এই নাও বৃষ্টি, এই নাও সায়ন।বসন্তের দিন। সকালটা রোদ ঝলমলে ছিল। বিকাল হতে না হতেই মেঘ কালো করে দমকা বাতাস আর বৃষ্টি। অনেক বৃষ্টি হয়ে গেছে। রাস্তায় জল বেধে গেছে। বৃষ্টি টিপ টিপ করে এখনো হচ্ছে। প্রজ্ঞা ব্যলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। হাতে চায়ের কাপ। হাতের নড়াচড়া দেখলে অস্থিরতা বোঝা যাবে স্পষ্ট। অপেক্ষা করছে। ও ধরে নিয়েছে যার আসার কথা তিনি এই বৃষ্টিতে জল ভেংগে এত দূর আসবেন না। তারপর ও মন চাইছে উনি আসুক। তাই রাস্তার দিকে চেয়ে অপেক্ষা কইরে আছে। যখন প্রায় আশা ছেড়ে দিয়েছিল। ছাতা মাথায় দিয়ে কাংখিত ব্যাক্তিকে আসতে দেখলো প্রজ্ঞা। দৌড়ে নিচে গেল প্রজ্ঞা।
প্রজ্ঞা: আসুন আসুন, ভেতরে আসুন ঈশিক দা। আমি তো ভেবেছি আপনি আসবেনই না- যে বৃষ্টি।
ঈশিক দা: কাজে বের হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কাজ শেষ করে তোমার এখানে ঘুরে যাব। বৃষ্টিতে আটকে গেলাম।
প্রজ্ঞা: বেশ ভিজে গেছেন। আসুন হাত-পা ধুয়ে, গা মুছে নি।
ঈশিক দা সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বাইরের ইউনিভারসিটি থেকে পিএইচডি নিয়ে ফিরেছেন। দেশে এসে কিছু দিন চাকুরী করেছিলেন। পরে সব ছেড়ে দিয়ে পর্যটক হয়েছে। ঘুরে বেড়ানো তার নেশা। বিয়ে করেন নি বাবার সম্পত্তি হিসাবে একটা বাড়ি পেয়েছেন। তার ভাড়া আর তার ভাই-বোনদের সাহায্য চলেন তিনি।
ঈশিকদার প্রায় বিশ মিনিট লাগলো ফ্রেশ হতে। সোফায় বসে গা এলিয়ে দিলেন। প্রজ্ঞা চা দিল।ঈশিক দা বললেন, বল তোমার কাহিনী শুনি। যদি কোন হেল্প করতে পারি।
প্রজ্ঞা: কাহিনী অনেক লম্বা। ধর্য্য ধরে শুনতে হবে।
ঈশিক দা সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে হাত দিয়ে বলার জন্য ইশারা করলেন।
প্রজ্ঞা: আমার বাবা খুবই ভাল মানুষ। খুবই ধার্মিক মানুষ। ছোটবেলা থেকেই, মানে আমার বোঝার পর থেকেই দেখে আসছি আমার বাবা আমাকে পছন্দ করেন না। খুবই ছোটবেলা থেকে আমার বাবার যত স্মৃতি আছে বাবাকে ঘিরে সবটাই শাস্তি দেবার। বয়স যখন আমার ৮-৯ এমন ও হয়েছে বাবা আমাকে সারাদিন কিছু খেতে না দিয়ে বাথরুমে আটকে রেখেছে। আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছি। দিনের পর পর দিন এরম অত্যাচার চলেছে আমার উপর।
একরাশ ধোয়ার ওপার থেকে ঈশিক দা বললেন, তোমার মা কিছু বলতেন না?
প্রজ্ঞা : কিছু বলতে গেলে মার উপর ও চলতো নির্যাতন।
আমি ভুল করলেই বাবা কঠিনতম শাস্তি দিতেন। আমি মানুষিক ভাবে ভেংগে পড়ি আসতে আসতে। কয়কেবার সুইসাইড করার চেষ্টা করি।
ঈশিকদা : স্বাভাবিক।
তারপর?
প্রজ্ঞা: ক্লাশ এইটের দিকে আমার সাথে পরিচয় হয় আমার বর্তমান বয়ফ্রেন্ডের অনিন্দ্যর সাথে। ও আমাকে সকল রকম সাপোর্ট দিত।আমি মানুষিক শক্তি পেতাম ওর থেকে। ও আমাকে দিনের পর দিন বুঝাইছে। আগলে রাখছে। আসতে আসতে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়। আমি ওর সাথে সারাজীবন থাকার জন্য রাজি হয়ে যাই।
এতগুলো বছর...
ঈশিকদা: কোন ক্লাশে ওর সাথে রিলেশনে গেলে?
প্রজ্ঞা: ক্লাশ টেনে থাকতে।
এতগুলা বছর আমাদের ভেতর কোন সমস্যা ছিল না। হ্যাপি কাপল ছিলাম।
ঈশিকদা বলে উঠলেন, ওরা সুখের জন্য চাহে প্রেম প্রেম মেলে না।
তারপর বললেন, দুঃখিত, তুমি বলে যাও।
প্রজ্ঞা: জব পাবার পর ও ঢাকা চলে যায়। আমি অবশ্য চাইনি ও চলে যাক। তারপর ও ওর ভাল হবে ভেবে রাজি হই। আমার জব হয়। সেখানে পরিচয় হয় আবিরের সাথে। হাসিখুশি,চঞ্চল। আমাকে অফিসের পর পৌঁছে দিয়ে গেছে। কথাও হত ফোনে। অনিন্দ্যও জানতো।
ঈশিকদা : তো তোমার এই কলিগদের সম্পর্কে অন্যদের কি মতামত? কেমন ছেলে?
প্রজ্ঞা: অন্যরা একটু জেলাস ছিল। সবাই বলে ওর নাকি অন্যগুলো সম্পর্ক আছে। সুন্দর দেখতে থাকতেও পারে।
ঈশিকদা: হুম।
প্রজ্ঞা: আবির অফিসের জব ছেড়ে দিয়েছে গত সপ্তাহে। তারপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ। আমি প্রথম দু একদিন ঠিক ছিলাম। ফোন দিয়েছি। রিং হয় তোলেনি। পরে ব্লক করছে। আমাদের মধ্যে এমন কিছু হয় নি যাতে ও এমন করবে। আমি কেন জানি ওর সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি। অনিন্দ্য জানে এই কথা ও আমাকে অনেক বুঝিয়েছে। আমি ওর কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছি।
ঈশিকদা: হুম।
প্রজ্ঞা: আমার এমন কেন হচ্ছে?
ঈশিকদা: দেখো তুমি যেহেতু ছোটবেলা থেকে পরিবার বা বিশেষ করে বাবার কাছ থেকে যত্ন পাওনি। তোমার মধ্যে অন্যকে যত্ন করার একটা টেনডেন্সি তৈরি হয়েছে। মেয়েদের ছোটবেলাটা বাবাকে ঘিরে হয়। তুমি বাবাকে তেমন পাওনি সেই অভাব থেকে হয়তো তুমি অন্যকে এত কেয়ার করতে চাও। তোমার ফ্রেন্ড ও আমাকে বলছিল যে, তুমি তার ও বেশ খেয়াল রাখ।
তবে তোমাকে একটু ম্যাচিউর হতে হবে। যে তোমার সাথে কোন ভাবে যুক্ত থাকতে চাইছে না তার সাথে যোগাযোগ নাই রাখলে। হুম?
প্রজ্ঞা: হা। তা তো।
ঈশিকদা: নিজেকে শান্ত কর। দরকার হলে ঢাকা থেকে ঘুরে এসো।
ঈশিকদা উঠে দাঁড়ালেন। প্রজ্ঞা কি যেন বলতে যাচ্ছিল। উনি মোটামুটি উপেক্ষা করেই চলে গেলেন।
প্রজ্ঞা আবার এসে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো। সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে এসেছে। ঈশিকদা চলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকলো।
চার-পাচ দিন পর। ঈশিকদা তখন ঘুমাচ্ছেন। ফোনের ভাইব্রেশানে ঘুম ভাংলো। প্রজ্ঞার নম্বর।
ঈশিকদা : হা,প্রজ্ঞা বলো।
প্রজ্ঞা: দাদা আরো কিছু কথা আপনাকে বলার আছে।
ঈশিকদা: দেখো আমার মনে যা হয়েছে বলে দিয়েছি।
এরপর আর কোন হেল্প আমি তোমাকে করতে পারবো না।
তোমাকেই তোমার সাহায্য করতে হবে।
ঈশিকদা ফোন কানেকশন কেটে দিলেন।
আরো দুদিন পর প্রজ্ঞা ঈশিকদা কে ফোন করলো।
ঈশিকদা: বলো।
প্রজ্ঞা: দাদা প্লিজ আমার কথা শুনুন।
ঈশিকদা: বলো।
প্রজ্ঞা: এর মাঝে আবির ফোন ধরেছিল দুদিন। আমি কথা বলেছি। মন শান্ত ছিল। আবার ও ফোন ধরছে না। একটু কথা বলার জন্য মন ছটফট করছে। আবার গিলটি ফিল হচ্ছে এই ভেবে যে, অনিন্দ্যকে ঠকাচ্ছি। আমার ভালবাসা-যত্ন কেবল ওর জন্য হওয়া উচিত।আমি ওর কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছি।
কি করবো বুদ্ধি দেন।
ঈশিকদা: দেখ আমি তোমাকে এখন যা বলবো তাতে তোমার খারাপ লাগবে, তুমি রাগও করতে।কিন্তু আমি যেটা বুঝেছি তোমার স্টোরি শুনে সেটা সত্য তোমাকে বলে দেয়া উচিত। দেখো তোমাদের মানে অনিন্দ্য আর তোমার সম্পর্কটা শুরু হইছে কষ্ট শেয়ারিং দিয়ে। ও তোমাকে খারাপ সময়ে সাপোর্ট দিছে, সেই নির্ভরতার উপর তোমাদের সম্পর্ক দাঁড়িয়ে ছিল। মাঝে আবির চলে এল। তার ব্যাপারে তুমি বলেছো, আর পরে খোজ নিয়ে জেনেছি তাতে সে নারীদের কাছে সে বেশী জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয়। তুমি ও ওর প্রতি আকৃষ্ট-শারীরিক ভাবে বা রোমান্টিক ভাবে।
ফলে তুমি আবিরকে ভুলতে পারছো না।
প্রজ্ঞা: আপনি বলতে চাইছেন আমি অনিন্দ্যকে ভালবাসি না!
ঈশিকদা: তার উপর তোমার নির্ভরতা আছে। কিন্তু আবিরের প্রতি তোমার রোমান্টিক আকর্ষণ আছে।এইটুকুই বলার আমার। ও আরেকটা কথা, রোমান্টিক আকর্ষণ না থাকলে সম্পর্ক টেকে না।
ওপাশ থেকে ফোন কাটার শব্দ হল।
বেশ কয়েক বছর পর। সন্ধ্যায় বের হয়েছেন *দা। কাঁচাবাজার করবেন। এখানে সন্ধ্যায় বসে কাঁচাবাজার। পরের দিনেরটা আগের দিন কিনে রাখে লোকরে।
বাজারের মুখেই প্রজ্ঞার সাথে দেখা। প্রজ্ঞার সাথে লম্বা সুদর্শন একটা ছেলে।
ঈশিকদা: আরে প্রজ্ঞা যে। কেমন আছো?
প্রজ্ঞা: ভাল দাদা। আপনি ভাল আছেন।
তারপর প্রজ্ঞা পাশের ছেলেটাকে দেখিয়ে বললো, আমার হাসবেন্ড।
ঈশিকদা হাত বাড়িয়ে বললেন, আমি ঈশিক।
প্রজ্ঞার হসবেন্ড: আমি আবির।
ঈশিকদা: পরিচিত হয়ে ভাল লাগলো। থাকো তোমরা আমার একটু ব্যস্ততা আছে।
ঈশিকদা লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেলেন।
প্রজ্ঞা: আসুন আসুন, ভেতরে আসুন ঈশিক দা। আমি তো ভেবেছি আপনি আসবেনই না- যে বৃষ্টি।
ঈশিক দা: কাজে বের হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কাজ শেষ করে তোমার এখানে ঘুরে যাব। বৃষ্টিতে আটকে গেলাম।
প্রজ্ঞা: বেশ ভিজে গেছেন। আসুন হাত-পা ধুয়ে, গা মুছে নি।
ঈশিক দা সাইকোলজি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। বাইরের ইউনিভারসিটি থেকে পিএইচডি নিয়ে ফিরেছেন। দেশে এসে কিছু দিন চাকুরী করেছিলেন। পরে সব ছেড়ে দিয়ে পর্যটক হয়েছে। ঘুরে বেড়ানো তার নেশা। বিয়ে করেন নি বাবার সম্পত্তি হিসাবে একটা বাড়ি পেয়েছেন। তার ভাড়া আর তার ভাই-বোনদের সাহায্য চলেন তিনি।
ঈশিকদার প্রায় বিশ মিনিট লাগলো ফ্রেশ হতে। সোফায় বসে গা এলিয়ে দিলেন। প্রজ্ঞা চা দিল।ঈশিক দা বললেন, বল তোমার কাহিনী শুনি। যদি কোন হেল্প করতে পারি।
প্রজ্ঞা: কাহিনী অনেক লম্বা। ধর্য্য ধরে শুনতে হবে।
ঈশিক দা সিগারেট ধরিয়ে নিয়ে হাত দিয়ে বলার জন্য ইশারা করলেন।
প্রজ্ঞা: আমার বাবা খুবই ভাল মানুষ। খুবই ধার্মিক মানুষ। ছোটবেলা থেকেই, মানে আমার বোঝার পর থেকেই দেখে আসছি আমার বাবা আমাকে পছন্দ করেন না। খুবই ছোটবেলা থেকে আমার বাবার যত স্মৃতি আছে বাবাকে ঘিরে সবটাই শাস্তি দেবার। বয়স যখন আমার ৮-৯ এমন ও হয়েছে বাবা আমাকে সারাদিন কিছু খেতে না দিয়ে বাথরুমে আটকে রেখেছে। আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে গেছি। দিনের পর পর দিন এরম অত্যাচার চলেছে আমার উপর।
একরাশ ধোয়ার ওপার থেকে ঈশিক দা বললেন, তোমার মা কিছু বলতেন না?
প্রজ্ঞা : কিছু বলতে গেলে মার উপর ও চলতো নির্যাতন।
আমি ভুল করলেই বাবা কঠিনতম শাস্তি দিতেন। আমি মানুষিক ভাবে ভেংগে পড়ি আসতে আসতে। কয়কেবার সুইসাইড করার চেষ্টা করি।
ঈশিকদা : স্বাভাবিক।
তারপর?
প্রজ্ঞা: ক্লাশ এইটের দিকে আমার সাথে পরিচয় হয় আমার বর্তমান বয়ফ্রেন্ডের অনিন্দ্যর সাথে। ও আমাকে সকল রকম সাপোর্ট দিত।আমি মানুষিক শক্তি পেতাম ওর থেকে। ও আমাকে দিনের পর দিন বুঝাইছে। আগলে রাখছে। আসতে আসতে আমাদের মধ্যে সম্পর্ক প্রগাঢ় হয়। আমি ওর সাথে সারাজীবন থাকার জন্য রাজি হয়ে যাই।
এতগুলো বছর...
ঈশিকদা: কোন ক্লাশে ওর সাথে রিলেশনে গেলে?
প্রজ্ঞা: ক্লাশ টেনে থাকতে।
এতগুলা বছর আমাদের ভেতর কোন সমস্যা ছিল না। হ্যাপি কাপল ছিলাম।
ঈশিকদা বলে উঠলেন, ওরা সুখের জন্য চাহে প্রেম প্রেম মেলে না।
তারপর বললেন, দুঃখিত, তুমি বলে যাও।
প্রজ্ঞা: জব পাবার পর ও ঢাকা চলে যায়। আমি অবশ্য চাইনি ও চলে যাক। তারপর ও ওর ভাল হবে ভেবে রাজি হই। আমার জব হয়। সেখানে পরিচয় হয় আবিরের সাথে। হাসিখুশি,চঞ্চল। আমাকে অফিসের পর পৌঁছে দিয়ে গেছে। কথাও হত ফোনে। অনিন্দ্যও জানতো।
ঈশিকদা : তো তোমার এই কলিগদের সম্পর্কে অন্যদের কি মতামত? কেমন ছেলে?
প্রজ্ঞা: অন্যরা একটু জেলাস ছিল। সবাই বলে ওর নাকি অন্যগুলো সম্পর্ক আছে। সুন্দর দেখতে থাকতেও পারে।
ঈশিকদা: হুম।
প্রজ্ঞা: আবির অফিসের জব ছেড়ে দিয়েছে গত সপ্তাহে। তারপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ। আমি প্রথম দু একদিন ঠিক ছিলাম। ফোন দিয়েছি। রিং হয় তোলেনি। পরে ব্লক করছে। আমাদের মধ্যে এমন কিছু হয় নি যাতে ও এমন করবে। আমি কেন জানি ওর সাথে কথা বলার জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছি। অনিন্দ্য জানে এই কথা ও আমাকে অনেক বুঝিয়েছে। আমি ওর কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছি।
ঈশিকদা: হুম।
প্রজ্ঞা: আমার এমন কেন হচ্ছে?
ঈশিকদা: দেখো তুমি যেহেতু ছোটবেলা থেকে পরিবার বা বিশেষ করে বাবার কাছ থেকে যত্ন পাওনি। তোমার মধ্যে অন্যকে যত্ন করার একটা টেনডেন্সি তৈরি হয়েছে। মেয়েদের ছোটবেলাটা বাবাকে ঘিরে হয়। তুমি বাবাকে তেমন পাওনি সেই অভাব থেকে হয়তো তুমি অন্যকে এত কেয়ার করতে চাও। তোমার ফ্রেন্ড ও আমাকে বলছিল যে, তুমি তার ও বেশ খেয়াল রাখ।
তবে তোমাকে একটু ম্যাচিউর হতে হবে। যে তোমার সাথে কোন ভাবে যুক্ত থাকতে চাইছে না তার সাথে যোগাযোগ নাই রাখলে। হুম?
প্রজ্ঞা: হা। তা তো।
ঈশিকদা: নিজেকে শান্ত কর। দরকার হলে ঢাকা থেকে ঘুরে এসো।
ঈশিকদা উঠে দাঁড়ালেন। প্রজ্ঞা কি যেন বলতে যাচ্ছিল। উনি মোটামুটি উপেক্ষা করেই চলে গেলেন।
প্রজ্ঞা আবার এসে ব্যালকনিতে দাঁড়ালো। সন্ধ্যা গাঢ় হয়ে এসেছে। ঈশিকদা চলে যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকলো।
চার-পাচ দিন পর। ঈশিকদা তখন ঘুমাচ্ছেন। ফোনের ভাইব্রেশানে ঘুম ভাংলো। প্রজ্ঞার নম্বর।
ঈশিকদা : হা,প্রজ্ঞা বলো।
প্রজ্ঞা: দাদা আরো কিছু কথা আপনাকে বলার আছে।
ঈশিকদা: দেখো আমার মনে যা হয়েছে বলে দিয়েছি।
এরপর আর কোন হেল্প আমি তোমাকে করতে পারবো না।
তোমাকেই তোমার সাহায্য করতে হবে।
ঈশিকদা ফোন কানেকশন কেটে দিলেন।
আরো দুদিন পর প্রজ্ঞা ঈশিকদা কে ফোন করলো।
ঈশিকদা: বলো।
প্রজ্ঞা: দাদা প্লিজ আমার কথা শুনুন।
ঈশিকদা: বলো।
প্রজ্ঞা: এর মাঝে আবির ফোন ধরেছিল দুদিন। আমি কথা বলেছি। মন শান্ত ছিল। আবার ও ফোন ধরছে না। একটু কথা বলার জন্য মন ছটফট করছে। আবার গিলটি ফিল হচ্ছে এই ভেবে যে, অনিন্দ্যকে ঠকাচ্ছি। আমার ভালবাসা-যত্ন কেবল ওর জন্য হওয়া উচিত।আমি ওর কাছে ছোট হয়ে যাচ্ছি।
কি করবো বুদ্ধি দেন।
ঈশিকদা: দেখ আমি তোমাকে এখন যা বলবো তাতে তোমার খারাপ লাগবে, তুমি রাগও করতে।কিন্তু আমি যেটা বুঝেছি তোমার স্টোরি শুনে সেটা সত্য তোমাকে বলে দেয়া উচিত। দেখো তোমাদের মানে অনিন্দ্য আর তোমার সম্পর্কটা শুরু হইছে কষ্ট শেয়ারিং দিয়ে। ও তোমাকে খারাপ সময়ে সাপোর্ট দিছে, সেই নির্ভরতার উপর তোমাদের সম্পর্ক দাঁড়িয়ে ছিল। মাঝে আবির চলে এল। তার ব্যাপারে তুমি বলেছো, আর পরে খোজ নিয়ে জেনেছি তাতে সে নারীদের কাছে সে বেশী জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয়। তুমি ও ওর প্রতি আকৃষ্ট-শারীরিক ভাবে বা রোমান্টিক ভাবে।
ফলে তুমি আবিরকে ভুলতে পারছো না।
প্রজ্ঞা: আপনি বলতে চাইছেন আমি অনিন্দ্যকে ভালবাসি না!
ঈশিকদা: তার উপর তোমার নির্ভরতা আছে। কিন্তু আবিরের প্রতি তোমার রোমান্টিক আকর্ষণ আছে।এইটুকুই বলার আমার। ও আরেকটা কথা, রোমান্টিক আকর্ষণ না থাকলে সম্পর্ক টেকে না।
ওপাশ থেকে ফোন কাটার শব্দ হল।
বেশ কয়েক বছর পর। সন্ধ্যায় বের হয়েছেন *দা। কাঁচাবাজার করবেন। এখানে সন্ধ্যায় বসে কাঁচাবাজার। পরের দিনেরটা আগের দিন কিনে রাখে লোকরে।
বাজারের মুখেই প্রজ্ঞার সাথে দেখা। প্রজ্ঞার সাথে লম্বা সুদর্শন একটা ছেলে।
ঈশিকদা: আরে প্রজ্ঞা যে। কেমন আছো?
প্রজ্ঞা: ভাল দাদা। আপনি ভাল আছেন।
তারপর প্রজ্ঞা পাশের ছেলেটাকে দেখিয়ে বললো, আমার হাসবেন্ড।
ঈশিকদা হাত বাড়িয়ে বললেন, আমি ঈশিক।
প্রজ্ঞার হসবেন্ড: আমি আবির।
ঈশিকদা: পরিচিত হয়ে ভাল লাগলো। থাকো তোমরা আমার একটু ব্যস্ততা আছে।
ঈশিকদা লম্বা লম্বা পা ফেলে চলে গেলেন।