হোসেন সাহেবের পরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেও সেই অভিশপ্ত বাড়ি নিয়ে গ্রামের মধ্যে নানা কথা ছড়িয়ে পড়ল। করিম চাচা বললেন, "বাড়ি ছেড়ে গেলেই কি সব শেষ হয়ে যায়? ওরা হয়তো ওদের পিছু ছাড়বে না।"
কথাটা সত্যি প্রমাণিত হলো। নতুন বাড়িতে এসে রাফি আরও অদ্ভুত আচরণ করতে লাগল। সে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠে দরজার দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলত, "চাচ্চুটা দাঁড়িয়ে আছে... ও আমাকে ডাকছে।"
লিমা আতঙ্কিত হয়ে হোসেন সাহেবকে বলল, "আমাদের ছেলেটার কিছু একটা হয়েছে। ও মাঝরাতে কার সাথে কথা বলে?"
হোসেন সাহেব বললেন, "এটা কি আসলেই কোনো মানসিক সমস্যা, নাকি সত্যিই কিছু আছে?"
তারা আবার ইমাম সাহেবের কাছে গেলেন। ইমাম সাহেব সব শুনে গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, "আমি আগেই বলেছিলাম, সেই বাড়িতে কিছু আছে, যা ওদের পিছু ছাড়বে না। ওটা শুধু জায়গা দখলের ব্যাপার নয়, বরং আরও গভীর কিছু।"
ইমাম সাহেব তাদের বললেন, "তোমাদের বাড়িতে নিয়ে যাও, আমি কিছু আমল করব।"
সেই রাতে ইমাম সাহেব ঘরে দোয়া পড়তে শুরু করলেন। কুরআনের আয়াত তিলাওয়াত করতেই বাতাস ভারী হয়ে এল, যেন ঘরের মধ্যে কেউ অদৃশ্য উপস্থিতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
হঠাৎ করেই রাফি চিৎকার করে উঠল, "ও এখানে! চাচ্চুটা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে!"
সঙ্গে সঙ্গেই বাতাসের ভেতর অদ্ভুত শীতলতা নেমে এল। ঘরের লাইট নিজে থেকেই জ্বলতে আর নিভতে লাগল। ইমাম সাহেব জোরে তিলাওয়াত চালিয়ে যেতে লাগলেন। হঠাৎ করেই রাফি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল।
লিমা ছুটে এসে রাফিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল, "আমার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিন!"
ইমাম সাহেব পানি পড়া দিয়ে রাফির মুখে ছিটাতে লাগলেন। কিছুক্ষণ পর রাফি ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে পেল। তার চোখে অদ্ভুত দৃষ্টি... যেন সে কিছু দেখেছে, যা ব্যাখ্যা করা অসম্ভব।
রাফি কাঁপতে কাঁপতে বলল, "চাচ্চুটা বলল, আমরা তার জায়গা নষ্ট করেছি। ওকে কষ্ট দিয়েছি... ও এখান থেকে যাবে না।"
হোসেন সাহেব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, "তুমি কিভাবে জানলে?"
রাফি উত্তর দিল, "ও আমাকে সব বলেছে। ও আগে এখানে থাকত... ওর ঘর ছিল... ওর পরিবার ছিল... আমরা এসে সব কিছু নষ্ট করে দিয়েছি।"
ইমাম সাহেব চিন্তিত মুখে বললেন, "এটা জিনের ব্যাপার। ও এখানে অভিশপ্ত হয়ে আছে, তাই মুক্তি চায় না।"
হোসেন সাহেব ভয় মিশ্রিত কণ্ঠে বললেন, "তাহলে আমরা কী করব?"
ইমাম সাহেব বললেন, "তোমাদের আগে সেই বাড়ির ইতিহাস জানতে হবে। কেন এই ঘটনা ঘটছে, সেটা না জানলে সমস্যার সমাধান হবে না।"
করিম চাচার কাছে গিয়ে জানতে পারল, সেই জায়গায় বহু বছর আগে এক পরিবারের বসবাস ছিল, যারা অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। কেউ বলে, তারা জঙ্গলে হারিয়ে গেছে, আবার কেউ বলে, তাদের সবাইকে কেউ বা কিছু মেরে ফেলেছে।
লিমা বিস্মিত হয়ে বলল, "তাহলে কি ওই পরিবার এখনো সেখানে আছে?"
করিম চাচা বললেন, "কে জানে! তবে গ্রামবাসী বলে, সেই পরিবার অভিশপ্ত হয়ে জিনের রূপ নিয়ে সেখানে আটকে আছে।"
হোসেন সাহেব আর লিমা আতঙ্কিত হয়ে একে অপরের দিকে তাকাল। এই অভিশপ্ত জিনের হাত থেকে কি তারা রেহাই পাবে? রাফির ভবিষ্যৎই বা কী হবে?
(তৃতীয় খণ্ড সমাপ্ত)