ব্যক্তিগত পাওয়া না পাওয়া, একান্ত দুঃখ গাথা ফেসবুকে লিখে মানুষকে বিরক্ত করতে চাই না। যদিও করি, সেটার ভিন্ন মাত্রা থাকে, থাকে মূলত হাস্যরসের উপকরণ যোগাতে, সাহিত্যের উপাদান যুক্ত করতে।
কারণ? কারণ একটাই। আমার আপনার সকলের জীবনে দুঃখ আছে, ব্যথা আছে, আছে গহীন কিছু যাতনা, যা নিজে সইতে হয়, নিজেকে সামলে নিতে হয়, অন্যকে জানিয়ে লাভ নেই, শুধু শুধু উপহাসের পাত্র হওয়া ছাড়া।
তারপরেও কিছু বেদনা থাকে, যা যুগের পরে ফিরে আসে, সাইক্লিক অর্ডারের মত, একবার পিতা এর শিকার হয়, এরপর সে নিজে, তারপর পরের প্রজন্ম। শুধু সময় ঘড়িতে এই ব্যথার উপশম হয়, কিন্তু পুনরায় ফিরে আসলে পূরোনো ব্যথা আবার চাগা দিয়ে উঠে। মাইনাসে মাইনাসে প্লাস হয়, বর্তমান ব্যথা পূরোনো ব্যথাকে বাড়িয়ে দেয়।
অনেক আগের কথা। কলেজে উঠার আগে প্রাইমারি ও হাইস্কুল পর্যায়ে অনেক অনাচারের শিকার হয়েছিলাম। অথচ সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল নিজ গৃহের মত, নিজ এলাকায়। প্রাইমারিতে রেজাল্টের বেলায় বারবার অনাচারের শিকার হয়েছি। হাইস্কুলেও কম হইনি। শেয়ালের লেজ কাটার গল্পের প্রশ্নের উত্তরে শুধু Null & Void না লিখতে পেরে খচখচ করে নাম্বার কেটে দিয়েছে। শিক্ষক পণ করেছে, কোনভাবেই আমাকে আমার জায়াগা আমাকে দিবে না। কারন তাঁর কাছে প্রাইভেট পড়িনি।
অথচ কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়েছি নিজ জন্মস্থান থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে, কিন্তু ন্যায় বিচার পেয়েছি। ওরা কত আপন করে নিয়েছে, কুমারের ন্যায় মাটির সাচকে শিল্পের রুপ দিয়েছে।
আজ আবার সেই গল্প কেন? নতুন করে সেই একই অনাচারের গল্পের পুনরাবৃত্তি হতে দেখছি। আজ আমি নিজে নই, এর শিকার হচ্ছে আমার সন্তানেরা। অথচ এই জেলায় আমার একটা পদ আছে, বড় কর্মক্ষেত্র রয়েছে। অনেকের সাথে ওঠাবসা আছে, তবুও হচ্ছে না, তবুও এ থেকে পরিত্রাণ পাচ্ছি না।
একজন এসে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে, অন্য জন ঘুসি মারছে, যাদের ব্যবস্থা নেয়ার তারা কাউকে রুষ্ট করতে চাচ্ছে না। একজন এসে বাজে আচরণ করছে, বাদ যাচ্ছে না তারাও, যারা নিজেই এর প্রতিকার করবে বলে ধরে নেয়া হয়।
আমি ভাবি, কেন এমন হচ্ছে? উত্তর খুঁজে পাইনা। তবুও ধারণা করি, নিষ্ঠুর সময় আমাদের এখানে এনে ছেড়ে দিয়েছে। আমরা এখন শুধু আমি আর মুই এ আটকে গেছি। নিজের সন্তানকে জানের চেয়ে ভালোবাসি। সেই ভালোবাসায় থাকছে ইর্ষা, অন্যকে ছোট করার প্রবল ইচ্ছা, একজনকে হারিয়ে, অন্যজনকে মাড়িয়ে সামনে চলে যাওয়ার প্রবল বাসনা। সেই ভালোবাসা এমন হচ্ছে যে, অন্য একজনের সন্তানকে মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিচ্ছে। প্রতিপক্ষ করে তুলছে, শত্রু জ্ঞান করছে।
এরপর যে ফল পাচ্ছি, তা খুব অনুমিতই, সেটাই স্বাভাবিক। যাদের সামনে এই ঘটনা ঘটছে, তারা দেখছে, কে ঘটাচ্ছে, কে মাইর খাচ্ছে, আর কে মাইর দিচ্ছে। এরপর হয় তাঁরা তালিয়া দিচ্ছে, বগল বাজাচ্ছে, কিংবা রুদ্রমুর্তি ধারণ করছে। যদি পছন্দের কেউ মাইর দেয়, তাহলে তালিয়া, আর যদি মাইর খায়, তাহলে গালিয়া। এই চলছে, আগে, পরে, পুর্বে, পশ্চিমে,পাশ্চাত্যে, দূরে, দূর-প্রাচ্যে।
এভাবেই কি চলবে? থামাবে কে?
যে সাম্যের গান গাইবে, সেই বৈষম্যের উৎস।
যে দড়ি টেনে ধরবে, সেই ধড়িবাজ।
যে জাজ করবে, সেই হয়ে আছে জাজমেন্টাল।
আমি একটা চিঠি লিখেতে বসেছিলাম। একজনকে দিবো বলে। তখন আমার আব্রাহাম লিংকনের কথা মনে আসলো। তিনি তার সন্তানের টিচারের কাছে চিঠি লিখেছিলেন। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায়। আমরা জানি, কি লিখেছিলেন, সেই চিঠি এক জ্বলন্ত ইতিহাস। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের বিষয়েও জানি। ওদের কথা মনে আসায় সেই চিঠি লেখা শেষ করিনি।
তবুও বেদনা শেষ হয়না, ধিকিধিকি জ্বলতে থাকে। নিজেকে প্রবোধ দেই, থাকুক, কিছু অন্তরেই থাকুক, জ্বলতে থাকুক। যদি অসহ্য হয়ে পড়ে, ভিসুভিয়াসের মত উগলে দিবো। উড়ন্ত, জ্বলন্ত লাভা।