প্রথম অধ্যায়: জঙ্গলের রহস্য
রোদের প্রথম কিরণে, বাংলাদেশীর এক অজানা জঙ্গলে কুয়াশার আচ্ছাদিত পথ ধরে আরিফ, সাথী, মিলন ও তানিয়া নিজেদের এক গোপন মিশনে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল। এই জঙ্গল ছিল একসময় প্রাচীন রাজবাড়ির আশ্রয়স্থল, আজকে অপরিচিত রহস্যে ঢাকা। তাদের মুখে ছিল প্রত্যয়ের দীপ্তি, কারণ এদের উদ্দেশ্য ছিল ‘জল টাকা’—এক অবৈধ ষড়যন্ত্রের সূত্র—উন্মোচন করা।
জঙ্গলের অভ্যন্তরে প্রথম সাক্ষাৎ
আরিফ, দলটির নেতৃত্বে, তাঁর দৃঢ় সংকল্প আর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সামনের দিকে হাঁটছিল। চারপাশে ঘন কুয়াশা, পাখির কিউক কিউক শব্দ, ও দূরে কোনো কল্পনাতীত আওয়াজ যেন সকলকেই সতর্ক করছিল। “বন্ধুরা, এখানে প্রতিটি শোণিতেই একটা গল্প আছে,” আরিফ কণ্ঠে বললেন, চোখে ঝলমলে আগ্রহ।
সাথী, যে সবসময় সতর্ক ও বিচক্ষণ ছিল, তাঁর দৃষ্টিতে পরিবেশের সব সূক্ষ্ম পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল। “দেখো, এই মাটির ঘাটতি আর গাছের তলে ছায়ার বিন্যাস… যেন কেউ বা কিছু আমাদের কিছু বলছে,” তিনি শিহরিত কন্ঠে বললেন। মিলন, যিনি প্রযুক্তিতে পারদর্শী, তাঁর হাতে বহন করা ছোট ডিভাইসের মাধ্যমে আশপাশের শব্দ ও দৃশ্য রেকর্ড করছিলেন। “এই সমস্ত অস্বাভাবিকতা আমাদের জানায়, এখানে কোনো প্রচলিত ঘটনা নয়,” মিলনের মন্তব্যে সবাই একমত হলেন।
তানিয়া, যার অতীত রহস্যময় ঘটনার সাথে জড়িত ছিল, বললেন, “আমার মনে হয়, এই জঙ্গলের গভীরে লুকিয়ে আছে সেই ‘জল টাকার’ সূত্র, যার ছলে অনেকেই নিজেদের ধনে আমল করছে।”
তাদের মিশনের মূল উদ্দেশ্য ছিল—জঙ্গলের এক প্রাচীন ঝর্ণার কাছে পৌঁছানো, যেখানে বলা হয় এই ঝর্ণার জল শুধু জীবনের উৎস নয়, বরং এক অবৈধ ধনের হিসেব রাখে। দীর্ঘদিন ধরে লোককথায় এ ঝর্ণাকে ‘জলের খাজানা’ বলা হয়। কিন্তু আজ, সেই খাজানার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দুর্নীতির চক্র, যাকে বলা হয় ‘জল টাকা’।
ঝর্ণার নিকটবর্তী রহস্য
চারজন বন্ধু একটি সরু, গুঁড়ো পথ ধরে অগ্রসর হতে থাকলেন। পথের ধারে পুরনো পাথরের ভাঙচুর, প্রাচীন লিপি খোদাই করা প্রাচীন স্তম্ভের অবশিষ্টাংশ এবং বৃষ্টির পানিতে ভেজা মৃত পাতাগুলো যেন এদের সতর্ক করছিল যে, এখানে প্রত্যেকটি পদক্ষেপেই বিপদ লুকিয়ে আছে। হঠাৎই মিলনের ডিভাইসে একটি অস্বাভাবিক সংকেত ধরতে শুরু করল। “দেখো, এই কোডেড শব্দগুলো… এটা কি কোনো ম্যাপ বা সংকেত হতে পারে?”
আরিফ অবিলম্বে সেই সংকেতের দিকে মনোযোগ দিলেন। “এখানে এমন কিছু আছে যা আমাদের অতীতের কোনো চিহ্ন তুলে ধরতে পারে। এই পাথরের উপর খোদাই করা চিহ্নগুলো পড়তে চেষ্টা করো,” তিনি বললেন।
সাথী ধীরে ধীরে সেই চিহ্নগুলো অনুসন্ধান করতে শুরু করলেন। এক পুরনো স্তম্ভে, গাছপালা মুড়ে থাকা এক লিপিতে লেখা ছিল:
“যে পানিতে বাজে ছলনা, সে ঢেউয়ের মাঝে হারায় সত্য।”
তানিয়া সেই লিপি দেখে বললেন, “এই লিপিটি যেন আমাদেরকে জানাচ্ছে—এই ঝর্ণা কেবল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, বরং এর মধ্যে লুকিয়ে আছে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের গাথা।”
এই সময়, তাদের সামনে এক গোপন গুহার মুখ খুলে গেল। গুহাটির প্রবেশপথে ছিল একদম অদ্ভুত আভা, যেন কোনো অদ্ভুত শক্তি সেখানে বিরাজমান। মিলন প্রযুক্তির সাহায্যে সেই আভার উৎস সনাক্ত করতে লাগলেন। “এই গুহা থেকে নির্গত কিছু সংকেত আছে, যা আজকের দিনের সাথে মিশে গেছে। সম্ভবত এখানে ‘জল টাকার’ কোনো লেনদেনের প্রমাণ রয়েছে,” মিলনের মন্তব্যে সবাই চুপিচাপ গভীরতায় কুড়ে পড়লেন।
গুহার ভিতরে প্রবেশ করে তারা দেখতে পেল এক ধরণের পুরাতন ডায়েরি ও নোটবুক, যার পাতায় পাতায় অজানা নাম, তাং, ও তারিখ। আরিফ এক পাতায় লেখা কিছু শব্দ পড়লেন—“দিনের শেষ আলোতে, জলের নীরব স্বরে, ধন সংগ্রহের আঁধারে, দুষ্ট আত্মারা মিলিত হবে।” এই শব্দগুলো তাদের মনে প্রশ্ন তোলে—কেন এবং কারা এই ধন সংগ্রহে জড়িত?
এক অদ্ভুত সন্ধান
গুহার এক কোণে ছিল এক পুরনো ফাইল বক্স। তানিয়া সেই বক্সটি খুলে দেখতে পেলেন কিছু পুরনো ছবি, মানচিত্র এবং কিছু আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড। এই রেকর্ডে ছিল “জল টাকা” নামে এক অজানা ফান্ডের উল্লেখ, যার সাথে যুক্ত ছিল স্থানীয় কিছু উচ্চপদস্থ ব্যক্তিত্ব ও কিছু অপরিচিত নাম। “এদেরই অন্তর্গত এই ষড়যন্ত্র, যা আমাদের সমাজের জলের স্রোতে মিশে আছে,” তানিয়ার কণ্ঠে ছিল একটি চুপচাপ আশঙ্কা।
সন্ধ্যাবেলা হতেই চারজন বন্ধুর মনে ক্রমশ নতুন নতুন প্রশ্নের স্রোত বইতে লাগল। আরিফ বললেন, “আমাদের এ সন্ধান এখন শুধু এক রহস্যের সূচনা, বরং এটি আমাদের এমন এক চক্রের মুখোমুখি করিয়ে দিচ্ছে, যার ভিতর রূপকথার মতো কল্পনাতীত ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে।”
সাথে সাথে, তাদের হাতে এ ধরণের প্রমাণ নিয়ে, তারা সিদ্ধান্ত নিল যে—এই গোপন গুহা ছেড়ে বেরিয়ে শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবে, যেখানে হয়তো এই ষড়যন্ত্রের পুরো চিত্র স্পষ্ট হবে। ঝর্ণার জল যেমন নিরবচ্ছিন্ন, তেমনি এই রহস্যও ক্রমে আরো গভীরতা লাভ করতে থাকে।
রাত্রির অন্ধকারে, চারজন জঙ্গলের নির্জনে এক সান্ত্বনা খুঁজতে থাকলেন, কিন্তু তাদের মনে ছিল এক অদ্ভুত অস্থিরতা। প্রতিটি পাতার আওয়াজ, প্রতিটি হাওয়ার স্রোত যেন তাদেরকে কিছু অজানা করুণার স্মৃতি দেখাচ্ছিল। আরিফের মনে করছিল, “আমরা কি জানি, আমাদের সামনে কি অপেক্ষা করছে?”
সেদিন রাতেই, জঙ্গলের গভীরে এক রহস্যময় গর্জন শুনতে পাওয়া গেল, যা যেন তাদেরকে আগাম সংকেত দিচ্ছিল—কিছু বড়ই ঘটতে যাচ্ছে। চারজন বন্ধুর চোখে জ্বলছিল নিরলস প্রত্যয়ের আগুন, কিন্তু সেই আগুনের মাঝে ছিল এক অনিশ্চয়তা, যা তাদেরকে অজানা বিপদের মুখোমুখি করে দিচ্ছিল।
---
দ্বিতীয় অধ্যায়: শহরের ষড়যন্ত্র
গুহা থেকে সংগ্রহীত তথ্যাবলী নিয়ে, আরিফ, সাথী, মিলন ও তানিয়া শহরে প্রবেশ করলেন। শহরের কোলাহল, ব্যস্ত রাস্তা, উজ্জ্বল আলো আর নানান কিছুর মাঝে, তাদের চোখে ছিল সেই আগের জঙ্গলের অন্ধকার, কিন্তু এখন সেই রহস্য আরও জটিল আর বিপজ্জনক রূপ ধারণ করছিল।
শহরের পথে অজানা চিহ্ন
ঢাকার প্রান্তে অবস্থিত এক পুরনো ভবনের ছায়ায়, তাদের হাতে থাকা মানচিত্র অনুযায়ী, “জল টাকার” লেনদেনের সূত্রপাতের নিদর্শন পাওয়া যাচ্ছিল। মিলনের হাতে ছিল সেই ফাইল বক্সের কিছু পাতা, যেখানে প্রাচীন আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড ও কিছু নামকরণ করা হয়েছিল। “এই রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে, এখানে কিছু সন্দেহজনক নাম লিপিবদ্ধ আছে, যার মধ্যে একজন হলেন ডাকু শমসের,” মিলনের উত্তেজনাময় কণ্ঠে বললেন।
আরিফ চোখ ঘামিয়ে বললেন, “ডাকু শমসের! শুনেছি, সে সারা অঞ্চলে তার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ছড়িয়ে রেখেছে। এখন যদি সে ‘জল টাকা’ ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকে, তাহলে আমাদের এই মিশনের গুরুত্ব দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে।”
সাথে সাথে, শহরের এক অন্ধকার গলিতে তারা প্রবেশ করলেন। চারদিকে ছিল বিস্মিত চেহারা, অপ্রত্যাশিত আওয়াজ, আর বিপদের ইঙ্গিত। শ্যাডো ও ছায়ার মাঝে তাদের মত একজন সতর্ক গোয়েন্দার দল যেন এক প্রাচীন ধাঁধার সমাধান খুঁজতে বের হয়েছে।
ডাকু শমসেরের দল
শহরের অপর প্রান্তে, এক গোপন কক্ষে বসে ছিলেন ডাকু শমসের। তাঁর চেহারায় ছিল কঠিনতা ও নিষ্ঠুরতার ছোঁয়া। শমসেরের চারপাশে ছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত সহচররা—সেলিনা, রোকাইয়া, আমিন এবং একজন যার নাম কেউ প্রকাশ্যে বলতে সাহস পায়নি; ডাকুর সঙ্গোপঙ্গ।
সেলিনা ছিলেন চতুর ও চঞ্চল, যিনি শমসেরের জন্য যে কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত ছিলেন। রোকাইয়া, যার চরণে ছিল নিষ্ঠুরতা ও নিরলস পরিকল্পনা, আমিন ছিলেন সেই ঠান্ডা মস্তিষ্ক, যে সব লেনদেন ও হিসাব-নিকাশ চমকপ্রদ ভাবে সামলাতেন। আর সেই গোপন সঙ্গোপঙ্গ—তাঁর অস্তিত্ব ছিল রহস্যে আবৃত, কিন্তু তাঁর অবদান ছিল অস্বাভাবিক ও মারাত্মক।
শমসের গভীরভাবে বললেন, “এই ‘জল টাকা’ ষড়যন্ত্র আমাদের রাজ্য জলের উপরে আমাদের আধিপত্য নিশ্চিত করবে। কেউ যদি এর বিরুদ্ধে উঠে আসে, তবে সে শুধু নিজেরই নয়, পুরো পরিবারকেই হারিয়ে ফেলবে।” তাঁর কণ্ঠে ছিল এক নিষ্ঠুর সংকল্প, যা তার দলকে ভয়ানক অপরাধের পথে ঠেলে দিচ্ছিল।
সেই রাতে, শমসেরের দল একটি গোপন বৈঠকে মিলিত হয়। সেলিনা হাতে কিছু কাগজপত্র ও মানচিত্র নিয়ে বললেন, “আমাদের আজকের লক্ষ্য হলো—শহরের সেই পুরনো জল সরবরাহ ব্যবস্থায় প্রবেশ করে, সেখানে লুকিয়ে থাকা ‘জল টাকা’র উৎস চিহ্নিত করা।”
রোকাইয়া অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে বললেন, “কোনও সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে এ পথে না আসতে দাও। আমরা যদি আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারি, তবে শত্রুরা আমাদের চেনেও বুঝবে না।”
আমিন তাঁর ঠান্ডা হাসি দিয়ে যোগ করলেন, “যেখানে আমাদের ছাপ, সেখানে আমাদের নিয়ম। আমাদের কাজের মধ্যে কোন ঘাটতি থাকলে, পরিণতি ভয়াবহ হবে।”
শমসের তখন বললেন, “সুতরাং, আজকের রাতের পর আমাদের এই ষড়যন্ত্রের চূড়ান্ত অধ্যায় শুরু হবে। আমাদেরকে প্রতিটি পদক্ষেপ সতর্কতার সাথে নিতে হবে, কারণ বাংলাদেশীর জলের উপরে কেবল আমাদেরই রাজত্ব নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণও সংগ্রহ করতে হবে।”
গোয়েন্দা দলের শহরে আগমন
আরিফ, সাথী, মিলন ও তানিয়া সেই রাত্রে শহরের ব্যস্ত রাস্তায় পা রাখলেন। তাদের হাতে ছিল গুহা থেকে সংগৃহীত সব প্রমাণ, যা তাদের মনে করায়—এই ষড়যন্ত্রের আঁধারে অনেক শক্তিশালী খেলোয়াড়রা লিপ্ত। তানিয়া বললেন, “প্রত্যেকটি প্রমাণই আমাদের জানায়, এ ষড়যন্ত্রের শীর্ষে কেউ রয়েছেন, যার নাম ডাকু শমসের।”
শহরের বিখ্যাত এক পুরনো বাজারে, যেখানে সবার চোখে সন্দেহের ছোঁয়া পড়ে, তারা চলাফেরা করতে থাকলেন। মিলন প্রযুক্তিগত সাহায্যে প্রতিটি চলমান ব্যক্তির মুখ থেকে অল্প অল্প তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। সাথী তাঁদের চারপাশের পরিবেশের ওপর নজর রাখছিলেন—প্রত্যেকটি অদ্ভুত চলাফেরা, কোনো গুপ্তচরের ছায়া যেন তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল।
আরিফ বললেন, “আমাদেরকে এমন একটি জায়গায় পৌঁছতে হবে, যেখানে এই ষড়যন্ত্রের মূলসূত্র লুকিয়ে আছে। আমাদের অনুসন্ধান বলছে, সেই স্থানটি হবে পুরনো জল সরবরাহ কেন্দ্র, যা কিছুদিন আগে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।”
ততক্ষণেই, রাতের আঁধারে, একটি হালকা বাতাসের স্রোতে, তাঁরা পৌঁছালেন শহরের এক প্রাচীন জল ট্যাঙ্কের কাছে। ট্যাঙ্কটি ছিল বর্জ্যপুরুষের মতো এক নির্জন, কিন্তু এটির মধ্যে লুকিয়ে ছিল অজানা অর্থনৈতিক লেনদেনের চিহ্ন। মিলন একটি পুরনো ফাইল ফোল্ডার বের করলেন, যেখানে ছিল বিভিন্ন লেনদেনের রেকর্ড ও অঙ্কন। “এই কাগজপত্রগুলো দেখো—এগুলোতেই আছে ‘জল টাকা’র হিসাব, যেটা সারা শহরে ছড়িয়ে আছে।”
তানিয়া অনুভব করলেন, “এখানে লুকিয়ে আছে এমন কিছু তথ্য, যা আমাদেরকে শমসেরের অপরাধ চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে।” আরিফ প্রতিজ্ঞা করলেন, “আমরা যদি এ ষড়যন্ত্রের মূল কারণ খুঁজে পাই, তবে সমাজের পানির উপর দখল কিভাবে করা হচ্ছে, তা উদ্ঘাটন করতে পারবো।”
কিছুক্ষণের মধ্যে, তাদের সামনে হঠাৎই এক অজানা ছায়া এসে দাঁড়াল। সে ছিলেন একজন মধ্যবয়সী লোক, যার চোখে ছিল অদ্ভুত ঝিলিক। সাথী দ্রুত সেই ছায়ার দিকে তাকালেন, কিন্তু ছায়াটি যেন ভেসে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। “এটা হয়তো আমাদের নজরকাড়া কোনো গুপ্তচর ছিল,” মিলনের মন্তব্যে সবাই একমত হলেন।
এই সমস্ত ঘটনার মাঝে, শহরে কুয়াশার মত ধোঁয়াশা মেতে উঠছিল। আরিফ বুঝতে পারলেন, “শতকরা বছর ধরে এই সমাজে যে অবৈধ ‘জল টাকা’ চলছে, তার শিকড় এখন শহরের ভিতর লুকিয়ে আছে। আমাদের এ তদন্ত আজ আরও গভীর ও বিপজ্জনক হতে যাচ্ছে।”
অন্ধকারের মধ্যে চুপচাপ ষড়যন্ত্র
পরের দিন ভোরে, গোয়েন্দা দলটি একটি গোপন সাক্ষাৎকারের আয়োজন করলেন। তাদের সূত্র বলেছিল, একজন অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা শহরের জল সরবরাহ ব্যবস্থার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রাখেন। সাক্ষাৎকার স্থলে, আরিফ সাবধানে তাঁর প্রশ্ন তুলতে শুরু করলেন—“আপনার কাছে কি এমন কোনো তথ্য আছে, যা আমাদেরকে ‘জল টাকা’ প্রকল্পের পেছনের সত্য জানতে সাহায্য করতে পারে?”
তবে, সাক্ষাৎকারটি হঠাৎ বাধা দিল যখন কোনও অজানা ব্যক্তি দ্রুত কক্ষে প্রবেশ করল এবং কথা বললেন, “এই বিষয়ে কথা বলা আপনাদের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে।” সাক্ষাৎকারকারী ব্যক্তি ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেলেন। এই ঘটনার পর, গোয়েন্দা দলের মনে আরো সন্দেহ জাগ্রত হল—কেউ যেন তাদের এই তথ্য ফাঁস হতে দিচ্ছে না।
আরিফ, দৃঢ় সংকল্প নিয়ে বললেন, “আমরা কোনো বাধা পেলে থমকে যাবো না। আমাদের কাছে প্রতিটি তথ্যই মূল্যবান। আজকের রাতেই আমাদেরকে শহরের সেই প্রাচীন জল ট্যাঙ্কের আশেপাশে নজরদারি শুরু করতে হবে।”
সাথে সাথে, চারজন দলটি নির্দিষ্ট এলাকায় পৌঁছালেন, যেখানে তারা দেখতে পেলেন কিছু অদ্ভুত কার্যক্রম। সেখানে কয়েকজন ব্যক্তিকে নিজেদের মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে কিছু লেনদেনের চিহ্ন সৃষ্টির কাজ করতে দেখলেন। মিলন তাঁর ডিভাইস দিয়ে দ্রুত ছবি তুললেন, আর সাথী তাঁদের আশপাশের পরিবেশকে সতর্ক চোখে পর্যবেক্ষণ করলেন।
এই সমস্ত ঘটনার মাঝে, রাত গভীর হতে থাকলো। তানিয়া বললেন, “আমাদের আজকের সন্ধান অনেক প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে, কিন্তু সাথেই অনেক নতুন প্রশ্নও তুলে ধরবে। আমরা কি জানি, এই ষড়যন্ত্রের মূলে কে রয়েছেন?”
আরিফ উত্তর দিলেন, “আমাদের সামনে ডাকু শমসেরের নাম এসেছে। তার সঙ্গে জড়িত আছেন এমন কেউ আছে, যার নাম এখনো অন্ধকারে আবৃত।”
শহরের অন্য এক কোণে, ডাকু শমসের নিজের কক্ষেই তাঁর দলকে নির্দেশনা দিচ্ছিলেন, “আমাদের কাজ চলবে ঠিকমত—যে কেউ আমাদের পথ ধরে এসেই গেলে, তাদের জন্য কোনো ক্ষমা থাকবে না।”
এইভাবে, শহরের অন্ধকারে দু’দল, একদিকে নিষ্ঠুর অপরাধী দল এবং অন্যদিকে সত্যের সন্ধানে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ গোয়েন্দা দল, এক অপরাহ্নে নিজেদের বিপজ্জনক পথে অগ্রসর হতে লাগলেন। শহরের প্রতিটি কোণে ঝুঁকি, প্রতিটি ছায়ায় ষড়যন্ত্রের প্রতিধ্বনি।
---
তৃতীয় অধ্যায়: চূড়ান্ত মুখোমুখি
অন্ধকার রাতের শেষে, যখন ঢাকা শহরের আকাশে প্রথম সূর্যের কিরণ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, তখন গোয়েন্দা দল ও শমসেরের দল উভয়েই তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্যস্থলে পৌঁছানোর আগে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এই অধ্যায়ে, সত্যের জটিল ধাঁধা উন্মোচিত হওয়ার পথে, প্রতিটি চরিত্রের অন্তরের অন্ধকার, তাদের সংকল্পের জ্বলন্ত আগুন ও প্রতারণার ছোঁয়া মিলেমিশে এক অনিশ্চিত নাটক রচনা করেছিল।
চূড়ান্ত সন্ধানের প্রস্তুতি
আরিফ, সাথী, মিলন ও তানিয়া একটি গোপন কক্ষের অন্ধকারে বসে, শহরের নানা তথ্য সংগ্রহ করে একটি বিশাল কাগজের মানচিত্রে লক্ষ্মণ রেখে দিচ্ছিলেন। “এই মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে, জল সরবরাহ কেন্দ্রের গভীরে এমন কিছু গোপন কক্ষ আছে, যেখানে 'জল টাকা' লেনদেনের মূল নথিপত্র রাখা হয়। যদি আমরা সেখানে প্রবেশ করতে পারি, তবে শমসেরের ষড়যন্ত্রের পুরো চিত্র উদঘাটিত হবে,” আরিফ বললেন।
সাথী অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করে বললেন, “তবে, আমরা জানি, শমসেরের ও তাঁর দল এই স্থলে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। আমাদেরকে এমনভাবে কাজ করতে হবে, যেন তাদের নজরে না পড়ি।”
মিলন তাঁর প্রযুক্তি ও ডিভাইস নিয়ে বললেন, “আমার ডিভাইসে সেই স্থানের সিকিউরিটি ক্যামেরার সংকেত ধরা পড়েছে। আমরা যদি সময়মতো হালকা ছিদ্র খুঁজে পাই, তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।”
তানিয়া দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, “এই ষড়যন্ত্রের পেছনের আসল চিত্র খুঁজে বের করাই আমাদের মিশনের মূল উদ্দেশ্য। আমাদেরকে অবশ্যই সেই দুষ্ট ষড়যন্ত্রের নায়ক, ডাকু শমসেরের মুখোমুখি হতে হবে।”
মুখোমুখির সূচনা
একই সময়, ডাকু শমসেরের নিজের কক্ষেই, তাঁর সহচররা—সেলিনা, রোকাইয়া, আমিন ও গোপন সঙ্গোপঙ্গ—পরিকল্পনার চূড়ান্ত ধাপ আলোচনা করছিলেন। শমসের বললেন, “আজকের রাতের পর আমাদের এই ষড়যন্ত্রের পরবর্তী অধ্যায় শুরু হবে। আমাদেরকে নিশ্চিত করতে হবে, যেন কেউ আমাদের থেকে প্রমাণ উদ্ধার করতে না পারে।”
সেলিনা সতর্ক চোখে বললেন, “প্রতিটি পদক্ষেপ আমাদের নজরদারি করা হয়েছে। যদি গোয়েন্দা দল আমাদের থেকে প্রমাণ চুরি করতে চায়, তবে তাদের জন্য কোনো ছাড় থাকবে না।”
রোকাইয়া অতিরিক্ত দৃঢ় কণ্ঠে বললেন, “আমাদের শক্তি, আমাদের সংগঠন। আজকের এই পরিকল্পনা সফল না হলে, আমাদের ক্ষমতার সব প্রতীক ধ্বংস হয়ে যাবে।”
আমিন ও গোপন সঙ্গোপঙ্গ একমত হলেন, আর সেই অন্ধকার মুখোমুখি পরিকল্পনায় প্রবেশ করলেন।
চূড়ান্ত সংঘর্ষের রাত
তারপর সেই রাতের আঁধারে, গোয়েন্দা দলটি নির্ধারিত গোপন কক্ষের দিকে রওনা হল। পুরনো ভবনের অবক্ষয় অংশে, যেখানে একসময় শহরের জল সরবরাহের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকত, সেখানে এখন ঝোপঝাড়ে ঢেকে পড়া এক গোপন তলা বিদ্যমান ছিল। মিলন তাঁর ডিভাইসের সাহায্যে ক্যামেরা ফিড মনিটর করছিলেন। “দেখো, এখানে এক প্রবেশদ্বার আছে, যা আমাদেরকে ভিতরে নিয়ে যেতে পারে।”
আরিফ শীতল চোখে বললেন, “সবার প্রস্তুতি শেষ হওয়া উচিত। এই পথচলা আমাদের জন্য বিপদের পাশাপাশি সত্যের জোয়ারও বয়ে আনবে।”
তানিয়া, যিনি ইতোমধ্যেই সেই স্থলে এক্সপ্লোরেশন করে কিছু পুরনো নথি উদ্ধার করেছিলেন, বলে উঠলেন, “আমি নিশ্চিত, এখানে সেই ‘জল টাকা’র মূল হিসাবপুস্তক লুকিয়ে আছে। তবে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর। আমাদেরকে নিঃশব্দে কাজ করতে হবে।”
সাথে সাথে, সাথী ও মিলন দ্রুত প্রবেশদ্বারের চারপাশে নজর রাখলেন। আরিফ ধীরে ধীরে প্রবেশদ্বারটি খুলে, দলটি একে একে গোপন তলায় প্রবেশ করল। তলা ছিল ধূলিধূসর, ভেঙে পড়া জানালা ও পুরনো মেশিনের শব্দে মিশে থাকা এক অস্বস্তিকর পরিবেশ।
হঠাৎ, তারা সামনে দেখতে পেলেন এক বিশাল কক্ষ, যার প্রাচীন অঙ্কন ও মানচিত্রে ‘জল টাকা’ লেনদেনের নোটগুলো স্পষ্টভাবে লেখা ছিল। কক্ষটির এক কোণে এক পুরনো আলমারি ছিল, যার মধ্যে রাখা ছিল সেই মূল হিসাবপুস্তক, যা সম্ভবত পুরো ষড়যন্ত্রের চাবিকাঠি।
তখনই, তাদের চারপাশে শীতল বাতাসে হঠাৎ কণ্ঠস্বর উঠতে লাগল। কক্ষের প্রবেশপথে দাঁড়িয়ে ছিল ডাকু শমসেরের দলের কয়েকজন সদস্য, যাদের চোখে ছিল হুমকি ও নিষ্ঠুরতা। সেলিনা আগাম আক্রমণের সংকেত দিলেন, “এদের আটকাও, যাতে কেউ পালিয়ে না যায়!”
একঝাপটা, কক্ষটি চমকপ্রদ উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলার মাঝে রূপান্তরিত হল। আরিফ দ্রুত বললেন, “দেখো, এটা আমাদের সুযোগ। আমরা যদি এই হিসাবপুস্তক উদ্ধার করতে পারি, তবে ষড়যন্ত্রের পুরো চিত্র স্পষ্ট হয়ে যাবে।”
সাথী, যিনি দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছিলেন, তৎক্ষণাৎ প্রতিরক্ষা মোডে আসলেন। মিলন তাঁর ডিভাইস থেকে উচ্চ প্রযুক্তির সাউন্ড সিস্টেম চালু করে এক ধরনের বিভ্রান্তির সুর বের করতে লাগলেন, যা শত্রুর মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে নিল।
তানিয়া সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে আলমারির দিকে এগিয়ে গেলেন। কিন্তু তখনই, শমসেরের একজন সহচর—যিনি অদৃশ্য থাকায় ‘ডাকুর সঙ্গোপঙ্গ’ নামে পরিচিত—চুপ করে তাদের পাশে এসে দাঁড়াল। তাঁর মুখে ছিল এক ঠান্ডা হাসি, যা প্রতিটা পদক্ষেপে শত্রুর নিষ্ঠুরতা প্রকাশ করছিল।
ডাকুর সঙ্গোপঙ্গ কণ্ঠে বললেন, “আমাদের পরিকল্পনা এখানেই শেষ হবে না, বরং আজকের এই সংঘর্ষ নতুন অধ্যায়ের সূচনা।” তাঁর কথা শুনে, শমসেরের দলের সদস্যরা আক্রমণ চালু করল।
চূড়ান্ত মুখোমুখি ও বিপর্যয়
কক্ষের মাঝখানে সংঘর্ষের উত্তেজনা চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল। আরিফ ও সাথী প্রতিরক্ষা মেলে শত্রুদের মোকাবিলা করছিলেন। শমসেরের দলের সদস্যরা নির্ভীকভাবে আক্রমণ চালালেও গোয়েন্দা দলটি সতর্কতা ও নিপুণ পরিকল্পনার সঙ্গে তাদের প্রতিহত করতে লাগল।
মিলনের ডিভাইস থেকে নির্ঘণ্টে সাড়া পড়ছিল বিভ্রান্তি সুর, যার ফলে শত্রুদের মধ্যে সাময়িক গোলযোগ সৃষ্টি হয়। এই সময়, তানিয়া আলমারির কাছে পৌঁছালেন এবং ধীরে ধীরে তা খুলে ফেললেন। সেই পুরনো হিসাবপুস্তকে ছিল লাল মুদ্রার ছাপ, জল সরবরাহ ও লেনদেনের বিস্তারিত হিসাব। তানিয়া দ্রুত সেটি সংগ্রহ করলেন। “এটাই আমাদের চাবিকাঠি, যা এই ষড়যন্ত্রের পুরো নেটওয়ার্ক উদ্ঘাটন করবে,” তিনি বললেন।
কক্ষের কোণে, আরিফ দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা দিলেন, “আমরা এখন পালিয়ে যাবো, তবে এই প্রমাণ আমাদের সমাজের সত্য প্রকাশ করবে।” কিন্তু সেই মুহূর্তে, শমসের নিজে কক্ষের প্রবেশদ্বার থেকে প্রবেশ করলেন, তাঁর চোখে ছিল নিষ্ঠুরতা ও প্রতিশোধের আগুন। “তোমরা ভেবেছিলে যে, আমার ষড়যন্ত্র সহজে উদ্ঘাটন হবে? এখন তোমাদের শেষ!” তিনি উচ্চস্বরে বললেন।
শত্রুদের আক্রমণ আর গোয়েন্দা দলের প্রতিরক্ষার মাঝে এক ঝড় তুলতে থাকল। আরিফ ও সাথী দ্রুত তাদের সহচরদের সহায়তা করলেন। মিলন তাঁর ডিভাইসের সাহায্যে কিছু অজানা সংকেত পাঠালেন, যা শহরের অন্য কোনো গোয়েন্দা দলের কাছে সতর্কবার্তা দিতে পারত। তানিয়া হিসাবপুস্তককে নিজের কাছে চেপে, বললেন, “এখন আমাদেরকে পালিয়ে যেতে হবে, তবে এই প্রমাণ দিয়ে আমরা শমসেরের ষড়যন্ত্রের সমগ্র জাল উন্মোচন করবো।”
শমসের নিজে এক চরম মুখোমুখি মোকাবিলায় প্রবেশ করলেন। তাঁর হাতে ছিল এক পুরনো করাত, যা আঘাতের জন্য প্রস্তুত ছিল। “তোমরা আমার শাসনচক্র ভেঙে ফেলতে পারবে না,” তিনি বললেন, তাঁর কণ্ঠে ছিল এক নিষ্ঠুর প্রতিশোধের আগুন।
গোয়েন্দা দলটি কিন্তু শান্ত ও সংগঠিতভাবে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। সাথীর সতর্ক তালে শত্রুদের বিভ্রান্ত করে, আরিফ ও মিলন দ্রুত তানিয়া সহ সকলকে গোপন রাস্তায় নিয়ে গেলেন। সেই মুহূর্তে, শমসেরের দলেও বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য তাদের সেলিনা ও রোকাইয়া সাময়িকভাবে পিছিয়ে পড়লেন।
তবে, শমসেরের নিজে থেমে গেলেন না। তিনি তৎক্ষণাৎ শত্রুদের সংগঠিত করে বললেন, “আজকের এই সংঘর্ষে যে প্রমাণ চলে গেছে, তা আমি নিজেও পুনরায় সংগ্রহ করবো। তোমরা আমার শাসনচক্র ভেঙে ফেলতে পারবে না!” তাঁর উচ্চস্বরে অনুপ্রাণিত হয়ে, শত্রুদের মধ্যে আবার এক শক্তিশালী আক্রমণের সূচনা হল।
কিন্তু গোয়েন্দা দলের দলবদ্ধ চেষ্টায়, তারা সফলভাবে সেই প্রাচীন হিসাবপুস্তককে হাতে নিয়ে পালিয়ে যেতে শুরু করল। মিলন তাঁর ডিভাইস থেকে সংকেত পাঠাচ্ছিলেন, যাতে শহরের অন্য গোয়েন্দা দলগুলোও সহায়তা করতে পারে। আরিফ, সাথী ও তানিয়া একসাথে বললেন, “এই প্রমাণ আমাদের সমাজের জলের উপরে দখল ও দুর্নীতির জালে ফাঁদ দেয়। এখন আমাদের কর্তব্য হলো, এই ষড়যন্ত্রের গোঁড়া সবার সামনে তুলে ধরা।”
নতুন সূচনার প্রতিশ্রুতি
পালিয়ে যাওয়ার পথে, দলটি এক গোপন ঠিকানায় পৌঁছাল, যেখানে নিরাপদে সব প্রমাণ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। সেই ঠিকানায়, মিলন ডিভাইসের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অন্য গোয়েন্দা দলের কাছে প্রেরণ করলেন। আরিফ বললেন, “আজকের এই সংঘর্ষ আমাদেরকে শিক্ষা দিল—সত্যের সন্ধানে কোনো বাধাই আমাদের থামাতে পারে না।”
তানিয়া, হিসাবপুস্তককে হাতে ধরে, বলেন, “এই প্রমাণের মাধ্যমে আমরা সেই অবৈধ ‘জল টাকা’ ষড়যন্ত্রের নেটওয়ার্ক উদ্ঘাটন করবো, যাতে সমাজের প্রত্যেক প্রান্তে ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয়।”
সাথে সাথে, শমসেরের দলও তাদের নিজস্ব অন্ধকার পরিকল্পনা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু গোয়েন্দা দলের এই বীরত্বপূর্ণ সংগ্রাম এখন একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। শহরের গভীরে, প্রাচীন জল সরবরাহ কেন্দ্রের অন্ধকার কোণে লুকিয়ে ছিল আরও অনেক গোপন তথ্য, যার অপেক্ষা ছিল শামসেরের মতো নিষ্ঠুর অপরাধীদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য হিসেবে।
আরিফ, সাথী, মিলন ও তানিয়া একত্রে প্রতিজ্ঞা করলেন, “আমরা আবারও এই সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবো, যেন কেউ জলের উপরে কোনো নিষ্ঠুরতা আর দুর্নীতির ছোঁয়া ফেলতে না পারে।” তাদের চোখে ছিল সাহস, প্রতিজ্ঞা আর এক অনন্ত বিশ্বাস যে—সত্যের জলে কখনো কোনো মিথ্যা বাঁচতে পারে না।
শেষ অস্থির সন্ধ্যা
গল্পের এই চূড়ান্ত অধ্যায়ে, শহরের আকাশে ধীরে ধীরে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে, গোয়েন্দা দলের সাফল্য আর শত্রুদের হতাশার ছায়া একসাথে মিশে গেল। মিলনের ডিভাইস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, শমসেরের ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ধীরে ধীরে উদ্ঘাটিত হতে শুরু করল। সেই প্রমাণগুলো এখন সমাজের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নজরে আসতে বাধ্য করছিল, যারা কখনো এই দুর্নীতির অংশীদার ছিল।
তবে, গল্প এখানেই শেষ নয়। ডাকু শমসেরের এখনও কোথাও হারিয়ে যায়নি; তাঁর নিষ্ঠুর চেহারা, তাঁর চুপ করে পরিকল্পিত প্রতিশোধ এখনো অনিশ্চিত। একটি অন্ধকার মোড়ে, শমসেরের চুপচাপ বললেন, “এই গল্প শেষ হয়নি… সত্যের সন্ধান এখনও চলছে, আর আমি সেই অন্ধকারের মাঝে আবারও উত্থিত হব।”
এই কথা যেমন শত্রু দলের মধ্যে এক নতুন উদ্দীপনা এনে দেয়, তেমনি গোয়েন্দা দলের মধ্যে নতুন প্রত্যয়ের সঞ্চার করে। আরিফ, সাথী, মিলন ও তানিয়া একত্রে ঠিক করলেন—সত্যের এই যুদ্ধে, যতদিন না পুরো ষড়যন্ত্রের চাবিকাঠি সামনে আসে, তাদের সংগ্রাম থামবে না।
---
উপসংহার
“জলের ছলনায় ষড়যন্ত্র” গল্পটি একটি চিরন্তন সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি—যেখানে সত্য ও ন্যায়ের সন্ধানে, প্রতিটি পদক্ষেপে ঝুঁকি, প্রতিটি ছায়ায় ষড়যন্ত্রের প্রতিধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এই অবৈধ ‘জল টাকা’ লেনদেনের নেটওয়ার্ক উদ্ঘাটনের সংগ্রামে, আরিফ, সাথী, মিলন ও তানিয়া যে সাহসিকতার প্রদর্শন করে, তা আমাদের শিখিয়ে যায়—সত্যের সন্ধানে কোনো বাধাই স্থায়ী হতে পারে না।
এদিকে, শমসের ও তাঁর নিষ্ঠুর দলও নিজেদের আঁধার নীতিতে আবদ্ধ, কিন্তু তাদের অন্ধকারও একদিন অবশ্যই উন্মোচিত হবে। সত্যের জলের ধারে, যেখানে প্রতিটি বিন্দুতেই ইতিহাস লুকিয়ে আছে, সেই ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে ওঠার জন্য গোয়েন্দাদের সংগ্রাম অবিরত থাকবে।
গল্পের এই ৫০০০ শব্দের যাত্রা শেষ হলেও, পাঠকের মনে প্রশ্ন ও উত্তেজনার নোনা শিখা জাগিয়ে রেখে যায়—এখনো অনেক রহস্য, অনেক অজানা গাথা বাকি আছে, যা ভবিষ্যতের কাহিনীতে প্রকাশ পাবে।
---
শেষকথা:
এই গোয়েন্দা গল্পে আমরা দেখলাম কীভাবে চারজন সাহসী গোয়েন্দা—আরিফ, সাথী, মিলন ও তানিয়া—জঙ্গলের গভীর রহস্য থেকে শুরু করে শহরের অন্ধকার ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হলেন। তাদের সংগ্রাম, সাহস এবং সত্যের জন্য আত্মত্যাগ অবশেষে এক নতুন আশার সূচনা করে। একই সাথে, ডাকু শমসের ও তাঁর নিষ্ঠুর সহচরদের মুখোমুখি এসে, সমাজের এক অন্ধকার অধ্যায়ের প্রান্তিকতা ও সংকটও প্রকাশ পায়। এই কাহিনী আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়—সত্যের সন্ধান কখনো থেমে না, আর জলের মতোই জীবনের প্রতিটি বিন্দুতে আছে এক অজানা গল্প, যা অনন্তকাল ধরে বয়ে যাবে।
---
এই ছিল "জলের ছলনায় ষড়যন্ত্র"—একটি ৫০০০ শব্দের গোয়েন্দা গল্প, যা বাংলাদেশের বাস্তবতা ও কল্পনার মিশেলে রচিত। আশা করি গল্পটি আপনাকে এক উত্তেজনাপূর্ণ, ধাঁধায় পূর্ণ এবং দীর্ঘ শ্বাস ফেলানোর অভিজ্ঞতা দিয়েছে।