Posts

গল্প

"অদ্ভুত মেহমান" প্রথম খণ্ড

February 16, 2025

AKM Mehedi Hasan Chowdhury

112
View

পাহাড়ি গ্রামের নির্জন এক কোণে শতবর্ষী পুরনো এক বাড়ি। অর্ধভগ্ন দরজা, শ্যাওলা জমা দেয়াল, আর জানালাগুলো সবসময় বন্ধ। লোকমুখে শোনা যায়, বাড়িটা অভিশপ্ত। বহু বছর ধরে সেখানে কেউ বসবাস করেনি। কিন্তু সম্প্রতি শহর থেকে আসা হোসেন সাহেব তার পরিবার নিয়ে সেখানে উঠেছেন।

প্রথম দিন থেকেই অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করল। প্রথমেই বাড়ির ছোট ছেলে রাফি দরজার পাশে দাঁড়িয়ে কারো সাথে কথা বলছিল। তার মা লিমা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কার সাথে কথা বলছো?”
রাফি মিষ্টি হেসে বলল, “ওখানে যে চাচ্চু দাঁড়িয়ে আছে, তার সাথেই কথা বলছি!”
লিমা অবাক হয়ে তাকালেন, কিন্তু সেখানে কেউ নেই! তিনি ভাবলেন, হয়তো ছেলের কল্পনা।

রাতে খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে, হঠাৎ করে জানালা শক্ত করে বন্ধ থাকলেও বাইরে থেকে কারো কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “তোমরা চলে যাও... চলে যাও...”
হোসেন সাহেব জানালা খুলে বাইরে তাকালেন, অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা গেল না। গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেল তার। লিমা ভীত সুরে বলল, “শোনো, এ বাড়িটা কি সত্যিই ঠিক আছে?”
হোসেন সাহেব বললেন, “আরে ধুর! গ্রাম্য মানুষদের গল্প। ভয় পেলে চলবে না।”

কিন্তু রাত গভীর হতেই বাড়ির অদ্ভুত আচরণ বাড়তে লাগল। উপরের মেঝেতে ভারী পায়ের আওয়াজ, ছাদের উপর দিয়ে কারো ছুটে যাওয়ার শব্দ, আর মাঝে মাঝে দরজার আড়ালে ফিসফিস করে কারো কথা বলা – এসব কানে আসতে লাগল।

পরের দিন সকালে গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব দেখতে এলেন। লিমা তার কাছে রাতে শোনা কণ্ঠস্বরের কথা বললেন। ইমাম সাহেব চিন্তিত মুখে বললেন, “বউমা, এই বাড়িটা বহু বছর ধরে ফাঁকা ছিল। শোনা যায়, এখানে এক জিন থাকে, যে নতুন মানুষদের সহ্য করতে পারে না।”
লিমা বিস্মিত হয়ে বলল, “কিন্তু আমরা তো কিছু করিনি!”
“জিনেরা মানুষের মতো নয়। তারা যার ওপর খেপে যায়, তাকে সহজে ছাড়ে না।”

রাতে সবাই আতঙ্কিত হয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিল। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেল। অন্ধকার ঘরে শুধু রাফির কণ্ঠস্বর শোনা গেল, “মা, চাচ্চুটা আবার এসেছে!”
লিমা ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলেন। হোসেন সাহেব টর্চ হাতে নিয়ে ছুটে এলেন। কিন্তু ঘরের কোণায় কেউ নেই, শুধু একটা অদ্ভুত গন্ধ – যেন পোড়া কাঠের গন্ধ ভেসে আসছে।

রাত গভীর হতে অদ্ভুত ঘটনাগুলো আরও বাড়তে লাগল। খাটের নিচ থেকে শোনা গেল চাপা হাসি, দেয়ালে ছায়ার নাচন, আর কারো হাড় হিম করা শীতল কণ্ঠ – “তোমরা চলে যাও... এটা আমার জায়গা...”

হোসেন সাহেব টর্চ নিয়ে বাড়ির প্রতিটি ঘর তল্লাশি করলেন, কিন্তু কিছুই পেলেন না। লিমা ভয় পেয়ে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। তাদের মনে হলো, বাড়িটি যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে, প্রতিটি দেয়াল থেকে কেউ তাদের দেখছে, ফিসফিস করে বলছে, “তোমাদের কোনো মুক্তি নেই...”

ভোর হওয়ার আগেই হঠাৎ করে সব শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ, যেন কিছুই হয়নি। কিন্তু রাফি নেই! তার খাটে শুধু তার খেলনাগুলো ছড়িয়ে আছে। জানালার বাইরে তার পায়ের ছাপ দেখা যাচ্ছে, যা ধীরে ধীরে বনের দিকে মিলিয়ে গেছে...

(প্রথম খণ্ড সমাপ্ত)

Comments

    Please login to post comment. Login