বই রিভিউ
১৯৫২ : নিছক কোন সংখ্যা নয়
লেখক : মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৪
প্রচ্ছদ : সিরাজুল ইসলাম নিউটন
জনরা : থ্রিলার
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
মহান ভাষা আন্দোলনের কারণে ১৯৫২ আসলেই বাংলাদেশের জন্য নিছক কোন সংখ্যা নয়। এই থ্রিলার গল্পের জন্যও ১৯৫২ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি সংখ্যা।
দেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় দৈনিক "মহাকাল" এর সিনিয়র রিপোর্টার শৈশব থেকেই গাড়ির খুব ভক্ত। নিজের কিনা প্রথম গাড়ি রাস্তায় নামিয়েই এক বিচিত্র দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাঁর হাতে। মারা পড়েন অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রের নিকটবর্তী এক পরিবারের সদস্য। সিনিয়ার সাংবাদিক সায়েম মোহাইমেনের হাতে ভাষাসৈনিক পরিবারের সন্তানের এরকম রহস্যময় মৃত্যু পুরো বাংলাদেশে শোড়গোল ফেলে দেয়। সতর্ক চালক সায়েম-ই কি দায়ী এই দূর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য?
সায়েমের ঘনিষ্ট বন্ধু সদ্য ট্রান্সফার হয়ে আসা গুলশান-বনানী থানার এসি গোলাম মওলা ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়েন। জড়িয়ে পড়েন আরো অনেকে। এই অনেকের মধ্যে আছেন রাজনীতির কিছু বড় বড় প্লেয়ার। দ্রুতগতিতে অনেকগুলো রহস্য একটার সাথে আরেকটা জট পাকাতে থাকে। সারাদিন ফেইসবুক চ্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত নিশুর সাথে এই ঘটনার সম্পর্ক কি? হুইলচেয়ারে বসে থাকা তাহিতি অথবা ঢাকা থেকে শত মাইল দূরে থাকা নিম্মির-ই বা কাজ কি এই গল্পে? জনপ্রিয় ব্যান্ডস্টার, প্লেবয় রুডিও এই গল্পে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েন। এদের প্রত্যেকেই জড়িয়ে পড়েন ছোট বড় সব ঝামেলায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দূর্বৃত্তায়ন, গুম, হত্যা, পাওয়ার পলিটিক্সের সাথে সাথে সমাজের মধ্য থেকে নৈতিক অবক্ষয় যে সবকিছু ফুঁড়ে মহাসড়কে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা গাড়ির হেডলাইটের মতো চোখ ধাঁধিয়ে দেয় তার থেকে রক্ষা পাওয়া কি এতোই সহজ?
গল্প অত্যন্ত ফাস্ট পেইসড। এমপি থেকে মন্ত্রী হওয়ার বাসনায় থাকা এক বিগ প্লেয়ারের অন্ধকার রূপও দিনকে দিন পরিস্কার হতে থাকে। বিগ মানি এন্ড গ্রিডের শিকার রাজনীতিতে সায়েম অথবা গোলাম মওলা তো চুনোপুটির চেয়েও কম। এই অবস্থায় ১৯৫২ নিয়ে সবচেয়ে বেশি রহস্যের সৃষ্টি হয়। যেন সকল রহস্যের চাবিকাঠি ১৯৫২। আসলে কি ঘটেছিলো সেই রাতে?
তীব্র গতিতে ছুটে চলা এই গল্প থ্রিলারপ্রেমী পাঠককে বসিয়ে রাখবে। একই সাথে করবে বিভ্রান্ত। চমকের পর চমক না থাকলে বা বিভ্রান্তি না থাকলে থ্রিলার পড়ে মজা নেই। এই গল্প পড়তে পড়তে সচেতন পাঠকের মনে অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হতে পারে। ক্রিমিনাল এরকম একটার পর একটা সিলি মিসটেক করছে কেন? এরপরও সিনিয়ার সাংবাদিক এবং গুলশান-বনানী থানার এসি কেন পারছেন না সমাধানে আসতে? অপরাধীর বেপরোয়াভাব খুব প্রবল এই গল্পে তবে এসবের উত্তর পেতে হলে একদম শেষপর্যন্ত পড়ে যেতে হবে যা একদম সহজ একটি কাজ কারণ লেখকের নাম মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।
সবাইকে নাহয় এবার আমি একটু চমকে দেই। আমার পড়া এই লেখকের প্রথম বই এটি। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে থ্রিলারপাঠকদের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। এই বইটি পড়ে আমার মোটামোটি ধারণা হয়ে গেছে কেন এই দেশে লেখক একজন থ্রিলার মায়েস্ট্রো। প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা অত্যন্ত সুপাঠ্য এই বইয়ে লেখক দিয়েছেন চমকের পর চমক। গল্পের প্লট খুব আহামড়ি না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র স্টোরিটেলিঙের জোড়ে লেখক আমার মতে বেশ ভালো নাম্বার পেয়ে পাশ করেছেন। বইটির দশম মুদ্রণ তো সেই কথাই বলে। যারা ঢাকা শহরে বাস করেন তাদের আরো বেশি ভালো লাগার কথা এই বই তাদের পরিচিত রোডঘাটের ডিটেইলড বর্ণনা পড়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ যেমন নিছক কোন সংখ্যা নয়, এই বইয়ের ক্ষেত্রেও তাই।
১৯৫২ : নিছক কোন সংখ্যা নয়
লেখক : মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
প্রকাশনা : বাতিঘর প্রকাশনী
প্রথম প্রকাশ : ফেব্রুয়ারি ২০১৪
প্রচ্ছদ : সিরাজুল ইসলাম নিউটন
জনরা : থ্রিলার
রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
মহান ভাষা আন্দোলনের কারণে ১৯৫২ আসলেই বাংলাদেশের জন্য নিছক কোন সংখ্যা নয়। এই থ্রিলার গল্পের জন্যও ১৯৫২ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ একটি সংখ্যা।
দেশের অন্যতম প্রধান জাতীয় দৈনিক "মহাকাল" এর সিনিয়র রিপোর্টার শৈশব থেকেই গাড়ির খুব ভক্ত। নিজের কিনা প্রথম গাড়ি রাস্তায় নামিয়েই এক বিচিত্র দুর্ঘটনা ঘটে যায় তাঁর হাতে। মারা পড়েন অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রের নিকটবর্তী এক পরিবারের সদস্য। সিনিয়ার সাংবাদিক সায়েম মোহাইমেনের হাতে ভাষাসৈনিক পরিবারের সন্তানের এরকম রহস্যময় মৃত্যু পুরো বাংলাদেশে শোড়গোল ফেলে দেয়। সতর্ক চালক সায়েম-ই কি দায়ী এই দূর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য?
সায়েমের ঘনিষ্ট বন্ধু সদ্য ট্রান্সফার হয়ে আসা গুলশান-বনানী থানার এসি গোলাম মওলা ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়েন। জড়িয়ে পড়েন আরো অনেকে। এই অনেকের মধ্যে আছেন রাজনীতির কিছু বড় বড় প্লেয়ার। দ্রুতগতিতে অনেকগুলো রহস্য একটার সাথে আরেকটা জট পাকাতে থাকে। সারাদিন ফেইসবুক চ্যাটিং নিয়ে ব্যস্ত নিশুর সাথে এই ঘটনার সম্পর্ক কি? হুইলচেয়ারে বসে থাকা তাহিতি অথবা ঢাকা থেকে শত মাইল দূরে থাকা নিম্মির-ই বা কাজ কি এই গল্পে? জনপ্রিয় ব্যান্ডস্টার, প্লেবয় রুডিও এই গল্পে নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েন। এদের প্রত্যেকেই জড়িয়ে পড়েন ছোট বড় সব ঝামেলায়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দূর্বৃত্তায়ন, গুম, হত্যা, পাওয়ার পলিটিক্সের সাথে সাথে সমাজের মধ্য থেকে নৈতিক অবক্ষয় যে সবকিছু ফুঁড়ে মহাসড়কে তীব্র গতিতে ধেয়ে আসা গাড়ির হেডলাইটের মতো চোখ ধাঁধিয়ে দেয় তার থেকে রক্ষা পাওয়া কি এতোই সহজ?
গল্প অত্যন্ত ফাস্ট পেইসড। এমপি থেকে মন্ত্রী হওয়ার বাসনায় থাকা এক বিগ প্লেয়ারের অন্ধকার রূপও দিনকে দিন পরিস্কার হতে থাকে। বিগ মানি এন্ড গ্রিডের শিকার রাজনীতিতে সায়েম অথবা গোলাম মওলা তো চুনোপুটির চেয়েও কম। এই অবস্থায় ১৯৫২ নিয়ে সবচেয়ে বেশি রহস্যের সৃষ্টি হয়। যেন সকল রহস্যের চাবিকাঠি ১৯৫২। আসলে কি ঘটেছিলো সেই রাতে?
তীব্র গতিতে ছুটে চলা এই গল্প থ্রিলারপ্রেমী পাঠককে বসিয়ে রাখবে। একই সাথে করবে বিভ্রান্ত। চমকের পর চমক না থাকলে বা বিভ্রান্তি না থাকলে থ্রিলার পড়ে মজা নেই। এই গল্প পড়তে পড়তে সচেতন পাঠকের মনে অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হতে পারে। ক্রিমিনাল এরকম একটার পর একটা সিলি মিসটেক করছে কেন? এরপরও সিনিয়ার সাংবাদিক এবং গুলশান-বনানী থানার এসি কেন পারছেন না সমাধানে আসতে? অপরাধীর বেপরোয়াভাব খুব প্রবল এই গল্পে তবে এসবের উত্তর পেতে হলে একদম শেষপর্যন্ত পড়ে যেতে হবে যা একদম সহজ একটি কাজ কারণ লেখকের নাম মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন।
সবাইকে নাহয় এবার আমি একটু চমকে দেই। আমার পড়া এই লেখকের প্রথম বই এটি। মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিনকে থ্রিলারপাঠকদের কাছে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কিছু নেই। এই বইটি পড়ে আমার মোটামোটি ধারণা হয়ে গেছে কেন এই দেশে লেখক একজন থ্রিলার মায়েস্ট্রো। প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা অত্যন্ত সুপাঠ্য এই বইয়ে লেখক দিয়েছেন চমকের পর চমক। গল্পের প্লট খুব আহামড়ি না হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র স্টোরিটেলিঙের জোড়ে লেখক আমার মতে বেশ ভালো নাম্বার পেয়ে পাশ করেছেন। বইটির দশম মুদ্রণ তো সেই কথাই বলে। যারা ঢাকা শহরে বাস করেন তাদের আরো বেশি ভালো লাগার কথা এই বই তাদের পরিচিত রোডঘাটের ডিটেইলড বর্ণনা পড়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৫২ যেমন নিছক কোন সংখ্যা নয়, এই বইয়ের ক্ষেত্রেও তাই।