১. প্রারম্ভ
একটি কথা শুরুতেই বলে রাখা শ্রেয় যে, সিরাত পাঠে পূর্ণাঙ্গ হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর জীবনী পড়ে আমরা আরো বিশদ ভাবে কিছু ঘটনার বিস্তারিত কিংবা বিশ্লেষণধর্মী আলোচনা পড়তে বা জানতে আগ্রহী হয়ে উঠি। ঠিক এইরকম একটি চাহিদা অনুভব করে এই সিরিজ লেখার সূত্রপাত। রাসূল (সাঃ)-এর জীবন থেকে আমরা আদর্শ এবং শিক্ষা দুইটি বিষয়ই গ্রহণ করতে সক্ষম। কেননা, রাসূল (সাঃ)-এর জীবন সম্পূর্ণভাবে এমন এক আখ্যান যা দ্বারা আমাদের মানবজীবনের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বিদ্যমান।
২. ইসলাম এবং রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাদর্শনে রিসালাত, ইলম, ও সিরাতুল মুস্তাকিম:
ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা রাসূল (সাঃ) ওহী’র মাধ্যমে আমাদের জন্য এমন এক রিসালাত নিয়ে এসেছিলেন যার ভিত্তিমূলেই আছে জ্ঞান। একইভাবে আল কুরআনের প্রথম নাযিলকৃত সূরা হিসেবে সূরা আলাকের গুরুত্ব ইলম অর্জনের জন্য অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। হেরা গুহায় হযরত জিবরাঈল (আঃ) যখন রাসূল (সাঃ)-এর নিকট প্রথম ওহী হিসেবে “ইকরা” (পড়ুন) – বাক্যটি উচ্চারণ করেন, ঠিক তখন থেকেই ইসলামে ইলমের গুরুত্ব সম্পর্কে আমরা সঠিকভাবে অবগত হতে পারি।
রাসূল (সাঃ) এর জীবনদর্শনে সিরাতুল মুস্তাকিমে অটুট থাকার যে নিদর্শন আমরা দেখতে পাই তা মূলত নির্ভর করেছে ইলমের উপর। আল্লাহপ্রদত্ত ওহী তিনি আমাদের জন্য সংরক্ষণ করেছেন, যার ফলশ্রুতি’তে আমরা আল কুরআন পেয়েছি। এই সত্যনির্ভর আল কুরআনের জ্ঞান চিরকাল আমাদের জন্য শাশ্বত। আল্লাহ আল কুরআনে বলেছেন, “পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন” (সূরা আলাক : ১) — উক্ত আয়াতে আমাদের ইলমের নিয়ামতের প্রতি এবং সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ’র প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থাকার একটি বার্তা আমরা পেয়েছি। এবং একই ভাবে আল্লাহ আমাদের আল কুরআনের প্রথম সূরা, সূরা ফাতিহা’তেও সিরাতে মুস্তাকিমের পথে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সিরাতুল মুস্তাকিম হচ্ছে সহজ, সরল পথ – যে পথের অনুসারী হলে মানুষের মুক্তি অবধারিত। মানবজীবনের জন্য যা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তা আছে ইলমের মধ্যে আর আমাদের মধ্যে এই ইলম অর্জন কেবল তখনই সম্ভব যখন আমরা রাসূল (সাঃ)-এর রিসালাত আঁকড়ে ধরে সিরাতুল মুস্তাকিমে অটুট থাকবো।
৩. বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান সমস্যা নিরসনে রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষাদর্শন মেথডলজির ব্যবহার:
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি ভয়ংকর দিক হচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা যে বিষয়ে পড়তে আগ্রহী বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই তারা সে অনুযায়ী পড়াশোনা করতে সক্ষম হয়ে ওঠে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে পড়াশোনা আর কর্মজীবনের মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষণীয়। এমন অসুবিধার মূল অন্তরালে আছে – আমরা তাদের যথোপযুক্ত সুযোগসুবিধা প্রদান করতে অক্ষম এবং ব্যক্তিভেদে স্বতন্ত্রতা হিসেবে ছাত্রছাত্রীর যেসকল গুণাবলিকে কাজে লাগিয়ে একটি সমাজ ও দেশ উন্নয়ন করতে সক্ষম, তা থেকেও আমরা পিছিয়ে পড়ছি প্রতিনিয়ত। এর প্রতিকার বা সমাধান হিসেবে আমাদের প্রথম প্রয়োজন জ্ঞানার্জন এবং শিক্ষাব্যবস্থার বণ্টন এমনভাবে হওয়া উচিত যেন চাহিদানুযায়ী সকলেই নিজ নিজ জায়গা থেকে সফল হতে পারে। রাসূল (সাঃ) এর শিক্ষাদর্শন মেথডলজির তিনটি প্রধান উপকরণ উক্ত সমস্যা থেকে আমাদের উত্তরণ করতে সক্ষম:
১) তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জন।
২) ব্যবহারিক জ্ঞানার্জন।
৩) ধর্মীয় জ্ঞানার্জন।
আমরা যেসকল বিষয়ে জানতে আগ্রহী কিংবা পারদর্শিতা অর্জন করতে ইচ্ছুক– তা কেবলমাত্র “তাত্ত্বিক, ব্যবহারিক এবং ধর্মীয়” জ্ঞানার্জন আহরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। রাসূল (সাঃ)-এর দেখানো এই তিনটি মেথডলজির যথাযথ ব্যবহার দ্বারা এই সমস্যা থেকে আমাদের উত্তরণ পাওয়া সম্ভব।
৪. শেষকথন:
আমাদের জীবনযাত্রায় ইলম বা জ্ঞানার্জনের যে বিশেষ উপকারিতা বিদ্যমান তা সত্যিকার অর্থেই আল্লাহপ্রদত্ত নিয়ামত। এই নিয়ামতের সঠিক ব্যবহার আমরা কেবল শিখতে পারি রাসূল (সাঃ)-এর শিক্ষাপদ্ধতি বা শিক্ষাদর্শনের মাধ্যমে। কারণ, শিখানোর পাশাপাশি তিনি আমাদের দেখিয়েছেন কিভাবে সফলতা অর্জন করা অর্জন। কেবলমাত্র রাসূল (সাঃ)-এর জ্ঞানের সকল ব্যবহারিক দিক নিজেদের মধ্যে আয়ত্ত করার মাধ্যমেই আমাদের জ্ঞানার্জন পরিপূর্ণতা লাভ করতে সক্ষম। (পরিসমাপ্ত)