Posts

গল্প

ভূতের বাড়ির সন্ধান: দ্বিতীয় খণ্ড

February 16, 2025

AKM Mehedi Hasan Chowdhury

87
View

জয়ের চিৎকার হঠাৎ করেই থেমে গেল। অন্ধকার ঘর জুড়ে নীরবতা নেমে এলো, যেন সব শব্দ চুরি হয়ে গেছে। নিশাত আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে রাকিবের হাত শক্ত করে ধরল, “জয় কোথায় গেল?”

রাকিব চারপাশে তাকাল। অন্ধকারের ভেতর কিছুই দেখা যাচ্ছে না। সে টর্চটা জ্বালানোর চেষ্টা করল, কিন্তু কাজ করল না। ব্যাটারি ঠিকই ছিল, তবে আলো জ্বলছে না। যেন অন্ধকারের শক্তি আলোকে গিলে ফেলছে।

শামীম ভয়ে ফিসফিস করে বলল, “চল এখান থেকে পালাই। জয়কে খুঁজব না, চল...”

তারা দরজার দিকে ছুটল। কিন্তু দরজাটা শক্তভাবে বন্ধ, কিছুতেই খুলছে না। রাকিব দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিৎকার করে উঠল, “দরজা বন্ধ হলো কীভাবে? আমরা তো লক করিনি!”

হঠাৎ পেছন থেকে সেই কান্নার শব্দ শোনা গেল। আগের চেয়ে আরও করুণ, আরও ভয়ঙ্কর। মনে হচ্ছে, কান্নার সুর যেন গোটা ঘরটাকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। নিশাত ভয় পেয়ে পেছনে তাকাতেই দেখল, জানালার শিক ধরে অদ্ভুত একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।

মূর্তিটা অস্বচ্ছ, যেন ধোঁয়ার তৈরি। তার চোখ নেই, মুখ নেই, কিন্তু তবুও এক অদ্ভুত অনুভূতি ভর করল নিশাতের ওপর—মূর্তিটা যেন তাকে দেখছে। তার দিকে এগিয়ে আসছে ধীরে ধীরে।

“ওই দিক থেকে সরে আয়!” রাকিব নিশাতকে টেনে নিজের পেছনে নিয়ে এল। কিন্তু ঘরের প্রতিটি কোণ থেকে এবার ছায়ামূর্তিগুলো বেরিয়ে আসছে, ঘিরে ধরছে তাদের।

শামীম ভয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল, “এটা স্বপ্ন... এটা স্বপ্ন... আমি ঘুম থেকে উঠতে চাই!”

নিশাত ফিসফিস করে বলল, “তাহলে আমরাও কি ঘুমাচ্ছি?”

কান্নার শব্দ হঠাৎ করেই থেমে গেল। চারপাশে পিনপতন নীরবতা। এমন নিস্তব্ধতা যেন বাতাসও থেমে গেছে।

হঠাৎ করেই একটা শিশুতোষ গানের সুর ভেসে এলো— “লুকোচুরি খেলতে এসো, আমি আছি তোমার পেছনে...”

গানের সুর শুনেই শামীম মাথা চেপে ধরে বসে পড়ল, “না! এটা কী হচ্ছে? কে গান গাইছে?”

কেউ নেই, কিন্তু সুরটা ঠিকই বাজছে, ঘরের চারপাশ থেকে। রাকিব চারদিক দেখে ফিসফিস করে বলল, “আমরা... আমরা হয়তো ভুল জায়গায় এসেছি।”

নিশাত কান্না জড়ানো কণ্ঠে বলল, “জয়কে খুঁজতে হবে... আমরা ওকে ফেলে যেতে পারি না।”

হঠাৎ করে কোল ঘেঁষে শীতল হাওয়া বয়ে গেল। মনে হলো, কেউ ফিসফিস করে বলল, “তোমরাও এখান থেকে বেরোতে পারবে না...”

ঘরের কোণ থেকে অদ্ভুত ছায়াগুলো আবার নড়তে শুরু করল। তারা যেন আরও কাছে আসছে, ধীরে ধীরে। নিশাত আতঙ্কে চিৎকার করে বলল, “ওরা... ওরা আমাদের ঘিরে ফেলছে!”

দরজাটা হঠাৎ করেই ধাক্কায় খুলে গেল। বাতাসের ঝাপটায় মোমবাতির আলো নিভে গেল, আর অন্ধকার গ্রাস করল তাদের চারপাশ।

শামীম ছুটে দরজা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করতেই হঠাৎ করেই ছায়াগুলো তার চারপাশ ঘিরে ধরল। শীতল স্পর্শ তার গায়ে লেগেই চিৎকার করে উঠল, “রাকিব! নিশাত! আমাকে বাঁচাও!”

কিন্তু তার কণ্ঠস্বর যেন ঘরের অন্ধকারেই মিলিয়ে গেল।

রাকিব টেনে নিশাতকে দরজা দিয়ে বাইরে বের করল। কিন্তু বাইরে এসেও তারা অবাক হয়ে গেল—বাড়িটার চারপাশে কোনো পথ নেই! তারা যেন একটা গোলাকার বৃত্তের ভেতরে বন্দী হয়ে আছে।

নিশাত চিৎকার করে বলল, “আমরা কোথায় এসেছি? এই জায়গা তো গ্রামের মধ্যে ছিল! এখন চারপাশে শুধু অন্ধকার!”

রাকিব হতবাক হয়ে চারপাশে তাকাল। বাড়িটা যেন শূন্যে ভাসছে, আর চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার।

পেছন থেকে সেই গানের সুর আবার শোনা গেল— “লুকোচুরি খেলতে এসো...”

তারা ঘুরে তাকাতেই দেখল, ছায়ামূর্তিগুলো বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে আছে, ঠোঁটে অদ্ভুত হাসি নিয়ে।

Comments

    Please login to post comment. Login