প্রতিমুহূর্তে পৃথিবীতে জন্ম নেয়া প্রতিটি নবজাতক শিশু প্রতিনিয়ত একটু একটু করে বড় হতে থাকে। সাধারণ ভাবেই শৈশব থেকে যৌবনের গণ্ডি পেরুতে পেরুতে শিশুর করার প্রধান কাজ হয় খেলা এবং খেলতে খেলতে খেলার ছলে শেখা।
মানে, "মানুষ স্বভাবতই খেলতে এবং শিখতে পছন্দ করে"।
স্রষ্টার সৃষ্টি সৃষ্টিশীল শিশু নিজের খেলার বস্তু হয় - নিজে তৈরি করে নেন বা তৈরি করা খেলনা তার হাতে তুলে দেয়া হয়, কিন্তু অনুসন্ধিৎসু মন সেটাও ভেঙ্গে নতুন কিছু গড়ার উদ্যোগ নিজের অজান্তেই নেয়।
মানে, "মানুষের মধ্যে সৃষ্টিশীলতা, উদ্যোগী চেতনা এবং জানার আগ্রহ প্রথম থেকেই থাকে"।
শিশুর খেলার বস্তু সংখ্যায় গুণে শেষ করা কঠিন হলেও রকমারি খেলনার ভিড়েও শিশুর সবচাইতে পছন্দের খেলনাটা হয় এক টুকরো লাল ইট/চক/পেন্সিল বা রং পেন্সিল। আর সব চাইতে পছন্দের খেলা দাগা-দাগি বা আঁকা-আঁকি। অর্থাৎ চিহ্ন রেখে দিয়ে নিজের অস্তিত্ব তৈরির প্রাথমিক ধাপ।
মানে, "মানুষ নিজের অস্তিত্বের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা করতে এবং সেটা যতটুকু সম্ভব দীর্ঘস্থায়ী করার চেষ্টা করে"।
- কিন্তু আমাদের সমাজের এক শ্রেণীর ধারণা, খেলার ছলে খেলতে থাকা শিশুটি খেলতে খেলতে জীবনটা নিয়েই খেলতে শুরু করলেও করতে পারে এবং সে আশঙ্কা থেকে সমাজ বা সমাজ ব্যবস্থা চেষ্টা করে শিশুর বেড়ে ওঠাটা কে নিয়ন্ত্রণ করতে।
আর,
সেটা করতে গিয়ে - যেমন সমাজের এই নিয়ন্ত্রণকারী নিজের কম আত্মবিশ্বাসী/বিশ্বাস না করতে পারার প্রবণতা/সমাজ ভীতি - ইত্যাদি দোষের উপস্থিতি যে সমাজে বিদ্যমান সেটা নতুন করে প্রমাণ করে - ঠিক একই সাথে শিশুটি হারাতে থাকে তাঁর একমাত্র অধিকার অর্থাৎ তাঁর স্বাধীনতার অধিকারটা।
এই অধিকার রক্ষার্থে দ্বায়িত্বে থাকতে হবে আমাদের সকলকেই।
ফলে, কোন শিশুর হাত থেকে লাল ইট কেড়ে নিয়ে বলা হয়; 'ওইটা ময়লা - ওটা ধরতে নেই', আর কোন শিশু, যার আগমনের একমাত্র কারণ ছিল পরিবারের নতুন আরেকটা আয়ের উৎস বৃদ্ধি করা, দেখা যায় সে শিশুর ভাগ্যে পেন্সিল ধরার সময় বা সুযোগ দুইটার একটাও পায় না।
এভাবে বেড়ে উঠতে থাকা শিশুটি পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির শিকার হয়ে একসময় সমাজের প্রচলিত প্রথা স্বীকার করে নিয়ে সমাজের তালে তাল খেলতেই থাকে আর একটাই প্রশ্ন করে, "আমার আসলে কি করার আছে?"।
এই সমাজে - কেউ সমাজে টিকে থাকার খেলা খেলে, কেউ সমাজ টেকানোর খেলায় মগ্ন হয়,কেউ খেলে রাজনীতি-রাজ নীতি আবার কেউ শব্দ নিয়ে খেলতে খেলতে জীবন কাটিয়ে দেয়ার কথা ভাবে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মানুষের মত মানুষ হতে চায়।
- কিন্তু কমবেশি সবাই ভুলে যায়, "জীবনটা আসলে খেলা না - জীবন হচ্ছে খেলার ময়দান"।