পোস্টস

চিন্তা

চলে যাওয়া মানেই প্রস্থান

১৮ মে ২০২৪

Afsana Kishwar

প্রিয়,

কারও সাথে আলাপ জমে গেলেই আমি তাকে জিজ্ঞেস করি "জীবনের মানে কী?" এবং আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি একটা সময় প্রশ্নকর্তা আমি ও উত্তরদাতা ব্যক্তি একমত হয়ে যাই যে 'জীবনের আদতে কোন মানে নেই'-অর্থাৎ কেউ থাকলেও সব চলে আবার না থাকলেও চলে।

মানব জন্মকে অন্য প্রাণীদের জন্মের তুলনায় আলাদা দেখাতে গিয়ে আমরা কত হাস্যকর কাজের যে উদ্ভাবন করেছি!এর মধ্যে কর্পোরেট জব মনে হয় একটা বিশাল অংশ জুড়ে আছে সারা বিশ্বে।সকাল হলেই শত শত মানুষ বিভিন্ন বেশে বিবিধ অফিস নামক খাঁচায় ঢুকে আবার বিকেল হলে এরা আরেকটা দিন একইভাবে কাটাবে বলে ঘর নামক আরেক খাঁচায় প্রত্যাবর্তন করে।

কত রঙ বেরঙের ভাবনা যে নিজের সাথে নিজে চালাই!কারও সাথে শেয়ার করি না,বয়সী চোখ দিয়ে মানুষ দেখি।নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করি হেই লোচন,বিদেশ এসে কি পেলে?

হারিয়েছি অনেক আবার ফিরতি পথে হঠাৎ গ্রীষ্মের আভাস দেয়া তাপমাত্রায় বাসে মানুষের খোলামেলা পোশাক দেখে ভাবছিলাম পেয়েছিও তো কম না!এই যে আমার কোণাকুণি বসা কিশোরী সুতার মতো স্ট্র‍্যাপের একটা টপস খুব কষ্টে গায়ে রেখেছে কারও কোন মাথাব্যথা নেই তাকে নিয়ে।যে যার মতো বসে আছে।

আমার পাশেই বসা এক ইয়াং ছেলে তার নাকে সত্যিকার অর্থে নোলক,সারা গায়ে সেই গলা থেকে শুরু ট্যাটু আঁকা-আমার দেশে হলে হাতাহাতি হয়ে যেত নির্ঘাত।

একজন ৩টা কেক নিয়ে বাসে চড়েছে-এত ভীড় বাসে সেই কেকওয়ালী সবাইকে মিষ্টি করে বলে বলে পেছনে ঠেলাতে অন্যদের জায়গা হলো।

মা এক বাচ্চা সহ বাসে চড়তেই আমি সিট ছেড়ে দিলাম,আমাকে আবার একটু পরে স্কুল ফেরত এক বাচ্চা সিট ছেড়ে দিলো।

ঠাসাঠাসি বাসে কেউ কারও গায়ে
 লাগছে না,ধাক্বাধাক্বি নেই,নেই কোন শব্দ।

উজ্জ্বল কাকাতুয়ার ঝুটি রঙের বিকেল ক্লান্তির কোলাজে রোদের ব্রাশ বুলিয়ে যাচ্ছে থেকে থেকে।মনোযোগ দিয়ে মানুষ দেখি।অল্পবয়সী এক মেয়ে ফোন রেখেছে অবধি আনমনে শুধু হেসে যাচ্ছে।নিশ্চয়ই ভালো লাগার কেউ কোন আনন্দের কথা বলেছে।

নামতে নামতে শুধু ৫জন বাকী আছি বাসে।আমাকে নেমে আবার তৃতীয় আরেকটা বাসে উঠতে হবে।পিঠ টনটন করছে।সারেংকে যদি বলি এই ল্যাপটপ টেনে টেনে আমার স্পন্ডিলাইটিস বেড়ে গেছে মনে হয়, বলবে হাজার হাজার মানুষ এখানে ব্যাকপ্যাক কাঁধে এভাবেই চলে-আমি বলি না হাজার হাজার মানুষের আমার মতো ঘাড়ের হাড় ক্ষয়ে যায়নি।এত কথা বলে কি-ই-বা হবে! দিন গড়াবে রাতে,রাতের পর আবার দিন।একই রুটিন,একই একাকীত্ব,একই দায়িত্ব আর অকস্মাৎ একদিন আবিষ্কার করা আয়নায় তাকিয়ে আমি আর নেই সেই আমি...

ফেরার তাগাদা নেই কোথাও এমন লাগতে থাকে।বাসার সামনে ফুল ফুটেছে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেই।আমাকে কে যেন ধীর লয়ে বলতে থাকে-

চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়

চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী

চলে গেলে আমারও অধিক কিছু থেকে যাবে

আমার না-থাকা জুড়ে।

জানি চরম সত্যের কাছে নত হতে হয় সবাইকে-

জীবন সুন্দর

আকাশ-বাতাস পাহাড়-সমুদ্র

সবুজ বনানী ঘেরা প্রকৃতি সুন্দর

আর সবচেয়ে সুন্দর এই বেঁচে থাকা

তবুও কি আজীবন বেঁচে থাকা যায়!

বিদায়ের সেহনাই বাজে

নিয়ে যাবার পালকি এসে দাঁড়ায় দুয়ারে

সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে

এই যে বেঁচে ছিলাম

দীর্ঘশ্বাস নিয়ে যেতে হয়

সবাইকে

অজানা গন্তব্যে

হঠাৎ ডেকে ওঠে নাম না জানা পাখি

অজান্তেই চমকে ওঠি

জীবন, ফুরালো নাকি!

এমনি করে সবাই যাবে, যেতে হবে…

[চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়-রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ]
inbound466374889929871672.heic 1013.36 KB