পর্ব ০১: নীল চিঠি
রাত ন’টা বাজে। বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। জানালার কাচে টুপটাপ শব্দ হচ্ছে, আর ঘরের ভেতরে আলো-আঁধারির খেলা। রুদ্রের হাতে একটা পুরোনো নীলচে চিঠি। কাগজের কোণাগুলো একটু হলদে হয়ে গেছে, তবু কালো কালির অক্ষরগুলো স্পষ্ট।
"রুদ্র,
আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখো। মেঘেরা কখনো কখনো কথা বলে, শোনার মানুষ না থাকলে বোবা হয়ে যায়। আমি জানি, একদিন তুমি শুনবে।"
রুদ্র চিঠিটা বন্ধ করল। নীলার হাতের লেখা, সেই চেনা বাঁকানো অক্ষরগুলো আজও একইরকম। সে জানে, নীলা আর ফিরবে না, কিন্তু কিছু স্মৃতি রয়ে যায়, ঠিক যেন বৃষ্টির পর আকাশে ঝুলে থাকা শেষ কটা মেঘ।
চার বছর আগে
নীলা সবসময় ছাদের রেলিংয়ে বসে থাকত। হাত বাড়িয়ে আকাশ ছুঁতে চাইত, যেন মেঘ ধরে ফেলবে। রুদ্র রাগ করত, বলত, "একদিন পড়ে যাবি!"
নীলা হেসে বলত, "যদি পড়ে যাই, তুমি কি ধরে ফেলবে?"
রুদ্র কিছু বলত না। কারণ জানত, কথার খেলায় নীলাকে হারানো অসম্ভব।
একদিন নীলা রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, "আকাশের গল্প শুনতে পারো?"
রুদ্র হাসল। "আকাশের আবার গল্প হয় নাকি?"
নীলা চোখ ছোট করল। "গল্প না, কথা। আকাশ কথা বলে, কেবল যার শোনার ইচ্ছে থাকে, সে-ই শুনতে পায়।"
সেদিন কিছু একটা হয়েছিল। হয়তো বাতাসে কোনো গোপন কথা ছিল, কিংবা সন্ধ্যার আলোর সাথে মিশে থাকা না বলা কষ্ট।
কিন্তু তারপর...
তারপর একদিন নীলা হারিয়ে গেল।
বর্তমান
রুদ্র জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকাল। দূরে বিদ্যুতের আলোয় ভিজে রাস্তাটা চকচক করছে। কোথাও কেউ নেই। আকাশ আজও গুমোট, নীলার মতোই চুপচাপ।
সে কি সত্যিই আকাশের কথা শুনতে পারবে? নাকি সেই নীলচিঠির উত্তর কখনো দেওয়া হবে না?
(চলবে...)