Posts

নন ফিকশন

ফেসবুকে টুইটারের গল্প

January 18, 2025

সাজিদ রহমান

10
View

শিরোনামেই একখান ভুল করলাম। বলতে পারেন, ইচ্ছে করেই।  দুনিয়াতে টুইটারই একমাত্র জিনিস, যে নিজে সাবেক(এক্স) হয়ে সাবেককে (এক্স) বর্তমান বানিয়ে দিয়েছে। টুইটার আর টুইটার নেই, হয়ে গেছে এক্স।

সেই এক্স নিয়ে আজকের গল্প। আপনারা যাতে অন্য এক্স ভেবে না বসেন, তার জন্য ব্যখ্যাটা আগে দিয়ে রাখলাম। আপনিও জানেন, বর্তমানে বাস করে কার ঘাড়ে একাধিক মুণ্ড, কে বা এক্সের গল্প বলবে! আর কেউ যদি ভুলে গল্প করে ফেলে, বাড়িতে নেড়ি কুত্তার জায়গা হতে পারে, আপনাকে বহু দূর থেকে সেই অধিকারের জন্য ঘেউ ঘেউ করতে হবে। এরপর!!  সূর্যের তাপে এন্টার্টিকার বরফ গলতে পারে, কিন্তু তাঁরে টলাতে পারবেন না। সেই বিপদজনক পথ পরিহার করাই ভালো। সবচেয়ে ভালো, অন্য গল্পে চলে যাওয়া। আমি সেই পথেই পা বাড়ালাম।

অনেক আগের কথা। ঢাকার উত্তরা থাকি। উচ্চমাধ্যমিকে পড়ি। কাঁচা বয়স, তবে কচি খোকা নই। এক বন্ধুর সাথে কি একটা বিষয় নিয়ে তুমুল বাক বিতণ্ডা শুরু হয়। এক ফাকে যেই তাঁরে বললাম, যাও মিয়া, তোমরা টিকেট না কাইট্টা মাইনসের সিট দখল করে ট্রেন জার্নি কর? তোমরা আবার কেমন ভালো? আমার জানা আছে। এই কথা বলার পর সে বেশ লজ্জা পায়। বাকবিতণ্ডা থেমে যায়।

সেই ঘটনা নিয়ে সামান্য বলি। তাইলে আপনাদের বুঝে আসবে। চাপাইয়ের ভাইদের পাশতে সুবিধা হবে। উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী ট্রেন ফুলছড়ি/বালাশি ঘাট হয়ে ফেরি চেপে বাহাদুরাবাদ ঘাটে গিয়ে ওপারের ট্রেনে উঠতে হয়। ফের সেই ট্রেনের সিটে বসতে গেলেই ঝামেলা শুরু হত। এটা চলত জামালপুর, ময়মনসিংহ, গফরগাঁও পর্যন্ত। যার বৈধ টিকেট আছে তাঁরেই নানা প্রশ্ন করে নাজেহাল করে ছাড়ত। আসলে চলত, নার্ভ টেস্ট। যারটা শক্ত, তাকে সিট ছেড়ে দিত। যারা ফেল করত, পকেটে বৈধ টিকেট নিয়ে, বিধাতার কাছে নালিশ দিয়ে, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢাকা পৌঁছে যেত।

সেই দেখাই শেষ দেখা নয়। যত দিন গড়াইছে সেই জিনিস আরও প্রবল প্রকট বিশাল আকারে ফিরে এসেছে। হলে টিভি দেখতে গেলে ভালো সিটে বসা চাই। দর্শক সারিতে থাকার কথা, অথচ মঞ্চে গিয়ে হাজির। বিশেষ ব্যক্তির সাথে ছবি তুলতে ঠিক তাঁর পাশে থাকা চাই। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি থেকে  বসার দূরত্বের সাথে সম্মানের নিবিড় সম্পর্ক।

এই জীবনে এরকম দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গেছে। এর মাঝে একটা ঘটনা বলি। একটা ব্রিজ সাইটে সরকারের উপর মহলের কর্তা এসেছেন। ওরকম লোক সাইটে আসলে অনেক লোক চলে আসে। বসার জন্য কয়েকটা চেয়ার আনা হয়েছে। সাইট ঘুরে সেখানে পৌঁছানো মাত্র এক বিশেষ শ্রেণির লোক পটাপট চেয়ার দখল করে বসে পড়ে। চেয়ারে বসে এমন ভাব করল, যেন দুনিয়ার কিছুই বুঝেন না। হক মওলার নির্দেশে সেখানে বসে আছেন মাত্র। সেই থেকে ভিড় এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। এড়ানো না গেলে দাঁড়িয়ে থাকাকে কপালের লেখা ভেবে নেই।

আমি এখন ভাবি। উত্তরার সেই বন্ধু কত ভালো। এলাকার মানুষের সিট দখলে তাঁর ব্যক্তিগত দায় না থাকলেও সে লজ্জায় নাজুক ছিল। অথচ চেয়ার দখল, দখল করে বসলে চেয়ার গরম, এরপর সেই চেয়ার না ছাড়ার আকুল ব্যাকুল চেষ্টার কমতি থাকে না। কোন কোন চেয়ারের কথা বলবো, সবই আপনাদের জানা। মনে মনে আপনারা ধরে নেন।

টুইটারের গল্প বলতে চেয়েছি, সেখানে যাই। ফেসবুকে থাকে আমার মতই মফিজরাই। আর স্মার্ট লোকেরা এক্সে (টুইটারে) বসবাস করে। জীবনে বরাবর পিছিয়ে থাকি, পিছিয়ে থেকেই আনন্দ পাই। তবুও কিছুদিন আগে কি একটা খায়েস হল, একাউন্ট খুলে বসলাম। যার ৮ এ হয়না, তাঁর আশিতেও নাকি হয় না। আমার ওসব আর হয় না। তাও দুয়েক দিন ঢু মারি।

তখন খেয়াল করি। এক্সের প্রথম পোস্টটাই থাকে মাস্কের। মানে টেঁসলার মালিক, এক্সের মালিক এলন মাস্কের। এরপর থাকে তাঁর দোস্ত ডোনাল্ড ট্রাম্পের। এরপর জায়গা থাকলে অন্যদের।

চেয়ার দখলের খেলা কোথায় নেই! যার যা ইচ্ছে দখল করুক। আমার তাতে কি? কিন্তু দুঃখ একটাই, এতটুকু বুঝতেই মাথার চুল পেকে গেলো!!

Comments

    Please login to post comment. Login