Posts

গল্প

দ্য বুক

January 14, 2025

আবু আদনান

Original Author H. P. Lovecraft (এইচ পি লাভক্র্যাফট)

Translated by Abu Adnan (আবু আদনান)

15
View

দ্য বুক 
এইচ পি লাভক্র্যাফট 

আজকাল কেমন যেন জট পাকিয়ে যায় স্মৃতিগুলো। 

কোন ঘটনাটা আগে ঘটেছিল বা কোনটা পরে, তা নিয়ে সংশয় হয়। 

সুদূর অতীতের স্মৃতিগুলো প্রায়ই বিভ্রান্ত করে ফেলে আমায়। 

মাঝে-মাঝে তো স্মৃতিগুলোর শুরু কোথায়, তা নিয়েই সন্দিহান হয়ে পড়ি, যখন পেছন ফিরে তাকিয়ে উপলব্ধি করি ফেলে আসা সুদীর্ঘ বিভীষিকাময় অন্তহীন সময়। বর্তমানকে মনে হয় অনাদি-অনন্ত ধূসর মহাসাগরের মাঝে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। সময় যেন আমার পথ রোধ করে থমকে দাঁড়িয়ে আছে। 

আটকে আছি অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের মাঝে।

যতটুকু মনে পড়ে, একসময় একটা পরিবারও ছিল আমার। ছিল বাড়ি ভর্তি চাকর-বাকর। যদিও পুরোটা-ই এখন ধোঁয়াশাচ্ছন্ন। বিস্তারিত কিছু-ই আর আজকাল মনে করতে পারি না। এমন কী সেটা কত সাল ছিল, তা-ও না। 

এই মুহূর্তে কী ভাবে আপনার সাথে কথা বলছি, জানি না আমি। অবশ্য এটা বুঝতে পারছি যে আমার কথাগুলো যথাস্থানে পৌঁছে দেয়ার জন্য অদ্ভুত কোন একটা মাধ্যম কাজ করছে। আজকাল নিজের অস্তিত্বকে আবছা অস্পষ্ট আর ঘোলাটে মনে হয়। মনে হয়, প্রচণ্ড কোন আঘাতের শিকার আমি।সম্ভবত আমার অবিশ্বাস্যরকম ভয়াবহ অভিজ্ঞতার-ই ফসল সেটা।

পুরো ব্যাপারটা তাহলে খুলেই বলি।  

সমস্ত ঘটনার শুরু সেই পোকায়-খাওয়া ঝরঝরে বইটা থেকে। এখনও মনে পড়ে বইটা খুঁজে পাওয়ার কথা।

সে জায়গাটা অত্যন্ত প্রাচীন। ওটার ঠিক পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে তেলতেলে কালচে পানির নদীটা। আলো-আঁধারিতে কুয়াশা সেখানে সারাক্ষণ ঘুরপাক খায় অতৃপ্ত আত্মার মতো। নদীর ধার ঘিরে রয়েছে পরিত্যক্ত, প্রায় ধ্বসে যাওয়া কিছু ঘরবাড়ি। কারা ওখানে থাকতো, এখন তারা কোথায় বা তাদের বংশধরেরাই বা কই গেছে, কেউই কিছু বলতে পারে না। ওখানকার জানালাবিহীন কক্ষগুলো একেবারে অন্ধকার। তেমন কোন আসবাবপত্র নেই। থাকার মধ্যে আছে ছাদ পর্যন্ত উঁচু শেলফ আর শেলফ ভরা প্রায় পচে যাওয়া সুপ্রাচীন জরাজীর্ণ গ্রন্থরাজি। মেঝে আর ডাস্ট বিনেও স্তূপ হয়ে আছে অসংখ্য বই।  

এ রকম-ই একটা স্তূপে বইটা পাই আমি। কখনও জানতে পাড়ি নি বইটার নাম। কারণ শুরুর দিকের বেশ কয়েকটা পাতা ছেঁড়া ছিল। শেষ দিকের কিছু পাতা খোলা অবস্থায় পড়ে ছিল বইটা। হঠাৎ করে চোখ পড়ে যায় সেখানে আমার। পাতাটাতে কী লেখা আছে বুঝতে পেরে শিহরণ খেলে যায় সারা দেহে।

একটা ফর্মুলা দেয়া ছিল বইটাতে। আর ছিল একটা তালিকা। কী কী করতে হবে আর বলতে হবে এসব হাবি-জাবি আর কী। বর্ণনাটা যে রহস্যময় নিষিদ্ধ কোন রিচুয়ালের তা আর বুঝতে বাকি রইল না আমার। এর আগেও কালের গর্ভে ক্ষয়ে যাওয়া বিভিন্ন প্রাচীন পুঁথিতে এ ধরনের আচার-অনুষ্ঠানের কথা পড়েছি আমি। প্রাচীন রহস্যময় এসব অনুষ্ঠান অদ্ভুত এক মিশ্র অনুভূতি জাগায় আমার মনে। একই সাথে অনুভব করি তীব্র মোহ আর ঘৃণা। 

 বুঝতে পারলাম, সাধারণ কোন বই না এটা। নিশ্চই কোন একটা সূত্র দেয়া আছে এখানে। সম্ভবত রহস্যময় কোন জগতে প্রবেশের পথনির্দেশ, সৃষ্টির আদিকাল থেকে যার সন্ধান করে আসছে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার উপাসক ঐন্দ্রজালিকরা। যে জগৎ আমাদের চিরচেনা ত্রিমাত্রিক জীব আর জড়ের ধারণার বাইরে। যে জগৎ নিগূঢ় সুপ্ত জ্ঞানের সন্ধান দিয়ে যায় আমাদের কানে-কানে। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যার মর্মপোলব্ধির সন্ধানে আছে মানব জাতি। 

বইটা অত্যন্ত প্রাচীন। কালের ছোবলে রীতিমত জরাজীর্ণ অবস্থা। কোনও প্রেসে ছাপানো নয় বরং পুরো বইটা গোটা-গোটা ল্যাটিন হরফে হাতে লেখা। লেখার ধরণটা প্রাকমধ্যযুগীয় (uncial)। সন্দেহ নেই শতাব্দী-প্রাচীন কোন খেপাটে সন্ন্যাসীর হাতের লেখা এগুলো। 

(uncial=গোটা-গোটা বা গোলাকার এবং পরস্পর অসংযুক্ত হরফে একধরণের লেখা। ৪র্থ-৮ম শতাব্দীর প্রাচীন ইউরোপীয় ম্যানুস্ক্রিপ্টগুলোতে এধরণের লেখা দেখতে পাওয়া যায়। এগুলো থেকেই পরবর্তীতে ক্যাপিটাল লেটারের জন্ম।)

বইটার দাম হিসেবে কিছু টাকা সাধলাম ওখানকার বুড়োটাকে।

কিন্তু টাকা নিতে রাজি হলো না লোকটা। 

বরং অদ্ভুত আচরণ করতে লাগল। 

আমার এখনও মনে পরে বুড়োর সেই নিশঃব্দ চাপা হাসি আর আড় চাহনি। যখন চলে আসছিলাম তখন হাত দিয়ে বাতাসে দুর্বোধ্য এক চিহ্ন আঁকছিল সে। আজ এতদিন পর বুঝতে পারি, কেন সে দিন টাকা নিতে রাজি হয় নি বুড়ো। 

নদী পাড়ের অন্ধকার গলি-ঘুপচি দিয়ে দ্রুত পা চালালাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। বদ্ধ জায়গায় জমাট বেঁধে আছে গাঢ় কুয়াশা। বারবার গা শিউড়ে উঠতে লাগল আমার। কেমন যেন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছে। মনে হচ্ছে নিশঃব্দ পায়ে কেউ যেন পিছু নিয়েছে। রাস্তার দুপাশের শতাব্দী-প্রাচীন ভগ্ন-প্রায় বাড়িগুলো যেন এক একটা রক্ত-মাংসের প্রাণি। তীব্র বিদ্বেষের অশুভ দৃষ্টিতে দেখছে আমাকে। 

হঠাৎ করে যেন আজ জেগে উঠেছে কোনও এক আদিম অন্ধকার শক্তি। 

ছাতা-পড়া স্যাঁতস্যাঁতে বাড়িগুলোর প্রতিটা ইট, প্রতিটা জানালা কটাক্ষ করছে আমায়। অনেক কষ্টে নিজেদের আটকে রাখছে ওরা। এই বুঝি ঝাঁপিয়ে পড়ল বলে।   

বাড়িতে যখন ফিরলাম তখন মাঝরাত পেরিয়ে গেছে। মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা জমাট বেঁধে আছে পুরো বাড়ি জুড়ে। বইটা নিয়ে চলে গেলাম চিলেকোঠায়। চিলেকোঠাটা ছিল আমার উদ্ভট সব জিনিসের সংগ্রহশালা। দরজায় খিল লাগিয়ে মোম জ্বালিয়ে বসলাম। এখনও চোখ বুঝলে সেরাতের প্রতিটা মুহূর্ত স্পষ্ট ভেসে উঠে চোখের সামনে। দেখতে পাই কী ভাবে ধীরে ধীরে গলে পড়ছিল মোমের ফোঁটাগুলো। শুনতে পাই দূর থেকে ভেসে আসা গির্জার ঘণ্টাধ্বনি। মনে পড়ে, প্রচণ্ড কৌতূহলে উৎসুক হয়ে ঘণ্টাধ্বনি শুনছিলাম আমি। যেন ভয় পাচ্ছিলাম, ঘণ্টার শব্দের সাথে বুঝি ভেসে আসবে অশুভ কোনও এক সুর।

মোমের আলোয় বইটা থেকে ধীর-লয়ে মন্ত্রোচ্চারণ করতে লাগলাম। প্রাচীন সেই মন্ত্রের নবম স্তবক উচ্চারণ করার সাথে সাথে চিলেকোঠার জানালা থেকে ভেসে এল অদ্ভুত আওয়াজ। মনে হলো যেন জানালার কাচে হুটোপুটি খাচ্ছে কিছু একটা। আঁচড়ে-খামচে ঢুকতে চাইছে ভেতরে। অথচ শহরের অন্যান্য বাড়ির ছাদের চেয়েও অনেক উঁচুতে আমার চিলেকোঠার জানালা! 

থরথর করে কেঁপে উঠলাম। বুঝতে পারছিলাম কী ঘটতে চলেছে।

আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের মূল্য কোনও না কোন ভাবে অবশ্যই মানুষকে চুকাতে হয়। মায়া জগতে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে তা হল চিরদিনের জন্য নিজের একাকীত্বকে বিসর্জন দেয়া। প্রবেশ পথের সন্ধান পাবার সাথে সাথে ছায়াসঙ্গীর আবির্ভাব ঘটে মন্ত্রোচ্চারণকারীর জীবনে। বাকিটা জীবন অশুভ সেই কায়াহীন অস্তিত্ব তাড়া করে ফিরতে থাকে তাকে। 

বইটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আর সন্দেহ রইল না।

সে রাতে প্রথম বারের মত পা রাখলাম রহস্যময় সেই জগতের প্রবেশপথে। আজব সে অভিজ্ঞতা! আমার সমগ্র মানব সত্ত্বাকে গ্রাস করে নিল সময় আর দৈবদৃষ্টির অদ্ভূত এক ঘূর্ণিপাক। 

চেতনা ফিরে পেলাম পরদিন ভোরের আলো চোখে এসে পড়ার পর।

সে দিন থেকে সম্পূর্ণ নতুন রূপে আবিষ্কার করলাম নিজেকে। চারপাশের প্রতিটা জিনিস সম্পূর্ণ নতুন করে ধরা দিল আমার চোখে। এমন কী চিলেকোঠার প্রতিটা দেয়াল, প্রতিটা তাককে পর্যন্ত মনে হল একেবারেই অন্যরকম। মনে হল, চোখ থাকতেও এতদিন দৃষ্টিহীন ছিলাম আমি। শুধু চোখ বুলিয়েই গেছি, সৃষ্টির প্রকৃত রহস্য বা তাৎপর্য বুঝতে চাইনি কখনও।

দূরত্ব বাড়তে থাকল দৈনন্দিন জীবনের সাথে আমার। উপলব্ধি করলাম, চির-চেনা জিনিস গুলিকে আর আগের মত ঠাহর করতে পারছি না।

এমন সব জিনিস দেখতে পেলাম যা আগে কখনও দেখি নি। একেবারে পাল্টে গেল আমার চিরচেনা জগৎ। বর্তমানকে মনে হতে লাগল কিছুটা অতীত আর কিছুটা ভবিষ্যতের ঘোলাটে এক সংমিশ্রণ। আচমকা পাওয়া দৈবদৃষ্টির কারণে প্রত্যেকটি চেনা-জানা বস্তুকে মনে হতে লাগল উদ্ভট আর অপ্রাকৃত। ছায়া আর কায়ার অদ্ভুত জগতে শুরু হলো আমার পথচলা। প্রতিটা নতুন নতুন প্রবেশদ্বার অতিক্রম করার সাথে সাথে সাথে গণ্ডি-বদ্ধ জগতের সাথে আমার না। চারপাশে এমন সব জিনিস দেখতে পেতাম, যা কখনও কোনও মানুষ দেখে নি। লোকের কাছ থেকে গুটিয়ে নিলাম নিজেকে, একদম কমিয়ে দিলাম কথা-বার্তা বলা। পাছে যদি মানুষ-জন মনে করে পাগল হয়ে গেছি। আমার ছায়াসঙ্গীর উপস্থিতি টের পেত শুধু কুকুররা। ফলে আমাকে দেখলে আতংকে অস্থির হয়ে যেত প্রাণিগুলো। 

একটা একটা করে দিন পার হতে থাকল। দিব্যদৃষ্টির কল্যাণে বিভিন্ন প্রাচীন বিস্মৃত গ্রন্থ খুঁজে বের করতাম আমি। হারিয়ে যাওয়া সে সব জ্ঞান আমার সামনে উন্মোচন করতো নতুন নতুন সব রহস্য। একই সাথে চালিয়ে যেতাম অপার্থিব ভ্রমণ। ধীরে ধীরে নতুন নতুন প্রবেশপথ অতিক্রম করে পৌঁছে যেতে থাকলাম নিগুঢ় বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের একেবারে গভীরে। 

এক রাতের কথা মনে পড়ে। উপাসনার জন্য মেঝেতে পাঁচটি সমকেন্দ্রিক আগুনের বৃত্ত জ্বালালাম। সবচেয়ে মাঝের বৃত্তে দাঁড়িয়ে উদাত্ত কণ্ঠে পাঠ করছিলাম টারটারিয়ান মন্ত্র (Tartary)। সহসা চারপাশের দেয়াল একেবারে গলে যেতে থাকল। কোথা থেকে এসে আছড়ে পড়ল পাশবিক অশুভ এক ঝোড়ো হাওয়া। দমকা বাতাসে পড়া শুকনো পাতার দশা হলো আমার। উড়ে যেতে থাকলাম ধূসর-রঙা অতল মহাসাগরের ওপর দিয়ে। চোখ পড়ল বহু নীচে সূক্ষ্ম কাঁটার মত নাম না জানা অসংখ্য পর্বত-চূড়া। কিছুক্ষণ পরে নেমে এল ঘন কালো অন্ধকার। পৈশাচিক রূপ নিতে থাকল অগুনতি তারকারাজির ক্ষীণ আভাটুকুও। মনে হলো যেন অনন্তকাল ধরে সুতো-ছেঁড়া ঘুড়ির মত ভেসে বেড়াচ্ছি দমকা হাওয়ায়

(Tartary=মধ্যযুগে পূর্ব ইউরোপ আর এশিয়ার মধ্যে টারটারদের অধীনে থাকা ডিনাইপার নদী থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তীর্ন অঞ্চল)

অবশেষে বহুদূরে দেখতে পেলাম সবুজ সমতল। ঠাহর হলো যেন একটা শহর দেখতে পাচ্ছি। বড় অদ্ভুত দেখতে সে শহর। শহরের সুউচ্চ টাওয়ারগুলো কেমন যেন দুমরে-মুচড়ে পাকিয়ে আছে। দালান-কোঠা গুলোর নির্মান শৈলীও কেমন যেন অশুভ। যেন কেউ নির্দয় ভাবে বাড়িগুলোকে মুচড়ে দিয়েছে। এমন বিকট শহরের কথা শোনা তো দূরের কথা, স্বপ্নেও দেখিনি। শহরটার আরও কাছে ভেসে যেতেই দেখতে পেলাম উন্মুক্ত প্রান্তরের বুকে বানানো বিশালাকায় প্রকাণ্ড এক চার-কোণা পাথুরে দালান। কেন জানি না ওটাকে দেখেই প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলাম। পাশবিক আতঙ্ক যেন খামচে ধরল আমার হৃদপিণ্ডটাকে। চেঁচা-মেচি ধ্বস্তা-ধস্তি করতে লাগলাম…। 

তারপর কী ঘটল, বলতে পারব না। যতটুকু মনে পড়ে ফাঁকা শূন্যতা গ্রাস করে নিয়েছিল চারদিক। 

সংবিৎ ফিরে পেতে নিজেকে আবিষ্কার করি আমার চিলেকোঠায়। ধিকি-ধিকি জ্বলতে থাকা অগ্নি-বৃত্তগুলোর ওপরে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছি। 

এমন না যে, সে রাতেই প্রথম আজব অভিজ্ঞতা হয়েছিল আমার। অতীতের রাতগুলোতে-ও বহু বিদঘুটে অদ্ভুত জিনিস দেখতে পেয়েছি। কিন্তু এ রকম নিখাদ আতঙ্কের শিকার এর আগে আর হই নি।

কী ছিল ওই চারকোণা দালানটিতে?

কেনই-বা এরকম প্রচণ্ড ভয় গ্রাস করে ফেলেছিল আমাকে?

ওই অদ্ভুত শহটিতেই বা কারা থাকত? 

আমাদের চেনা জানা পৃথিবীর কেউ! 

এসব প্রশ্নের উত্তর হয়ত কোনও দিনও পারব না জানতে। অবশ্য তাতে ক্ষতি নেই কোন। কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানা থাকাই ভাল।

সে রাতের অভিজ্ঞতায় অবশ্য দমে যাইনি। তবে এরপর থেকে আগের চেয়ে সতর্ক হয়ে যাই। কেননা স্বপ্ন-ভ্রমণ করতে গিয়ে যদি আত্মা আর দেহে ফিরে না আসে! বা এমন কোন জগতের মায়াজালে আটকে যাই, যেখান থেকে আর পৃথিবীতে ফিরে আসা সম্ভব না! 

এর পরেও বহুবার বেরিয়ে গেছি আত্মিক ভ্রমণে। ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠেছি তুচ্ছ এই পার্থিব জগতের যাবতীয় মায়া আর মোহ। মহাকালের স্রোতে গা ভাসিয়ে ভেসে চলেছি অজানা অচেনা রহস্যময় কোন শক্তির টানে। এর পরে পার হয়ে গেছে বহু কাল, বহু যুগ। ধীরে ধীরে সময়জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি আমি।

তাই আজকাল আর আগেকার স্মৃতি তেমন একটা মনে করতে পারি না। 

ঘোলাটে আর অস্পষ্ট মনে হয় নিজেকে। 

কেমন যেন জট পাকিয়ে যায় স্মৃতিগুলো।

                           

                 

        

      

  
          

                              

              

Comments

    Please login to post comment. Login