
অরিন্দম চৌধুরী একজন প্রত্নতত্ত্ববিদ। ইতিহাস আর রহস্য তার জীবনের দুই প্রধান অবলম্বন। বহু পুরনো দুর্গ, প্রাসাদ আর নিঃসঙ্গ অট্টালিকাগুলোতে তার পা পড়েছে, আর সেখান থেকেই উঠে এসেছে অনেক বিস্ময়কর তথ্য। তবে আজ সে এমন এক রহস্যের সামনে দাঁড়িয়ে আছে, যা তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হতে চলেছে।
কলকাতার এক প্রাচীন বাড়ির কথা সে শুনেছিল বহু আগে। বাড়িটি এখন ভগ্নপ্রায়, গাছপালার আড়ালে হারিয়ে গেছে, যেন এক বিস্মৃত অতীত। কেবল স্থানীয় বৃদ্ধরা বলে, সেখানে কেউ গেলে আর ফিরে আসে না। অরিন্দম এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করে না, তাই সে একদিন সন্ধ্যায় একা চলে এলো সেই বাড়িতে।
বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই অদ্ভুত এক অনুভূতি হল। চারপাশটা একেবারে নিস্তব্ধ, যেন এই জায়গাটা বহুদিন ধরে ঘুমিয়ে আছে। দরজার হাতল ছুঁতেই মনে হল, যেন কেউ ওর গায়ে নিঃশ্বাস ফেলল। মুহূর্তের মধ্যে কাঁপুনি উঠল শরীরে, কিন্তু সে নিজেকে সামলে নিল।
অন্ধকার বারান্দা পেরিয়ে অরিন্দম ঢুকে পড়ল বিশাল হল ঘরে। পুরনো আসবাব, ছিঁড়ে যাওয়া পর্দা, আর ধুলো জমে থাকা মেঝে—সবকিছুতেই এক অনাদৃত শূন্যতা। হঠাৎ কোথাও থেকে এক নারীর হাসি শোনা গেল।
সেই হাসিটা যেন বাতাসে ভাসছিল—ধীরে ধীরে জোরে হচ্ছে, আবার মিলিয়ে যাচ্ছে। অরিন্দম এক ঝটকায় পেছন ফিরে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। সে মনে মনে নিজেকে বোঝাল, হয়তো বাতাসের শব্দ ভুল শুনছে।
কিন্তু ঠিক তখনই আবার সেই হাসি শোনা গেল, এবার আরও কাছে থেকে।
অরিন্দমের গা ঠান্ডা হয়ে গেল। সে পকেট থেকে টর্চ বার করল, আলো ফেলতেই দেখল, সামনের দেওয়ালে ছায়ামূর্তির প্রতিফলন। সে আস্তে আস্তে আলো উপরে তুলল, আর তখনই তার চোখে পড়ল এক অদ্ভুত দৃশ্য—
সামনের দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছে এক রহস্যময় নারী!
নারীর পরনে সাদা শাড়ি, মাথার চুল এলোমেলো, আর ঠোঁটের কোণে সেই একই অদ্ভুত হাসি। তার চোখজোড়া যেন অতল গভীর, যেখানে দুঃখ আর রাগ একসঙ্গে মিশে আছে।
"তুমি এখানে কেন এসেছো?"—তার কণ্ঠস্বর ফিসফিসে, কিন্তু তাতে এমন এক শক্তি ছিল, যা বুকের ভেতর পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল।
অরিন্দম শ্বাস আটকে গেল। তার কণ্ঠ শুকিয়ে গেছে, সে কিছুতেই কথা বলতে পারছে না।
নারী ধীরে ধীরে এগিয়ে এল।
"তুমি জানো না, তুমি কী করলে..."—তার হাসি ধীরে ধীরে আরও তীব্র হচ্ছে।
অরিন্দমের মনে হল, সে যেন ধীরে ধীরে সময়ের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে, এক ভয়ঙ্কর ইতিহাসের মুখোমুখি হতে চলেছে। তার সামনে দাঁড়ানো এই নারী কি সত্যিই জীবিত, নাকি এটি শুধুই এক অভিশপ্ত আত্মা, যে প্রতিশোধের অপেক্ষায় আছে?
অরিন্দমের পুরো শরীরটা কেমন অসাড় হয়ে এলো। নারীর হাসিটা এখন যেন আরও ভয়ঙ্কর শোনাচ্ছে—কখনও মৃদু, কখনও বিকৃত, আবার কখনও ফিসফিসিয়ে তার কানে ঢুকে যাচ্ছে। চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে, আর ঘরের অন্ধকার যেন আরও গাঢ় হয়ে যাচ্ছে।
সে পেছনে সরে যেতে চাইল, কিন্তু পা একদম জমে গেছে মাটিতে। নারীর চোখদুটো এখন যেন গভীর অন্ধকারের টানেলে পরিণত হয়েছে, যেখানে তাকালেই আত্মা হারিয়ে যেতে পারে।
"তুমি কি জানো, এখানে যারা আসে, তারা আর ফিরে যায় না?"—নারীর কণ্ঠ যেন হাওয়ায় মিশে গিয়ে চারপাশে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।
অরিন্দম ঠোঁট নাড়ানোর চেষ্টা করল, কিন্তু তার কণ্ঠ বের হলো না। নারীর দেহটা আস্তে আস্তে কুয়াশার মতো ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে, আবার স্পষ্ট হচ্ছে। যেন সে বাস্তব আর অবাস্তবের মাঝে দুলছে।
"এই বাড়িতে আমার কান্না কেউ শোনেনি, আমার চিৎকার বাতাসে মিলিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এখন আমি শোনাবো, আমি হাসবো, আমি তোমাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো!"
নারী এবার পুরোপুরি এগিয়ে এলো। অরিন্দম পেছন দিকে হাঁটতে শুরু করল, কিন্তু তখনই তার পা কিছু একটা শক্ত জিনিসের সঙ্গে ধাক্কা খেল। সে পড়ে যেতে যেতে সামনের টেবিলটা ধরে ফেলল, কিন্তু মুহূর্তেই হাতের কাছে একটা পুরনো ছবি এসে পড়ল।
সে ছবিটা তুলে ধরতেই তার সারা শরীর বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে গেল।
ছবিতে সেই একই নারী!
তবে পার্থক্য একটাই—এখানে সে হাসছে না, বরং চোখে একরাশ আতঙ্ক নিয়ে কারও দিকে তাকিয়ে আছে। তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটির মুখটা ধোঁয়াটে, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে না।
তবে সবচেয়ে ভয়ের বিষয় ছিল—ছবির নিচে রক্তের মতো শুকিয়ে যাওয়া কালো দাগে একটা কথা লেখা ছিল:
"যে আমার মৃত্যু দেখেছে, সে বাঁচতে পারে না!"
অরিন্দমের হাত থেকে ছবিটা পড়ে গেল। বুকের ভেতর এক অজানা আতঙ্ক দৌড়াতে লাগল।
এতক্ষণ নারীর হাসির যে শব্দটা সে শুনছিল, এবার সেটা বিকৃত হয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে দিচ্ছে!
চারদিক অন্ধকারে ডুবে যেতে লাগল, নারীর হাসি এখন চারপাশ থেকে ভেসে আসছে। সে একজায়গায় নেই—সবখানে আছে!
অরিন্দম পাগলের মতো দরজার দিকে দৌড় দিল, কিন্তু দরজা বন্ধ!
"এখান থেকে পালানোর পথ নেই,"—নারীর কণ্ঠস্বর এবার পেছন থেকে এল।
সে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল।
আর তার চোখের সামনে যা ঘটল, তা ছিল অকল্পনীয়!
অরিন্দমের শ্বাস রুদ্ধ হয়ে আসছে। নারীর উপস্থিতি যেন ঘরের প্রতিটা কোণে ছড়িয়ে পড়েছে, চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে, আর সেই বিকৃত হাসিটা এখন আর এক জায়গা থেকে আসছে না—এটা যেন ঘরের প্রতিটি দেয়াল থেকে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে!
সে দরজার হাতল টানল, কিন্তু দরজা নড়ছেই না। চাবি ঘোরানোর চেষ্টা করল, কিন্তু যেন অদৃশ্য কোনো শক্তি তা আটকে রেখেছে।
“পালাতে চাও?”—একটা ফিসফিসে কণ্ঠস্বর ঠিক তার কানের কাছে!
অরিন্দম আতঙ্কে লাফ দিয়ে সরে গেল, কিন্তু পিছিয়ে গিয়ে দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেল। তার চোখের সামনে তখনই আরেকটা ভয়ঙ্কর দৃশ্য ফুটে উঠল।
সামনের দেয়ালে বিশাল একটা আয়না ঝুলছে, কিন্তু অরিন্দমের প্রতিচ্ছবি সেখানে নেই! বরং সেখানে সেই নারীর ছবি!
নারী এবার হাসছে না। তার চোখদুটো গভীর কুয়োর মতো শূন্য, আর ঠোঁট থেকে রক্তের মতো কালচে কিছু গড়িয়ে পড়ছে।
অরিন্দম শ্বাস নিতে পারছে না। তার কানে এবার বিকট এক কান্নার শব্দ শোনা যাচ্ছে, যেন শত শত বছর ধরে কেউ এখানে আটকে পড়ে আর্তনাদ করছে।
“তোমারও সময় হয়ে এসেছে,”—নারীর কণ্ঠস্বর এবার সরাসরি তার মাথার ভেতর প্রতিধ্বনিত হলো।
হঠাৎ চারপাশের আলো নিভে গেল!
গাঢ় অন্ধকারে সে কিছুই দেখতে পাচ্ছে না, কিন্তু মনে হচ্ছে, কেউ তাকে ঘিরে ফেলেছে। কেমন যেন গন্ধ আসছে—পুরনো, পচা কাপড়ের গন্ধ, আর সেইসঙ্গে এক ধরনের পচা মাংসের গন্ধ।
তার শরীরের চারপাশে হালকা শীতল বাতাস বয়ে যাচ্ছে, আর তারপরে কেউ যেন তাকে আস্তে করে ছুঁলো!
অরিন্দম আতঙ্কে চিৎকার করতে গিয়েও পারল না। তার গলা থেকে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না!
হঠাৎ আলোটা আবার জ্বলে উঠল, আর সে দেখল—ঘরের চারপাশে দাঁড়িয়ে আছে অসংখ্য মৃতদেহ!
তারা সবাই সাদা পোশাকে ঢাকা, আর তাদের মুখ বিকৃত, চোখের গর্ত শূন্য, ঠোঁটের কোণে সেই একই বিভৎস হাসি!
"আমাদের সাথে এসো..."
একসাথে শত শত গলায় ফিসফিসিয়ে এই কথাগুলো ভেসে এল, আর তারপরে...
নারীটি এক ঝটকায় তার সামনে এসে দাঁড়াল।
"এবার পালাও!"
তার হাতের পেছন থেকে লম্বা, কালো ছায়ার মতো কিছু বেরিয়ে এল, যা সাপের মতো কিলবিল করতে করতে অরিন্দমের দিকেই এগিয়ে আসছে!
সে চিৎকার করল, এক মুহূর্তও দেরি না করে ছুটে গেল জানালার দিকে। কিন্তু জানালার কাঁচও যেন শক্ত হয়ে গেছে, কোনোভাবেই ভাঙছে না!
আর পেছন থেকে সেই নারীর হাসিটা এবার পুরো বাড়ি কাঁপিয়ে তুলল...
অরিন্দমের চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছে। সে জানালার কাঁচে ঘুষি মারতে লাগল, কিন্তু কোনো লাভ হলো না। পেছন থেকে বিকৃত হাসির শব্দ বাড়ছে, যেন শত শত মৃত আত্মা একসঙ্গে হাসছে!
তার শ্বাস আটকে আসছে, মনে হচ্ছে ঘরের বাতাসে বিষ মিশে আছে। সেই নারীর ছায়ামূর্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে, আর তার শরীরের চারপাশে অন্ধকারের মতো কিছু একটার ঘূর্ণি তৈরি হচ্ছে।
"তুমি আমাদের থেকে পালাতে পারবে না..."
শত শত গলায় একই কথা প্রতিধ্বনিত হলো।
অরিন্দম এখন সম্পূর্ণ ঘরের কোণে আটকে গেছে। তার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে, হাত-পা কাঁপছে। সে পকেট থেকে মোবাইল বের করল, কিন্তু স্ক্রিনে কোনো নেটওয়ার্ক নেই।
হঠাৎ করেই পুরো ঘর কাঁপতে শুরু করল, মেঝেতে ফাটল দেখা দিল, আর সেই ফাটল থেকে কালো ধোঁয়ার মতো কিছু একটা বের হতে লাগল।
নারীটি এবার সম্পূর্ণ অন্ধকারে মিশে গেল, কিন্তু তার হাসিটা এবার একেবারে অরিন্দমের কানের পাশে শোনা গেল।
সে এক ঝটকায় ঘুরে দাঁড়াল।
এবং তার সামনে যা দেখল, তাতে তার বুকের রক্ত যেন জমে গেল।
নারীটি এখন আর ছায়া নয়—সে সম্পূর্ণ রূপে স্পষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তার মুখটা বিকৃত হয়ে গেছে!
তার ঠোঁটের কোণে হাসি এখন কান পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে, যেন কেউ তার মুখ ছিঁড়ে দিয়েছে। তার চোখ দুটো রক্তে ভরা, গাল থেকে কালচে সবুজ কোনো তরল চুইয়ে পড়ছে।
"তুমি জানো কি, আমার গল্পটা?"
তার ঠান্ডা কণ্ঠস্বর এবার আরও ভয়ঙ্কর শোনাচ্ছে।
"এই বাড়িতে আমার মৃত্যু হয়েছিল... আমি চিৎকার করেছিলাম, আমি সাহায্য চেয়েছিলাম... কিন্তু কেউ শোনেনি!"
তার বিকৃত ঠোঁটের হাসি এবার আরেকটু বড় হলো।
"তোমারও কণ্ঠ হারিয়ে যাবে, যেমন আমার গিয়েছিল..."
অরিন্দমের শরীর একেবারে জমে গেল। সে চিৎকার করতে গিয়েও পারছে না, তার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না!
নারীটি এবার হাত বাড়িয়ে দিল, আর তার লম্বা, হাড়সার আঙুলগুলো আস্তে আস্তে অরিন্দমের গলার চারপাশে জড়িয়ে ধরল।
তাকে শ্বাস নিতে হবে! কিন্তু সে পারছে না!
চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে...
এটাই কি তার শেষ?
অরিন্দমের শরীর অসাড় হয়ে আসছে। নারীর হিমশীতল আঙুলগুলো তার গলার চারপাশে শক্ত হয়ে আসছে। চোখের সামনে ধীরে ধীরে সব অন্ধকার হয়ে আসছে, শ্বাস নিতে পারছে না, মনে হচ্ছে যেন জীবনটা আস্তে আস্তে ফুরিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু ঠিক তখনই...
একটা অদ্ভুত আওয়াজ ভেসে এলো।
"থামো!"
কণ্ঠটা যেন দূর থেকে আসছে, গভীর, ভারী, অথচ পরিচিত।
নারীর হাত হঠাৎ শিথিল হয়ে গেল। অরিন্দম হাঁপাতে হাঁপাতে মাটিতে পড়ে গেল, মুখ তুলে দেখল—ঘরের কোণে একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।
এটা কে?
সে ভালো করে তাকাল।
এটা একটা পুরুষের ছায়া। মাথা নিচু, পুরো শরীর কালো কুয়াশার মতো আবৃত, মুখটা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
"এখান থেকে চলে যাও!"—ছায়ামানুষটি কঠোর স্বরে বলল।
নারী এবার বিভ্রান্ত হয়ে গেল। তার হাসিটা থেমে গেছে, চোখদুটো অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে গেছে।
"তুমি... তুমি কে?"—তার কণ্ঠে এবার প্রথমবারের মতো একটা অজানা ভয় শোনা গেল।
ছায়াটি এবার ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে এল। তার সাথে সাথে ঘরের ভেতরের অন্ধকার যেন কেঁপে উঠছে, চারপাশের দেওয়ালগুলো থেকে ফিসফিসানি শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে।
"তুমি যা, তার থেকেও বেশি কিছু..."
তারপরই হঠাৎ করেই সেই ছায়াটি শক্তি সঞ্চয় করে নারীর দিকে হাত বাড়িয়ে দিল!
এক মুহূর্তের মধ্যে ঘরের ভেতর তীব্র বাতাস বইতে শুরু করল। নারীর বিকৃত শরীরটা কুঁকড়ে যেতে লাগল, তার চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল, সে যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল—
"না! না! আমি আবার হারিয়ে যাব না!"
তারপরই সে একটা বিকট আর্তনাদ করে মুহূর্তের মধ্যে ছাই হয়ে গেল!
ঘর আবার শান্ত হয়ে গেল।
অরিন্দম স্তব্ধ হয়ে বসে রইল। শরীর এতটাই কাঁপছে যে দাঁড়ানোর শক্তিও নেই।
সেই ছায়ামানুষটি ধীরে ধীরে অরিন্দমের দিকে তাকাল।
"তুমি ভাগ্যবান,"—তার কণ্ঠে অদ্ভুত গাম্ভীর্য।
অরিন্দম কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, "কে তুমি?"
ছায়াটি এক মুহূর্তের জন্য নীরব রইল। তারপর আস্তে আস্তে মিলিয়ে যেতে লাগল, তার কণ্ঠ বাতাসের সাথে হারিয়ে গেল—
"একজন... যে তোমার মতোই একদিন এই অভিশাপে পড়েছিল। কিন্তু পালাতে পারেনি..."
বলেই ছায়াটি সম্পূর্ণ মিলিয়ে গেল।
অরিন্দম ফাঁকা ঘরটার দিকে তাকিয়ে রইল। দেওয়ালগুলো পুরনো আর ধুলোমাখা, চারপাশে এখন কোনো অস্বাভাবিক আওয়াজ নেই।
সবকিছু কি শেষ?
সে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল, দরজার হাতল ধরল...
এবার দরজা খুলে গেল।
তবে যখন সে বাইরে বেরোল, তখনই তার কানে আসলো...
একটা মৃদু, অদ্ভুত হাসির শব্দ।
গল্প কি সত্যিই শেষ হলো? নাকি কিছু এখনো রয়ে গেছে?
সমাপ্ত... অথবা হয়তো নয়!