মৌসুমি বৃষ্টির ছলকে ঢাকা চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকা। গাড়ির হেডলাইটে ঝাপসা হয়ে আসে লাল রঙের ভাঙা সাইনবোর্ড—"রেড হোটেল, ১৯৪৭"। ভ্রমণপিপাসু সিয়াম গাড়ি থামালো। পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে থাকা তিনতলা এই ভবনটি একসময় ব্রিটিশ অফিসারদের বিলাসবহুল আড্ডাখানা ছিল। কিন্তু ১৯৪৭-এর এক রাতে হোটেলের মালিক, মি. হারুন, সব অতিথিকে গলা কেটে হত্যা করে নিজে নদীতে ঝাঁপ দেয়। লোকমুখে শোনা যায়, তার আত্মা হোটেলের করিডোরে ঘুরে বেড়ায়... নতুন "অতিথি" খুঁজে।
"ফিরে যান, স্যার!" পাহাড়ের ধারে চা-বাগানের শ্রমিক আকাশ সিয়ামের হাত ধরে ফিসফিস করল, "এই হোটেলে কেউ রাত কাটালে... সকালে তাদের মুখ আর পাওয়া যায় না। শুধু জুতো থাকে... ভেতরে পচা মাংস ভরা!"
সিয়াম ঠোঁট কামড়ে হেসে উঠল। অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় এই তরুণ ট্রাভেল ব্লগার ভূত-প্রেতের গল্পে বিশ্বাস করে না। রাত নামতেই সে হোটেলে ঢুকে পড়ল। ভাঙা সিঁড়ি, ধুলোয় ঢাকা পিয়ানো, আর দেয়ালে ঝুলছে অতীতের বিয়ের ফটো—সবাই মুখ হাসি, কিন্তু চোখ কালো কালো গর্ত!
রাত একটায় প্রথম আওয়াজ—টোক টোক টোক। ৩০৩ নম্বর রুমের দরজা কেউ খুঁচছে। সিয়াম দরজা খুলতেই... খালি করিডোর। শুধু নিচতলা থেকে ভেসে আসে কারও গুনগুনানি: "আমার মেহমানকে স্বাগতম..."
কৌতূহলে সে নামতে লাগল নিচে। রেসেপশনের কাউন্টারে জমে থাকা ধুলোয় হঠাৎ আঙুলের দাগ! কে যেন লিখেছে—"হারুন"। হঠাৎ পেছনে শীতল নিঃশ্বাস! ঘুরে তাকাতেই সিয়াম দেখে—একটি লাল শাড়িপরা মেয়ে দাঁড়িয়ে, চুলে জট, মুখে আয়না। আয়নায় প্রতিফলিত হলো না সিয়ামের ছবি।
"চলে যাও!" মেয়েটি চিৎকার করে উঠতেই উপরের তলায় ভেসে এলো লোহার চেনের টান। সিয়াম দৌড়ে উঠল সিঁড়ি বেয়ে। কিন্তু যত ওপরে যায়, ততই করিডোর লম্বা হতে থাকে! দরজাগুলো সব ৩০৩ নম্বর। ভেতরে কান্না শুনে সে একটায় ঢুকেই অচেতন হয়ে পড়ল।
জেগে দেখে—সিলিংয়ে ঝুলছে অসংখ্য জুতো। নিচে লাল পানি। আর সামনে দাঁড়িয়ে সে—মি. হারুন। মুখ নেই, গলায় শিকলের ফাঁস। হাতে মাংস কাটার বটি।
"তুমি আমার ১০০তম মেহমান... বিশেষ মেন্যুতে রান্না করব," হারুনের গলা থেকে বেরুলো কেঁটো পোকা। সিয়াম দরজার দিকে ছুটল, কিন্তু দরজা এখন আয়না! আয়নায় সে দেখে—পিছনে শত শত ভূত হাসছে।
ভোর হওয়ার আগেই আকাশ ও অন্যান্য গ্রামবাসী হোটেলে ঢুকল। ৩০৩ নম্বর রুমে পেল সিয়ামের ক্যামেরা। ভিডিও ফুটেজে শেষ মুহূর্তে শোনা গেল—"না, দয়া করে—!" এরপর শুধু দাঁত দিয়ে কামড়ানোর শব্দ।
আজও পাহাড়ি বাতাসে কেউ শুনতে পায় রেড হোটেল থেকে ভেসে আসা পিয়ানোর সুর... আর জানালা দিয়ে নরমুনির গন্ধ। স্থানীয়রা শপথ করে বলে, মি. হারুনের আত্মা এখনো অপেক্ষা করছে—পরবর্তী মেহমানের।
আর হোটেলের সাইনবোর্ডের "লাল" লেখাটা দিনদিন গাঢ় হয়... রক্তের মতো।