**প্রথম অধ্যায়: অদ্ভুত চিঠি**
শীতের সকাল। কুয়াশায় ঢাকা শহর। গোয়েন্দা অর্ণব রায় তার ছোট্ট অফিসে বসে চা পান করছিলেন। তার অফিসের জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছিল শহরের ব্যস্ত রাস্তা। হঠাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। অর্ণব দরজা খুলতেই দেখা পেলেন এক অদ্ভুত চরিত্রের। একজন বৃদ্ধা, যার হাতে একটি পুরনো চামড়ার ব্যাগ।
"আপনিই কি অর্ণব রায়?" বৃদ্ধার কণ্ঠে একধরনের অস্বস্তি।
"হ্যাঁ, আমি। আপনি কী চান?" অর্ণব প্রশ্ন করলেন।
বৃদ্ধা তার ব্যাগ থেকে একটি চিঠি বের করে অর্ণবের হাতে দিলেন। চিঠিটি ছিল পুরনো, কাগজের কোণগুলো ভাঙা। অর্ণব চিঠিটি খুলে পড়লেন:
"আপনার সাহায্য প্রয়োজন। আমার জীবন বিপদে। যদি আপনি আমাকে খুঁজে পেতে চান, তাহলে আজ রাত ১২টায় পুরনো জমিদার বাড়িতে আসুন। কিন্তু সাবধান, কেউ যেন আপনাকে অনুসরণ না করে। - একটি রহস্যময় চিঠি।"
অর্ণব চিঠিটি পড়ে বৃদ্ধার দিকে তাকালেন। "এটা কে দিয়েছে?"
বৃদ্ধা মাথা নাড়লেন। "আমি জানি না। কেউ আমাকে টাকা দিয়ে এটা আপনাকে দিতে বলেছে।"
অর্ণব চিঠিটি আবার পড়লেন। তার মনে হল এটা কোনো রহস্যের শুরু। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন রাত ১২টায় জমিদার বাড়িতে যাবেন।
---
**দ্বিতীয় অধ্যায়: জমিদার বাড়ির রহস্য**
রাত ১২টা। পুরনো জমিদার বাড়ি। অর্ণব গেটের সামনে দাঁড়িয়ে। গেটটি ভাঙা, লোহার শিকগুলো মরচে ধরা। তিনি ভেতরে ঢুকতেই একটি অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করলেন। বাড়িটি অন্ধকারে ডুবে আছে। হঠাৎ তিনি একটি আলোর ঝলকানি দেখতে পেলেন। আলোটি দ্বিতীয় তলায় একটি জানালা থেকে আসছিল।
অর্ণব সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেন। দ্বিতীয় তলায় পৌঁছেই তিনি একটি দরজা খোলা পেলেন। ভেতরে ঢুকতেই তিনি একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন। একটি বড় টেবিল, যার উপর একটি পুরনো ম্যাপ, কিছু পুরনো কাগজপত্র এবং একটি মোমবাতি জ্বলছিল।
হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনলেন। পেছন ফিরে দেখলেন কেউ নেই। কিন্তু তিনি অনুভব করলেন কেউ তাকে দেখছে। তিনি টেবিলের কাগজপত্রগুলো দেখতে শুরু করলেন। ম্যাপটি ছিল শহরের পুরনো নকশা, যেখানে কিছু জায়গা চিহ্নিত করা ছিল।
হঠাৎ তিনি একটি কাগজে একটি নাম দেখলেন: "ড. অরুণ চৌধুরী।" এই নামটি তিনি আগেও শুনেছেন। ড. অরুণ চৌধুরী ছিলেন একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী, যিনি ২০ বছর আগে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
অর্ণবের মনে হল এই জমিদার বাড়ির রহস্য ড. অরুণ চৌধুরীর নিখোঁজ হওয়ার সাথে সম্পর্কিত হতে পারে।
---
**তৃতীয় অধ্যায়: ডায়েরির সন্ধান**
পরের দিন অর্ণব ড. অরুণ চৌধুরীর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করলেন। তিনি জানতে পারলেন যে ড. অরুণ চৌধুরী একটি গোপন গবেষণা করছিলেন, যা সম্পর্কে খুব কম লোকই জানত। তার গবেষণার বিষয় ছিল "মানুষের মস্তিষ্কের গোপন শক্তি।"
অর্ণব ড. অরুণের পুরনো বাড়িতে গেলেন। বাড়িটি পরিত্যক্ত। তিনি ভেতরে ঢুকতেই একটি অদ্ভুত শীতলতা অনুভব করলেন। তিনি ড. অরুণের স্টাডি রুমে গেলেন। সেখানে তিনি একটি লুকানো ড্রয়ার খুললেন। ড্রয়ারে তিনি একটি পুরনো ডায়েরি পেলেন।
ডায়েরিটি পড়তে শুরু করতেই অর্ণব চমকে উঠলেন। ডায়েরিতে ড. অরুণ লিখেছিলেন:
"আমি একটি ভয়ানক সত্য আবিষ্কার করেছি। আমার গবেষণা আমাকে এমন একটি জায়গায় নিয়ে গেছে, যেখান থেকে ফেরা সম্ভব নয়। যদি কেউ এই ডায়েরি পড়ে, তাহলে সাবধান। তারা সবসময় দেখছে।"
ডায়েরির শেষ পাতায় একটি কোড লেখা ছিল: "X-497."
অর্ণব বুঝতে পারলেন এই কোডটি কোনো গোপন স্থানের সূত্র হতে পারে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই কোডের অর্থ খুঁজে বের করতে।
---
**চতুর্থ অধ্যায়: গোপন স্থান**
অর্ণব কোড "X-497" এর অর্থ খুঁজতে শহরের পুরনো লাইব্রেরিতে গেলেন। লাইব্রেরিয়ান তাকে একটি পুরনো বই দেখালেন, যেখানে শহরের গোপন স্থানগুলোর কথা লেখা ছিল। বইটি পড়তে পড়তে অর্ণব জানতে পারলেন যে "X-497" হলো শহরের একটি পরিত্যক্ত পাতাল রেলওয়ে স্টেশন, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তৈরি করা হয়েছিল।
অর্ণব স্টেশনটি খুঁজে বের করলেন। স্টেশনটি ছিল অন্ধকারে ডুবে। তিনি ভেতরে ঢুকতেই একটি ট্রেনের শব্দ শুনলেন। কিন্তু স্টেশনটি তো পরিত্যক্ত। তিনি ট্রেনের দিকে এগিয়ে গেলেন। ট্রেনটি ছিল পুরনো, রং ফ্যাকাশে।
ট্রেনের ভেতরে ঢুকতেই তিনি একটি অদ্ভুত দৃশ্য দেখলেন। ট্রেনের ভেতরে কেউ ছিল না, কিন্তু তিনি অনুভব করলেন কেউ তাকে দেখছে। তিনি ট্রেনের শেষ কামরায় গেলেন। সেখানে তিনি একটি বাক্স পেলেন। বাক্সটি খুলতেই তিনি একটি পুরনো ফটো এবং একটি চাবি পেলেন।
ফটোটি ছিল ড. অরুণ চৌধুরীর, যেখানে তিনি একটি অদ্ভুত যন্ত্রের সামনে দাঁড়িয়ে। চাবিটি দেখে অর্ণব বুঝতে পারলেন এটি কোনো গোপন দরজার চাবি হতে পারে।
---
**পঞ্চম অধ্যায়: চূড়ান্ত সমাধান**
অর্ণব চাবিটি নিয়ে শহরের একটি পুরনো ভবনে গেলেন। ভবনটি ছিল পরিত্যক্ত। তিনি ভেতরে ঢুকতেই একটি গোপন দরজা খুললেন। দরজার পেছনে ছিল একটি ল্যাবরেটরি। ল্যাবরেটরিতে তিনি ড. অরুণ চৌধুরীর গবেষণার সব সরঞ্জাম পেলেন।
হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনলেন। পেছন ফিরে দেখলেন একজন লোক দাঁড়িয়ে। লোকটি বলল, "তুমি এখানে কী করছ?"
অর্ণব বললেন, "আমি ড. অরুণ চৌধুরীর রহস্য সমাধান করতে এসেছি।"
লোকটি হাসল। "ড. অরুণ চৌধুরী এখন আর নেই। তিনি আমাদের হয়ে কাজ করছেন।"
অর্ণব বুঝতে পারলেন এই লোকটি একটি গোপন সংগঠনের সদস্য, যারা ড. অরুণের গবেষণা চুরি করেছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ করতে।
অর্ণব ল্যাবরেটরিতে একটি বিস্ফোরক সেট করলেন এবং দ্রুত বেরিয়ে এলেন। কিছুক্ষণ পরেই ল্যাবরেটরি বিস্ফোরিত হল। গোপন সংগঠনের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে গেল।
---
**শেষ অধ্যায়: রহস্যের সমাধান**
অর্ণব তার অফিসে ফিরে এলেন। তিনি বুঝতে পারলেন ড. অরুণ চৌধুরীর গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যা গোপন সংগঠন চুরি করতে চেয়েছিল। কিন্তু এখন সব শেষ।
হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠল। অপর প্রান্ত থেকে একটি পরিচিত কণ্ঠ বলল, "তুমি ভালো কাজ করেছ। কিন্তু রহস্য এখনও শেষ হয়নি।"
অর্ণব বুঝতে পারলেন এই রহস্যের আরও অনেক স্তর আছে। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন এই রহস্যের শেষ সত্য খুঁজে বের করতে।
---
**ছবি:**
1. **অর্ণবের অফিস:** একটি ছোট্ট অফিস, জানালা দিয়ে শহরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
2. **জমিদার বাড়ি:** একটি ভাঙা গেট, লোহার শিক মরচে ধরা।
3. **ডায়েরি:** একটি পুরনো ডায়েরি, পাতাগুলো হলুদ।
4. **পরিত্যক্ত পাতাল রেলওয়ে স্টেশন:** অন্ধকারে ডুবে থাকা স্টেশন, একটি পুরনো ট্রেন।
5. **ল্যাবরেটরি:** একটি গোপন ল্যাবরেটরি, যেখানে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি রয়েছে।
---
এই গল্পটি রহস্য এবং উত্তেজনায় ভরা। প্রতিটি অধ্যায়ে নতুন রহস্য যোগ হয়েছে, যা পাঠককে গল্পের শেষ পর্যন্ত আটকে রাখবে।