ফাইনাল পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে পারলে একটা সাইকেল কিনে দিতে হবে। এই দাবি অনেক দিন আগের। সাফিন তার শর্ত পূরণ করেছে।
৪/৫ বছর আগের একটা সাইকেল আছে। বেশ জরা-জীর্ণ অবস্থা। চালাতে গেলে চেন পড়ে যায়। ভালো থাকলে ওটাই চালাত। নতুন করে সাইকেল কিনে চাইতোনা। কথায় যুক্তি ও কণ্ঠে দরদ ছিল। আমি কনভিন্সড।
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম, সাইকেল কিনে দিবো। সাফিন ঈদ পরবীতে পাওয়া সালামি একটা টিনের ব্যাংকে জমা রাখে। আমি বললাম, তুমি চাইলে নিজের টাকায় কিনতে পারো? কিভাবে জানতে চাইলে পদ্ধতি বাতলে দিলাম। সাইকেলের যা দাম হবে তার একটা অংশ সে দিবে, বাকীটা হাওলাত হিসেবে দিবো। সে রাজি। বললাম, বড় হয়ে ইনকাম করা শুরু করলে আমার টাকা ফেরত দিতে হবে।
সাফিন বললো, ওর তো মনে থাকবে না। আমি বললাম, মনে রাখতে হবে।
তারপরেও কয়েকদিন সময় নিলাম। ওর মনস্তত্ব বোঝার জন্য।
দুপুরে খেতে আসলে বলবে, বাবা কবে যাবো?
তোমার তো বিকেলে টিচার আসে। শনিবারে যাই। আমি জবাব দেই।
গত মঙ্গলবার বলল, আগামী কাল (বুধবার) টিচার আসবে না। পরে ওদের মায়ের কাছে শুনলাম, টিচারকে বলেছে, বুধবার আসলে খুব কষ্ট পাবে। টিচারের জন্য সাইকেল কেনা পিছিয়ে যাচ্ছে। ঐ কথা শুনে টিচারও ছুটি দিয়েছেন। এরপর আর কোন অজুহাত চলে না।
অবশেষে গত বুধবার সাফিন (৩০%) ও আমার (৭০%) যৌথ প্রয়াসে সাইকেল কেনা হল। অনেকটা পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেলে। সাইকেল তার নিজের টাকায় কেনা, এটার একটা আলাদা মূল্য আছে। সাইকেল পরিচর্যা, চালানোর সময়ে বিশেষ মমত্ববোধ কাজ করবে। তেমনি, এতে অন্য কারো শেয়ার আছে সেটাও মাথায় থাকলো।
পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও সম্পুর্ন ফ্রি। এরপর তাকে নিজের পয়সায় পড়তে হয়। বাবার টাকা থাকলেও সরকারের কাছ থেকে লোন নেয়ার জন্য উৎসাহ দেয়। পড়াশুনা শেষ করে আয় করা শুরু করলে (নুন্যতম বেতন লেভেল পার হলে) সরকারকে সেই লোণ শোধ করে দিতে হয়। তাকে এই টাকা পরিশোধ করতে হবে। আমি দেখেছি, লোণ নিয়ে পড়ার সময় তার মধ্যে এক ধরণের দায়িত্ববোধ তৈরি করে। পড়াশুনার ফাকে কাজ করে নিজে চলে। আয় ইনকাম শুরু করলে টাকা শোধ দেয়।
শুরুতে মনে হত, বেশ অন্যায় কাজ। কিন্তু পরে বুঝে আসে, একজন নাগরিককে দায়িত্ববান, দায়িত্বশীল আচরণ শেখাতে এর গুরুত্ব অনেক। সারা দুনিয়াতে এই মডেল খুব জনপ্রিয় ও সফল।