রাফির নিখোঁজ হওয়ার পর পুরো বাড়িতে আতঙ্কের ছায়া নেমে এলো। হোসেন সাহেব এবং লিমা পাগলের মতো ছেলেকে খুঁজতে লাগলেন। গ্রামের লোকজনও তাদের সাথে যোগ দিল, কিন্তু রাফির কোনো হদিস পাওয়া গেল না। শুধু বনের দিকে মিলিয়ে যাওয়া পায়ের ছাপগুলোই ছিল একমাত্র সূত্র।
গ্রামের মুরব্বি করিম চাচা বললেন, "এই বাড়িতে কিছু একটা আছে। বহু বছর আগে এখান থেকে অনেকেই নিখোঁজ হয়েছে।"
লিমা কাঁদতে কাঁদতে বলল, "আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিন! ও কোথায়?"
করিম চাচা পরামর্শ দিলেন, "গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেবের সাথে কথা বলুন। তিনি হয়তো কিছু জানেন।"
হোসেন সাহেব এবং লিমা ইমাম সাহেবের কাছে গেলেন। ইমাম সাহেব তাদের কথা শুনে বললেন, "এই বাড়িটি নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়। এখানে এক জিন বাস করে, যে নতুন আসা মানুষদের সহ্য করতে পারে না।"
হোসেন সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, "আমার ছেলেকে কিভাবে ফিরিয়ে আনতে পারি?"
ইমাম সাহেব বললেন, "আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। আমি কিছু দোয়া পড়ব এবং আপনাদের বাড়িতে গিয়ে রুকইয়াহ করব।"
সেই রাতে ইমাম সাহেব বাড়িতে এসে কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতে লাগলেন। বাড়ির প্রতিটি কোণায় পানি ছিটিয়ে দোয়া পড়লেন। হঠাৎ করেই বাতাস ভারী হয়ে উঠল, ঘরের জানালাগুলো নিজে থেকেই বন্ধ হয়ে গেল, আর এক অদ্ভুত শীতলতা ঘর জুড়ে ছড়িয়ে পড়ল।
লিমা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, "এটা কি হচ্ছে?"
ইমাম সাহেব শান্ত কণ্ঠে বললেন, "ভয় পাবেন না। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।"
তিলাওয়াত চলতে থাকল, আর সেই সাথে বাড়ির ভেতরে অদ্ভুত শব্দ শোনা যেতে লাগল। দেয়ালের ওপাশ থেকে কারো ফিসফিসানি, মেঝের নিচ থেকে চাপা কান্না, আর ছাদের ওপর ভারী পায়ের আওয়াজ।
হঠাৎ করেই রাফির কণ্ঠস্বর শোনা গেল, "মা, আমি এখানে!"
লিমা ছুটে গিয়ে দেখল, রাফি ঘরের এক কোণায় বসে আছে, চোখে ভয় আর অবিশ্বাসের ছাপ। সে কাঁপতে কাঁপতে বলল, "মা, চাচ্চুটা আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। ও বলল, আমরা তার জায়গা দখল করেছি।"
ইমাম সাহেব বললেন, "আলহামদুলিল্লাহ, রাফি ফিরে এসেছে। তবে এই বাড়িতে থাকা নিরাপদ নয়।"
হোসেন সাহেব সিদ্ধান্ত নিলেন, "আমরা এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। আমার পরিবারের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।"
পরের দিন সকালে তারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। কিন্তু গ্রামের লোকজন এখনও বলে, রাতে সেই বাড়ি থেকে অদ্ভুত কণ্ঠস্বর শোনা যায়, আর ছায়াময় এক মেহমান এখনও সেখানে বসবাস করে।
(দ্বিতীয় খণ্ড সমাপ্ত)