স্বস্তির ছা‌য়া। গোরান ওই রাতে বাসায় ফিরে যেতে পারে, শান্তিতে ঘুমাতেও পারে, তার হয়ত কিছুই মনে থাকবে না এই ঘটনার কথা। কিন্তু ফ্ল্যানেল শার্ট পরা ছেলেটা আরো কিছুদিন ভয়ের মধ্যেই থাকবে। আর মেয়েটার কথা নাইবা বললাম। এরকম আমি শতবার দেখেছি।

এভাবেই দেখলাম এই ধনীর দুলাল তার বাবার টাকা দিয়ে পোষা গুন্ডার দলের জোরে হার্ভার্ডের মতো শিক্ষার পবিত্রভূমিতেও নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়াতে পারে। টাকা থাকলেই কেনা যায় সব।
গোরান আর তার দুই বডিগার্ড ওখান থেকে চলে গেলে আমি তার পিছে পিছে তার বাসায় যেতে চাইলাম, সেখানে গিয়ে সে রাতেই তার ভবলীলা সাঙ্গ করার ইচ্ছে হলো। কিন্তু মিল্ট আমার কাঁধ ধরে মনে করিয়ে দিল, “এভাবে খুন করলে আমরা টাকা পাবো না।”
কাজটা এমন যে হার্ভার্ডের মাটিতেই ছেলেটাকে খুন করতে হবে। আগামীকাল, আজ নয়।
“ফুলেল পোশাক পরা মেয়েটা,” সে বলল।
খুন করাটা কঠিন হবে, আমাদের সমীকরণের মাঝখানে থাকবে ছেলেটা - তাকে আন্দাজ করা যায়- তাতেই কাজ হবে। আমরা কাজ সেরেই নিরাপদে সরে পড়তে পারি। 
যদি আমরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটা মাথায় রাখি। “পুরোটা ছয় মিনিটের ভেতর করতে হবে,” আমি তাকে বললাম।
“ছয়? ঠিক আছে। আমরা যদি এখানকার লোকজনকে ভালোভাবে জানি তাহলে করা যাবে। আমরা যেমনটা বলছি। তাদের প্রতিক্রিয়ার ধরন ও সময় কেমন হবে জানতে হবে।” সে তার অংশটা ভালোই পছন্দ করছে। একটু আগে যে মেয়েটার দিকে নজর দিয়েছে এখনও তার নজর সেখানেই। “আমি এখনও ওই মেয়েটাকেই বেছে নিচ্ছি।” সে মেয়েটাকে দেখিয়ে দিল। “দ্যাখো, সে তোমাকে মোকাবিলার জন্য কীভাবে ঘোরে? ওটা দেখেই বোঝা যাবে, বন্ধু। তার শরীরের সামনেটা কীভাবে ঘোরে দেখেছ? পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়? সে যে লোকটাকে চায় তার দিকে ধীরে ঘুরে তাকায়। সূর্যালোকে একটা সূর্যমুখী ফুলের মতো।”
“না। মেয়েটা না। আমাদের দরকার সত্যিকার চিৎকার-চেঁচামেচি করতে পারে এমন কাউকে।”
“ওই মেয়েটার চেয়ে নির্ভরযোগ্য চিৎকারকারী আর কে হবে?”

আমি এর মধ্যে পছন্দ করে ফেলেছি। “বারিস্তা।” রাস্তার ওপাশে ক্যাফে কাউন্টারের পেছনে মেয়েটা দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানে তার ফোনে কিছু একটা দেখছে - হয়ত তার পোস্ট করা সেল্ফিতে কয়টা লাইক পড়েছে তাই। মেয়েটা ব্যস্ত। সে আটকা পড়ে আছে। সেই যোগ্য।

আমরা ক্যাফের দিকে গেলাম। মিল্টের কথাই ঠিক: আমরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ফুলেল পোশাক পরা মেয়েটা ঘুরে তাকাল। আমি দেখলাম মেয়েটা আমার চোখের দিকে তাকানোর সময় তার চোখে কোনো ক্লান্তি নেই। মিল্ট ওর সম্পর্কে যা যা বলছিল তাই কি ঠিক?
অর্ধেক যোগ সাত - নিজের বয়সের অর্ধেকের চেয়ে সাত বছর বেশি বয়সী হলেই তার সাথে সামাজিকভাবে প্রেম করা যায়, মিল্টের হিসেব তাই বলে। সেই হিসেবে আমি আটাশ বছর বয়সী কোনো মেয়ের সাথে লটকাতে পারি। তবে আমি নিশ্চিত না যে আমার স্ত্রী এই গানিতিক হিসেব  পছন্দ করবে। ইদানিং আমার নিজেরই সন্দেহ হচ্ছে সত্যিই আমার মধ্যে এখন কোনো মেয়েকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা অবশিষ্ট আছে কি না।
হার্ভার্ডের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীতে ভরপুর হলরুমের মধ্যে আমরা ঢুকলাম। তাজা কফির সুগন্ধের মধ্যে বিভিন্নরকম কথাবার্তায় পুরো হল ভরপুর।
আমি মিল্টের দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে তাকাল। সে তার বুক চেপে ধরল, একটু সামনে ঝুঁকল।
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তোমার হার্ট অ্যাটাক হতে যাচ্ছে।”
“তোমার কেন মনে হচ্ছে সেটা?”
“বইয়ে পড়া জ্ঞান। আর সত্য হলো-”
“ওওওওমামামামমামাম!” মিল্ট চিৎকার করল।
সে তার মাথা পেছনে হেলিয়ে দিয়ে একটা পাক খেল, পেছনে পড়ল, একটা ক্যাফে টেবিলের উপর অর্ধেক শরীর এলিয়ে দিল। এর ফলে সেই টেবিলের উপর থাকা কফি কাপ, পিরিচ, চামচ সব ঝনঝন করে পড়ে গেল। মিল্টন প্রেসকটকে দেখে মনে হলো সে মারা যাচ্ছে।