তুমি কী একাকী বিকালের সঙ্গী হবে?
রোদের তেজ কমে আসতে শুরু করেছে, আকাশের গায়ে নরম আলোর ঝলকানি। প্রতিদিন বিকেলগুলো যেনো এমনই একঘেয়ে রূপ নিয়ে আসে। শ্রেয়া জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দেখছে এই নিরব প্রকৃতি, তবে তার মনের ভেতরটা যেনো উল্টো। মনের গভীরে এক চিরন্তন একাকীত্বের কষ্ট তাকে ঘিরে ধরেছে। জীবনটা বেশ একাকী হয়ে গেছে তার।
অনেকেই তাকে প্রশ্ন করে, "কেন তুমি এখনো সিঙ্গেল?" - কিন্তু সে কখনোই সঠিক উত্তর খুঁজে পায় না। মানুষ যেনো ভাবতেই পারে না যে কারো একাকীত্ব হয়তো ইচ্ছাকৃত নয়, বরং পরিস্থিতির শিকার।
একদিন শ্রেয়া খেয়াল করলো, তার বাড়ির পাশের নতুন প্রতিবেশী তপনদা তাকে অনেকবার খেয়াল করেছেন। তপনদা একজন মধ্যবয়সী মানুষ। মুখে সবসময়ই এক ধরনের শান্তির ছাপ। বয়সের ভার কিছুটা চোখে পড়লেও তার চোখের ঝিলিকটা অদ্ভুত।
তপনদা একদিন বিকেলে তার সাথে দেখা করতে এলেন। হাতে এক কাপ চা এবং কিছু বিস্কুট নিয়ে তিনি বসলেন। হঠাৎ করেই বললেন, "তুমি কী একাকী বিকালের সঙ্গী হবে?"
শ্রেয়ার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো, একটু অবাক হয়ে বললো, "আমি? কেন?"
তপনদা হেসে বললেন, "তোমার মতো অনেকের জীবনেই একাকীত্ব আছে, আমি জানি। আমরা কেউ কেউ হয়তো এই একাকীত্ব নিয়ে বেঁচে থাকতে শিখেছি, কিন্তু একে ভাগ করে নিলে জীবনটা কিছুটা হলেও সহজ হয়ে যায়।"
এরপর প্রতিদিনের বিকেলগুলোতে তারা একসাথে বসে চা খেতো, গল্প করতো। তপনদা তাকে বলতেন তার জীবনের গল্প, তার সুখ-দুঃখ। আর শ্রেয়া ধীরে ধীরে বুঝতে পারলো, জীবনে একাকীত্ব এড়ানো যায় না, তবে তার সঙ্গী খুঁজে পেলে সেই একাকীত্বও আর একাকীত্ব মনে হয় না।
একদিন শ্রেয়া সাহস করে তপনদাকে বললো, "তপনদা, আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি না থাকলে আমার বিকেলগুলো এমন প্রাণবন্ত হতো না।"
তপনদা হেসে বললেন, "তুমি আমাকে সঙ্গী বানিয়েছো, এটাই আমার কাছে বড় পাওনা। তুমি কি চাও আমাদের এই বিকেলের সঙ্গ চিরকালের জন্য থাকুক?"
শ্রেয়ার চোখে পানি জমে এলো। এই একাকীত্বের পৃথিবীতে, একজন সঙ্গী যেমন তপনদা পেয়েছে তা যেন তার কাছে জীবনের নতুন অর্থ এনে দিয়েছে।
শেষ।