১. প্রারম্ভ:
খুব স্বাভাবিক একটি দিনে সিরাত নিয়ে ভাবতে ভাবতে মনে উদয় হলো হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর শিক্ষা বিষয়ক কোনো বই পড়া দরকার। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজির পর বেশ কয়েকটি বই সংগ্রহ করে পড়া শুরু করি। সেই সংগ্রহ থেকে নির্বাচিত দুইটি বই’কে সামনে রেখে আজকের এই আলোচনা এবং এই আলোচনার মূল উপজীব্য বিষয় – “বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাদর্শন: একটি ভূমিকা” [পুনশ্চ, এই বিষয়ে আরো বিস্তারিত লিখনী প্রকাশিতব্য]
২. বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও আমাদের অবস্থান:
সমসাময়িক বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে আমাদের সকলের মধ্যে তিন ধরণের অবস্থান দেখা যায়, যা হচ্ছে–
I. বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন প্রত্যাশী।
II. বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার প্রত্যাশী।
III. অনভিমত বা নিরপেক্ষতা।
৩. বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সময়োপযোগীতা:
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অতীত কিংবা বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আলোকপাত না করেও পৃথিবী’তে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীর জন্য ঠিক কতটুকু উপযোগী তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা করার সুযোগ আছে। বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে দুইটি উদাহরণ এখানে দেয়া যেতে পারে যা সামগ্রিক অর্থে এর অবস্থানকে ইঙ্গিত করতে সক্ষম।
— হঠাৎ করে একদিন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো জাপানের অনুকরণে আমাদের দেশের শিক্ষাব্যবস্থার তত্ত্বগত দিক বাদ দিয়ে ব্যবহারিক দিকে মনযোগী হবে। কিন্তু, বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে এর ফলাফল নিয়ে এসেছে ভয়ংকর এক দুর্যোগ। এটি ছিলো আদ্যোপান্ত একটি ব্যর্থ প্রচেষ্টা।
— সাহিত্যে স্নাতক করার সুবাদে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরীক্ষাগুলো’তে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নের উত্তরে কেবল গল্পের খাপছাড়া ব্যবহার চোখে পড়তো। শিক্ষকেরা মানা করার পরেও এমন গল্পের ছোড়াছুঁড়ি কোনো ভাবেই কমানো যেতো না। স্পষ্টতর এটি যে, কেউ “ক্রিটিক্যাল থিংকিং” এর দিকে আগ্রহী নয়।
পড়াশোনা কিংবা শিক্ষাব্যবস্থা তাত্ত্বিক বা ব্যবহারিক যা হোক না কেনো, জ্ঞানভিত্তিক ছাড়া মূলত আর কোনো উপায়েই শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতি সম্ভব নয়। শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ঠিক আসলে কোথায়, এর উত্তর পাওয়া যাবে যখন পড়াশোনা আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এগিয়ে যাওয়া মূলত একটি বিষয়ে অকপটতভাবে পারদর্শী হওয়া অথবা দক্ষতা অর্জন করা।
৪. ইসলাম ও রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাদর্শন:
ইসলামের সর্বোৎকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে এর সার্বজনিনতা এবং এর সামগ্রিকতা। সামগ্রিকভাবে ইসলাম আমাদের প্রতিটি বিষয়ে সমতার সাথে সবকিছু বিচার করতে শিখিয়ে থাকে। আর রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাদর্শনে আমরা সর্বোপরি মানবকল্যাণের প্রতিচ্ছবিই দেখতে পাই। অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলা যেতে পারে যে, সক্রেটিসের “কেনো” বা জানার ক্ষেত্রে প্রশ্ন করার প্রয়োজনীয়তা আমাদের সমসাময়িক সময়ে যত বেশী আলোচনার শীর্ষে থাকে তত বেশী আমরা রাসূল (সাঃ)-এর সাহাবীদের প্রশ্ন বা জিজ্ঞেস করার বিষয়ে আলোকপাত করি না। এসব সমাধানের ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের অজ্ঞতার বাইরে এসে আমাদের রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাদান সম্পর্কে অবগত হতে হবে।
রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষাদর্শন ছিলো সকলের জন্য উন্মুক্ত। কারণ, ব্যক্তিভেদে মানবিক জ্ঞান সকলের জন্য নির্দিষ্ট উপায়ে কাজ করে না। ব্যক্তিভেদে বোঝার সক্ষমতা ভিন্ন এবং রাসূল (সাঃ) ঠিক এই সকল বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েই শিক্ষাদর্শনে অমূল্য ভূমিকা রেখেছেন। রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাদর্শন মেথডলজির শীর্ষে আছে এপিস্টেমলজি বা জ্ঞানতত্ত্ব আর এই জ্ঞানতত্ত্ব ব্যবহারিক ও তাত্ত্বিক সহ সার্বজনীন প্রায়োগিকতা ব্যবহার করেই বিকাশ লাভ করেছে। পুনশ্চ, এই বিকাশ লাভ আমরা যদি আমাদের বর্তমান সময়ে এসে কাজে লাগাতে অক্ষম হই তাহলে তা মূলত আমাদেরই ব্যর্থতা।
৫. রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাদান বিষয়ক দুইটি বই:
রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাদর্শন বিষয়ক দুইটি বইয়ের নাম ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমি এখানে কোনো তুলনা করছি না। আমি কেবল একটি মৌলিক ও একটি অনুবাদ বইকেই তুলে ধরছি, কারণ এই দুইটি উক্ত বিষয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেছে যা উক্ত বিষয়ে আগ্রহী পাঠকদের পাঠ করা অত্যাবশ্যক।
১. মুহাম্মদ (সা.) প্রণীত শিক্ষাব্যবস্থা, লেখক: গোলাম কিবরিয়া, প্রকাশক: চন্দ্রবিন্দু।
২. রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর শিক্ষাদান পদ্ধতি, মূল লেখক: ইব্রাহীম হালিল আর, অনুবাদ: বুরহান উদ্দিন আজাদ, প্রকাশক: মক্তব প্রকাশন।
৬. শেষকথন:
রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাদর্শন আমাদের বর্তমান সময়ে এসেও যে ধরনের সমসাময়িকতা বা প্রাসঙ্গিকতা ধরে রেখেছে, তা আমাদের উপযোগী করে তুলতে না পেরে বরং আমরা আমাদেরই ক্ষতিসাধন করছি। এই বিষয়ে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে। আমি চাই বাংলাদেশে রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষাদর্শন নিয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো কাজ হোক।