রাতের আকাশটা মেঘে ঢাকা, চাঁদের আলো যেন আজ লুকিয়ে থাকতে চাইছে। কাঁঠালতলা গ্রামের সেই পুরনো পরিত্যক্ত বাড়িটা দূর থেকে ভয়ঙ্কর ছায়ার মতো মনে হয়। গ্রামের লোকেরা বলে, ওখানে রাত হলেই কান্নার শব্দ শোনা যায়, কখনো আবার অদ্ভুত ছায়া ঘুরে বেড়ায়।
সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে চার বন্ধু—রাকিব, নিশাত, জয় আর শামীম। গ্রামের গুজবের সত্যতা যাচাই করতেই তারা আজ এখানে এসেছে।
"তোরাও কি ওই কান্নার শব্দ শুনছিস?" শামীমের গলা কাঁপছে ভয় আর উত্তেজনায়।
জয় হেসে বলল, "ধুর! এগুলো সব বাজে কথা। চল, ভেতরে গিয়ে দেখি কী আছে!"
বাড়ির ভাঙাচোরা দরজাটা ঠেলে তারা ভেতরে ঢুকল। ধুলোয় ভরা মেঝে, ছাদের জাল-ঝুলে জায়গায় জায়গায় গর্ত, যেন বহুদিন কেউ পা রাখেনি। একটা অদ্ভুত গন্ধ নাকে আসতেই নিশাত নাক চেপে ধরে বলল, "এত বাজে গন্ধ কেন রে?"
রাকিব টর্চ দিয়ে আলো ফেলে দেয়ালের দিকে তাকাল। সেখানে ছিল পুরনো কালো দাগ, যেন কেউ হাতের ছাপ রেখে গেছে। "দেখ, দাগগুলো কেমন অদ্ভুত!"
হঠাৎ করে পেছন থেকে দরজা বন্ধ হয়ে গেল। চারজন একসাথে ঘুরে দাঁড়াল। কেউই দরজার কাছে ছিল না, তাহলে বন্ধ হলো কীভাবে?
হালকা বাতাসে জানালার শিক কাঁপতে লাগল, আর সেই সাথে এক অদ্ভুত কান্নার আওয়াজ ভেসে এলো। নিশাত ভয়ে রাকিবের হাত চেপে ধরল, "এটা কি সত্যি সেই কান্নার শব্দ?"
কান্নার শব্দ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল, যেন কারো ব্যথা ভরা কণ্ঠস্বর দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। শামীম চিৎকার করে বলল, "চল, এখান থেকে পালাই!"
হঠাৎ করেই আলো নিভে গেল। চারপাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার, শুধু কান্নার শব্দ স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। জয় আতঙ্কে চিৎকার করল, "রাকিব, নিশাত, তোরা কোথায়?"
কোথাও কেউ নেই। জয় অনুভব করল, যেন কেউ তার কাঁধে হাত রাখল। সে পেছনে তাকাতে গিয়েও তাকাতে পারল না, গলা শুকিয়ে গেল ভয়ে।
কান্নার শব্দ এবার তার ঠিক পাশ থেকে আসছে। গলা ঘোরাতেই সে দেখল, একটা ছায়ামূর্তি। অন্ধকারের মধ্যে ভেসে থাকা অস্বচ্ছ মুখ, যেটা ক্রমশ তার দিকে এগিয়ে আসছে।
জয়ের পা যেন মাটিতে আটকে গেছে। সে নড়তে পারছে না, কিছু বলতে পারছে না। সেই মুখটা আরও কাছে আসতে থাকল, ঠাণ্ডা শ্বাস তার মুখে লাগছে।
এক মুহূর্তের মধ্যে সব অন্ধকার হয়ে গেল। জয় অনুভব করল, সে শূন্যে ভাসছে, আর সেই কান্নার শব্দ এখন তার মধ্যেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।